গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজ্য শাসন নীতি প্রসঙ্গে অরাজকতা, মেওয়াটি দস্যু দমন, সাংবিধানিক সম্পর্ক, শাসন সংগঠন, তুঘ্রিল খানের বিদ্রোহ ও মোঙ্গল আক্রমণ সম্পর্কে জানবো।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজ্য শাসন নীতি
বিষয় | বলবনের রাজ্যশাসন নীতি |
সুলতান | গিয়াসউদ্দিন বলবন |
রাজত্ব | ১২৬৬-১২৮৬ খ্রিস্টাব্দ |
বংশ | দাস বংশ |
পূর্বসূরি | নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ |
উত্তরসূরি | মুইজুদ্দিন কাইকোবাদ |
ভূমিকা :- ১২৬৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহের মৃত্যু হলে তার শ্বশুর ও প্রধান নায়েব গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন দাস বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজ্যে অরাজকতা
নায়েব-ই-মামলিকাৎ হিসেবে বলবনের শাসনকার্যে বহু অভিজ্ঞতা ছিল। তথাপি তার সম্মুখে বহু জটিল সমস্যা দেখা দেয়। জিয়াউদ্দিন বরণীর মতে, সর্বপ্রধান যে সমস্যা বলবনকে বিভ্রান্ত করে তা ছিল আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা। ইলতুৎমিস-এর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরদের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে বিরোধের জন্য শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এই সুযোগে সাম্রাজ্য-এর সর্বত্র ঘোর অরাজকতা দেখা দেয়।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় মেওয়াটি দস্যুর ভীতি
মেওয়াটী ও কার্টিহারের দস্যুরা দোয়াব ও দিল্লীর পাশের গ্রামজীবনকে লুঠপাটে জর্জরিত করে। বাণিজ্যপথগুলি দস্যুদলের অত্যাচারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। দস্যু্রা দিল্লী নগরীর ওপর হামলা চালায়। জুম্মা নওয়াজের দিন দিনের বেলায় দস্যুর ভয়ে দিল্লীর বাদাউন দরওয়াজা বন্ধ রাখতে হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের সিংহাসন লাভে সাংবিধানিক সম্পর্ক
বলবনের আরেক সমস্যা ছিল এক শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধরনের। যদিও তিনি নিজে ছিলেন এক ভূতপূর্ব তুর্কী দাস কর্মচারী, যদিও তিনি বন্দেগী-ই-চাহালগানীর সদস্য ছিলেন, তথাপি সিংহাসনে বসে তিনি উপলব্ধি করেন যে, সুলতান ও তুর্কী আমীরদের মধ্যে সমান মর্যাদা থাকলে সাম্রাজ্যে গোলযোগ দেখা দেবে। সুলতান ও আমীরদের মধ্যে সাংবিধানিক সম্পর্ক স্থির করার তীব্র প্রয়োজনীয়তা তিনি বুঝেন।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসন সংগঠন
দিল্লী সুলতানির শাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন ও মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা বলবন বুঝেন। সুলতানি সেনাদল ও রাজস্ব বিভাগের পুনর্বিন্যাসের জন্যও তাকে প্রস্তুত হতে হয়। বলবন যখন সিংহাসনে বসেন তখন বিশেষ রাজস্ব আদায় হত না। এজন্য রাজকোষ ছিল খালি। ফলে শাসন ও সেনাদল পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট অর্থের সরবরাহ ছিল না।
গিয়াসউদ্দিন বলবন কর্তৃক তুঘ্রিল খানের বিদ্রোহ
এই সঙ্গে বাংলায় তুঘ্রিল খান-এর বিদ্রোহ দমন ছিল তার অন্যতম সমস্যা। ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর রাজপুতনা ও মধ্য ভারতে হিন্দু রাজারা বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহগুলিকে তাকে দমন করতে হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমলে মোঙ্গল আক্রমণ
- (১) সর্বোপরি বৈদেশিক আক্রমণ অর্থাৎ মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য বলবনকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়। মোঙ্গল আক্রমণের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মধ্য-এশিয়ার খারাজ রাজ্য, বা বাগদাদের খলিফার আধিপত্য, পারসিক সাম্রাজ্য প্রভৃতি অধিকাংশ দেশ মোঙ্গল আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়।
- (২) এর পর মোঙ্গল বাহিনী উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে পাঞ্জাবে ঢোকার চেষ্টা করে। যদি মোঙ্গলরা ভারতে ঢুকত তবে তুর্কী সুলতানি ভারতের বুক হতে অচিরে মুছে যেত। সুতরাং মোঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করা ছিল বলবন ও অন্যান্য সুলতানদের কাছে অস্তিত্বের প্রশ্ন।
উপসংহার :- বলবন এই দুরূহ সমস্যাগুলির সমাধান অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে করেন। কঠোর রাজ্য শাসন নীতি অনুসরণ করে তিনি তার সামনের সমস্যা গুলি নিশ্চিহ্ন করেন। তার রাজ্য শাসন নীতি রক্ত ও লৌহ নীতি নামে পরিচিত, মা পরবর্তীতে জার্মানির বিসমার্ক গ্ৰহণ করেন।
(FAQ) গিয়াসউদ্দিন বলবনের রাজ্য শাসন নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১২৬৬-১২৮৬ খ্রিস্টাব্দ।
সুলতান নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহ।
গিয়াসউদ্দিন বলবন।
গিয়াসউদ্দিন বলবন।