২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

জাহানারা

ভারতের মোঘল সম্রাট শাহজাহান তনয়া জাহানারা প্রসঙ্গে জাহানারার জন্ম, জাহানারার নামকরণ, জাহানারা নামের অর্থ, জাহানারার পিতামাতার নাম, জাহানারার শৈশব, জাহানারার রাজনৈতিক জীবন ও জাহানারার মৃত্যু সম্পর্কে জানব।

শাহজাহান কন্যা জাহানারা

ঐতিহাসিক চরিত্রজাহানারা
নামের অর্থজগতের অলঙ্কার
পরিচিতিশাহজাহান তনয়া
জন্ম২৩ মার্চ ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দ
পিতামাতাশাহজাহান, মমতাজমহল
মৃত্যু৬ সেপ্টেম্বর ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দ
জাহানারা

বহু চেষ্টা করেও আকবর রাজপুতদের ধ্বংস করতে পারলেন না। পুত্র জাহাঙ্গীর এখন পিতার অসমাপ্ত কার্য সমাপ্ত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। সবচেয়ে দুর্বিনীত ঐ মেবার রাজ্যটি ৷ পিতা জাহাঙ্গীরের আদেশে বারো হাজারী মনসবদারি নিয়ে পুত্র শাহজাহান চলেছেন রাজপুতদের উচিত শিক্ষা দিতে। সে ১৬১৪ সালের কথা। সঙ্গে গেছেন প্রিয়তমা মহিষী মমতাজমহল। তাকে আজমীরে রেখে শাজাহান গেছেন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে। একদিন শিবিরে ফিরে এসে শুনলেন মমতাজমহল একটি ঘর-আলো-করা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। আগের সন্তানের অকাল-মৃত্যুর শোক ভুলে রাজপুত্র শাহজাহান পিতাকে কন্যাসন্তানের জন্মের সংবাদ পাঠালেন আনন্দে উদ্বেল হয়ে। জাহাঙ্গীর সানন্দে নবজাতিকার নামকরণ করলেন জাহান-আরা – জগতের অলঙ্কার।

জাহানারার জন্ম হয়েছিল আজমীরে ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ, চৈত্রের তীব্র খরায় উষর এক জমিতে। জন্মলগ্নেই বুঝি রুদ্র প্রচণ্ড হয়ে তার জন্মের পর পুরো সাতষট্টি বছর ধরে তার উপর বর্ষিত হয়েছিলেন নিষ্করুণভাবে। ১৪ বছরে পা দেবার আগেই পিতামহ জাহাঙ্গীর মারা গেছেন। শাহজাহান রাজা হয়েছেন আর জাহানারা রাজদুহিতা হয়েছেন সত্য। কিন্তু রাজদুহিতার শয্যাস্থল গোলাপের পাপড়ির আস্তরণ হয়ে উঠল না। হয়ে উঠল গোলাপের কাটার শয্যাভূমি। যে মাকে জাহানারা সর্বত্র ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন, মায়ের সব কাজকে নিজের কাজ ভেবে অংশ নিয়েছেন, জাহানারার মাত্র সতেরো বছর বয়সে সেই মমতাজমহল ঠিক তার চোখের সামনে দিয়েই চলে গেলেন। এক রাজনৈতিক ঘনঘটাময় সাম্রাজ্য-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা শুধু নয় জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবেই জাহানারাকে বেঁচে থাকতে হল।

আকবর শাহের বিধানে মোগল হারেমের সম্রাটকন্যারা পরিণীত জীবনের সুখ-আহলাদ থেকে বঞ্চিত। অথচ জাহানারার বুকে ভালবাসার জন্য় কী তীব্ৰ ক্ষুধা। বদখশান-রাজ মীর্জা শাহরুখের তৃতীয় পুত্র নজবৎ খাঁ দুটি চোখে গভীর প্ৰাৰ্থনা ঝরিয়ে জাহানারার পাণিপ্রার্থী। স্বয়ং দারাশুকোরও গভীর ইচ্ছা জাহানারা নজবৎ খাঁকে বরণ করে নিক মোগল দরবারের প্রথাকে অস্বীকার করে। কিন্তু তা আর হল কই? কিংবদন্তি অন্য কথা বলে।

