২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝায় ও প্রাচীন (পুরা) প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রস্তর ও তাম্র-প্রস্তর যুগ থেকে ১০ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝায় ও প্রাচীন (পুরা) প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল।

প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝায় ও প্রাচীন (পুরা) প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

প্রশ্ন:- প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝায়? প্রাচীন (পুরা) প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।

উত্তর:- দীর্ঘ ক্রম বিবর্তনের মধ্যে আধুনিক মানুষ ও সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছে। মানব শরীর, তাদের খাদ্যাভাস, বাসস্থান, জীবিকা ইত্যাদি জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই পরিবর্তন বা রূপান্তরগুলি এসেছে ধীরে ধীরে। এই দীর্ঘ পরিবর্তনের ধারা বোঝার জন্য নৃতাত্ত্বিকরা মানব জাতির রূপান্তরের সময়কে কয়েকটি পর্বে বিভক্ত করেছেন।

বৈজ্ঞানিক বিচারে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে বিবর্তনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। মানবজাতির বিবর্তনের নানা পর্বকে নৃতাত্ত্বিকরা পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্যের বিচারে ভাগ করেছেন। প্রায়-বানর জাতীয় পর্যায় থেকে তাদের প্রায় সত্য মানুষের পর্যায়ে উত্তরণের সময়টিকে ‘প্রস্তর যুগ’ (Stone age) নামে অভিহিত করা হয়। এই পর্বে মানুষ মূলত টুকরো পাথর বা পাথর দিয়ে তৈরী করা হাতিয়ার ব্যবহার করতে শিখেছিল। তাই বিবর্তনের এই পর্যায়টিকে ‘প্রস্তর যুগ’ বা ‘প্রস্তর-সংস্কৃতি’ নামে অভিহিত করা হয়।

সম্পূর্ণ প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য একই রকম ছিল না। পাথর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আদিম মানুষের নিত্য-নতুন আবিষ্কার প্রস্তর যুগের মধ্যেও বৈচিত্র্য এনেছিল। সেই সকল বৈচিত্র্যকে ভিত্তি করে প্রস্তর যুগকে আবার তিনটি পর্বে ভাগ করা হয় – প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা Paleolithic age, মধ্য প্রস্তর যুগ বা Mesolithic age এবং নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic age।

সাধারণভাবে আদিম মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ারের উপাদান হিসেবে পাথরের ব্যবহারের প্রেক্ষিতে সভ্যতার ক্রমবিকাশের একটি পর্যায় প্রাচীন প্রস্তর যুগ নামে চিহ্নিত হয়। তবে এই পর্বের মধ্যেও নৃতাত্ত্বিক ও পুরাতাত্ত্বিক কিছু সুক্ষ্ম প্রভেদ লক্ষ্য করা যায়। এই প্রভেদের ভিত্তিতে প্রাচীন প্রস্তর যুগকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে – নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর, মধ্য প্রাচীন প্রস্তর এবং উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ।

ভারত উপমহাদেশে প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল নির্ধারণ করার কাজ কিছুটা কঠিন। বিশ্বপ্রেক্ষিতে যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে এই যুগের সূচনা হয়েছিল। আফ্রিকা থেকে পরিযানের মধ্য দিয়ে মানুষ ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে। তাই এখানে প্রস্তর যুগের সূচনা হয়েছে অনেক পরে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হত যে প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে ভারতে এই যুগের সূচনা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ভিত্তিতে এই সময়কাল অনেকটা পিছিয়ে আনা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী উপত্যকায় নেভাসা এবং কৃষ্ণা উপত্যকায় ইয়েদুর ওয়াড়ির প্রাচীন প্রস্তর ক্ষেত্রগুলির নিদর্শন থেকে মনে করা হয় যে, প্রায় ৪ লক্ষ বছর আগে ভারতে প্রাচীন প্রস্তর যুগের সভ্যতার সূচনা হয়েছিল।

প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। মূলত পাথরের খণ্ড থেকে হাতে কুড়াল, কোপনি, ফলা জাতীয় হাতিয়ার ব্যবহার করা হত। প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথম দিকে হাতিয়ারগুলি ছিল ভোতা, অমসৃণ, ভারী। পরবর্তী পর্যায়ে নানা ধরনের ফলা, তুরপুন, বাটালি ইত্যাদি ব্যবহার তাদের রপ্ত হয়। উচ্চ প্রাচীন যুগে লম্বা ফলা ও খোদকের ব্যবহারের কথা জানা যায়। সুক্ষ্ম দানাবিশিষ্ট কোয়ার্টজ ও চার্ট জাতীয় পাথর থেকে হাতিয়ারগুলি তৈরী করা হত।। পাথর ছাড়াও লাঠি বা পশুর হাড়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার এই পর্বে শুরু হয়েছিল।

