রণজিৎ সিংহ

মহারাজা রণজিৎ সিংহ -এর জন্ম, সুকারচুকিয়া মিসলের অধিপতি, জামান শাহকে সাহায্য প্রদান, স্বাধীনতা ঘোষণা, রাজ্য বিস্তার, অখিল শিখ রাজ্য গঠনের প্রয়াস, ইংরেজদের আশঙ্কা, অমৃতসরের সন্ধি, সন্ধির শর্ত, সন্ধির ফলাফল, অখিল শিখ রাজ্য গঠনের স্বপ্ন ধুলিসাৎ, উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজ্য বিস্তার, সিন্ধু দেশ জয়ে বাধা, কূটনৈতিক দূত প্রেরণ, ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের চুক্তি, ত্রিশক্তি মৈত্রী, রণজিৎ সিংহের মৃত্যু, তার কৃতিত্ব ও সমালোচনা সম্পর্কে জানবো।

শিখ সম্প্রদায়ের মহারাজা রণজিৎ সিংহ প্রসঙ্গে রণজিৎ সিংহের জন্ম, শিখ মিশলের অধিপতি রণজিৎ সিংহ, রণজিৎ সিংহের রাজ্য বিস্তার, রণজিৎ সিংহের সাথে ইংরেজদের অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষর, পাঞ্জাব কেশরী রণজিৎ সিংহ, নেপোলিয়নের ক্ষুদ্র সংস্করণ রণজিৎ সিংহ, শিখ শক্তির উত্থানে রণজিৎ সিংহের ভূমিকা, রণজিৎ সিংহের কৃতিত্ব, রণজিৎ সিংহের সমালোচনা ও রণজিৎ সিংহের মৃত্যু।

Table of Contents

মহারাজা রণজিৎ সিংহ

ঐতিহাসিক চরিত্ররণজিৎ সিংহ
জন্ম২ নভেম্বর, ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ
পিতামহাসিংহ
সুকারচুকিয়া মিসলের অধিপতি১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ
রাজত্বকাল১৭৯৯-১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু২৭ জুন, ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ
রণজিৎ সিংহ

ভূমিকা :- ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে শিখ সাম্রাজ্য -এর উত্থান শুরু হয় এবং মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব -এর মৃত্যুর ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। গুরু গোবিন্দ সিংহ ‘খালসা’ বাহিনী সংগঠিত করে শিখদের একটি সামরিক জাতিতে পরিণত করেন। তার মৃত্যুর পর বান্দা-র নেতৃত্বে (১৭০৮-১৬ খ্রিঃ) শিখ জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধ দুর্বার হয়ে ওঠে।

বারোটি মিসল

শিখদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সফল হলেও সমগ্র পাঞ্জাবে তারা কোনও ঐক্যবদ্ধ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় নি। তারা বারোটি ‘মিসল’ বা দলে বিভক্ত হয়ে পাঞ্জাব শাসন করত।তাদের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না এবং পরস্পরের মধ্যে সর্বদাই বিবাদ চলত।

রণজিৎ সিংহের শিখ রাজ্য গঠন

এই পরিস্থিতিতে সুকারচুকিয়া মিসলের নায়ক রণজিৎ সিংহ অন্যান্য মিসলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে পাঞ্জাবের এক বৃহত্তর অংশে শিখ রাজ্য গড়ে তোলেন।

রণজিৎ সিংহের জন্ম

পাঞ্জাবের সুকারচুকিয়া মিসলের অধিপতি মহাসিংহের পুত্র রণজিৎ সিংহ ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

সুকারচুকিয়া মিসলের অধিপতি

মাত্র বারো বছর বয়সে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর তিনি সুকারচুকিয়া মিসলের অধিপতি হন।

জামান শাহকে সাহায্য প্রদান

আফগানিস্তান -এর অধিপতি জামান শাহ-র ভারত আক্রমণকালে রণজিৎ সিংহ তাঁকে সাহায্য করেন এবং এর বিনিময়ে জামান শাহ তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়ে লাহোরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন (১৭৯৯ খ্রিঃ)।

স্বাধীনতা ঘোষণা

এর কিছুকাল পরেই তিনি জামান শাহের অধীনতা অস্বীকার করে লাহোরে নিজ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

রাজ্য বিস্তার

এরপর তিনি রাজ্যবিস্তারে মনোযোগী হন। ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি অমৃতসর এবং ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভাঙ্গি, রামগড়িয়া, কানহাইয়া, আলুওয়ালিয়া প্রভৃতি শতদ্রু নদীর পশ্চিম তীরের সবগুলি মিসল একে একে দখল করেন।

