নতুন বছরের প্রস্তুতি

আপনার নতুন বছরের প্রস্তুতি

শেষ হতে চলেছে চলতি বছর ২০২৪। আর এক মাস পরেই শুরু হবে নতুন বছর ২০২৫। এ বছর কী পেলাম, কী হারালাম এই হিসাব-নিকাশের সঙ্গে সবার মনে চলছে পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা। কিন্তু প্রস্তুতি না নিয়ে পরিকল্পনা করলে এ বছরের ভুল করার সম্ভাবনা আছে আসছে বছরেও। নতুন বছরের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে সে বিষয়েই আজকের এই লেখনী।

হিসাবনিকাশ

নতুন বছরের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো, এই (২০২৪ সাল) বছরের যাবতীয় হিসাবনিকাশ খাতা খুলে বসা। অর্থাৎ বছরের শুরুতে এই বছরের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সেই লক্ষ্যের কতটুকু অর্জিত হয়েছে, কতটুকু অর্জিত হয় নি, না হলে কেন হয়নি, কী করলে অর্জিত হতো ইত্যাদি খুঁজে বের করা। এই হিসাবনিকাশ করতে বসলে প্রথমে দেখা যাবে যে, নতুন বছরের মেনে চলার জন্য যে রুটিনটি বানিয়েছিলেন সেই রুটিনটিই হয়তো মেনে চলতে পারেন নি। যারা পেরেছেন তাদের জানাই, অভিনন্দন! যারা পারেন নি তারা কি কেন পারেন নি তার কারণ খুঁজে পেয়েছেন? এই লেখায় আমরা সেই কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। একইভাবে, মিলিয়ে দেখতে হবে বছর শেষে আপনি নিজেকে শিক্ষাজীবনে, পেশাজীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেখানে দেখতে চেয়েছিলেন সেখানে কি পৌঁছতে পেরেছেন? না পারলে কেন পারেন নি তা খুঁজে বের করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য লক্ষ্য ও তার অর্জন বিষয়ে আপনার অনুসন্ধান আলাদাভাবে লিখুন। এই কাজে তাড়াহুড়া করবেন না। অনেকেরই পাওয়ার থেকে না পাওয়ার পাল্লা ভারী হয়। সেক্ষেত্রে মন এই কাজে সময় দিতে চাইবে না। কিন্তু সময় নিয়ে প্রতিটি দিক ভালোভাবে ভেবে দেখুন, খুঁজে বের করুন। আপনি এ বছরের ত্রুটি যত বেশি খুঁজে বের করতে পারবেন সামনের বছরে তত ত্রুটিমুক্তভাবে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।

লক্ষ্য নির্ধারণ

শেষ হতে যাওয়া বছরের হিসাবনিকাশ শেষ হলে, এ বছরের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। সেটির শুরু হতে পারে গত বছরের অর্জন যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে। গত বছর যতটুকু অর্জন করেছেন তাকে মেনে নিন, সান্ত্বনা দিন যে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনি লক্ষ্যের দিকে এই পর্যন্ত এগিয়েছেন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কর্মপ্রচেষ্টা তার তিনটি ধাপ রয়েছে। যেমন –

