লালবিহারী দে

রেভারেন্ড লালবিহারী দে

ঐতিহাসিক চরিত্ররেভারেন্ড লালবিহারী দে

রেভারেন্ড লালবিহারী দে

ভূমিকা :- ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ-এর যুগে নিজ নিজ চিন্তা ও কর্মকৃতিত্বের মাধ্যমে যে সকল মনীষী ভারতে জাতীয় চেতনার উদ্বোধন ও প্রসার ঘটিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রেভারেন্ড লালবিহারী দে অন্যতম। স্বদেশকল্যাণব্রতী এই মনীষীর প্রশস্তি রচনা করে কবি দীনবন্ধু মিত্র তাঁর সুরধুনী কাব্যে লিখেছেন-খ্রিষ্টধর্ম অবলম্বী, ধর্মসুধা পান, অভিলাষী দিবানিশি দেশের কল্যাণ।

বর্ধমান জেলার সোনাপলাসী গ্রামে এক সুবর্ণবণিক পরিবারে জন্ম হয় লালবিহারীর। তাঁর পিতার নাম রাধাকান্ত দে। তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। রাধাকৃষ্ণের সেবা-পূজাতেই দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতেন। আরাধ্য দেবতার স্মরণে তাই বালক পুত্রের নাম রেখেছিলেন কালা গোপাল।

পিতার তত্ত্বাবধানে লালবিহারী ছেলেবেলায় গ্রামের পাঠশালাতেই লেখাপড়া শুরু করেন। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল গোপীকান্তের পাঠশালায়। সেখানে তিনি বাংলা ও অঙ্ক শিক্ষা করেন।

গোঁড়া বৈষ্ণব রাধাকান্তের বাস্তববুদ্ধির অভাব ছিল না। তাই ছেলেকে যুগোপোযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করবার উদ্দেশ্যে কলকাতায় নিয়ে আসেন। সেই সময় লালবিহারীর বয়স নয় বছর।

এ দেশের লোকেদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইংরাজ খ্রিস্টান মিশনারি ডাফ সাহেব ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি স্কুল খুলেছিলেন। এই স্কুলের নাম হয়েছিল জেনারেল অ্যাসেম্বলি। এই স্কুলে যেসব ছেলে পড়তে আসত তাদের মাইনে দিতে হত না।

মহাত্মা রামমোহন রায়-এর সুপারিশে লালবিহারীকে ডাফ সাহেবের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।

লেখাপড়ার প্রতি বালক লালবিহারীর ছিল গভীর আগ্রহ ও অধ্যবসায়।

অল্পদিনের মধ্যেই তিনি এখানে ছাত্র শিক্ষক সকলেরই প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।

ডাফ সাহেবের স্কুলে পড়বার সময়ে লালবিহারী ইংরাজী ভাষা সাহিত্যে বিশেষ দক্ষতা লাভ করেন।

১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যু হলে তাঁর পড়াশুনা চালানো দুষ্কর হয়ে ওঠে। কলকাতায় থাকা ও বই খাতা কেনা ইত্যাদির খরচা নিয়ে তাঁকে খুবই সঙ্কটে পড়তে হয়।

শেষ অবধি এক জ্ঞাতি ভাইকে ধরে তার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। সেখানে থেকেই নিয়মিত পড়াশুনার কাজ চলতে লাগল।

সেই কালে ডেভিড হেয়ার সাহেবের হিন্দু স্কুলের খুবই নামডাক। হেয়ার সাহেব ঈশ্বর, ধর্ম এসব আমল দিতেন না। খ্রিস্টান মিশনারিদের ক্রিয়াকলাপও পছন্দ করতেন না।

তিনি বলতেন, দেশের হিন্দু ছেলেদের খ্রিস্টান করার উদ্দেশ্যেই মিশনারিদের যত কিছু জনহিতমূলক তৎপরতা। হেয়ার সাহেব ছিলেন দয়ালু, উদারচেতা ও যথার্থ শিক্ষারতী পুরুষ। তাঁর স্কুলে যারা পড়ত তারা সহজেই হিন্দু কলেজে পড়ার সুযোগ পেত।

লালবিহারী একদিন হেয়ার সাহেবের কাছে গিয়ে তাঁকে তাঁর স্কুলে নেবার অনুরোধ জানালেন।

হেয়ার সাহেব যখন শুনলেন যে লালবিহারী মিশনারি ডাফ সাহেবের স্কুলে পড়ছেন, তখন সরাসরি বলে দিলেন, তুমি তো নিউ টেস্টামেন্ট পড়, আধা খ্রিস্টান হয়ে গেছ। এখানে এলে তুমি আমাদের ছেলেদের নষ্ট করবে।

এরপর লালবিহারীর আর হেয়ার স্কুলে পড়ার সুযোগ হল না।

এদিকে কলকাতায় একটা আশ্রয়ের সুরাহা হলেও পয়সার অভাবে বইপত্র কেনা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু চিরকালই উদ্যোগী পুরুষের সুযোগের অভাব হয় না। চেষ্টাচরিত্র করে লালবিহারীও শেষ পর্যন্ত এক মুসলমান বই ফেরিওয়ালার সঙ্গে রফা করে নিলেন, বদলা বদলি করে তাঁর কাছ থেকে বই ধার নেবেন।

