জীবনের ‘রিস্টার্ট’ বাটন চাপবেন যেভাবে

জীবনের ‘রিস্টার্ট’ বাটন চাপবেন যেভাবে

বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলভথ ফেইল’ সিনেমার বিখ্যাত একটি আপ্তবাক্য হলো, ‘রিস্টার্ট’। ব্যর্থ হয়ে মনখারাপ করে বসে না থেকে, হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে না দিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যাওয়াই হলো এই রিস্টার্ট। কিন্তু রিস্টার্ট করতে হয় কীভাবে? নতুন বছরে জীবনের রিস্টার্ট বাটন চাপার উপায় রয়েছে আজকের এই লেখায়।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, ‘হাল ছেড়ে দেওয়াই হলো পরাজয়’। অর্থাৎ কোনো কাজে ব্যর্থ হলে তাকে পরাজয় বলে না। কিন্তু তিনি যদি ওই কাজটিতে সফল হওয়ার আর চেষ্টা না করেন, হাল ছেড়ে দেন তখনই কেবল পরাজয় ঘটে। কিন্তু একই পদ্ধতিতে বারবার চেষ্টা করলেও কোনো ফল আসে না। এ বিষয়ে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘নির্বুদ্ধিতা হলো একই কাজ বারবার একই পদ্ধতিতে করে ভিন্ন ফল আশা করা’। ব্যর্থ হওয়ার দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে হলে, হাল ছাড়া যেমন যাবে না, তেমনি একই কাজ বারবার একই পদ্ধতিতে না করে ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে পুনঃপুন চেষ্টা করতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে, যতক্ষণ না সফলতা আসছে। পুরো প্রক্রিয়াটি ফের শুরু করাই হলো এই ‘রিস্টার্ট’। জীবনকে ফের শুরু করে সফলতার জন্য এগোতে হবে ধাপে ধাপে।

প্রথম ধাপ : তালিকা করুন

প্রথমেই তালিকা করতে হবে জীবনের কোন কোন বিষয়ে আপনি সফল হতে চান। এ বিষয়ে ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের পদ্ধতিটি হলো, প্রথমেই হাতের সব ডিভাইস দূরে সরিয়ে রেখে একটি সাদা কাগজ ও কলম নিয়ে বসতে হবে একটি নিরিবিলি স্থানে। এরপর আগামী বারো মাসে যে যে বিষয়ে আপনি সফল হতে চান সেগুলো লিখতে থাকুন এক, দুই করে। মোট ২৫ টি বিষয় লিখুন। এরপর এই ২৫ টি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত পাঁচটি বিষয়ের ক্রমের ওপর বৃত্ত এঁকে চিহ্নিত করুন। এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর সব মনোযোগ নিবন্ধ করুন। বাকি ২০ টি বিষয় যেগুলো আপনি বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করেন নি, সেগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। এই বিশটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ে সফলতা অর্জনে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে বাধা দিচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপ : বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা

প্রতিটি লক্ষ্য কীভাবে অর্জন করা সম্ভব সে বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন যথাসম্ভব বিস্তারিতভাবে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করার জন্য কী পরিমাণ সময় প্রয়োজন সেটিও লিখুন। এবার দিন, মাস অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করুন। প্রতিটি ধাপ সম্পূর্ণ করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করুন। এ ব্যাপারে যত বেশি বিস্তৃতভাবে লিখবেন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ধারণা ততই পরিষ্কার হবে।

তৃতীয় ধাপ : প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রতিদিন একটি অভ্যাস

তৃতীয় ধাপে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে, এই পাঁচটি লক্ষ্য অর্জনে যে বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছেন তার ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জন করবেন কীভাবে, সে বিষয়ে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি ছোট কাজ নির্ধারণ করুন, যা আপনি প্রতিদিন করবেন। প্রতিদিন করার মাধ্যমে একে আপনি অভ্যাসে পরিণত করবেন। মনে করুন, আপনি আত্মোন্নয়ন বই পড়তে চান। লক্ষ্য যদি বই পড়া হয়, তাহলে দৈনন্দিন অভ্যাস হবে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ পাতা পড়া। লক্ষ্য যদি হয়, ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা, তাহলে প্রতিদিন ১০ টি ইংরেজি শব্দের অর্থ ও ব্যবহার শিখুন।

চতুর্থ ধাপ : বিস্তারিত রুটিন তৈরি

আমরা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সফলতা লাভের জন্য কাজ করার যথেষ্ট সময় পাই না, কারণ অন্য কাজে আমাদের সময় চলে যায়। কীভাবে আমাদের সময় চলে যায় আমরা বুঝতেই পারি না। সময়ের এই অপচয় রোধ করতে প্রয়োজন সময়কে চিহ্নিত করা অর্থাৎ সময় কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যয় হলো তা খুঁজে বের করা। এটি বোঝার জন্য দিনে কী কী কাজ করেছেন তা একটি খাতায় যত বিস্তারিতভাবে সম্ভব লেখা। কয়েকদিন এভাবে লিখলেই বুঝতে পারবেন, কখন কীভাবে সময়ের অপচয় ঘটেছে। অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বরাদ্দকৃত সময় কমিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বরাদ্দ করে একটি দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করুন। এরপরের কাজটি সোজা, যথাসম্ভব রুটিনটি অনুসরণ করুন।

পঞ্চম ধাপ : ভুল সংশোধন এবং পুনঃচেষ্টা

পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে দেখবেন অনেক বিষয়েই আপনি যা ভেবেছেন বাস্তবে সেভাবে কাজটি করা যাচ্ছে না। যেমন, আপনি হয়তো লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। কর্মপরিকল্পনা করেছেন শরীরচর্চা করবেন। প্রতিদিনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন যে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা গতিতে দৌড়াবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল কয়েকদিন রুটিন মানতে পারলেও বর্ষায় বৃষ্টির জন্য বা শীতে অতিঠাণ্ডায় বাইরে বের হতে পারলেন না। তাহলে কী শরীরচর্চা থেমে যাবে বৃষ্টি থামার আশায়? না, বৃষ্টিস্নাত দিনগুলোর জন্য আপনাকে বেছে নিতে হবে ঘরেই করা যায় এমন কোনো ব্যায়াম। এভাবে পরিকল্পনাকে পুনঃপুন সংশোধন করে চালিয়ে যেতে হবে অনুশীলন। ক্রমাগত অনুশীলনের ফলেই অর্জিত হবে লক্ষ্য।

Leave a Comment