নিমগ্নভাবে কাজের কৌশল

নিমগ্নভাবে কাজের কৌশল

সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নিমগ্ন কাজ। কিন্তু এই কোলাহলময় পৃথিবীতে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে নিমগ্নচিত্তে কাজ করা সহজ নয়। এ কারণে অধিকাংশ মানুষই বারবার প্রতিজ্ঞা করেও তা রক্ষা করতে পারে না, চিত্তবিক্ষেপ ঘটে, লক্ষ্য অর্জিত হয় না। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই নিমগ্নভাবে কাজে ব্যাপৃত থাকা সম্ভব হয়।।

মেডিটেশন

কোলাহলপূর্ণ এই পৃথিবীতে এমনিতেই মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কষ্টকর। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন আর বিভিন্ন ডিভাইসে আসক্ত হয়ে আধুনিক মানুষের মনোযোগ গেছে আরও কমে। নিমগ্নভাবে কাজে ডুবে থাকতে হলে প্রথমেই নিজের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। মনোযোগ বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো মেডিটেশন বা ধ্যান। বাহ্যিকভাবে আমরা একজন ধ্যানীকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখি। কিন্তু ধ্যান হলো, কিছুই না ভেবে চোখ বন্ধ করে সজাগ থাকা। কিছুই না ভাবা কখনোই সম্ভব হয় না। তখন একের পর এক কথা ভেসে আসতে থাকে। দিনের পর দিন এভাবে চোখ বন্ধ করে সজাগ থাকতে থাকতে মনের ভেতরে ভিড় করা কথার প্রাবল্য আস্তে আস্তে কমতে থাকে। একসময় কোনো কিছুই আর মনে আসে না। মনের এই নিস্তরঙ্গ অবস্থায় কোনো কিছুই মনকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে না। এ সময়ে প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা করলে এবং কীভাবে কাজগুলো সম্পন্ন করা যায় তা ঠিক করে নিলে নিমগ্নভাবে কাজ করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন মেডিটেশন করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

দুই মিনিট কৌশল

মনোযোগ বৃদ্ধির আরেকটি কৌশল হলো দুই মিনিট কৌশল। এই কৌশলে একটি কাঁটাযুক্ত হাতঘড়ি বা দেয়াল ঘড়ির প্রয়োজন হবে। এই কৌশলে, সেকেন্ডের কাঁটাটি যখন শূন্যের ঘরে যাবে তখন সেকেন্ডের কাঁটাতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে। সেকেন্ডের কাঁটা ছাড়া মনোযোগ অন্য কোথাও গেলেই ধরে নিতে হবে মনোযোগ একবার সরে গেছে। এভাবে যতবার মনোযোগ সরে যাবে তা গণনা করতে হবে। এভাবে দুই মিনিটে কতবার মনোযোগ সরে গেল তার গুনে রাখতে হবে। পরেরবার চেষ্টা করতে হবে, এই সংখ্যাটি কমিয়ে আনতে। এভাবে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়ার সংখ্যাকে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।

কাজ শুরু করার আগে পরিকল্পনা করুন

কোনো কাজ শুরুর আগেই কাজটি কীভাবে সম্পন্ন করবেন, কাজের জন্য কোন ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, কাজটির জন্য সর্বোচ্চ কতটুকু সময় বরাদ্দ রাখবেন, সবকিছুই একটি কাগজে লিখে রাখুন। সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখলে কাজ থেকে মনোযোগ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকাংশে। নিমগ্নভাবে কাজ করা সম্ভব হয়।

একবারে একটি কাজ

অনেকেই একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করেন। একে মাল্টিটাস্কিং বলে। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক একসঙ্গে একের অধিক কাজ করতে পারে না। দুই কাজের মধ্যেও প্রথমে একটি করে পরে অন্যটি সম্পন্ন করে। ফলে মাল্টিটাস্কিং পদ্ধতিতে দ্রুত কাজ তো করা যায়ই না, বরং চিত্তবিক্ষেপ ঘটে। ফলে কাজের গুণগত মান কমে যায়। তাই নিমগ্নভাবে কাজ করতে হলে একবারে একটি কাজ করুন। এক বসাতেই একাধিক কাজ করতে চাইলে কোন কাজটির পরে কোন কাজটি করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করতে পারেন, কিন্তু একসঙ্গে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করবেন না।

অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ দেবেন না

করণীয় কাজের তুলনায় সময় সবসময়ই অপ্রতুল। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। দিনের শুরুতেই প্রয়োজনীয় কাজের একটি তালিকা করে ফেলুন। এরপর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তালিকা থেকে বাদ দেন। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে, না আপনি মনোযোগ দিতে পারবেন কাজে, না গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারবেন। এসব কাজ সম্পন্ন করার জন্য কাউকে নিয়োগও দিতে পারেন। তাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার জন্য আপনি প্রয়োজনীয় সময় পাবেন।

অনুরোধে ঢেঁকি গিলবেন না

অনেকেই ‘না’ বলতে পারেন না। নিজের প্রয়োজনীয় কাজ থাকলেও সহকর্মী বা আত্মীয়স্বজনের অনুরোধকে মানা করতে পারেন না। ফলে বেড়ে যায় কাজের চাপ। কাজে মনোযোগ থাকে না। অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে অনেকেই অসম্ভব কাজ করতে সম্মত হন। একেই বলে অনুরোধে ঢেঁকি গেলা। নিজের কাজে মনোযোগী হতে হলে অন্যের অযৌক্তিক অনুরোধকে না বলতে শিখতে হবে। নিজের সাধ্যের বাইরে এমন কোনো কাজ করার অনুরোধ কখনোই গ্রহণ করবেন না।

নিমগ্ন কাজের জন্য চাই রুটিনের ধারাবাহিকতা

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন যখন আপনি নিমগ্নভাবে নিজের কাজে মনোনিবেশ করবেন। এই রুটিনের ধারাবাহিকতা খুব অল্প সময়ে ওই কাজে গভীর মনোযোগী হতে সাহায্য করে।

সময় নয় ফলাফল দ্বারা কাজের পরিমাপ করুন

অনেকেই ঘণ্টা হিসাব করে কাজ করেন। এতে কাজের কাজ হয় না। নিমগ্ন কাজ মানেই গুণগত মানে উত্তীর্ণ কাজ। এটি সময় দ্বারা নির্ধারিত হয় না। কাজটি কত নিখুঁতভাবে, কত সহজে ও অল্পসময়ে করা সম্ভব হলো তা দিয়েই নিমগ্ন কাজের ফলাফল নির্ধারিত হয়। অধিকাংশ সময়ই কাজে গভীর মনোযোগ থাকলে অল্পসময়ে অধিক কাজ করা সম্ভব হয়।

Leave a Comment