দামিন-ই-কোহ

আদিবাসী সাঁওতালদের বসতি দামিন-ই-কোহ অঞ্চল প্রসঙ্গে কথাটির উৎস ও অর্থ, শতাব্দি ধরে অবস্থা, তিনটি ভাগ, নিরবিচ্ছিন্ন জীবন যাপন, মুঘলদের ব্যর্থতা, তালাবদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন, অনাচার বিরাজ, আইন মান্যতা, সাঁওতাল উপজাতি, রাজমহল পাহাড়ে গমন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, আলাদা বসতি, সরকারের উদ্দেশ্য, সাঁওতালদের উচ্ছ্বাস, সাঁওতাল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল পরগনা সম্পর্কে জানবো।

আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাসস্থান দামিন ই কোহ প্রসঙ্গে দামিন ই কোহ কথার উৎস ও অর্থ, শতাব্দী ধরে দামিন ই কোহর অবস্থা, দামিন ই কোহর উপজাতিদের তিনটি ভাগ, দামিন ই কোহর উপজাতিদের নিরবিচ্ছিন্ন জীবনযাপন, দামিন ই কোহ জয়ে মুঘলদের ব্যর্থতা, দামিন ই কোহ অরাজকতার বিস্তার, দামিন ই কোহর সাঁওতাল অধিবাসী, দামিন ই কোহ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্তর্গত, সাঁওতাল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল পরগনার গঠন।

সাঁওতালদের বসতি দামিন-ই-কোহ

ঐতিহাসিক স্থানদামিন-ই-কোহ
অর্থপাহাড়ের প্রান্তদেশ
অবস্থানরাজমহল পাহাড়
পরিচিতির কারণসাঁওতাল বিদ্রোহ
বর্তমান নামসাঁওতাল পরগনা
দামিন-ই-কোহ

ভূমিকা:- ভারত -এর ঝাড়খন্ড রাজ্যের বর্তমান সাহেবগঞ্জ, পাকুড় এবং গোড্ডা জেলায় বিস্তৃতভাবে রাজমহল পাহাড়ের বনাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চলের নাম ছিল দামিন-ই-কোহ (বা কখনও কখনও কেবল দামিন নামেও উল্লেখ করা হয়)।

দামিন-ই-কোহ কথার উৎস ও অর্থ

‘দামিন-ই-কোহ’ একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ পাহাড়ের প্রান্তদেশ। ভারতের এই অঞ্চল বর্তমানে সাঁওতাল পরগণা নামে পরিচিতি।

শতাব্দী ধরে দামিন-ই-কোহ অঞ্চলের অবস্থা

দামিন-ই-কোহ ছিল ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকা। এমনকি উপত্যকায় মাঝে মাঝে পাহাড়িয়া গ্রাম ছাড়া কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছিল না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই অবস্থা ছিল।

দামিন-ই-কোহ উপজাতির তিনটি ভাগ

পাহাড়িয়া আদিম উপজাতির তিনটি দল ছিল। যথা – সাউরিয়া পাহাড়িয়া, কুমারভাগ পাহাড়িয়া এবং মাল পাহাড়িয়া। তারা কবে থেকে রাজমহল পাহাড়ে বসবাস করছিলেনতা বলা কঠিন। তারা বেশিরভাগ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করত।

দামিন-ই-কোহ অধিবাসীদের নিরবিচ্ছিন্ন জীবনযাপন

ব্রিটিশদের আগমনের আগে পাহাড়িরা এই অঞ্চলে রাজত্বকারী শক্তিশালী সাম্রাজ্য -এর দ্বারা নিরবচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছিল। এটি ছিল তাদের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার ফলাফল।

দামিন-ই-কোহ জয়ে মুঘলদের ব্যর্থতা

মুঘলরা কখনোই এই এলাকা জয় করেনি বলে মনে হয়, কারণ তারা গভীর বনে ঘেরা পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

দামিন-ই-কোহ অধিবাসীরা তালাবদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন

তারা ছিল পাহাড়ে তালাবদ্ধ এবং বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই ব্রিটিশ রাজের অধীনস্থ ছিল না।

দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে অনাচার বিরাজ

এই অঞ্চল ব্রিটিশদের শাসনের প্রথম দিকে যে সমস্যাটির সম্মুখীন হয়েছিল তা হল পাহাড়ীরা মুসলিম শাসনের পতনশীল বছরগুলিতে দস্যু ও ডাকাত হয়ে উঠেছিল এবং এই অঞ্চলে অনাচার বিরাজ করেছিল।

দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে আইন মান্যতা

পাহাড়িদের প্রশান্তি এবং তাদের আইন মেনে চলা লোকে রূপান্তর করা ছিল ক্যাপ্টেন ব্রুক, ক্যাপ্টেন ব্রাউন এবং অগাস্টাস ক্লিভল্যান্ডের মতো লোকদের অধীনে প্রাথমিক ব্রিটিশ প্রশাসনের একটি বড় অর্জন।

দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে সাঁওতাল উপজাতি

পূর্ব ভারতে সাঁওতালরা ছিল সর্বাধিক সংখ্যক উপজাতি। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাদের ঐতিহ্য অনুসারে তারা ছোটনাগপুর এবং সংলগ্ন জেলায় বসতি স্থাপন না করা পর্যন্ত একটি বিচরণকারী উপজাতি ছিল।  

রাজমহল পাহাড়ে গমন

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকেজনসংখ্যার চাপ তীব্রভাবে অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে এবং জঙ্গলগুলি পরিষ্কার করার ফলে তারা রাজমহল পাহাড় এবং এর আশেপাশে কুমারী বনের দিকে চলে যায়।

দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত

১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভূমি মালিকদের জমির উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে বাধ্য করে। ভূমি পুনরুদ্ধার এবং উন্নতির জন্য তারা সাঁওতালদের ক্রমাগত ব্যবহার করছিলেন।

আলাদা বসতি দামিন-ই-কোহ

১৮৩২ সালে সরকার সাঁওতালদের বসতি স্থাপনের জন্য দামিন-ই-কোহ নামে একটি বিশাল এলাকা আলাদা করে দেয়। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ১৮৩৮ সালে ৩০০০ থেকে ১৯৫১ সালে ৮২৭৯৫ -এ বৃদ্ধি পায়।

সরকারের উদ্দেশ্য

দামিন-ই-কোহ অঞ্চলে সাঁওতালদের স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনে ব্রিটিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল ঘন বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করা। সরকারের উপলব্ধি হয়েছিল যে, পরিশ্রমী সাঁওতালদের দ্বারা এই কঠিন কাজ সম্পাদন করা সহজহবে।

সাঁওতালদের উচ্ছ্বাস

দারুণ উচ্ছ্বাসে সাঁওতালরা দলে দলে কটক, ধলভূম, মানভূম, বরাভূম, ছোটনাগপুর, পালামৌ, হাজারীবাগ, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম থেকে এসে দামিন-ই-কোহ’তে বসবাস শুরু করে।

সাঁওতাল বিদ্রোহ

ক্রমাগত অত্যাচার, কর আরোপ, ধর্মপ্রচার, নারী নির্যাতন প্রভৃতি কারণে দামিন-ই- কোহ অঞ্চলের সাঁওতাল উপজাতিরা ১৮৫৫ সালে যে বিদ্রোহ করেছিল তা সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

সাঁওতাল পরগনা

সাঁওতাল বিদ্রোহের পর সাঁওতাল পরগনা গঠিত হয়। প্রশাসনিকভাবে এই অঞ্চল বীরভূম জেলার অংশ ছিল।

উপসংহার:- দামিন-ই-কোহ অঞ্চলের সাঁওতালদের সশস্ত্র কৃষক-সংগ্রাম সমগ্র জাতির সামনে এক নতুন সংগ্রামী অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছিল, যাকে ভারতের বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমি বলা চলে।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “দামিন-ই-কোহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই sikshalay.co.in ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) দামিন-ই-কোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. দামিন-ই-কোহ কথার অর্থ কি?

পাহাড়ের প্রান্তদেশ।

২. দামিন-ই-কোহ কোন বিদ্রোহের সাথে যুক্ত?

সাঁওতাল বিদ্রোহ।

৩. সাঁওতাল বিদ্রোহ কখন হয়েছিল?

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন।

অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি

    Leave a Comment