বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – হরপ্পা সভ্যতার সাথে সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতাগুলির বাণিজ্যিক যোগসূত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
হরপ্পা সভ্যতার সাথে সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতাগুলির বাণিজ্যিক যোগসূত্র
প্রশ্ন:- হরপ্পা সভ্যতার সাথে সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতাগুলির বাণিজ্যিক যোগসূত্র সম্পর্কে লেখ।
হরপ্পার নগররাষ্ট্রে অর্থনৈতিক জীবনের বিশেষ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল তার বাণিজ্য। আভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পাশাপাশি সমকালীন সভ্যতাগুলির সাথে হরপ্পার বাণিজ্যিক যোগসূত্রের নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হরপ্পার অধিবাসীরা যে দূরদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করত তা পশ্চিম এশিয়ায় প্রাপ্ত পুরাসামগ্রী দ্বারা প্রমাণিত হয়। ঐতিহাসিক গ্যাড (Gad) ১৯২৩ সালে মেসোপটেমিয়ার ঊর অঞ্চল থেকে ২৪ টি সিলমোহর আবিষ্কার করেছেন, সেগুলির আকৃতি হরপ্পিয় সিলমোহরের অনুরূপ। ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা এই সিলমোহরগুলি সম্ভবত হরপ্পিয়দের তৈরী অথবা হরপ্পিয় সিলমোহরের আদলে মেসোপটেমিয়াতেও এগুলি নির্মিত হয়েছিল। ডঃ রণবীর চক্রবর্তীর মতে, যে ব্যাখাই থাকনা কেন এই সিলমোহরগুলির উপস্থিতি সিন্ধু উপত্যকা ও টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস উপত্যকার মধ্যে বাণিজ্যিক যোগসূত্রের প্রমাণ দেয়। মার্টিমার হুইলার মনে করেন প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে হরপ্পার বণিকদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল।
পশ্চিম এশিয়ায় কীলকাকার ফলক থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে আক্কাদ নগরীর রাজা সারগনের সময় দূরপাল্লার বাণিজ্য হত। প্রধানত মেলুহা, মগন এবং দিলমুন বা তিলমুণ – এই তিনটি অঞ্চলের সাথে আক্কাদের নিয়মমাফিক বাণিজ্য চলত। হুইলার মেলুহাকে নিম্ন সিন্ধু উপত্যকার সাথে অভিন্ন বলে মনে করেন এবং দিলমুন বলতে পারস্য উপসাগরে বাহরীণ অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ মেসোপটেমিয়া ও হরপ্পা সভ্যতার মধ্যে সমুদ্র বাণিজ্য চলত এবং এই সমুদ্র বাণিজ্যে পারস্য উপসাগর ও বাহরীণ অঞ্চলের গুরুত্ব ছিল।
নিম্ন সিন্ধু উপত্যকা থেকে সোনা, রূপা, লাপিস লাজুলী, ময়ূর ও কাঠ ইত্যাদি রপ্তানি করা হত। গুজরাটের লোথালে আবিষ্কৃত প্রাচীন পোতাশ্রয়ের ধ্বংসাবশেষ হরপ্পাবাসীদের সমুদ্র বাণিজ্যের ইঙ্গিত দেয়। এখানে বোতামের আকারে যে সিলমোহর পাওয়া গেছে তা পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় ব্যবহার হত বলে মনে করা হয়।