২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন প্রসঙ্গে মন্দির, প্রতীক পূজা, মূর্তি পূজা, উপাসনা, কবরব্যবস্থা, পরলোকে বিশ্বাস ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে জানবো।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন

ঐতিহাসিক ঘটনাহরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন
পবিত্র স্থানহলঘর, স্নানাগার
পূজাটোটেম বা প্রতীক পূজা
উপাসনাপশু, প্রাকৃতিক শক্তি, অশুভ শক্তি
হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন

ভূমিকা:- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেসব প্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারত -এর হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতা। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভারতের সিন্ধুনদের উপত্যকা অঞ্চলে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন

মাটি খুঁড়ে যেসব মূর্তি ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে তার ওপর ভিত্তি করে পণ্ডিতগণ হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবনের প্রতি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। এখানকার অধিবাসীরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির আরাধনা করত বলে মনে করা হয়।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার মন্দির

হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত কয়েকটি অট্টালিকা দেখে এগুলিকে অনেকে মন্দির বলে অভিমত দিয়েছেন। তবে এখানে মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ড. রামশরণ শর্মা মনে করেন যে, হরপ্পার সমাজে কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব পূর্ণ ছিল না। অবশ্য এই সভ্যতায় ‘হলঘর’ বা উপাসনা কক্ষ ও স্নানাগারকে পবিত্র স্থান মনে করা হত বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় প্রতীক পূজা

পণ্ডিতদের মতে হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করত। তাদের মধ্যে ‘টোটেম’ বা ‘প্রতীক পূজা’র প্রচলন ছিল। এখানে তার কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্রাকৃতি পাথরের গায়ে যোনি চিহ্ন, লিঙ্গের আকৃতিবিশিষ্ট পাথরখণ্ড প্রভৃতি এখানকার প্রতীক পূজার উদাহরণ।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় মূর্তিপূজা

হরপ্পা সভ্যতায় বিভিন্ন মূর্তিপূজার প্রচলন ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। যেমন –

(১) দেবীমূর্তি

এখানে এমন কিছু নারীমূর্তি পাওয়া গেছে যেগুলিকে দেবী জ্ঞানে হরপ্পার অধিবাসীরা পূজা করত বলে মনে করা হয়। মূর্তির কাছে প্রদীপ জাতীয় কিছু জ্বালানো হত এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। নরবলি চিহ্নিত একটি সিল পাওয়া গেছে যা থেকে মনে করা হয় যে, দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়ার প্রচলন ছিল। একটি সিলে উত্থানপাদ ভঙ্গিতে একটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে যার গর্ভ থেকে চারাগাছ নির্গত হয়েছে। পণ্ডিতরা এটিকে উর্বরতার দেবী বলে মনে করেন।

(২) দেবমূর্তি

সিন্ধুর একটি সিলমোহরে এমন একটি দেবমূর্তি পাওয়া গেছে যার তিনটি মুখ এবং মাথায় দুটি শিং আছে। তিনি যোগীর আসনে বসে আছেন। তাঁকে পাঁচটি পশু (হাতি, বাঘ, গণ্ডার, দুটি হরিণ) বেষ্টন করে আছে। স্যার জন মার্শাল একে পশুপতি শিবের মূর্তি বা ‘আদি শিবের মূর্তি’ (Proto Shiva) বলে উল্লেখ করেছেন।

(৩) নর ও পশু মূর্তি

একটি সিলে এমন একটি মূর্তি দেখা যায় যার অর্ধেকটা নর এবং অর্ধেকটা বৃষ বা ষাঁড়। ঐতিহাসিকগণ এর সঙ্গে সুমেরীয় মূর্তির সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন যা দুই সভ্যতার ঐক্যের প্রমাণ দেয়।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় উপাসনা

হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন সিলমোহর থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনার আভাস পাওয়া যায়। যেমন –

(১) পশুর উপাসনা

হরপ্পা সভ্যতার মানুষ ষাঁড়, হাতি, হরিণ, মহিষ, গণ্ডার, বাঘ প্রভৃতি পশুর পূজা করত বলে মনে করা হয়। একটি দেবতার মূর্তির মাথায় সাপের ফণা থেকে এই সভ্যতায় নাগপূজার প্রচলনের অনুমান করা হয়।

