২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ প্রসঙ্গে দক্ষিণে স্বতন্ত্র নীতি, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি পরিচয়, ধনসম্পদ লাভ ও প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজন অনুসারে নীতি, মূল উদ্দেশ্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ, দাক্ষিণাত্যে সার্বজনীন আতিথ্য, রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার ভিত নির্মাণ ও খলজি সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে জানবো।

Table of Contents

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ

বিষয়আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ
সুলতানআলাউদ্দিন খলজি
রাজত্বকাল১২৯৬-১৩১৬ খ্রি:
বংশখলজি বংশ
উপাধিদ্বিতীয় আলেকজান্ডার
আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ

ভূমিকা :- আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি ভারতবর্ষ-এর পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তিনি দাক্ষিণাত্যে যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তাকে সম্পূর্ণভাবে ‘policy of annexation’ বলা যায় না। যদিও ‘annexation’-এর সমস্ত রকম স্পষ্ট লক্ষণ ছিল।

আলাউদ্দিন খলজির দক্ষিণে স্বতন্ত্র নীতি

সুলতান আলাউদ্দিন উত্তর ভারতে যে নীতি গ্রহণ করেন দাক্ষিণাত্যে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তা থেকে স্বতন্ত্র নীতি গ্রহণ করেন। সরাসরি দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি সাম্রাজ্যভুক্ত করার পরিবর্তে, তিনি দক্ষিণী রাজ্যগুলির স্বতন্ত্রতা বিনষ্ট না করে দিল্লির করদরাজ্যে পরিণত করেছিলেন।

আলাউদ্দিন খলজির রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয়

  • (১) দাক্ষিণাত্যে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠারও তিনি চেষ্টা করেন নি। দাক্ষিণাত্যের কোনো শাসককে উচ্ছেদ করে সেখানে কোনো মুসলমান শাসককে নিয়োগ করেন নি।
  • (২) এই নীতি গ্রহণ অত্যন্ত বাস্তব ও চরম রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচায়ক। তিনি অত্যন্ত বাস্তববাদী ছিলেন বলে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সুদূর দিল্লি থেকে দাক্ষিণাত্য শাসন করা অসম্ভব ছিল।

আলাউদ্দিন খলজির ধনসম্পদ লাভ ও প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা

দাক্ষিণাত্যে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তিনি ঠিক কী নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা বলা শক্ত। যদিও সেখানকার ধনসম্পদ লাভ করা ও নিজের প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মূল লক্ষ্য, তবুও দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তার যে তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

প্রয়োজন অনুসারে আলাউদ্দিন খলজির নীতি

সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণে আলাউদ্দিনের নীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যেখানে যেমন নীতি প্রয়োজন, সেই নীতি গ্রহণ করেছেন।

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল উদ্দেশ্য

তিনি কঠোর বাস্তববাদী ছিলেন বলে দাক্ষিণাত্যকে সরাসরি দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে সুলতানি সাম্রাজ্যের নতুন সমস্যা তিনি সৃষ্টি করতে চান নি। তাই দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি দিল্লির কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে প্রতি বছর কর পাঠাবে, এই ছিল আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য নীতির মূল উদ্দেশ্য।

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি সম্পর্কে আয়েঙ্গারের অভিমত

এইদিক লক্ষ করেই ড. কে. এস. আয়েঙ্গার দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে আলাউদ্দিনের দুগ্ধবতী গাভী বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও মনে করেন, দক্ষিণ ভারতে আলাউদ্দিন ইসলামের প্রসারেও মোটেই আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি দক্ষিণ ভারতে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার এবং উক্ত রাজ্যগুলির নরপতিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার কখনও চেষ্টা করেন নি।

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি সম্পর্কে উপেন্দ্রনাথ দে-র অভিমত

  • (১) প্রখ্যাত গবেষক ড. উপেন্দ্রনাথ দে আমির খসরুর ও ইসামির বিবরণ এবং একটি সমকালীন জৈন রচনার ভিত্তিতে বলেছেন যে আলাউদ্দিন দক্ষিণের রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করার নীতি গ্রহণ করেন।
  • (২) প্রকৃতপক্ষে তিনি চেয়েছিলেন দক্ষিণের রাজ্যগুলি তাঁর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করবে। তাঁকে বার্ষিক কর দেবে ও তাঁর আদেশ পালন করবে। এজন্য তিনি দেবগিরিকে কেন্দ্র করে তাঁর আধিপতাকে দৃঢ় করার চেষ্টা করেন। নিছক লুণ্ঠন বা ইসলামের প্রসার তাঁর সম্প্রসারণের লক্ষ্য ছিল একথা বলা যাবে না।

আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ

প্রকৃতপক্ষে আলাউদ্দিনের দাক্ষিণাত্য নীতির পশ্চাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছিল। উপরন্তু দক্ষিণের সঞ্চিত ধনরত্নের প্রতি নিশ্চয়ই আলাউদ্দিন প্রলুব্ধ হয়েছিলেন।

আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি কর্তৃক মন্দির ধ্বংস

মালিক কাফুর পাণ্ড্য রাজ্য-এ অনেক মন্দির ধ্বংস করেন। ড. হবিবুল্লাহ প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, মন্দির বিনষ্টের পিছনে ধর্মবিদ্বেষ ছিল না, ধনসম্পদ আহরণই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ভারতের মন্দিরগুলি ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বর্ণখনি।

দিল্লির প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি

  • (১) মালিক কাফুর দাক্ষিণাত্যে বার বার অভিযান করেন এবং অগণিত ধনসম্পদ দিল্লিতে প্রেরণ করার ফলে, দাক্ষিণাত্যের নরপতিদের স্থায়ী আনুগত্যলাভে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য বঞ্চিত হয়েছিল।
  • (২) এরই ফলে দাক্ষিণাত্যের নরপতিদের মনে দিল্লির প্রতি এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক আধুনিক ঐতিহাসিক বিজয়নগর সাম্রাজ্য-এর উত্থানকে এই প্রতিক্রিয়ার চরম অভিব্যক্তি বলে মনে করেন।

আলাউদ্দিন খলজির উদ্দেশ্য দাক্ষিণাত্যের সর্বজনীন আতিথ্য

  • (১) দেখা যায় যে, সুলতানের সৈন্যবাহিনী দাক্ষিণাত্য ত্যাগ করলেই দাক্ষিণাত্যের নরপতিগণ দিল্লির প্রতি উদাসীন হয়ে পড়তেন। বিশেষ করে দাক্ষিণাত্যের নরপতিদের মানসিকতাকে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল।
  • (২) অথচ আলাউদ্দিন চেয়েছিলেন দাক্ষিণাত্যের সর্বজনীন আতিথ্য। প্রকৃতপক্ষে দাক্ষিণাত্য অভিযান আংশিক সফল হয়েছিল, পুরোপুরি দাক্ষিণাত্য কখনও সুলতানের আনুগত্য মেনে নেয় নি।

আলাউদ্দিন খলজি কর্তৃক দাক্ষিণাত্যে প্রথম সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ

দাক্ষিণাত্যে বারবার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে যেমন তিনি বিরাট সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন, অপরদিকে তেমনি তিনি নিজেকে দাক্ষিণাত্যের প্রভু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনিই দাক্ষিণাত্যে প্রথম সুলতানি সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত করেন।

আলাউদ্দিন খলজি কর্তৃক রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার ভিত নির্মাণ

আলাউদ্দিনই প্রথম নরপতি, যিনি দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে উত্তর ভারতের সংযোগ স্থাপন করে নিজেকে ভারতবর্ষের প্রথম সার্বভৌম অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার ফলে একদিকে যেমন তিনি মধ্যযুগের ইতিহাসে ‘প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলেন, অপরদিকে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রথম ভিত নির্মাণ করে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।

খলজি সাম্রাজ্যবাদ

দক্ষিণ ভারত অভিযানের ফলে দেবগিরি, বরঙ্গল, দ্বারসমুদ্র, মাদুরা ও সুদূর দক্ষিণ পর্যন্ত খলজি সাম্রাজ্যবাদের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে তাদের বিবাদ-বিসম্বাদই খলজি সাম্রাজ্যবাদের সাফল্যের পথ প্রস্তুত করেছিল।

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের মঞ্চ দেবগিরি

  • (১) দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রদেব দাক্ষিণাত্য অভিযানে মালিক কাফুরের একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে কাজ করেছিলেন। মালিক কাফুর দেবগিরিকে দাক্ষিণাত্য বিজয়ের মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন।
  • (২) রামচন্দ্রদেব তেলেঙ্গনা অভিযানে কাফুরকে সাহায্য করেন এবং পাণ্ড্য রাজ্য আক্রমণের সময় কাফুরের সৈন্যবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তবে উত্তর ভারতের এই বারবার অভিযান হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণের রাজারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোনো প্রতিরোধের চেষ্টা করেন নি।

আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতি সম্পর্কে ডঃ লালের অভিমত

দক্ষিণের শাসকদের খলজি বাহিনীর হাতে বার বার পরাজয়ের জন্য ড. কে. এস. লাল দক্ষিণের নরপতিদের অনৈক্যকে দায়ী করেন নি, তিনি দায়ী করেছেন দক্ষিণের সেনাবাহিনীর অপদার্থতাকে।

উপসংহার :- রণকৌশল, দক্ষতা ও শারীরিক শক্তিতে দক্ষিণের সৈন্যদের অপেক্ষা খলজি বাহিনী শ্রেষ্ঠ ছিল। এই শ্রেষ্ঠত্বই প্রকৃতপক্ষে দাক্ষিণাত্যে দিল্লি সুলতানির সম্প্রসারণকে সম্ভব করে এবং আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদ সর্বভারতীয় চরিত্র অর্জন করে।

(FAQ) আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য নীতির মূল্যায়ণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের উদ্দেশ্য কি ছিল?

ধনসম্পদ লাভ ও নিজ প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠা।

২. আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?

মালিক কাফুর।

৩. আলাউদ্দিন খলজি কখন দেবগিরি অভিযান করেন?

১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে।

৪. আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকাল কত?

১২৯৬-১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment