২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ

নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ প্রসঙ্গে নতুন বিশ্ব, নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, নতুন বিশ্বের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা, নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্য, নতুন বিশ্বে স্পেনের উপনিবেশ, ব্রিটেনের উপনিবেশ, পর্তুগালের উপনিবেশ, ফরাসি উপনিবেশ, ডাচদের উপনিবেশ স্থাপন সম্পর্কে জানবো।

Table of Contents

নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ

ঐতিহাসিক ঘটনানতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ
নতুন বিশ্ব কথাটির ব্যবহারআমেরিগো ভেসপুচি
সময়কাল১৫০৩ খ্রি
আমেরিকায় প্রথম পদার্পণকলম্বাস
সময়কাল১৪৯২ খ্রি
ত্রয়োদশ উপনিবেশইংল্যান্ড
ব্রাজিলে পদার্পণপেড্রো কেব্রাল
নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ

ভূমিকা :- পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্র সম্পর্কে মানুষের কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। তা সত্ত্বেও এই সময় থেকে স্পেন সামুদ্রিক অভিযানে যথেষ্ট তৎপরতা ও সাফল্য দেখায়। এই সময় জলপথে প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছোনোর জন্য ইউরোপ-এর বিভিন্ন দেশের বণিকরা উদগ্রীব হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে, পৃথিবী বৃত্তাকার হওয়ায় পশ্চিমদিকে জাহাজ ভাসিয়েও একসময় প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছোনো যাবে। যাই হোক, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাবিক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পশ্চিম দিকে অভিযান চালান।

নতুন বিশ্ব

“নতুন বিশ্ব” বা “New World” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ইতালিয় নাবিক ও স্পেনীয় অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি। তিনি লরেঞ্জো দ্য মেডিচিকে ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে লেখা একটি চিঠিতে কলম্বাস আবিষ্কৃত মহাদেশটিকে “Mundus Novus” বা “New World” বলে উল্লেখ করেন।

আমেরিকা বা নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা

পঞ্চদশ শতকের শেষার্ধ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যেই কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, সেবাটিয়ান ক্যাবট, পেড্রো আলভারেজ কেব্রাল প্রমুখের অভিযানগুলি নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

উপনিবেশ বিস্তারে পর্তুগাল ও স্পেনের অবনমন

তবে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে পর্তুগাল ও স্পেন সামুদ্রিক অভিযানে এগিয়ে থাকলেও সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজরা তাদের অনেকটাই পিছনে ফেলে দেয়।

সপ্তদশ শতকে নৌ-অভিযান

ষোড়শ শতক ও সপ্তদশ শতকের মধ্যেই স্পেন নতুন বিশ্বের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, পেরু, বলিভিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে ইত্যাদি। টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়াতেও স্পেনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রাজিলে পর্তুগালের উপনিবেশ স্থাপিত হয়। কিন্তু সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স-এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

কার্টিয়ারের অভিযান

ফ্রান্সের নাবিক জন কার্টিয়ার ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সেন্ট লরেন্স উপত্যকায় পৌঁছোন এবং কানাডা অঞ্চলে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।

নতুন বিশ্বে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা

  • (১) ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে কলম্বাসের পদার্পণের পূর্বে আমেরিকা মহাদেশে রেড ইন্ডিয়ান নামে স্থানীয় বাসিন্দারা বসবাস করত। সামুদ্রিক অভিযানের সূত্রে আমেরিকা মহাদেশ অর্থাৎ নতুন বিশ্বের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রচুর জমিজায়গা, বিপুল পরিমাণ সোনারুপার সজ্জিত থাকার সম্ভাবনা, জীবন-জীবিকার সুবিধা প্রভৃতির আকর্ষণে ইউরোপীয়রা দলে দলে নতুন বিশ্বে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে।
  • (২) তারা নতুন বিশ্বের উপনিবেশগুলিতে এসে রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা ও বিতাড়িত করে এই মহাদেশে বসবাস শুরু করে। তারা এখানে কৃষি খামার স্থাপন ও কৃষিপণ্য রপ্তানি শুরু করে।

