২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল

বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রস্তর ও তাম্র-প্রস্তর যুগ থেকে ১০ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল তা আলোচনা করা হল।

মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য

প্রশ্ন:- মধ্য প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

উত্তর:- প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরনের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ বলা হত। তিনটি প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল হল মধ্যপ্রস্তর যুগ। খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও খাদ্য উৎপাদনকারী নব্যপ্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল মধ্য প্রস্তরযুগ নামে চিহ্নিত। এই যুগের সময়সীমা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০০ অব্দ পর্যন্ত মধ্য প্রস্তর যুগ বিস্তৃত ছিল। ভারতে এই যুগের সূত্রপাত হলোসিন যুগের গোড়ার দিকে। ভারতের উত্তর প্রদেশের সরাই নহর রাই ও মহাদহ থেকে মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ হাতিয়ার তৈরিতে আরো দক্ষতার পরিচয় দেয়। এই যুগের হাতিয়ার পূর্ববর্তী যুগের থেকে উন্নত ও আকারে ক্ষুদ্র হয়। জীবজন্তুর হাড় ও দাঁত দিয়ে হাতিয়ার তৈরির কাজ এই সময় আরো উন্নত হয়। এই যুগে মানুষের প্রধান অস্ত্র ছিল তীর-ধনুক, হারপুন, বর্শা। পাথরের পাশাপাশি মৃত পশুর হাড়, পশুর সিং, কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি হাতিয়ারের অনুসঙ্গ বা হাতল হিসেবে ব্যবহারে এই যুগের মানুষ রপ্ত ছিল। হাতিয়ারের ক্ষুদ্র আকারের জন্য এই যুগকে ‘মাইক্রোলিথ’ বা ‘ক্ষুদ্রাস্মীয় যুগ’ নামেও অভিহিত করা হয়।

মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশুশিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। বড়ো পশুর পাশাপাশি তারা লাল হরিণ, বনবেড়াল, নেউল ইত্যাদি পশুও শিকার করত। যারা নদী ও সমুদ্রের উপকূলে বাস করত তারা সেখান থেকে মাছ ও শামুক সংগ্রহ করত। এই যুগের মানুষ কোনো কোনো পশুকে পোষ মানাতেও শেখে। পোষমানা পশুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গরু, মোষ, ছাগল ইত্যাদি।

মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ কৃষিকাজ জানত না। বন্য পশুপাখি স্বীকার করেই তারা খাদ্যসংগ্ৰহ করত। তবে বন্য ফলমূল বা শস্যদানাও তারা খেতে অভ্যস্ত হয়েছিল। এই যুগের মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল বনের ফলমূল, হরিণ, শূকর, গােরু, ভেড়া, প্রভৃতি পশুর মাংস, মাছ ও শামুক। এই যুগে মানুষ পশুর মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করেছিল।

মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করে জীবন অতিবাহিত করত। এই সময় হাড়ের তৈরি সূঁচের নিদর্শন পাওয়া গেছে। সম্ভবত পশুচামড়া সেলাই করার পদ্ধতি তাদের জানা ছিল। হাড়ের তৈরি অলঙ্কার এবং পাথর ও শামুকের খোলার পুঁতি পাওয়া গেছে। মহাদহায় হাড়ের লকেট ও নেকলেস পাওয়া গেছে। তবে পুরুষরাই অলঙ্কার পরত বলে মনে করা হয়, নারীরা নয়।

সাধারণ ভাবে মধ্যযুগের মানুষ ছিল গুহাবাসী। তবে পুরা প্রস্তর যুগের তুলনায় কিছুটা উন্নত মানের বসতি নির্মাণ করে মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করত। এলাহাবাদের নিকট চোপানিমানডো কেন্দ্রে একটি কুটিরের অবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। কুটিরের মধ্যে উনুন এবং পাথর থেকে হাতিয়ার নির্মানের প্রচেষ্টার নিদর্শন থেকে প্রমানিত হয় যে, মধ্যপ্রস্তর যুগে বসতি নির্মাণ করে বাস করার শিক্ষা তাদের অজানা ছিল না।

মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ ধর্মীয় কারণে কোনো অলৌকিক শক্তিকে প্রসন্ন করার জন্য গুহার দেওয়ালে চতুষ্কোণ, ত্রিকোণ, বৃত্তাকার চিত্র আঁকত। ইরফান হাবিব মধ্যপ্রস্তর যুগকে ধর্মচেতনা ও কুৎস্কারের উন্মেষ পর্ব বলে চিহ্নিত করেছেন। এই সময় মানুষ সম্ভবত পরবর্তী জীবন বা পুনর্জন্ম সম্পর্কে ভাবতে শিখেছিল। মৃতের সঙ্গে হাড়ের অলংকার এবং শিকার করা পশুর হাড়ও পোতা ছিল। নারী ও পুরুষের যুগ্ম সমাধিও আছে।

সম্ভবত মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ শিল্পকর্মে দক্ষ হতে শুরু করেছিল। বরফের উপর দিয়ে চলার জন্য মধ্যপ্রস্তর যুগের আদিম মানুষ শ্লেজ গাড়ির ব্যবহারও জানত। এই গাড়ি টানার কাজে তারা কুকুরকে কাজে লাগাত। তারা জলপথে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে গাছের গুঁড়ি খোদাই করে নৌকা বানাত।

মধ্যপ্রস্তর যুগের মানুষ চিত্রকলায় কিছুটা অগ্রগতি ঘটায়। নিত্য দিনের ব্যবহার্য সামগ্রী ও বিভিন্ন হাতিয়ার ছিল এই যুগের চিত্রকলার বিষয়বস্তু। জ্যামিতিক আকারে ত্রিকোণ, চতুষ্কোণ, বৃত্তাকার চিত্র এই সময় আঁকা হত। মানুষ ও পশুর চিত্রও পাওয়া গেছে সুইডেন, ফিনল্যাণ্ড, রাশিয়ার বিভিন্ন গুহায়। ভারতের ভীমবেটকায় মধ্যপ্রস্তর যুগের চিত্রকলার নমুনা আবিষ্কৃত হয়েছে।

এই সময় মানুষ তার কণ্ঠস্বরের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে শিখেছিল। জিহ্বার ব্যবহার দ্বারা পরস্পর ভাব বিনিময় করতে শুরু করেছিল। এইভাবে মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ ক্রমশ মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলি রপ্ত করতে শিখেছিল।

মধ্য প্রস্তর সংস্কৃতির সময়কাল স্বল্প কিন্তু সংস্কৃতির পরিবর্তন ছিল তাৎপর্যবহ। প্রস্তর যুগ থেকে সভ্যতার পথে অগ্রসর হওয়ার এই পর্বকে সভ্যতার উষালগ্ন বলা যায়। মধ্য প্রস্তর যুগের বিবর্তন ব্যতিরেকে পরবর্তী নব্য প্রস্তর যুগ অনুধাবন করা কষ্টসাধ্য।

Leave a Comment