বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – বৈদেশিক আক্রমণ কীভাবে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটিয়ে ছিল তা আলোচনা করা হল।
বৈদেশিক আক্রমণ কীভাবে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটিয়ে ছিল
প্রশ্ন:- বৈদেশিক আক্রমণ কীভাবে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটিয়ে ছিল?
উত্তর:- এই কথা স্বীকৃত সত্য যে, কোনো উন্নত সভ্যতা কোনো একটি কারণে বা একদিনে ধ্বংস হয়নি। একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে যেমন বহু মানুষের বহু আত্মত্যাগের প্রয়োজন, তেমনি ওই সভ্যতার অবলুপ্তি ঘটাতেও একাধিক কারণের সংযোজন দরকার। হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য।
বহিঃশত্রুর আক্রমণকে হরপ্পা সংস্কৃতির পতনের কারণ হিসেবে অনেকেই গুরুত্ব দেন। তবে এই আক্রমণকারী কারা, সেই বিষয়ে মতভেদ আছে। এইচ. ডি. ওয়েলস্, মর্টিমার হুইলার প্রমুখের মতে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত আর্যদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলেই হরপ্পা সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে প্রাপ্ত সিন্ধু-সভ্যতার বিলুপ্তির কাল আর্যদের ভারতে আগমনের কালের সমসাময়িকতা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
সিন্ধু-উপত্যকার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত কিছু মাথার খুলিতে ভারী আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবার ঝুকারে প্রাপ্ত সিলে সোজা ও ঋজু রন্ধ্র যুক্ত যে কুঠারের চিত্র পাওয়া গেছে, তাকে বহিরাগত আর্যদের অস্ত্র বলেই অনেকে চিহ্নিত করেছেন। ঋকবেদে বর্ণিত ‘হরিয়ুপি’র যুদ্ধকে ‘আর্যদের সাথে হরপ্পার যুদ্ধ’ বলে অনেকে মনে করেন।
ঋকবেদে আর্য দেবতা ইন্দ্রকে ‘পুরন্দর’ বা ‘নগরের ধ্বংসকারী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায়, আর্যদের আগমনকালে ভারতে সিন্ধু-সভ্যতা ছাড়া অন্য কোনো নগর-সভ্যতা ছিল না। তাই ধরা যেতে পারে, ঋগবেদের দেবতা ইন্দ্র (পুরন্দর) সিন্ধুর নগর-সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিলেন। অবশ্য বৈদেশিক আক্রমণকারীরা শুধুমাত্র আর্যরাই ছিল – এই তথ্য মানতে রাজি হননি ঐতিহাসিক এ. এল. ব্যাসাম।