ইউরোপীয়দের নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্য

নতুন বিশ্বে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • (১) উপনিবেশগুলির সোনা, রুপা, খনিজ সম্পদ প্রভৃতি সংগ্রহ।
  • (২) ওই অঞ্চলগুলিতে খ্রিস্টধর্মের প্রসার।
  • (৩) বাণিজ্যের প্রসার।

ইউরোপের বণিকরা কানাডার ফার, ভার্জিনিয়ার তামাক ও তুলো, ব্রাজিলের চিনি, অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন অর্থকরী কৃষিপণ্য ইউরোপে রপ্তানি করত এবং সেখানে তা বহুগুণ বেশি দামে বিক্রি করত

আফ্রিকা থেকে নতুন বিশ্বে ক্রীতদাস আমদানি

  • (১) নতুন বিশ্বে কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে প্রচুর সংখ্যক কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই উদ্দেশ্যে আফ্রিকা থেকে নিয়মিত প্রচুর সংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস এখানে আমদানি করা হয় এবং তাদের শ্রমের বিনিময়ে কৃষিকার্য সচল রাখা হয়।
  • (২) আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে ক্রীতদাসদের আমেরিকায় রপ্তানির ব্যাবসা ‘আটলান্টিক ক্রীতদাস ব্যাবসা’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিকদের হিসাব অনুযায়ী, আফ্রিকা থেকে অন্তত ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস নতুন বিশ্বে রপ্তানি করা হয়।

কৃষ্ণাদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য

আফ্রিকা থেকে নতুন বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাস আমদানি করার ফলে এই অঞ্চল আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। নতুন বিশ্বে ইউরোপের সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ খামার মালিক ও বণিক শ্রেণি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দাদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। নতুন বিশ্বে ইউরোপীয়দের আইন, প্রশাসন, বাণিজ্য প্রভৃতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

নতুন বিশ্ব থেকে সম্পদের রপ্তানি

  • (১) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, হাডসন কোম্পানি প্রভৃতি ইউরোপীয় বাণিজ্য কোম্পানিগুলি নতুন বিশ্বে নিজেদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম শুরু করে। সেখানকার বিভিন্ন স্থানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিকদের একচেটিয়া বাণিজ্য শুরু হয়।
  • (২) ঔপনিবেশিক শাসকরা নতুন বিশ্বে নিজেদের উপনিবেশগুলিতে শোষণ চালিয়ে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ ইউরোপে তাদের মাতৃভূমিতে পাঠাতে থাকে। ফলে নতুন বিশ্বের সম্পদে ইউরোপের দেশগুলি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
  • (৩) বেশ কিছুকাল আমেরিকায় বসবাস করে ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা প্রভূত অর্থসম্পদের মালিক হয়ে ওঠে এবং ইউরোপে ফিরে এসে বাকি জীবন অত্যন্ত বিলাসিতায় অতিবাহিত করে।

আমেরিকা বা নতুন বিশ্বে বিভিন্ন উপনিবেশ

ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফল-এ আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শোষণের যুগ শুরু হয়। পশ্চিমদিকে পোর্তুগালের অধীনস্থ ব্রাজিল এবং ইংরেজ, ফরাসি ও ডাচদের অধীনস্থ গিয়ানা ছাড়া মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সমগ্র অংশে স্পেন নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এর ফলে নতুন বিশ্বের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার দরজা খুলে যায়। পরবর্তীকালে পোর্তুগাল, ফ্রান্স, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশগুলিও আমেরিকার বিভিন্ন অংশে উপনিবেশ গড়ে তোলে।

নতুন বিশ্বে স্পেনের উপনিবেশ

প্রথমদিকে নতুন বিশ্ব অর্থাৎ আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে স্পেনের ঔপনিবেশিক আধিপত্য সর্বাধিক বিস্তৃত হয়। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফ্লোরিডা, মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলে স্পেনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বিভিন্ন দিক গুলি হল –