আগ্রা প্রাসাদের অঙ্গুরীবাগে এখন এসে হাজির হয়েছেন তার প্রাণের প্ৰিয় বুলবুল – শাজাহানের বিশ্বস্ত রাজপুত বুন্দীরাজ ছত্রশাল, জাহানারা যাকে আদর করে ডাকেন – আমার দুলেরা, আমার রাজা। কতদিন অঙ্গুরীবাগের সবুজ গালিচা দুলেরার গানে উত্তাল হয়ে উঠত। প্রথম দিনই মহলের ঝরোখাতে দুলেরাকে দেখে জাহানারার মনে হয়েছিল তিনি নিজে বুঝি দময়ন্তী আর রাজা নল এসেছেন তাকে স্বয়ংবরে বরণ করে নিয়ে যেতে।

সেই ঝরোখা থেকেই নিবেদিত হত পবিত্র প্রেমের প্রস্রবণ। তারা জানতেন, সম্ভব নয় ইহজীবনে তাদের মিলন। তবুও ঝরোখার গায়ে মুখ লাগিয়ে উচ্চারিত হত প্রেমের মৃদু আলাপন। বুন্দীরাজ উচ্চারণ করতেন তার জীবন উৎসর্গের সংকল্প। শুভ্ৰ পরিচ্ছদে স্বর্ণখচিত কোমরবন্ধে তার রাজপুত গর্ব উচ্ছৃসিত হয়ে উঠত।

দুলেরাকে স্বপ্ন দেখতেন জাহানারা। কখনও ভাবতেন লিখবেন চিঠি, লিখতেনও। অন্ধুরীবাগ অথবা জেসমিন প্রাসাদ থেকে সে সব চিঠি বয়ে নিয়ে যেতো তার বিশ্বস্ত ‘নাজীর’। উত্তর যখন আসতো পড়বার জন্য চলে যেতেন দূর মসজিদের নিরালায়। তার কবিপ্রাণে উঠত প্রেমের অসফ্ঊট গুঞ্জরণ। একবার ঘটে গেল একটা বিপত্তি। তার প্রাণের দুলেরাকে ডেকে পাঠালেন। তার জীবনের এক সঙ্কটময় মুহূর্তে। পথের মধ্যে চিঠি গেল চুরি হয়ে। জাহানারার সে কি অভিমানের কান্না। অবশেষে দুলেরা, তার রাখীবন্ধ ভাই, ছত্রশাল এলেন। উপহার দিয়ে গেলেন বিচিত্র কারুকার্যের কাঁচুলি। দরবারে এসব কথা উঠল ৷ উঠল দুলেরা গান গেয়ে জাহানারাকে করেছেন অভিভূত ৷ ফলে ছত্রশাল হলেন অপমানিত। অপমানে লাঞ্ছিত তরুণ তনুকে ঝরোখা থেকে দেখে জাহানারার বুক ফেটে যায়।

এরই মধ্যে দারা নিয়ে এসেছেন নজবৎ খাঁ-এর সঙ্গে জাহানারার বিয়ের প্রস্তাব। জাহানারার দুটি চোখে ভেসে ওঠে দুলেরার দৃপ্ত চন্দ্ৰানন। নজবৎকে তার মনে হয় বিষধর সর্প। আনসারীর কাব্য পড়তে পড়তে অন্তরে সান্ত্বনার সন্ধান করেন জাহানারা। আর সান্ত্বনা পান প্রিয় সখি কোয়েলের কাছে হৃদয় উজাড় করে দিয়ে। অবশেষে এল একটা প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। ভালোবাসাকে তারা নিয়ে গেলেন এক অপার্থিব অনুভবে। দুলেরার হাতে গভীর প্রেমে জাহানারা বেঁধে দিলেন পবিত্র সাক্ষী রাখী। তার বস্ত্ৰ হল আসঙ্গলিপ্সায় চুম্বিত। জাহানারা তাকে আরও দিলেন একটি মুক্তাখণ্ড – উষ্ণীষের মণিকোঠায় স্বপ্রেমে তাকে স্থাপন করলেন বুন্দীরাজ ছত্রশাল। দুজনের উত্তপ্ত অধরে মোহরাঙ্কিত হল তাদের পবিত্ৰ প্রেম। জাহানারা তার আত্মকাহিনীতে তাই লিখেছেন – কোনো বিবাহ অনুষ্ঠান আমাদের হৃদয়কে নিকটতর করতে পারত না।

