কণিষ্কের ধর্ম প্রচার প্রসঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা, চৈত্য নির্মাণ, চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি, সম্মেলনের স্থান, সম্মেলনের সভাপতি ও অন্যান্য পণ্ডিত, মহাযান ধর্ম মত ও ধর্মের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানবো।
কুষাণ সম্রাট কণিষ্কের ধর্ম প্রচার
ঐতিহাসিক ঘটনা | কণিষ্কের ধর্ম প্রচার |
রাজা | কণিষ্ক |
সাম্রাজ্য | কুষাণ সাম্রাজ্য |
ধর্ম | বৌদ্ধ ধর্ম |
বুদ্ধচরিত | অশ্বঘোষ |
ভূমিকা :- কুষাণ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন কণিষ্ক। ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী বলেছেন যে, “বিজেতা অপেক্ষা শাক্যমুনির ধর্মের পৃষ্ঠপোষক রূপে কণিষ্ক ইতিহাসে স্থায়ী কীর্তির অধিকারী হয়েছেন।
বৌদ্ধ ধর্মে কণিষ্কের দীক্ষা
কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, কণিষ্ক পাটলিপুত্র জয় করে বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত অশ্বঘোষকে সঙ্গে করে তার রাজধানী পুরুষপুর বা পেশোয়ারে নিয়ে যান। অশ্বঘোষ তাকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দেন।
কণিষ্কের চৈত্য নির্মাণ
হিউয়েন সাঙ -এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, কণিষ্ক তার রাজধানী পুরুষপুর বা পেশোয়ারে একটি বহুতল চৈত্য তৈরি করেন। এই চৈত্য তিনি সর্বাস্তিবাদী বা মহাযান বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন। কণিষ্কের যুগে এই চৈত্য ছিল ভুবন বিখ্যাত। সম্ভবত গ্রীক স্থপতি এজেসিলাস এই চৈত্যের নক্সা তৈরি করেছিলেন।
চৈত্যের ধ্বংসাবশেষ
আধুনিক ইতিহাসের যুগ -এ এখানে মাটি খুঁড়ে এই চৈত্যের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে একটি ধাতুনির্মিত পেটিকা পাওয়া গেছে। এই পেটিকার গায়ে খরোষ্ঠী লিপিতে লেখা আছে যে, কণিষ্ক এই পেটিকা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন। এর দ্বারা কণিষ্কের ধর্মবিশ্বাস নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। ডঃ বি এন মুখার্জী বলেছেন যে, পেটিকাটিতে তারিখ নেই। সুতরাং কণিষ্ক কবে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন তা এই লিপি থেকে সঠিক জানা যায়নি।
কণিষ্কের আমলে চতুর্থ বৌদ্ধ সঙ্গীতি
কণিষ্ক কেবলমাত্র নিজে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে ক্ষান্ত থাকেননি। যাতে এই ধর্মের ভেতরে মতভেদ দূর হয় এবং এই ধর্মের প্রচার হয় এজন্য তিনি বিশেষ উদ্যম দেখান। তাঁর রাজত্বকালে চতুর্থ বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা মহা সম্মেলন ডাকা হয়।
চতুর্থ বৌদ্ধ সম্মেলনের স্থান
বৌদ্ধ সম্মেলনের স্থান সম্পর্কে দুই রকম মত আছে। অনেকের মতে কাশ্মীরের কুন্ডল বনবিহারে, আবার অনেকের মতে জলন্ধরে এই মহাসম্মেলন ডাকা হয়। এই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন বৌদ্ধ গোষ্ঠীর মত পার্থক্য দূর করে একটি সর্বসম্মত বৌদ্ধ আচার পদ্ধতি ও সূত্র সঙ্কলন করা।
চতুর্থ বৌদ্ধ সম্মেলনের সভাপতি ও অন্যান্য পণ্ডিত
বৌদ্ধ পণ্ডিত বসুমিত্র এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। বিখ্যাত পণ্ডিত পার্শ্ব ও অশ্বঘোষ বৌদ্ধ ত্রিপিটকের সম্পাদনা ও টীকা রচনা করেন। সংস্কৃত ভাষায় এই ভাষ্য ও টীকা রচিত হয় এবং এগুলি তাম্রপত্রে খোদাই করে ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা করা হয়। এই মহাসম্মেলনের সিদ্ধান্তের ফলে মহাযান বৌদ্ধধর্মের উদ্ভব ঘটে।
কণিষ্কের আমলে মহাযান মত
- (১) মহাযান বৌদ্ধধর্মে সমষ্টি অর্থাৎ সকলের মুক্তির কথা বলা হয়। এজন্য মুক্তির সহজ পন্থা আবিষ্কৃত হয়। গৌতম বুদ্ধ -এর আদি বৌদ্ধধর্মে যে কঠোর আচরণ করে প্রত্যেকের পক্ষে বৌদ্ধত্ব লাভের কথা বলা হয়েছিল এবং যার নাম ছিল “প্রত্যেক বুদ্ধযান”।
- (২) তা এখন পরিত্যক্ত হয়। তার স্থলে সমষ্টির মুক্তির কথা ভাবা হয়। এজন্য এর নাম হয় মহাযান। বোধিসত্ত্বের উপাসনায় বুদ্ধ মূর্তির পুজো প্রভৃতি লৌকিক আচরণ স্থান পায়। কণিষ্কের পেশোয়ার পেটিকা ও মুদ্রায় বুদ্ধের মূর্তি খোদাই দেখা যায়।
কণিষ্কের আমলে ধর্মের বিস্তৃতি
কণিষ্ক এই নব-প্রতিষ্ঠিত ধর্মকে ভারত ও ভারতের বাইরে প্রচারে বিশেষ উদ্যম দেখান। সপ্তম খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারতে মহাযান বৌদ্ধধর্ম খুবই জনপ্রিয় ছিল একথা হিউয়েন সাঙের রচনা থেকে জানা যায়। কুষাণ সাম্রাজ্যের মাধ্যমে মহাযান ধর্ম মধ্য এশিয়ার খোটান প্রভৃতি অঞ্চলে, চীন, জাপান ও কোরিয়ায় বিস্তার লাভ করে।
উপসংহার :- কণিষ্কের আমলে বৌদ্ধধর্ম ও বুদ্ধ মূর্তিকে আশ্রয় করে গান্ধার শিল্পের বিশেষ বিকাশ ঘটে। ধ্যানী বুদ্ধের মূর্তি অনেকটা গ্রীক দেবতা এ্যাপোলোর মত আঙ্গিকে নির্মাণ করা হয়। মথুরা ছিল গান্ধার শিল্প -এর একটি প্রধান কেন্দ্র। কণিষ্কের আমলে ভারতীয় প্রথার শিল্পেরও বিকাশ ঘটেছিল। মথুরায় পাওয়া কণিষ্কের কবন্ধ মূর্তি এই শিল্পরীতির পরিচয় দেয়।
(FAQ) কণিষ্কের ধর্ম প্রচার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কণিষ্ক।
বৌদ্ধ ধর্ম।
মহাযান।
কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক।
অশ্বঘোষ।