(ক) নতুন বিশ্বে স্পেনের উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্য

  • (১) ইউরোপীয়রা দক্ষিণ আমেরিকায় সোনা ও রুপার বিশাল ভাণ্ডারের সন্ধান পায়। দক্ষিণ আমেরিকার মূল্যবান ধাতুর ভাণ্ডার নিজেদের করায়ত্ত করা, আমেরিকায় স্পেনের উপনিবেশ স্থাপনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
  • (২) স্পেনীয়দের সামাজিক মর্যাদার উন্নতিবিধান, নিজেদের ধর্মীয় ভাবনার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি কারণেও স্পেন নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনে অত্যন্ত আগ্রহী ছিল। এসব উদ্দেশ্যে স্পেন থেকে প্রচুর মানুষ নতুন বিশ্বে তাদের উপনিবেশগুলিতে এসে বসবাস শুরু করে। সর্বপ্রথম হিসপানিওলা দ্বীপে এবং পরে কিউবা ও পুয়ের্টোরিকো-তে সোনা পাওয়া যায়।

(খ) আফ্রিকা থেকে নতুন বিশ্বে স্পেনীয়দের ক্রীতদাস আমদানি

প্রথমদিকে স্পেনীয়রা দক্ষিণ আমেরিকার পাহাড় থেকে সোনা নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে প্রচুর সংখ্যক স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসী শ্রমিককে নিয়োগ করে। কলম্বাসের আগমনের পূর্বে হিসপানিওলায় প্রায় ১০ লক্ষ স্থানীয় আদিবাসী ছিল। কিন্তু রোগ-ব্যাধি, খাদ্যাভাব ও স্পেনীয়দের নিষ্ঠুর শোষণের ফলে তাদের সংখ্যা খুবই হ্রাস পায়। ফলে আফ্রিকা থেকে প্রচুর সংখ্যক দাস-শ্রমিক আমদানি করে এখানকার শ্রমিকের চাহিদা মেটানো হয়।

(গ) নতুন বিশ্বে স্পেনীয় প্রশাসন

  • (১) স্পেনীয়রা নতুন বিশ্বে তাদের উপনিবেশগুলিকে দূর থেকে শাসন করার চেষ্টা করেছিল। এই বিশাল উপনিবেশ স্পেনীয় রাজবংশের সঙ্গে রাজপ্রতিনিধি দ্বারা যুক্ত ছিল। তাই স্পেনের উপনিবেশকে পুরনো স্পেনের নির্ভরশীল রাজ্য না বলে ‘ভগিনী রাজ্য’ বলা হয়।
  • (২) স্পেনীয় উপনিবেশ শাসনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল Casa de Contratacion (১৫০৩) এবং Council of Indies। প্রথমটি সবরকমের বাণিজ্য দেখাশোনা, লাইসেন্স প্রদান, জাহাজগুলির তত্ত্বাবধান প্রভৃতি করত এবং দ্বিতীয়টি ছিল উপনিবেশ বিষয়ে বিশেষ পরামর্শদাতা ও প্রশাসকমণ্ডলী।
  • (৩) কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে খুব বেশি ক্ষমতাশালী না হয়ে ওঠে সেজন্য স্পেনীয় সরকার checks and balance পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল। গভর্নরের কার্যকাল ছিল পাঁচ বছর থেকে দশ বছর।

(ঘ) নতুন বিশ্বে স্পেনীয়দের বসতি

সোনা ও রুপার খনি অঞ্চলকে ভিত্তি করে আমেরিকায় স্পেনীয়দের বসতি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অঞ্চল ছিল পোর্টেসি। ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ১ লক্ষেরও বেশি। এ ছাড়া নতুন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও স্পেনীয়রা বসতি গড়ে তুলেছিল।

(ঙ) নতুন বিশ্বে স্পেনের ঔপনিবেশিক অর্থনীতি

  • (১) মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশনের কাজকে কেন্দ্র করেই আমেরিকা মহাদেশে স্পেনের ঔপনিবেশিক অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। স্পেনীয়রা আফ্রিকা থেকে প্রচুর সংখ্যক দাস শ্রমিক এনে সোনা সংগ্রহ, কৃষি, পশুপালন, বাণিজ্য ও উৎপাদনমূলক কাজে নিয়োগ করাত। সোনা সংগ্রহ ছাড়া দাস শ্রমিকদের অধিকাংশই এখানকার আখ উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত হত।
  • (২) এখানকার সোনা এবং রুপা ছাড়াও তামা, তামাক, চিনি, নীল, চামড়া প্রভৃতি ইউরোপে রপ্তানি করা হত। স্পেনরাজের অনুমতি ছাড়া আমেরিকায় অন্যান্য দেশের বাণিজ্য করার অধিকার নিষিদ্ধ হয়।