শেষে এল অনন্ত বিরহ। যুদ্ধক্ষেত্রে বুঝিবা নজবং-এর তরবারির আঘাতে একদা রাণা ছত্রশালের জীবনদীপ হল নির্বাপিত। জাহানারা সব শুনে যেন অনুভব করলেন রানা ছত্রশাল তাকে কোনোদিন ত্যাগ করবেন না – করতে পারেন না। জীবনের এই নিঃসঙ্গতা জাহানারাকে উদ্বুদ্ধ করল আত্মানুসন্ধানের উদ্যোগে ৷ মা নেই, দুলেরা নেই, পিতার চারপাশে বিদ্রোহ পুত্রদের অবিশ্বাস অন্ধকারে ঘনায়মান। জাহানারা কি শুধুমাত্র দর্শকের নীরব ভূমিকা পালন করবেন? তিনি শুধু কুমারীর প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন কিভাবে ? তিনি যে রাজকুমারীও। রাজ্যের ভালমন্দের সঙ্গে নিজের ভাগ্যকে মিলিয়ে মিশিয়ে দিলেন একাকার করে।

আসলে জাহানারার জীবনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ কোনো প্রার্থিত বস্তু ছিল না। এ-ও তার এক ভালবাসার দায়। ভালবাসতে চেয়েছেন বিপত্নীক প্রেমিক পিতাকে আর অবশ্যই তার জ্যেষ্ঠ ভাই দারাশুকোকেও। এদের ভালবাসতে গিয়ে ভালবাসা হারালেন আর তিন ভাইয়ের – বিশেষ করে ঔরঙ্গজেব-এর। আর বোন রোশেনারার। এ তো সাধারণ মানুষের ভালবাসা বা বিরোধিতার কথা নয়, মোগল রাজবংশের সঙ্গে এই ভালবাসা-রিরোধিতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

জাহানারা বাবার নয়নের মণি, শাহজাহানও কন্যার নয়নের নিধি। বিজয়ী শাহজাহানের অভিষেক সম্পন্ন হতে চলেছে সেদিন। পাঠ করা হয়েছে খুতবা তার নামে। দরবার হলের সেই প্রভূত আড়ম্বর-উৎসব-এর শেষে শাহজাহান ফিরে এসেছেন অপরাহ্ন-এ হারেমের অভ্যন্তরে। আর্জুমন্দ বানু বেগম, জাহানারা আর অন্য অন্তঃপুরিকারা সোচ্ছাস আনন্দে তাকে করেছেন অভিষিক্ত। পিতাকে জাহানারা উপহার দিয়েছেন উদগত কারুকার্য সমন্বিত একটি অষ্টকোণ সিংহাসন সার্ধ দু’লক্ষ টাকা ব্যয়ে। জাহানারাকে পিতা উপহার দিলেন এক লক্ষ আশরফি, চার লক্ষ টাকা। বার্ষিক ভাতা নিৰ্দিষ্ট করে দিলেন ছ’লক্ষ টাকা যার অর্ধেকটা তিনি পেতে লাগলেন নগদে। বাকিটা জায়গীরের মাধ্যমে। তারপর থেকেই সাতাশ বছর ধরে পিতার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব এসে গেছে জাহানারার উপরে। মমতাজমহল চলে গেছেন – এখন জাহানারা মুখে অন্ন না দিলে শাজাহানও খান না।

এরই মধ্যে ঘটে গেছে এক অবাঞ্ছিত দুর্ঘটনা। ১৬৪৪ খ্ৰীষ্টাব্দের ২৬ মার্চ। গোয়ালিয়র-নিবাসিনী নর্তকী গুলরুখ বাই নেচে চলেছেন জাহানারার এক নবোদ্ভুত নৃত্যভঙ্গিমায়। পরিতৃপ্ত অন্দরমহলের জাহানারা নাচের শেষে তার প্রিয় নর্তকীকে অভিনন্দন জানাতে চললেন এক অলিন্দপথ বেয়ে। গায়ে তার আতরমাখানো চুমকি-ওড়না। পথের পাশে জলে চলেছে চেরাগের বাতিদান। হঠাৎ আগুন ধরে গেল গুলরুখের অঞ্চলপ্রান্তে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আগুন ধরে গেল জাহানারার সূক্ষ্ম মসলিনের পরিধেয় বস্ত্রেও। সাংঘাতিক ভাবে পুড়ে গেল জাহানারার সমস্ত অঙ্গ। শাহজাহান সংবাদ পেয়ে ছুটে এলেন। তার বড় আদরের বড় মেয়ে ৷ মুখটি একেবারে বসানো মমতাজমহল, একেবারে শয্যালীন। প্রতিদিন এসে রাজার গাম্ভীৰ্য বিসর্জন দিয়ে পিতার স্নেহে অভিষিক্ত করে ক্ষতস্থানে প্রদান করেন আরোগ্যকারী মলম। প্রতিদিন জাহানারার বালিশের নীচে রাখা হতে লাগল এক সহস্র মুদ্রা। সকালে সে সমস্ত ধন বিতরণ করা হতে লাগল দরিদ্র আর আতুরদের মধ্যে। মুক্তি পেল অর্থাপরাধে দণ্ডিত রাজব্যক্তিগণ। প্রায় ন’মাস ধরে চলল যমে মানবে টানাটানি। রাজবৈদ্য ব্যর্থ হলেন, পরাস্ত হলেন সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ চিকিৎসকরা। অবশেষে আরিফ নামে এক ক্রীতদাস একটি মলম তৈরি করে এনে দিলেন দেশীয় গাছগাছড়া থেকে। তাতেই ধীরে আরোগ্য লাভ করতে লাগলেন জাহানারা।

