লাবণ্যলতা চন্দ

বিপ্লবী লাবণ্যলতা চন্দ ছিলেন একজন শিক্ষিকা, ফেমিনিস্ট-জাতীয়তাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও গণশিক্ষাদান কর্মী যিনি ১৯৩০–৪০-এর দশকের বাঙালি নারীর রাজনৈতিক স্বকীয়তা ও ক্ষমতায়নের জন্য নিবেদিত ছিলেন।

Table of Contents

লাবণ্যলতা চন্দ

ঐতিহাসিক চরিত্রলাবণ্যলতা চন্দ
জন্ম১৮৯১, ময়মনসিংহ, ব্রিটিশ ভারত
পিতার নামশ্রীনাথ চন্দ
শিক্ষাজীবনকুমিল্লা ফৈজুন্নেসা গার্লস স্কুলে শিক্ষিকা ও প্রধান শিক্ষিকা
রাজনৈতিক অংশগ্রহণ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ, কারাবরণ
সমাজসেবাঅভয় আশ্রম পরিচালনা, কন্যাশিক্ষা প্রচার, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন
প্রতিষ্ঠানকুমিল্লায় বালিকা বিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশ্রম
গুরুত্বপূর্ণ পদবঙ্গ প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৩৮)
শিক্ষা আন্দোলন“নবী তালীম” পদ্ধতি প্রচলন ও নবী-তালিম সংঘ পরিচালনা
সম্পর্কিত ব্যক্তিত্বমহাত্মা গান্ধী, কস্তুরবা গাঁধী স্মৃতি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত
বিশেষ অবদাননারী শিক্ষার প্রসার, স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ, সমাজসংস্কার
মৃত্যু৪ জুলাই ১৯৬৯

লাবণ্যলতা চন্দ

ভূমিকা :- লাবণ্যলতা চন্দ ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষিকা, সমাজসেবিকা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি ব্রিটিশ ভারতের উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লাবণ্যলতা চন্দের জীবন ও কর্ম বাংলা নারীজাগরণ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে।

লাবণ্যলতা চন্দর জন্ম

সমাজসংস্কারক লাবণ্যলতা চন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৯১ সালের আগস্ট মাসে ময়মনসিংহ শহরে। পিতৃভূমিও সেখানেই।

বিপ্লবী লাবণ্যলতা চন্দর পিতামাতা

তাঁর পিতা ছিলেন ময়মনসিংহের খ্যাতনামা নাগরিক শ্রীনাথ চন্দ, মাতা বামাসুন্দরী চন্দ। পিতা ব্রাহ্মসমাজ-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর দেশাত্মবোধ ছিল গভীর এবং ছাত্রদের উপর প্রভাবও ছিল যথেষ্ট। কোথাও মহামারী বা ভূমিকম্প হলে ছাত্রদের নিয়ে তিনি চলে যেতেন সেবা করতে। তাঁর নীরব সেবাভাব কন্যা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন। মা সন্তানদের প্রকৃত মানুষ করবার দিকে, ধর্মপরায়ণ করবার দিকে নিজেকে ব্যাপৃত রাখতেন।

লাবণ্যলতা চন্দর শিক্ষা

লাবণ্যলতা চন্দ লেখাপড়া শিখতে লাগলেন উৎসাহের সঙ্গে। বি.এ. পাস করেন তিনি কুমিল্লা ফৈজন্নেসা গার্লস স্কুলে কাজ করতে করতে। তিনি ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী ছিলেন।

কন্যা-শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠায় লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় লাবণ্যলতা চন্দ কুমিল্লা ‘অভয় আশ্রম’-এর সংস্পর্শে আসেন এবং তাঁর মনে একটা বিপুল পরিবর্তন আসে। তিনি ১৯৩১ সালে ঐ গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রীর পদ ত্যাগ করেন এবং অভয়-আশ্রমের তত্ত্বাবধানে কন্যা-শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষণপ্রভা সিংহ ইতিমধ্যে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাবে গিরিডি হাইস্কুলের পদ ছেড়ে কুমিল্লায় চলে এসেছিলেন। তিনি লাবণ্যলতা চন্দের সঙ্গে কন্যা-শিক্ষালয়ে যোগদান করলেন।

আইন অমান্য আন্দোলনে লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাবণ্যলতা চন্দ। রাউণ্ড টেব্‌ল্ কনফারেন্স ব্যর্থ হবার পর মহাত্মা গান্ধী ভারতবর্ষে ফিরে এলেন ১৯৩১ সালের ২৮শে ডিসেম্বর। ১৯৩২ সালের ৪ঠা জানুয়ারি গান্ধীজী গ্রেপ্তার হন। সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩২ সালের আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ হয়ে যায়। গান্ধীজীর গ্রেপ্তারের পরই ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ বোম্বাই থেকে কুমিল্লায় ফিরে আসেন এবং অভয় আশ্রমের বিভিন্ন কেন্দ্রের ও নানা কংগ্রেস কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনে কি করে কাজ করা যায় সে সম্বন্ধে আলোচনা করেন।