(চ) নতুন বিশ্বে ‘নতুন স্পেন’

  • (১) স্পেনীয়রা আমেরিকার বিস্তীর্ণ অংশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ‘নতুন স্পেন’ গড়ে তোলে। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে চিলি পর্যন্ত অঞ্চলে স্পেনের ঔপনিবেশিক একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। স্পেনের অনুকরণে স্পেনের আমেরিকাস্থিত সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
  • (২) আইনজ্ঞ ও যাজকদের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। স্পেনীয় শাসক, সম্ভ্রান্ত গোষ্ঠী এবং স্থানীয় শ্রমিক কৃষকদের নিয়ে এখানে মিশ্র সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্পেনের খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকগণও আমেরিকায় তাদের কার্যাবলির প্রসার ঘটান।

(ছ) নতুন বিশ্বে স্পেনের ব্যর্থতা

আমেরিকায় স্পেনের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিভিন্ন ঘটনায় ভেঙে পড়তে থাকে। সিংহাসনের উত্তরাধিকার যুদ্ধে (১৭০১-১৪ খ্রি.) স্পেন যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেন দখল করে নিজ ভ্রাতা জোসেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসিয়ে দিলে স্পেনের সঙ্গে আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত উপনিবেশগুলির সম্পর্ক ছিন্ন হয়। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি স্পেনের অধীনতা থেকে মুক্তি পায়।

নতুন বিশ্বে ব্রিটেনের উপনিবেশ

সামুদ্রিক অভিযান ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রথমদিকে স্পেন ও পোর্তুগালের তুলনায় ব্রিটেন পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে তারা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে। –

(ক) নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ডের প্রাথমিক উদ্যোগ

  • (১) ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরির পৃষ্ঠপোষকতায় জন ক্যাবট ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ম্যাথু’ নামক জাহাজে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছোন। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি আমেরিকার নোভাস্কোসিয়া ও নিউ ইংল্যান্ডে পৌঁছে যান।
  • (২) পরবর্তী ২০ বছরে ইংল্যান্ড আরও কয়েকটি অভিযান পাঠিয়ে গ্রিনল্যান্ড এবং লাব্রাডার- এ পৌঁছোয়। এরপর অন্তত ৮০ বছর ইংল্যান্ডে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের ফলে আমেরিকায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইংল্যান্ড কিছুটা উদাসীন হয়ে পড়ে।

(খ) জলদস্যুতা

ব্রিটিশ নাবিক মার্টিন ফ্রোবিশার ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে লাব্রাডার উপকূলে অভিযান চালান এবং সেই সূত্রে জন ডেভিস, হেনরি হাডসন, উইলিয়াম বাফিন প্রমুখ অভিযাত্রী কানাডার নিকটবর্তী জনহীন কয়েকটি দ্বীপে পৌঁছে যান। কিছুকাল পর থেকে ইংরেজ নাবিকরা স্পেনের পণ্য বোঝাই জাহাজগুলি আক্রমণ ও লুণ্ঠন শুরু করে এবং দক্ষিণ আমেরিকার স্পেনীয় সাম্রাজ্যে অভিযান চালায়। ইংল্যান্ডের খ্রিস্টান মিশনারিরা এইসব জলদস্যুতা ও অবৈধ অভিযানগুলিকে সমর্থন করে।