ঔরঙ্গজেব পিতার বিরোধিতা করে বিরাগভাজন হয়েছিল। রোগমুক্ত জাহানারা পিতাকে অনুরোধ করলেন তাকে ক্ষমা করার জন্য। ঔরঙ্গজেব ক্ষমা পেয়ে পূর্বমর্যাদা ফিরে পেলেন। কিন্তু শাহজাহানের জীবনের দুৰ্গতি তাতে বন্ধ হল না। ঔরঙ্গজেবের কুটচক্রে তিনি বন্দী হয়ে বাকী জীবন প্রাসাদেই কাটাতে বাধ্য হলেন। জাহানারা নিজে গিয়ে ঔরঙ্গজেবকে এই ভ্রাতৃবিদ্রোহ আর পিতৃদ্রোহের খেলায় মাততে নিষেধ করলেন। ধীরে ধীরে শাহজাহান যেন উন্মাদ হয়ে পড়লেন। তার একমাত্র সঙ্গী তখন ধৰ্ম আর কোরাণ। কনৌজ-এর ধর্মপ্রাণ সঈদ মহম্মদ তখন
তার নিত্যক্ষণের সঙ্গী। আর আছেন কন্যা জাহানারা।

পিতার মতই ভালবাসতেন বড় ভাই দারাশুকোকেও। মমতাজমহল দারার বিয়ের কথাবার্তা বলে গিয়েছিলেন, দিয়ে যেতে পারেন নি। মায়ের অসমাপ্ত কার্য জাহানারা সগৌরবে পালন করেছিলেন। কিন্তু দারাকে ভালবাসতে গিয়ে তিনি ঔরঙ্গজেবের বিষনজরে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। জাহানারা বার বার চেষ্টা করেছেন তার এই
ক্ষমতালিপ্সু, বিদ্রোহী ভাইটিকে বশে আনতে। কিন্ত প্রতিবারই বুঝি ব্যর্থ হয়েছেন। জাহানারা পুড়ে যাবার বেশ কিছুদিন পর অবশ্য ঔরঙ্গজেব দিদিকে দেখবার জন্য দক্ষিণাপথ থেকে আগ্রা এলেন ২রা মে তারিখে। এখানে আসার পর তার সমস্ত পদমর্যাদা শাজাহান কেড়ে নিয়েছিলেন বটে কিন্তু জাহানারার মধ্যস্থতায় আবার তা ফিরে পান। ১৬৪৫-এর ১৬ ফেব্রুয়ারী আবার তিনি গুজরাটের গভর্নর হন।

কিন্তু শাজাহানের প্রবল অসুস্থতার সময়েই ঔরঙ্গজেবের বিরোধিতা তীব্রতর হয়েছিল। জাহানারা বাধ্য হয়ে তাকে একটি চিঠিতে লেখেন – “সম্রাট এখন সেরে উঠেছেন ও নিজে রাজ্য চালাচ্ছেন। এসময়ে কোনো অশান্তি তার অভিপ্রেত ন্য। তোমাকেও লিখি যুদ্ধ করাই যদি অভিপ্রেত হয় তবে পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ফল ভাল হবে না – অখ্যাতি ছাড়া। বৈরিতা ত্যাগ করে মুসলমান ধর্মানুসারে পিতৃসম জোষ্ঠাগ্রজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উচিত নয়। তা অনন্ত দুঃখের সৃষ্টি করবে। তুমি বিরত হও। তোমার বক্তব্য পিতা জানলে তিনি খুশী হবেন।”