(২) প্রাকৃতিক শক্তির উপাসনা

সিন্ধুর পিপ্পলি বৃক্ষ (বট গাছ), জল, আগুন ও নদীকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করা হত বলে পণ্ডিতরা মনে করেন। কোনো কোনো সিলে ‘স্বস্তিকা চিহ্ন’ ও ‘চক্র চিহ্ন’ সূর্য উপাসনার কথা মনে করিয়ে দেয়।

(৩) অশুভ শক্তির উপাসনা

সিন্ধুর বাসিন্দারা ভুত, প্রেত ইত্যাদি অশুভ শক্তিতে বিশ্বাসী ছিল বলেও মনে করা হয়। কারণ, ধ্বংসাবশেষে কিছু কবচ বা মাদুলি পাওয়া গেছে।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতার কবর ব্যবস্থা

হরপ্পার সমাজে মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতিতে পার্থক্য লক্ষ্য করে অনেকে মনে করেন যে, সম্ভবত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অন্তোষ্টিক্রিয়া প্রচলিত ছিল। যেমন –

(১) দ্রব্যসামগ্রী-সহ কবর

কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃতদেহ কবর দেওয়ার সময় তার সঙ্গে মৃতের ব্যবহার্য দ্রবসামগ্রী কবরে রাখা হত। মহেঞ্জোদারোতে এমন ৩০টি কবর পাওয়া গেছে।

(২) দ্রব্যসামগ্রীহীন কবর

মহেঞ্জোদারো ও কালিবঙ্গানে কিছু কবর পাওয়া গেছে যেখানে শুধু মৃতদেহই কবর দেওয়া হত, সঙ্গে কোনো দ্রব্যসামগ্রী দেওয়া হত না।

(৩) ভস্ম কবর

কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃতদেহ আগে দাহ করে তার ভস্ম কবর দেওয়া হত। মৃতদেহ সাধারণত উত্তর-দক্ষিণে শায়িত হত।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় পরলোকে বিশ্বাস

সিন্ধু সভ্যতায় মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি থেকে ঐতিহাসিকরা অনেকে অনুমান করেন যে, এই সভ্যতার মানুষ নিশ্চয়ই পরলোকে বিশ্বাস করত। এজন্য মৃতদেহগুলি কবর দেওয়া হত এবং মৃতের সঙ্গে তার ব্যবহার্য সামগ্রী দিয়ে দেওয়া হত।

সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতায় ধর্মনিরপেক্ষতা

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতাসুমেরীয় সভ্যতার মতোই সিন্ধু সভ্যতাও ধর্মকে ভিত্তি করেই বিকশিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিক এ. এল. বাসাম মনে করেন। অপরদিকে, স্যার মার্টিমার হুইলার মনে করেন যে, এই সভ্যতায় এক ধর্মনিরপেক্ষ শাসন প্রণালী চালু ছিল।

উপসংহার:- হরপ্পা সভ্যতায় ধর্মভিত্তিক নাকি ধর্মনিরপেক্ষ শাসন প্রনালী গড়ে উঠেছিল তার সঠিক ভাবে বলা যায় না। তবে এই সভ্যতায় যে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সে সম্পর্কে অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমত।

(FAQ) হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. হরপ্পা সভ্যতার পবিত্র স্থান কি ছিল?

হলঘর বা উপাসনা কক্ষ ও স্নানাগার।

২. হরপ্পার প্রতীক পূজা কে কি বলা হত?

টোটেম পূজা।

৩. হরপ্পাই সূর্য উপাসনার কি প্রমাণ পাওয়া গেছে?

হরপ্পার সিলে ব্যবহৃত স্বস্তিকা ও চক্র চিহ্ন।

৪. হরপ্পাই মৃতদেহ কোন দিকে শায়িত হতো?

উত্তর-দক্ষিণে।

0 thoughts on “হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন”

  1. হরপ্পা সভ্যতার কৃষি, সম্পর্কে একটা বিস্তারিত তথ্য যদি পেতাম ভালো হতো 🙁 BA 1St year

    Reply
    • আপনার উৎসাহ ও অনুসন্ধিৎসার জন্য আমরা খুবই আপ্লুত। আপনার অনুসন্ধিৎসা আমরা খুব শীঘ্রই পূরণ করার চেষ্টা করছি। অনুগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটি সাবস্ক্রাইব করে সঙ্গে থাকুন (ধন্যবাদ)।

      Reply

Leave a Comment