এই পর্বের মানুষ ছিল নিতান্তই খাদ্য সংগ্রহকারী। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তারা দলবদ্ধভাবে এক স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াত। তারা ‘ক্ল্যান’ জাতীয় ছোটো ছোটো সামাজিক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিল। মার্কসবাদীদের মতে, এটি ছিল ‘আদিম সমাব সমাজব্যবস্থা। খাদ্য সংগ্রহ করে সকলে প্রয়োজন অনুসারে ভাগ করে নিত। প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ মূলত ফলমূল, লতাপাতা, পাখির ডিম, ইঁদুর, ইত্যাদি ভক্ষণ করত। মাঝামাঝি পর্যায়ে ছাগল, বনমোরগ, শুয়োর, হরিণ ইত্যাদি শান্ত প্রকৃতির পশু শিকার করে মাংস ভক্ষণ করতে তারা সক্ষম হয়।

পুরা প্রস্তর যুগের সাধারণভাবে মানুষ বাস করত পাহাড়ের গুহায়, মাটির গর্তে কিংবা বড়গাছের ডালে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি অঞ্চলে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের বসতি ছিল বলে নৃতাত্ত্বিকদের অনুমান।

প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ নিজের চেষ্টায় আগুন জ্বালানোর জ্ঞান অর্জন করেনি। তবে প্রাকৃতিক কারণে আগুন জ্বলে উঠলে মানুষ নিজের অজান্তে তার গুরুত্ব অনুভব করে। আগুন দেখে হিংস্র জন্তু পালিয়ে যায়, এমন দৃশ্য দেখে তারা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আগুনকে পাশে রেখে আত্মরক্ষা করতে শেখে। নিহত পশুর মাংস আগুনে ঝলসে গেলে সেই মাংসের নতুন স্বাদ তারা উপভোগ করে এবং পরে মাংসকে আগুনে ঝলসে খেতে শেখে।

ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষ পরস্পরের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে ভাষার আদি সুচনা করেছিল। ভাব বিনিময়ের এই ঘটনা ‘মেলামেশার তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। অনুমান করা হয় যে, এই পর্বে মানুষ কথা বলতে পারত না। তবে শিকার করা বা আত্মরক্ষার প্রয়োজনে মুখে নানা ধরনের শব্দ করে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারত। জিহ্বার ব্যবহার রপ্ত করতে না পারলেও, কণ্ঠস্বরের নিয়ন্ত্রণ ও বৈচিত্র্য দ্বারা ভাব প্রকাশ করতে শিখেছিল।

প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের গুহা-বসতির দেওয়ালে নানারকম চিত্রচর্চার নিদর্শন দেখে অনুমান করা হয় যে, আদিম মানুষ চিত্রাঙ্কনের সাথে পরিচিত ছিল। তবে চিত্রগুলি তাদের জীবন ও জীবিকার সাথে যুক্ত। অধিকাংশই পশু শিকারের দৃশ্য কিংবা পশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হাতির শুঁড়, মোষের সিং ইত্যাদি। চিত্রকর্মগুলি পাওয়া গেছে গুহার অতি গভীরে, যেখানে আলো প্রবেশ করে না। চিত্রের পাশে আছে জ্যামিতিক রেখা। তাই নৃতাত্ত্বিকগণের ধারণা যে, কোন অদৃশ্য শক্তির উদ্দেশ্যে এগুলি আঁকা হয়েছিল। জ্যামিতিক চিহ্নগুলিকে তাদের যাদু বিশ্বাসের তন্ত্রমন্ত্রের প্রতীক মনে করা হয়। কারো কারো মতে, এগুলি আদিম মানুষের ভাব প্রকাশের ‘লিপিচিহ্ন’।

প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক ও শিকারী। যাযাবর বৃত্তির এই পর্বে মানুষ পাহাড়-বন্দরে বসবাস করত এবং গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনযাপন করত। তাদের জীবন সংগ্রাম ছিল খুবই কঠিন এবং অনিশ্চিয়তায় ভরা।

0 thoughts on “প্রস্তর যুগ বলতে কি বোঝায় ও প্রাচীন (পুরা) প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো”

Leave a Comment