লাবণ্যলতা চন্দর কারাদণ্ড

কন্যা-শিক্ষালয়ের সকল কর্মীই আন্দোলনে যোগদান করেন। আন্দোলনের ফলে কন্যা শিক্ষালয় ভেঙে যায়। সরকার শিক্ষালয়টিকে বে-আইনী ঘোষণা করে। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে লাবণ্যলতা চন্দ ও তাঁর সঙ্গে শান্তশীলা পালিত, নবনীতকোমল সিংহ, গিরিবালা ঘোষ, বিভা গুপ্ত, প্রিয়দা দত্ত প্রমুখ গ্রেপ্তার হন। তাঁদের অধিকাংশেরই ৬ মাস থেকে একবছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হয়। মুক্তির পর পুনরায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার ফলে লাবণ্যলতা চন্দের আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়। তাঁর সাথীরা অনেকেই আবার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

গঠনমূলক কাজে লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতায় থেকে গঠনমূলক কাজ করেন। এখানে তিনি একটি বযস্ক-শিক্ষাকেন্দ্র খোলেন। এই বয়স্কা মেয়েরা বিভিন্ন জেলায় আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেছিলেন। লাবণ্যলতা চন্দ নানা স্থান থেকে এঁদের সংগ্রহ করে একত্র করেন। নানা বস্তীতে নিয়ে গিয়ে তাঁদের তিনি গঠনমূলক কাজেরও শিক্ষা দেন। তারপর এই মেয়েদের দিয়ে তিনি বিভিন্ন জেলায় গঠনমূলক কাজের কেন্দ্র খোলেন।

গঠনমূলক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা

এঁদের মধ্যে ননীবালা মাইতি মেদিনীপুরের ‘আলোককেন্দ্রে’ কাজ করেন। যশোহরের মনোরমা বহু আউটসাহীতে গঠনমূলক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কিছু ডাক্তারী ও মিডওয়াইফারীর কাজও করতেন এবং এইসব কাজের জন্য তিনি সেখানে সুনাম অর্জন করেন। প্রমোদা দাস ও নন্দরাণী দেবী নদীয়া জেলায় চাঁদের ঘাট গ্রামে ঐরূপ একটি কেন্দ্র স্থাপন করেন। নির্মলা সরকার ও মণি দেব কুমিল্লা শহরে অনুরূপ কেন্দ্র খোলেন। সাবিত্রী সিংহ বেথুয়া-ডহরীতে গিয়ে একটি কেন্দ্র স্থাপন করেন।

নারীদের প্রধান কাজ

এঁদের গঠনমূলক কাজের মধ্যে প্রধান কাজ ছিল হরিজন পল্লীতে অথবা দরিদ্র পল্লীতে গিয়ে শিশুদের লেখাপড়া শিক্ষা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে শিক্ষা দেওয়া। তাঁরা বয়স্কা মহিলাদের লেখাপড়া অথবা শিল্প ও চরকা-কাটা শিক্ষা দিতেন।

ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৪০ সালে জুন-জুলাই মাসে লাবণ্যলতা চন্দ কুমিল্লায় ফিরে আসেন। তখন কলকাতার বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র কুমিল্লায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৪১ সালে তিনি ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এ তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট গান্ধীজীর বিখ্যাত ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গ্রহণ করার পর লাবণ্যলতা চন্দ বঙ্গে থেকে কুমিল্লায় ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাবের সারমর্ম প্রচার করতে থাকেন। পনেরো দিনের মধ্যেই তাঁর বয়স্কশিক্ষা কেন্দ্রটিকে বে-আইনী ঘোষণা করা হয় এবং তিনি গ্রেপ্তার হন।

কারারুদ্ধ বয়স্কা মহিলাগণ

বয়স্কা মেয়েরাও আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করে কারারুদ্ধ হন। এঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন উষা গুহ রায়, তরুলতা পাল, সুষমা পাল, সরমা ভট্টাচার্য, মণি দেব, শৈলবালা দর, চিহ্ন দেব প্রভৃতি।