(গ) নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনে সচেতনতা

  • (১) জলদস্যুতার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক লাভ হলেও সুচতুর ব্রিটিশ রাজদরবার ও বণিকরা উপলব্ধি করে যে, নতুন এই মহাদেশের অফুরন্ত সম্পদ দখল করতে হলে এখানে নিজেদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। এবিষয়ে রিচার্ড হ্যাকলুট ও অন্যান্যরা ব্রিটেনের জনগণকে সচেতন করে তোলেন।
  • (২) এর ফলে ইংল্যান্ড বুঝতে পারে যে, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তুলো, রেশম, চিনি, তামাক, কফি, উদ্ভিদজাত রং প্রভৃতি উৎপাদনের মাধ্যমে ব্রিটেনে এসব পণ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর ফলে বিদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির দায় থেকে মুক্ত হয়ে ব্রিটেন নিজস্ব উপনিবেশের পণ্য দিয়েই নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে।

(ঘ) নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনে ইংল্যান্ডের ব্যক্তিগত উদ্যোগ

  • (১) উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় রানি এলিজাবেথ আগ্রহী হলেও অর্থনৈতিক কারণে বেশ কিছুকাল এবিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে নি। ফলে উপনিবেশ স্থাপনে ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
  • (২) স্যার হামফ্রে গিলবার্ট আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি সরকারি সনদের মাধ্যমে আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার অধিকার পান। এরপর থেকে ব্রিটেন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে স্থানগুলির নামকরণ করে এবং সেখানে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

(ঙ) নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ডের ত্রয়োদশ উপনিবেশ

  • (১) ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট রাজাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নীতির ফলে সপ্তদশ শতক থেকে ইংল্যান্ডের প্রচুর মানুষ আমেরিকায় সদ্য-প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে এসে বসবাস শুরু করে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ব্রিটিশরা বেশ কয়েকটি যুদ্ধে আমেরিকাস্থিত ওলন্দাজ ও ফরাসি শক্তিকে পরাজিত করে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে তেরোটি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই উপনিবেশগুলি একত্রে ‘ত্রয়োদশ উপনিবেশ’ নামে পরিচিত।
  • (২) এই তেরোটি উপনিবেশ হল – নিউ হ্যাম্পশায়ার, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, রোড দ্বীপ, নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ডেলাওয়ারস, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, উত্তর ক্যারোলিনা, দক্ষিণ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়া। এছাড়া ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবেশী কানাডা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হলে সমগ্র উত্তর আমেরিকা কার্যত ইংরেজদের দখলে চলে আসে।

(চ) নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশক প্রশাসন

  • (১) বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্নভাবে গড়ে উঠলেও এই উপনিবেশগুলিতে মোটামুটি একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ভার্জিনিয়ায় ঔপনিবেশিক প্রশাসনের স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপিত হয়। গড়ে ওঠে অ্যাংলিকান চার্চ।
  • (২) আইনত উপনিবেশগুলি ইংল্যান্ডের অধীনস্থ হলেও কার্যত এগুলি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। ইংল্যান্ডের সরকার এখানকার প্রতিটি উপনিবেশে একজন করে গভর্নর বা শাসনকর্তা নিয়োগ করে। 

(ছ) নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান

  • (১) ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাতৃভূমি ইংল্যান্ডের শাসকরা আমেরিকায় তাদের উপনিবেশগুলিতে তীব্র শোষণ ও অত্যাচার চালাতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি ইংল্যান্ডের অধীনতা ছিন্ন করে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
  • (২) ফলে উপনিবেশের বাসিন্দাদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ শুরু হয় যা সাধারণভাবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের ফলে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক বন্ধন ছিন্ন করে আমেরিকা ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে।

নতুন বিশ্বে পোর্তুগালের উপনিবেশ

পোর্তুগিজ নাবিক পেড্রো কেব্রাল ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে পদার্পণ করেন। তিনি সেখানে একটি উপনিবেশ স্থাপনের বিষয়ে পোর্তুগিজ সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। কিন্তু তিনি তখনও জানতেন না যে, তিনি যেখানে পৌঁছেছেন তা হল একটি মহাদেশের অংশবিশেষ। যাই হোক, তার উদ্যোগে ব্রাজিলে পোর্তুগিজদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রাজিলে ঔপনিবেশিক শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচিত হল –