বলাবাহুল্য কাউকে খুশী করার জন্য ঔরঙ্গজেব কখনও মতের পরিবর্তন করতেন না। বকশী মহম্মদ ফারুকের হাতে এ চিঠি পেয়ে নিজেকে সম্পূৰ্ণ নিরপরাধ ঘোষণা করে তিনি পিতাকে একটি চিঠি দিলেন। পরে দারাকে পরাস্ত করে পিতাকে বন্দী করে জাহানারাকে ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক্‌ করে দিলেন।

শেষে একদিন শাজাহান চলে গেলেন জাহানারাকে প্রায় নিরাশ্রয় করেই। ১৬৬৬-এর ফেব্রুয়ারীতে ঔরঙ্গজেব
আগ্রা এলেন ভারত-এর সিংহাসনের নিঃসপত্ন অধিকারী হয়ে। এসেই তার হৃদয়ের পূৰ্বতন কৃতজ্ঞতাকে জাগ্রত করেই বুঝি জাহানারাকে রাজ্যের ‘ফার্স্ট লেডি’র সম্মানে ভূষিত করলেন। সমস্ত রাজন্যবর্গের কাছে আদেশ পাঠালেন প্রতিদিন জাহানারার আবাসে গিয়ে কুর্নিশ জানাতে। তাকে উপঢৌকন দিতে। খোজারা গৃহমধ্যস্থ সেই অদৃশ্য নারীকে জানাতে লাগল প্রতিদিবসের সেলাম। অভিষেকের দিনে ঔরঙ্গজেব তাকে দিলেন প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার পরিমাণের স্বর্ণখণ্ড। তার বার্ষিক ভাতা বেড়ে দাঁড়ালো সতেরো লক্ষ টাকায়। সারাজীবন ধরেই এই সম্মানের অধিকারিণী হয়ে রইলেন।

দারার অনাথ কন্যার সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মহম্মদ আজমের বিয়ে দিলেন খুব ধুমধামের সঙ্গে। মমতাজের মৃত্যুর পর সাতাশ বছর ধরে জাহানারা পেয়েছিলেন অন্দরমহলের পূৰ্ণ দায়িত্ব। তাকে ডাকা হত
‘বেগম সাহিব’ নামে। পরে উন্নীত হলেন “পাদিশাহ বেগমে’র সর্বোন্নত পদমর্যাদায়।

কিন্তু একদিন নূরমঞ্জিলের সমস্ত প্রাধান্য থেকে অনেক দুরে চলে যেতে হল জাহানারাকে ৷ ১৬৮১ খ্রীষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে রমজান মাসে তিনি বুঝি চলে গেলেন পিতামাতার সঙ্গে মিলিত হতে। তিন দিন দিল্লীতে নহবতের বাজনা আর বাজল না। সম্ৰাট ঔরঙ্গজেব তাকে সন্মানিত করলেন মরণোত্তর যুগসম্ৰাজ্ঞী – ‘সাহিবৎ-উজ-জমানী’ উপাধিতে ৷ জাহানারার দেহ পুরোনো দিল্লির শেখ নিজামউদ্দিন আউলিয়ার বিশাল সমাধি ভবনের প্রাচীরের অভ্যন্তরে সমাধিস্থ হল। তার দেহ সমাধিস্থলে বহন করে আনা হয়েছিল বিশাল শোভাযাত্রা করে। এখন কবরশীর্ষে শ্বেতমর্মরপ্রস্তরে ক্ষোদিত হল জাহানারার স্বরচিত সমাধিলিপি

‘বগায়ের সবজ, না পোশদ্‌ কসে মজারে মরা
কে করব-পোষে গরিবাঁ হামিন গিয়া বস্‌ অস্ত।’

— তৃণগুচ্ছ ভিন্ন আমার সমাধির উপর কোনো আস্তরণ করো না। এই তৃণগুচ্ছই অবনমিতার সমাধির আস্তরণ হোক।

(FAQ) জাহানারা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

১। জাহানারা কে ছিলেন?

ভারতের মোঘল সম্রাট শাহজাহানের কন্যা হলেন জাহানারা।

২। জাহানারার মায়ের নাম কী?

মমতাজমহল

৩। কখন, কোথায় জাহানারার জন্ম হয়?

২৩ মার্চ ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে আজমিরে।

৪। জাহানারার মৃত্যু হয় কখন?

৬ সেপ্টেম্বর ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment