জেনে নিন নিজেকে যোগ্য করে তুলুন – সময়োপযোগী সিভি তৈরি করুন, রেফারেন্স, নেটওয়ার্ক বাড়ান, সজাগ থাকুন, কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে
নিজেকে যোগ্য করে তুলুন
‘সে সোনার হরিণ’। কত কিছুর পরিবর্তন হলো, কিন্তু এই কথার কোনো পরিবর্তন হলো না। দিন যত যাচ্ছে চাকরি যেন ততই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।
জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে নানা পেশায় লিপ্ত হতে হয়। তবে কখনও কখনও উপযুক্ত অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে পছন্দানুযায়ী পেশা বেছে নিতে পারেন না।
চাকরি, ব্যবসা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার- যে পেশায়ই যান না কেন, সময়মতো নিজেকে গড়ে তুলতে না পারলে লক্ষ্যার্জন ব্যর্থ হয়। বেশিরভাগ বাঙালীর ইচ্ছে থাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।
একটা ছোট শিশুকে প্রশ্ন করবেন, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? সে সঙ্গে সঙ্গে বলবে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তার জন্য সঠিকভাবে নিজেকে তৈরি করে না।
সেক্ষেত্রে প্রথমেই বাবা- মায়ের একটা বিরাট ভূমিকা পালন করতে হয়। ছোট থেকেই শিশুকে কোন বিশেষ পেশার প্রতি আকৃষ্ট করবেন না। বরং সে কোনদিকে যেতে চায় বা তার ইচ্ছের বিষয় কি সেটা বুঝে তাকে সঠিক গাইড লাইন দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে, তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে কিভাবে এগোতে হবে।
স্কুল থেকেই মনস্থির করতে হবে ‘ভবিষ্যতে আমি আমাকে কোথায় দেখতে চাই’। তারপর সে অনুযায়ী বিষয় বাছাই করে পরবর্তী পড়াশোনার দিকে এগোতে হবে। আমাদের দেশে পড়াশোনার সঙ্গে পেশাগত দিকের কোন মিল থাকে না।
ফলে ব্যক্তিগত ভাবে যেমন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, তেমনি কর্ম অনুযায়ী সঠিক কর্মী না পেলে প্রতিষ্ঠান বা কাজেরও অগ্রগতি হয় না।
এছাড়া আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা এমন যে ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই ইংরেজিতে খানিকটা দুর্বল থাকে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং সম্ভব হলে গঠনমূলক কাজে জড়িত হতে হবে।
এতে কিছুটা অভিজ্ঞতা বাড়বে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা উর্ধ্বতন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিতি বাড়বে। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগার সম্ভাবনা থাকে। কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্সও করে নিতে পারেন। পড়াশোনা যখন প্রায় শেষ, তখন থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিন। নিজেকে তৈরি করুন।
আপনি যদি বিসিএসের মাধ্যমে নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তবে অনার্সের পর থেকেই বিসিএস এর বইগুলো পড়তে থাকুন।
যদি ব্যাংকার হতে চান, তবে বাজারে প্রচলিত ব্যাংক রিলেটেড বইগুলো পড়ুন এবং ব্যাংকগুলোতে কিভাবে নিয়োগ হয় সে সম্পর্কে জানুন। অর্থাৎ আগে মনস্থির করুন আপনি কি হতে চান। সেভাবে নিজেকে তৈরি করুন।
সময়োপযোগী সিভি তৈরি করুন
একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী সিভি তৈরি করুন। অবজেক্টিভ এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন কর্তৃপক্ষ তাতে প্রভাবিত ও মুগ্ধ হন। সিজিপিএ ৩ এর কম থাকলে উল্লেখ করার দরকার নেই। সিভি সংক্ষিপ্ত করবেন।
রেফারেন্স
রেফারেন্স হিসেবে অবশ্যই চেষ্টা করবেন সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের পরিচয় দেয়ার। তাকে অবশ্যই জানিয়ে রাখবেন, প্রয়োজনে সিভির একটি কপি তাকে দিয়ে রাখবেন।
নেটওয়ার্ক বাড়ান
কখনও কোনো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সিনিয়র ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হলে তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখবেন। বর্তমান চাকরি বাজারে নিজেকে ভাল অবস্থানে দেখতে চাইলে প্রয়োজন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। কার মাধ্যমে কপাল খুলে যাবে বলা যায় না।
সজাগ থাকুন
পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে নিয়মিত তাদের ওয়েবসাইট দেখুন। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। আর চাকরির ধরন বুঝে আবেদনপত্র তৈরি করে জমা দিয়ে দিন।
কারিগরি শিক্ষা
বোর্ডের অধীনস্থ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি হতে পারেন। যেখানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। অথবা বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়েও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। যেমন- ড্রাইভিং, সেলাই, রান্না, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি। এতে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আপনার সহায়ক হবে।
চাকরিমেলা
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিমেলা হয়। সেখানে বড় বড় কোম্পানিগুলো চাকরির ডালি নিয়ে হাজির হয়। সুন্দর গোছানো কিছু সিভি নিয়ে পছন্দ অনুযায়ী স্টলে জমা দিন। তবে অবশ্যই চাকরির ধরন, কতজন লোক লাগবে, চাকরির প্রতিযোগিতা কেমন, করে নাগাদ ডাকতে পারে এ সম্পর্কে জেনে নিন। কার একজনের নম্বর রেখে দিতে পারেন। মাকে মাঝে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
পড়তে হবে অনেক
জানতে হলে পড়তে হবে। পাঠ্য বই ছাড়াও অন্যান্য বই পড়ুন। ফিকশন, নন-ফিকশনসহ সবধরনের বই পড়ুন। যারা ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেন না, বা পড়তে চান না তারা গণিত, ইংরেজি এবং বাণিজ্যের বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে যে কোন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোতে চাকরি পাওয়া সহজ হবে।
আগে লক্ষ্য স্থির করুন, তারপর সেভাবে নিজেকে তৈরি করুন।