অখিল শিখ রাজ্য গঠনের প্রয়াস

অতঃপর তিনি শতদ্রু নদীর পূর্ব-তীরস্থ রাজ্যগুলি জয় করে এক ‘অখিল শিখ রাজ্য’ গঠনে প্রয়াসী হন। এই উদ্দেশ্যে তিনি এই অঞ্চলে তিনবার অভিযান চালান ও লুধিয়ানা দখল করেন (১৮০৬ খ্রিঃ)।

শতদ্রুর পূর্ব-তীরস্থ রাজ্যসমূহ

শতদ্রুর পূর্ব তীরের রাজ্যগুলি রণজিৎ সিংহের বশ্যতা স্বীকারে রাজি ছিল না। এই অঞ্চলের শিখ নায়কেরা ইংরেজদের শরণাপন্ন হন। সামরিক ও রাজনৈতিক কারণে শতদ্রুর পূর্ব-তীরস্থ অঞ্চল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ইংরেজদের শঙ্কা

রণজিৎ সিংহের ক্ষমতাবৃদ্ধিতে গভর্নর জেনারেল মিন্টো (১৮০৭-১৩ খ্রিঃ) শঙ্কিত হন, কিন্তু এই সময় উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফরাসি আক্রমণের আশঙ্কা থাকায় তিনি রণজিৎ সিংহকে ক্ষুব্ধ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না।

অমৃতসরের সন্ধি

বড়লাট মিন্টোর নির্দেশে চার্লস মেটকাফ লাহোরের দরবারে হাজির হয়ে রণজিৎ সিংহের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন এবং ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে দুই পক্ষে অমৃতসরের সন্ধি (Treaty of Amritsar) স্বাক্ষরিত হয়।

অমৃতসরের সন্ধির শর্ত

এই সন্ধির শর্ত অনুসারে শতদ্রু নদীর পশ্চিম-তীরস্থ রাজ্যগুলির ওপর রণজিৎ সিংহের কর্তৃত্ব স্বীকৃত হয় এবং শতদ্রুর পূর্ব-তীরবর্তী অঞ্চলগুলির ওপর থেকে তিনি তাঁর দাবি ত্যাগ করেন।

অমৃতসরের সন্ধির ফলাফল

এই সন্ধির ফলে শতদ্রু নদীর পূর্ব-তীরস্থ রাজ্যগুলি ইংরেজ নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়ে, বিনাযুদ্ধে ইংরেজ আধিপত্য যমুনা থেকে শতদ্রু নদী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় এবং লুধিয়ানায় ইংরেজ-সেনাদলের ঘাঁটি স্থাপিত হয়।

কানিংহামের অভিমত

ঐতিহাসিক কানিংহাম বলেন যে, এই চুক্তি রণজিৎ সিংহের পক্ষে লাভজনক ছিল, কারণ এর দ্বারা শতদ্রু নদী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তাঁর রাজ্যের প্রাকৃতিক সীমানা বলে চিহ্নিত হয় এবং তিনি শতদ্রুর পশ্চিম তীরে ইচ্ছামতো রাজ্য-বিস্তারের সুযোগ পান।

এন. কে. সিংহের অভিমত

  • (১) ডঃ এন. কে. সিংহ-র মতে এই চুক্তি তাঁর কূটনৈতিক ও সামরিক পরাজয়ের নিদর্শন। তিনি এই চুক্তিকে ‘শিখ সামরিক-জাতীয়তাবাদের বিয়োগান্তক ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
  • (২) ডঃ সিংহ আরও বলেন যে, বিসমার্ক যখন কোনও রাজনৈতিক মৈত্রী স্থাপন করতেন তখন তিনি নিজেকে অশ্বারোহী সওয়ার ও সন্ধির অপর পক্ষকে অশ্বে পরিণত করতেন, কিন্তু এই সন্ধিতে রণজিৎ সিংহ অশ্ব এবং ইংরেজ কর্তৃপক্ষ আরোহীর ভূমিকা পালন করে।

অখিল শিখ রাজ্যের স্বপ্ন ধূলিসাৎ

বলা বাহুল্য, এর ফলে রণজিৎ সিংহের ‘অখিল শিখরাজ্য’ স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে ধূলিসাৎ হয়ে যায় এবং তিনি ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়েন।

উত্তরাধিকারদের জন্য সমস্যা তৈরি

বলা হয় যে, ইংরেজ শক্তির ভয়ে যুদ্ধ এড়াবার জন্য তিনি ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি করেন। কিন্তু দুই পক্ষের যুদ্ধ অনিবার্য ছিল। রণজিৎ সিংহ এই সমস্যা তাঁর উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যান।

উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজ্যবিস্তার

  • (১) শতদ্রু নদীর পূর্বদিকে রাজ্যবিস্তারে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রণজিৎ সিংহ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজ্যবিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি একে একে কাংড়া, পাঠানকোট, শিয়ালকোট, মুলতান (১৮১৮ খ্রিঃ) জয় করেন।
  • (২) ফগানদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংঘর্ষ হয় এবং তিনি আটক(১৮১৩ খ্রিঃ), নৌশেরা (১৮২৩ খ্রিঃ), ডেরা গাজি খাঁ, ডেরা ইসমাইল খাঁ, কোহট, পেশোয়ার (১৮৩৪ খ্রিঃ) প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন।
  • (৩) ১৮১৯খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরও ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে লাদাক তাঁর দখলে আসে।

সিন্ধু দেশ জয়ে বাধা

রণজিৎ সিংহের রাজ্যে কোনও সমুদ্র উপকূল ছিল না। তাই তিনি সিন্ধুদেশ জয়ে আগ্রহী ছিলেন।কিন্তু সিন্ধুদেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব সম্পর্কেসচেতন ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর সিন্ধুদেশ জয়ে বাধা দেয়।

কূটনৈতিক দূত প্রেরণ

তৎকালীন গভর্নর জেনারেল উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক সিন্ধুদেশে রণজিৎ সিংহের অগ্রগতি রোধ করার জন্য কূটনৈতিক দূত রূপে আলেকজাণ্ডার বার্নেস-কে শিখ দরবারে প্রেরণ করেন। ঠিক এই সময় আবার পারস্যে রুশ প্রভাব বৃদ্ধি পেলে ইংরেজরা ভারত -এর নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

১৮৩১খ্রিঃ-এর সন্ধি

এই পরিস্থিতিতে ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক লাহোরে উপস্থিত হয়ে রণজিৎ সিংহের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ‘চিরস্থায়ী মিত্রতা’ স্থাপন করেন। এইভাবে সিন্ধু অঞ্চলে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত তাঁর রাজ্যবিস্তারের চেষ্টা থেকে কোম্পানি তাঁকে নিরস্ত করে।

আফগানিস্তানে গৃহবিবাদ

এই সময় আফগানিস্তানের গৃহবিবাদে শাহ সুজা সিংহাসনচ্যুত হন এবং দোস্ত আলি সিংহাসনে বসেন। দোস্ত আলির সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেলে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।

ত্রি-শক্তি মৈত্রী

এই পরিস্থিতিতে শাহ সুজাকে আফগানিস্তানের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইংরেজ, শাহ সুজা ও রণজিৎ সিংহের মধ্যে এক ত্রি-শক্তি মিত্রতা চুক্তি (১৮৩৮ খ্রিঃ) স্বাক্ষরিত হয়।

রণজিৎ সিংহের মৃত্যু

ত্রিশক্তি মৈত্রীর ফলে প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্বেই ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ৫৯ বছর বয়সে রণজিৎ সিংহের মৃত্যু ঘটে।

কৃতিত্ব

রণজিৎ সিংহের কৃতিত্বের বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(১) পাঞ্জাব কেশরী

রণজিৎ সিংহ ভারত ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শিবাজিহায়দার আলির মতো নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও বাহুবল, আত্মবিশ্বাস ও বিচক্ষণতার সাহায্যে বিবদমান শিখরাজ্যগুলির এক বিরাট অংশকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করে তুলতেসক্ষম হন। তাঁকে সঙ্গতভাবেই ‘পাঞ্জাব কেশরী’ আখ্যা দেওয়া হয়।

(২) উদারতা

সততা, ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল তাঁর শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ধর্ম বিষয়ে তিনি ছিলেন উদার। তাঁর পত্নীদের মধ্যে শিখ ছাড়া হিন্দু ও মুসলিম পত্নীও ছিলেন।

(৩) বিপান চন্দ্রের বক্তব্য

ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র-র মতে, রণজিৎ সিংহ শাসিত পাঞ্জাবকে কখনোই একটি শিখরাজ্য বলা সঙ্গত হবে না। এই রাজ্যের শাসনব্যবস্থা কেবল শিখ-স্বার্থেই প্রযুক্ত হত না। তাঁর সেনাবাহিনী কেবল শিখদের নিয়ে গঠিত ছিল না—গুর্খা, বিহারি, পাঠান, ওড়িয়া, ভোগরা, পাঞ্জাবি, মুসলমান সকলকে নিয়েই এই সেনাবাহিনী গঠিত ছিল।

(৪) আধুনিক ঢালাই কারখানা স্থাপন

কামান নির্মাণের জন্যতিনি লাহোরে একটি আধুনিক ঢালাই কারখানা স্থাপন করেন। এটি মুসলিম গোলন্দাজদের দ্বারা পরিচালিত হত।

(৫) বিশ্বস্ত মন্ত্রিপরিষদ গঠন

তাঁর বিশিষ্ট মন্ত্রী ও সেনানায়কদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন হিন্দু বা মুসলিম। তাঁর সর্বাপেক্ষা বিশ্বস্ত ও বিশিষ্ট অমাত্য ছিলেন ফকির আজিজউদ্দিন এবং তার অর্থমন্ত্রী ছিলেন দেওয়ান দীননাথ।

(৬) সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা

সেনাদলকে আধুনিক প্রথায় শিক্ষিত করে তুলবার উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু ফরাসি, ইতালিয়, ইংরেজ, জার্মান, রুশ প্রভৃতি সেনানায়কদের নিযুক্ত করেন। এক সময় তাঁর সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে ৩৯ জন ইউরোপীয় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অ্যালার্ড, ভেঞ্চুরা, অ্যাভিটেবিল, কোর্ট প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

(৭) সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাদল গঠন

জনৈক ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেন যে, সুদক্ষ সেনানায়কদের প্রশিক্ষণের ফলে তাঁর সেনাবাহিনী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়।ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র-র মতে, তৎকালে এশিয়া মহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী ছিলপ্রথম স্থানের অধিকারী এবং তাঁর সেনাবাহিনীর স্থান ছিল দ্বিতীয়।

(৮) ভিক্টর জ্যাকিমোঁর অভিমত

ফরাসি পর্যটক ভিক্টর জ্যাকিমোঁ (Victor Jacquemont) তাঁকে ‘নেপোলিয়ন -এর ক্ষুদ্র সংস্করণ” (‘a Bonaparte in miniature’) বলে অভিহিত করেছেন।

(৯) বসন্ত পঞ্চমী উৎযাপন

শিখ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা রঞ্জিত সিং গুরুদ্বারগুলিতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে বসন্ত পঞ্চমী উদযাপনকে উৎসাহিত করেছিলেন। এই দিনটিতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেবী সরস্বতীর প্রতি ভক্তিতে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়।

রণজিৎ সিংহের সমালোচনা

বহু গুণাবলী ও কৃতিত্বের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও রণজিৎ সিংহর বেশ কিছু ত্রুটিও ছিল। যেমন –

  • (১) তিনি কোনও যোগ্য উত্তরাধিকারী তৈরি করে যান নি। এর ফলে তাঁর মৃত্যুরপর শিখরাজ্য দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়।
  • (২) তিনি ‘খালসা” সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করেন নি। এর ফলে তাঁর মৃত্যুর পর ‘খালসা’ বাহিনী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে রাজ্যকে দুর্বল করে দেয়।
  • (৩) তিনি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন, কিন্তু পাঞ্জাবের রাজস্ব থেকে তার ব্যয়-নির্বাহ করা সম্ভব ছিল না।
  • (৪) অনেকের মতে অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষর করে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে যান এবং ইংরেজদের মোকাবিলার দায়িত্ব তাঁর দুর্বল উত্তরাধিকারীদের ওপর অর্পণ করেন।
  • (৫) বলা বাহুল্য, তাঁর বাস্তববোধই তাঁকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করে নি। তাছাড়া টিপু সুলতান ও মারাঠা নায়কদের পরিণতি তাঁর স্মরণে ছিল।

উপসংহার :- ঐতিহাসিক পার্সিভাল স্পিয়ারের মতে ঊনবিংশ শতাব্দীর দু’জন অসাধারণ পুরুষের একজন হলেন রামমোহন রায় এবং অপর জন হলেন রণজিৎ সিংহ।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “রণজিৎ সিংহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) রণজিৎ সিংহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. “সব লাল হো জায়েগা” – কার উক্তি?

মহারাজা রণজিৎ সিংহের।

২. পাঞ্জাব কেশরী কাকে বলা হয়?

মহারাজা রণজিৎ সিংহকে।

৩. অমৃতসরের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে হয়?

১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ সিংহ ও ইংরেজ প্রতিনিধি চার্লস মেটকাফ।

৪. রণজিৎ সিংহকে নেপোলিয়নের ক্ষুদ্র সংস্করণ কে বলেছেন?

ফরাসি পর্যটক ভিক্টর জ্যাকিমোঁ।

অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি

    Leave a Comment