শিশুসদন খোলেন লাবণ্যলতা চন্দ

লাবণ্যলতা চন্দ একবছর নিরাপত্তা বন্দীরূপে জেলে আটক থাকেন। ১৯৪৩ সালের শেষে মুক্তি পাবার পর ফিরে এসে দুভিক্ষের একটা ভীষণ চেহারা তিনি দেখতে পেলেন। প্রথমে তিনি সঙ্গীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন জেলার, রাজনৈতিক বন্দীদের পরিবারের সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেন। তাঁদের পরিবারের অবস্থা দেখে তাঁদের দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের প্রতিপালন করবার আকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে জেগে ওঠে। ফলে তিনি মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে, ঢাকার তাজপুরে এবং ব্রাহ্মণবেড়িয়াতে তিনটি শিশুসদন খোলেন।

গান্ধীজীর সাথে লাবণ্যলতা চন্দর সাক্ষাৎ

পরে তিনি আশা আর্যর্থনায়ককে প্রশ্ন করেন এই শিশুদের নিয়ে কি করা যায়? আশা দেবী তাঁকে শিশুদের বুনিয়াদী শিক্ষা দেবার প্রস্তাব করেন। আশা দেবী নিজে ঝাড়গ্রামে শিশুসদন কেন্দ্রে বুনিয়াদী শিক্ষা প্রচলন করার ব্যবস্থা করে দেন। সেই সময়ে গান্ধীজী অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে অভয়-আশ্রমের কর্মীদের ডেকে পাঠান। লাবণ্যলতা চন্দ এবং প্রবোধ দাশগুপ্ত অভয় আশ্রমের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। অন্যান্য কথাবার্তার পর লাবণ্যলতা চন্দ শিশুসদনের শিশুদের নিয়ে কিভাবে কাজ করবেন জিজ্ঞাসা করেন। গান্ধীজী বুনিয়াদী শিক্ষাই দিতে বলেন। এই সঙ্গে তখন এখানে একটি টিচার্স ট্রেনিং ক্লাসও খোলা হয়। তিন মাসের একটা পাঠ্যক্রম ছিল। অবশ্য একবারই মাত্র এখানে ট্রেনিং দেওয়া হয়।

সেভ দি চিলড্রেন কমিটির হাতে শিশুসদন

১৯৪৫ সালে তাজপুর ও ঝাড়গ্রামের শিশুসদনের শিশুদের ঝাড়গ্রামে একত্রিত করে একটি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। ব্রাহ্মণবেড়িয়ার শিশুসদন তাঁরা ‘সেভ দি চিলড্রেন কমিটি’র হাতে দিয়ে দেন। ১৯৪৬ সালে ‘ঝাড়গ্রাম শিশুসদন’ বলরামপুরে চলে আসে।

লাবণ্যলতা চন্দর উদদগে বুনিয়াদী শিক্ষক-শিক্ষণ শিবির

১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মসমাজের নিকট থেকে বলরামপুরের একটি সুবিস্তীর্ণ জমি বে-আইনী অভয়-আশ্রমের পক্ষ থেকে লাবণ্যলতা চন্দ্র ও শিশির সেনের নামে লীজ নেওয়া হয়। বলরামপুরে তাঁরা ১৯৪৫ সালের নভেম্বর মাসে একটি বুনিয়াদী শিক্ষক-শিক্ষণ শিবির আরম্ভ করেন। জেল-ফেরত তরুণ সম্প্রদায়ের একদল এবং বাইরেরও কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী এই শিবিরে শিক্ষাগ্রহণ করবার জন্য যোগদান করেন। প্রথমবার শিবিরে ৬ মাসের পাঠ্যক্রম ছিল। শিবিরের প্রথম-শিক্ষিত দলকে ‘সেভ দি চিলড্রেন কমিটি’ এবং ‘হরিজন বোর্ড’ কাজে নিযুক্ত করেন। ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় শিবির খোলা হয় একবছরের পাঠ্যক্রমে।

রিলিফের কাজে লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে নোয়াখালিতে দাঙ্গা ঘটে। লাবণ্যলতা চন্দ প্রমুখ প্রধান কর্মীরা নোয়াখালির দাঙ্গাবিধস্ত অঞ্চলে রিলিফের কাজ করতে গেলেন। কিছুদিনের মধ্যে ছাত্রী ও ছাত্র শিক্ষার্থীরাও ঐ কাজে যোগদান করতে চলে যান। ফলে শিবির ভেঙে যায়। কিন্তু পরে তাঁদের এই অপূর্ণ শিক্ষা পূর্ণ করে দেওয়া হয়।

লাবণ্যলতা চন্দ কর্তৃক বাঁকুড়ায় কন্যা শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা

নোয়াখালি দাঙ্গার পর ঐ অঞ্চলের ১৬/১৭ বছর বয়সের একশতটি মেয়ে নিয়ে লাবণ্যলতা চন্দ কুমিল্লায় একটি শিবির স্থাপন করেন একবৎসরের জন্য। একবছর পরে এদের মধ্যে অনেক মেয়ের অভিভাবক নিরাপত্তার অভাব হেতু তাদের বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ভরসা পান নি। তাদের জন্ম স্বাধীনতা-লাভের পর বাঁকুড়াতে বাড়ী ভাড়া করে আবার কন্যা-শিক্ষালয় নাম দিয়ে লাবণ্যলতা চন্দ একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ক্রমে বাঁকুড়ার কন্য়া-শিক্ষালয়কে বলরামপুরের বুনিয়াদী শিক্ষালয়ের সঙ্গে একত্রিত করা হয়।

বাংলাদেশের কস্তুরবা-ট্রাস্টের প্রতিনিধি লাবণ্যলতা চন্দ

১৯৪৫ সালে কস্তুরবা-ট্রাস্টের কাজ নদীয়া জেলার সাহেবনগর গ্রামে আরম্ভ হয়। নিরুপমা দেবী ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন; পরে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বাংলাদেশ-এর নানা স্থানে রিলিফের কাজ করেন। সেই সময় তিনি লাবণ্যলতা চন্দের সঙ্গে রিলিফের কাজে যুক্ত হন। বাংলাদেশের কস্তুরবা-ট্রাস্টের প্রতিনিধি নিযুক্ত হন লাবণ্যলতা চন্দ। তিনিই নিরুপমা দেবীকে সাহেবনগর গ্রামসেবিকা-শিক্ষণ-শিবিবের সঞ্চালিকা নিযুক্ত করেন। ১৯৪৮ সালে ঐ গ্রামসেবিকা-শিক্ষণ-শিবির বলরামপুরে নিয়ে আসা হয়। নিরুপমা দেবী সাহেবনগরে গঠনমূলক কাজ করতে থাকেন এবং তারপর তিনি ‘ভূদান যজ্ঞ’র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন।

ক্ষমতালোভহীন নেত্রী লাবণ্যলতা চন্দ

ক্ষমতালোভহীন নেত্রী লাবণ্যলতা চন্দ জীবনের শেষ পর্যন্ত গঠনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে নীরবে জাতিগঠনের বুনিয়াদ গেঁথে চলেছেন অক্লান্তভাবে। শেষ বয়সেও তাঁর বুনিয়াদী শিক্ষাদানের কাজের পরিধি দেখলে শ্রদ্ধায় আপনা থেকেই মাথা নত হয়ে আসে।

লাবণ্যলতা চন্দর মৃত্যু

১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই বিপ্লবী লাবণ্যলতা চন্দ মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার :- লাবণ্যলতা চন্দ ছিলেন এক সংগ্রামী, মানবতাবাদী ও শিক্ষাব্রতী নারী, যিনি নিজ জীবনের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে সমাজ, নারীশিক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, কারাবরণ এবং সামাজিক পুনর্গঠনের কর্মযজ্ঞ—সবই তাঁকে এক অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তিনি কেবল একজন শিক্ষক বা সমাজকর্মীই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শ নির্মাতা, যাঁর চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের পথ দেখিয়েছে। ইতিহাসে লাবণ্যলতা চন্দের নাম চিরকাল স্মরণীয় থাকবে এক দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, সাহসী এবং সমাজনির্মাতা নারীর প্রতীক হিসেবে।

(FAQ) লাবণ্যলতা চন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. লাবণ্যলতা চন্দ কে ছিলেন?

লাবণ্যলতা চন্দ ছিলেন একজন শিক্ষিকা, সমাজসেবিকা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি নারীশিক্ষা ও সামাজিক upliftment-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২. তাঁর জন্ম ও মৃত্যু কবে হয়েছিল?

তিনি ১৮৯১ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

৩. লাবণ্যলতা চন্দ কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং এই কারণে তাঁকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়।

৪. ‘অভয় আশ্রম’ কী এবং এতে তাঁর ভূমিকা কী ছিল?

‘অভয় আশ্রম’ ছিল একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেখানে তিনি নারীদের জন্য শিক্ষা, পুনর্বাসন ও স্বনির্ভরতা প্রচারের কাজ করেন। তিনি আশ্রমের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।

৫. তিনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি কুমিল্লার ফৈজুন্নেসা গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পরে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।

৬. তিনি কংগ্রেসে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন?

১৯৩৮ সালে তিনি বঙ্গ প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী সদস্য।

৭. তিনি শিক্ষা প্রসারে কী কী উদ্যোগ নেন?

তিনি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন, কন্যাশিক্ষা প্রচার করেন এবং “নবী তালীম” নামক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ছিলেন।

৮. তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান কী?

নারীশিক্ষা, সমাজসেবা, রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তিনি শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন এবং সারাজীবন মানবকল্যাণে কাজ করে যান।

Leave a Comment