মহিয়ষী ঊষা গুহ ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে তিনি স্মরণীয়। তাঁর কর্মকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছিল। ঊষা গুহ ছিলেন এমন এক নারী, যিনি নারীদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন।
বিপ্লবী ঊষা গুহ
| ঐতিহাসিক চরিত্র | ঊষা গুহ |
| জন্ম | ১৮৯৯ খ্রি, ময়মনসিংহ (বর্তমান বাংলাদেশ) |
| পরিচিতি | ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী বিপ্লবী |
| সংশ্লিষ্ট সংগঠন | যুগান্তর দল ও অনুশীলন সমিতি |
| অবদান | স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ, নারীদের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি |
| প্রধান ভূমিকা | ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, নারী শিক্ষার প্রচার ও সমাজসেবায় অবদান |
| প্রভাব | নারীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও আত্মনির্ভরতার চেতনা জাগ্রত করেন |
| উত্তরাধিকার | ভারত-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনুপ্রেরণাদায়ী নারী চরিত্র হিসেবে স্মরণীয় |
ঊষা গুহ
ভূমিকা :- মহিয়ষী ঊষা গুহ ছিলেন ভারতবর্ষ-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক সাহসী ও দেশপ্রেমিক নারী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সমাজের নারীদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মনির্ভরতা ও শিক্ষার গুরুত্ব প্রচার করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। একদিকে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন, অন্যদিকে সমাজসেবামূলক কাজেও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। তাঁর চিন্তা, আদর্শ ও ত্যাগ স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারায় নারীদের অংশগ্রহণকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ঊষা গুহ ছিলেন সেই সময়ের এক প্রগতিশীল কণ্ঠ, যিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, দেশপ্রেম ও সংগ্রামে নারী পুরুষের পার্থক্য নেই— সকলেই সমানভাবে মাতৃভূমির সেবায় নিবেদিত হতে পারেন।
ঊষা গুহর জন্ম
১৮৯৯ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঊষা গুহ।
বিপ্লবী ঊষা গুহর পিতামাতা
তাঁর পিতার নাম অভয়চন্দ্র ঘোষ ও মাতার নাম হেমাঙ্গিনী দেবী।
দেশাত্মবোধের প্রেরণায় ঊষা গুহ
১৯২১ সালে গান্ধীজীর আহ্বানে তিনি দেশাত্মবোধের প্রেরণা পান।
আইন অমান্য আন্দোলনে ঊষা গুহ
১৯৩০ সালে নোয়াখালিতে তিনি লবণ সত্যাগ্রহ করেন। ১৯৩২ সালেও আইন অমান্য আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ঊষা গুহের উদ্যোগে ঘরোয়া বেঠক
১৯৩২ সালের আন্দোলনের সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। একদিন নবাবগঞ্জ থানার গালিমপুর গ্রামে একটা ঘরোয়া বেঠক অনুষ্ঠিত হয় কর্মী সুনীতি বসু ও ঊষা গুহের উদ্যোগে। সেই সময়ে প্রায় দুইশত গুর্খা সৈন্য সেই বাড়ী ঘেরাও করে।
গ্রেপ্তার ঊষা গুহ
তখন বিকাল ৪ টা পুলিস সুনীতি বসু ও ঊষা গুহকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে। প্রায় ৬।৭ মাইল হাঁটবার পর রাত্রি আটটার সময় তাঁদের নবাবগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। থানার দারোগা কনেস্টবলদের চুপিচুপি কিছু বলে দেয়।
বেতঝোপের মধ্যে সুনীতি বসু ও ঊষা গুহকে নিক্ষেপ
তারপর পুলিস আবার তাঁদের হাঁটিয়ে নিয়ে চললো এক জঙ্গলের দিকে। সেই জঙ্গলের একটা নিবিড় বেতঝোপের মধ্যে তাঁদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিয়ে তারা চলে যায়। বেতঝোপটা এত ঘন ছিল যে, আকাশও দেখা যাচ্ছিল না, তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসাও অসম্ভব। সারারাত্রি মহিলা দুজন সেখানে নিরুপায়ভাবে আটকে রইলেন।
গান্ধীজীর নামের প্রভাব
ঊষা দেবী জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগে জিজ্ঞেস করলেন, “সুনীতিদি, আমাদের এ কোথায় ফেলে দিয়ে গেল?” সুনীতি বসু অভয় দিয়ে বললেন, “ভয় কি? যাঁর নাম করে বেরিয়েছ তাঁকে স্মরণ কর।” গান্ধীজীর নামের ছিল এমনই প্রভাব।
থানায় ঊষা গুহ
গালিমপুরের জঙ্গলে বাঘ থাকত। পুলিসরা বলেছিল, সেই রাতে নাকি কেউ কেউ তারা বাঘ দেখেছিল। ভোর হলে পুলিস দেখল যে, ঐ নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে দুটি গান্ধী অনুগতা স্বদেশভক্ত নারী তখনও বেঁচে আছেন, বাঘে খায় নি। সেখান থেকে আবার তাঁদের থানায় নিয়ে যায়। থানাতে নিয়ে গিয়ে কুৎসিত গালাগালি করেও দারোগা তাঁদের মনোবল বিন্দুমাত্রও ক্ষুন্ন করতে পারে নি।
সুনীতি বসু ও ঊষা গুহর জরিমানা
কোর্টে মামলা শুরু হল। তিনমাস হাজতবাসের পর তাঁদের প্রতি একশত টাকা জরিমানা দণ্ডের আদেশ হয়।
উত্তরাধিকার
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনুপ্রেরণাদায়ী নারী চরিত্র হিসেবে তিনি আজও স্মরণীয়।
উপসংহার :- ঊষা গুহ ছিলেন এমন এক দেশপ্রেমিক নারী, যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজের অবদান রেখে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, আদর্শ ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়েননি, বরং নারীদের জাগরণের পথও সুগম করেছিলেন। ঊষা দেবী প্রমাণ করেছিলেন যে নারীশক্তি সমাজ ও জাতির মুক্তির পথে এক অনন্য শক্তি। আজও তাঁর ত্যাগ, সাহস ও দেশপ্রেম আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে তাঁর নাম শ্রদ্ধাভরে উচ্চারিত হয়।
(FAQ) ঊষা গুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
ঊষা দেবী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির মতো সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষার প্রচার, সমাজসেবা ও দেশপ্রেম জাগরণের কাজ করেছেন।
তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে দেশপ্রেম ও ত্যাগ শুধু পুরুষদের দায়িত্ব নয়; নারীরাও সমানভাবে স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে।
তাঁর জীবন থেকে শিখি— সাহস, দেশপ্রেম, আত্মনিবেদন ও ন্যায়বোধ সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শক্তি।