(ক) কৃষি অর্থনীতি

পোর্তুগিজরা ব্রাজিলে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে এখানে বাগিচা-অর্থনীতি গড়ে তোলে। তারা আফ্রিকা থেকে প্রচুর সংখ্যক ক্রীতদাস শ্রমিক আমদানি করে এখানকার উৎপাদন কার্যে নিযুক্ত করত। তাদের শ্রমে এখানে চিনি, কফি, তামাক, তুলো, কোকো প্রভৃতি অর্থকরী পণ্য উৎপাদিত হত।

(খ) মূল্যবান ধাতুর সন্ধান

পোর্তুগিজরা সপ্তদশ শতকের শেষদিকে ব্রাজিলে মূল্যবান ধাতুর সন্ধান পায়। এই ধাতু ইউরোপে রপ্তানি করে পোর্তুগাল সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

(গ) নতুন বিশ্বে পোর্তুগালের ঔপনিবেশিক শাসন

ব্রাজিলে পোর্তুগালের ঔপনিবেশিক গঠন ও প্রশাসন স্পেনের থেকে পৃথক ছিল। পোর্তুগাল সপ্তদশ শতকের পূর্বে ব্রাজিলে কোনো ঔপনিবেশিক বিভাগ গঠন করে নি।

(ঘ) নতুন বিশ্বে পোর্তুগালের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান

  • (১) ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগাল আক্রমণ করলে সেখানকার রাজা ষষ্ঠ জোয়াও  ব্রাজিলে পালিয়ে যান এবং সেখানকার রিও-ডি-জেনিরো থেকে পোর্তুগাল শাসন করতে থাকেন।
  • (২) এরপর পুত্র ডোম পেড্রো-র হাতে ব্রাজিলের শাসনভার তুলে দিয়ে রাজা ষষ্ঠ জোয়াও ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগালে ফিরে আসেন। ডোম পেড্রো ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগালের অধীনতা ছিন্ন করে নিজেকে ব্রাজিলের স্বাধীন সম্রাট বলে ঘোষণা করেন।

নতুন বিশ্বে ফরাসি উপনিবেশ

ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রসারের কাজে যোগ দেয়। –

(ক) নতুন বিশ্বের কুইবেক-এ ফরাসি উপনিবেশ

ষোড়শ শতকের তৃতীয় দশকে ফ্রান্স উত্তর আমেরিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে নৌ-অভিযান পাঠাতে শুরু করে। জ্যাক কার্টিয়ার ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট লরেন্স বরাবর অভিযান পাঠিয়ে কুইবেক-এ একটি ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এখানে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি উপনিবেশ গড়ে ওঠে। এরপর ধর্মীয় যুদ্ধের কারণে ফরাসিদের সামুদ্রিক অভিযান কিছুকালের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হয়।

(খ) নতুন বিশ্বের কানাডায় ফরাসি উপনিবেশ

  • (১) পরবর্তীকালে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থাপিত হয়। এই শতকের শেষদিকে ফ্রান্সের বুরবোঁ বংশের প্রতিষ্ঠাতা চতুর্থ হেনরির আমলে ফরাসিরা উত্তর আমেরিকার কানাডায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়ে ওঠে। কানাডা অঞ্চলের ফারের বাণিজ্যের প্রতি আগ্রহ ফরাসি বণিকদের এখানে অভিযান পাঠাতে উৎসাহিত করে।
  • (২) ফরাসি বণিক স্যামুয়েল দ্য সাম্পলেন্ত-এর নাম এবিষয়ে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি আকাডিয়ার (নোভাস্কোসিয়া) পোর্ট রয়্যাল-এ একটি উপনিবেশ স্থাপন করেন। উত্তর আমেরিকার ফার বাণিজ্যের অধিকার নিয়ে ফরাসিদের সঙ্গে ইংরেজ ও ওলন্দাজদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকে।

(গ) নতুন বিশ্বে ফরাসি উপনিবেশগুলির কার্যকলাপ

১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আমেরিকা মহাদেশে ফরাসি জনসংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই হাজার। এদের অধিকাংশই ছিল ফার ব্যবসায়ী, মিশনারি ও প্রশাসক। তবে উপনিবেশগুলিতে ফরাসি রাজার নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেলে এখানে ফরাসি বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কৃষি ও শিল্পোৎপাদনের কাজ শুরু হয়। ফ্রান্সের অনুকরণে এখানে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা হয়।

(ঘ) নতুন বিশ্বে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান

সপ্তবর্ষের যুদ্ধে (১৭৫৬-৬৩ খ্রি.) পরাজয়ের ফলে ফরাসিদের অধীনস্থ কানাডা ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ফলে আমেরিকা মহাদেশে ফরাসিদের ঔপনিবেশিক উদ্যোগ শেষ হয়ে যায়।

নতুন বিশ্বে ডাচদের উপনিবেশ

সপ্তদশ শতকে স্পেনের অধীনতা ছিন্ন করার পর নেদারল্যান্ড বা হল্যান্ডের ওলন্দাজ বা ডাচরা অতি দ্রুত সামুদ্রিক অভিযানে সাফল্য দেখায়। সপ্তদশ শতকে নতুন বিশ্বে স্পেনীয়দের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দীতায় লিপ্ত হয় ওলন্দাজরা এবং ক্রমে নতুন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা উপনিবেশ স্থাপন করেন। –

(ক) নতুন বিশ্বে ডাচদের নিউ আমস্টারডাম উপনিবেশ

  • (১) ডাচরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্পেনীয়দের বাণিজ্যের ওপর হামলা চালিয়ে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ শুরু করে। তারা ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ অভিযাত্রী হাডসনকে আমেরিকা মহাদেশে ডাচ উপনিবেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে নিয়োগ করে।
  • (২) ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে ওঠে। হাডসন আমেরিকা মহাদেশের হাডসন নদী (হাডসনের নামানুসারে এই নদীর নামকরণ হয়) বরাবর অভিযান পাঠানোর পরিকল্পনা করেন। সেই অনুসারে নিউ আমস্টারডামকে কেন্দ্র করে সেখানে ডাচদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নাম হয় নিউ নেদারল্যান্ড আলবানিতে।

(খ) নতুন বিশ্বে ডাচ উপনিবেশের প্রসার

  • (১) এরপর ডেলওয়ার ও কানেকটিকাট নদী বরাবর ডাচদের কয়েকটি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। ডাচরা আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে আক্রমণ চালায়। তারা ব্রাজিলে সফল না হলেও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সফল হয়।
  • (২) ডাচ ও ইংরেজরা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে স্পেনীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এই অঞ্চলের তামাক, চিনি, নীল, ক্রীতদাস প্রভৃতির ব্যবসায় ডাচদের একচেটিয়া অধিকার স্থাপিত হয়।

(গ) নতুন বিশ্বে ডাচ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান

ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নরের অত্যধিক ক্ষমতা, রেড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে ডাচদের সংঘর্ষ প্রভৃতির ফলে তাদের উপনিবেশের প্রসারের কাজ যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাহত হয়। শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডাচদের কাছ থেকে নিউ আমস্টারডাম (ইংরেজরা এর নতুন নামকরণ করে নিউ ইয়র্ক) ছিনিয়ে নিলে উত্তর আমেরিকায় ডাচ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন ভেঙে যায়।

উপসংহার :- ১৫১৯-২১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের নাবিক হার্মান্দো কোর্টেস মেক্সিকো দখল করে আজটেক সভ্যতা ধ্বংস করেন। স্পেনের আরেক এক নাবিক ফ্রান্সিসকো পিজারো ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে পেরু দখল করেন ও ইনকা সভ্যতা ধ্বংস করেন।

(FAQ) নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. নতুন বিশ্ব কথাটি প্রথম কে কখন ব্যবহার করেন?

আমেরিগো ভেসপুচি ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে।

২. আমেরিকা মহাদেশে প্রথম পদার্পণ করেন কে?

কলম্বাস ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে।

৩. ব্রাজিলে প্রথম পদার্পণ করেন কে?

পেড্রো কেব্রাল।

৪. আজটেক সভ্যতা কে ধ্বংস করেন?

স্পেনের নাবিক হার্মান্দো কোর্টেস।

৫. ইনকা সভ্যতা ধ্বংস করেন কে?

ফ্রান্সিসকো পিজারো।

Leave a Comment