  • (১) প্রথমত, আপনার অবস্থান কোথায় তা বের করতে হবে। আপনার হাতে সময় কতটুকু আছে, দক্ষতা কী পরিমাণে অর্জন করেছেন, অন্যান্য সম্পদ কী পরিমাণে আছে ইত্যাদি। খুঁজে বের করতে হবে পথের প্রতিবন্ধকতা। এই প্রথম ধাপটি আপনি ইতোমধ্যেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন গত বছরের লক্ষ্যে কতটুকু অর্জিত হয়েছে, বাকিটুকু কেন অর্জিত হয় নি ইত্যাদির কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁজে বের করার মাধ্যমে।
  • (২) দ্বিতীয়ত, বর্তমান অবস্থানকে স্বীকার করে নিতে হবে। আপনি যদি প্রকৃত অবস্থাকে স্বীকার করতে না পারেন তাহলে সেটি থেকে উত্তরণের জন্য কাজও করতে পারবেন না। আমাদের মস্তিষ্ক অনেক সময় যা নেই তাও দেখে। অনেকেই আকাশ কুসুম কল্পনা করে বলে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ মস্তিষ্ক অনুভব করে পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট কাজ করার দরকার নেই। কল্পনায় রঙিন স্বপ্ন দেখে বলেই মানুষ এমন বিভ্রান্ত হয়। মস্তিষ্কের এই ক্ষমতাকেই আমরা লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করতে পারি। ধন্যবাদ দানের মাধ্যমে আমরা নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হই এবং আমাদের শরীর ও মন আকাশ কুসুম কল্পনার বদ অভ্যাস থেকে মুক্তি পায়।
  • (৩) তৃতীয়ত, পরিবর্তনের জন্য কাজ করা। লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে। এরপর কাজগুলো যেন একের পর এক করা যায় তেমন একটি রুটিন তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, দুটি কাজের সময় যেন একই না হয়। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে, দুটি কাজের স্থানও যেন সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি বাসায় কোনো কাজের পরে শরীরচর্চার জন্য জিমে যেতে চান। তাহলে দুটি কাজের মধ্যে এমন সময়ের ব্যবধান রাখতে হবে যেন, বাসা থেকে জিমে পৌঁছানো যায়। অথবা, বাসাতেই শরীরচর্চার ব্যবস্থা রাখতে হবে। দুটি কাজের মধ্যে বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময়ও রাখতে হবে।

কাজের ধারাবাহিকতা

এখন, রুটিন তৈরির পরে আসে কাজ করার। কাজ আমরা করতেও চাই, শুরুও করি কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারি না। কিন্তু সফলতা আসে ধারাবাহিক কাজের মাধ্যমেই। যে লক্ষ্য আমরা সামনের বছরের জন্য নির্ধারণ করেছি সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সারা বছর ধরেই আমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু শেষ হতে চলা বছরের হিসাবনিকাশ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি শুরু করার কয়েক দিন পরেই রুটিনটি আর অনুসরণ করতে পারি নি। একবার রুটিন থেকে বিচ্যুত হওয়ার পরে আর সেটি পুনরায় অনুসরণ করার চেষ্টাও করা হয় নি।

রুটিন অনুসরণ করার কৌশল

আমাদের শরীর ও মন নতুন একটি অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে কমপক্ষে একুশ দিন সময় নেয়। প্রতি বছর আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করে মনে মনে ঠিক করি যে, বছরের প্রথম দিন থেকে রুটিন মেনে চলব। কিন্তু দুয়েকদিন পরে অভ্যস্ততার কারণে আবার পুরনো নিয়মে (বা অনিয়মে) ফেরত যাই। কয়েক দিন এভাবে যাওয়ার পরে হার মেনে নিই। মনকে বোঝায় আমাদের দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব নয়। বছরের বাকি সময়ে আর তৈরি করা রুটিনে ফেরত যাওয়া সম্ভব হয় না। এই দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে সামনের বছরের প্রথম দিন থেকে নয় বরং ডিসেম্বরে প্রথম দিন বা যে কোনো দিন থেকে রুটিন মেনে চলার অভ্যাস করা উচিত। তাহলে দুয়েকদিন মেনে চলার পরে যদি রুটিনের ব্যত্যয়ও হয় তাহলে নিজেকে সংশোধনের সময় পাব। এভাবে একুশ দিন যদি আমরা নতুন রুটিন অনুসরণ করতে পারি তাহলে এটি অভ্যাসে পরিণত হবে আর বছরের প্রথম দিন থেকে রুটিন অনুসরণ করে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না। মনে রাখতে হবে, রুটিনের ব্যত্যয় হলেই পরদিন আবার রুটিনে ফিরে যেতে হবে। তাহলেই রুটিন অনুসরণ সম্ভব হবে।

Leave a Comment