এই ভাবে লালবিহারী পাঠ্যবই ছাড়াও বিদেশের বিখ্যাত লেখক মনীষীদের বহু বই পড়ে ফেললেন।

স্কুলের পরীক্ষাতে ফলাফলও ভাল হতে লাগল। ভাল ফলাফলের জন্য তিনি স্বর্ণপদক পুরস্কারও পেয়েছেন।

১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে উনিশ বছর বয়সে লালবিহারী রেভারেন্ড ডাফ কর্তৃক খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। এই বছরেই আর একজন ইতিহাস বিখ্যাত বঙ্গসন্তানও খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি হলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ধর্মান্তরিত হবার পর খ্রিস্টরীতি অনুযায়ী লালবিহারী নিয়মিত ডাফ সাহেবের গির্জায় যেতে লাগলেন। তিন বছর পরে ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ধর্ম প্রচার ও যাজকতা শিক্ষার ক্লাশে ভর্তি হন।

১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে লালবিহারী খ্রিস্টধর্ম প্রচারক-উপদেশকের পদ লাভ করেন।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হন রেভারেন্ড।

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সুরাটের এক পার্সি খ্রিস্টান পরিবারের বিদুষী কন্যাকে বিবাহ করেন লালবিহারী। তাঁর স্ত্রীর নাম বাচুভাই। তিনি অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও পতিব্রতা রমণী ছিলেন।

বিবাহের পর সস্ত্রীক কলকাতায় এসে লালবিহারী বর্ধমান জেলার অম্বিকা-কালনায় চার্চে ধর্ম উপদেশক পদে যোগ দেন।

ধর্ম বিশ্বাসের পরিবর্তন ঘটলেও লালবিহারী ছিলেন মনেপ্রাণে বাঙ্গালী।

স্বদেশ ও মাতৃভাষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। তিনি উপলব্ধি করতেন, দেশের লোককে মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে তাদের উন্নতি সম্ভব নয়।

এই উদ্দেশ্যে নতুন কর্মস্থলে আসার পরে তিনি অরুণোদয় নামে একটি বাংলা পাক্ষিক সংবাদ পত্রিকা প্রকাশ করেন। বস্তুত এই ভাবেই তাঁর প্রথম সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত হয়।

অরুণোদয়ের বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে তিনি নানা শিক্ষণীয় বিষয় প্রচার করতে থাকেন।

মাতৃভাষা শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে কখনওই বিদেশী রাজভাষা শিক্ষা সহজ হয় না। স্বদেশীয় মাতৃভাষা শিক্ষার মধ্যে দিয়ে দেশের সুখ দুঃখের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রতিটি বঙ্গসন্তানের কর্তব্য।’

সেই কালে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের লোকের বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা অবজ্ঞা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের জ্ঞান লাভকে সামাজিক ও কর্মজীবনে কৌলীন্য অর্জনের চাবিকাঠি বলে বিবেচনা করত।

এই সামাজিক পরিস্থিতির তীব্র প্রতিবাদ করে লালবিহারী লিখেছেন, “সাহিত্যের প্রকৃত উপাদানের জন্য আমাদের পরদেশী ইংরাজী বা সংস্কৃতের দ্বারস্থ হবার দরকার করে না। প্রকৃত সাহিত্যের সামগ্রী আমাদের ঘরেই রয়েছে। সাহিত্যের দ্বারা বাংলাদেশ-এর উন্নতি করতে হলে বাংলা দেশের নিজস্ব সামগ্রী নিয়েই সাহিত্য রচনা করতে হবে।”

লালবিহারী ইংরাজি ভাষাতেও বহু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। কিন্তু অরুণোদয় পত্রিকার মাধ্যমে তিনি বাংলা ভাষার গুরুত্ব বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন ও সজাগ করার চেষ্টা করেছেন। এই পত্রিকাটি ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল।

১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে লালবিহারী সরকারী শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হন এবং মুর্শিদাবাদ-এর বহরমপুর কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন।

পাঁচ বছর স্কুলে শিক্ষকতার পরে তিনি হুগলী মহসীন কলেজে ইংরাজির অধ্যাপকপদে যোগ দেন। কলেজে ইংরাজী ছাড়াও ইতিহাস দর্শন বিষয় পড়াতেন।

কলেজে পড়াবার সময়েই তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় বেঙ্গল ম্যাগাজিন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে ইংরাজী সাহিত্য চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ফেলো নির্বাচিত হন।

লালবিহারী সরাসরি ইংরাজ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ইংরাজদের বর্ণ বৈষম্য নীতির তীর সমালোচনা করতেন।

রো ও ওয়েব সাহেব ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের লেখা Hints on the study of English বইয়ের ভূমিকায় ইংরাজি শিক্ষিত বাঙ্গালীদের প্রতি কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, বাঙ্গালীরা শুদ্ধ ইংরাজি লিখতে পারে না। তারা যা লেখে তা হল Babu English.

সাহেবদের এই মন্তব্যে জাত্যাভিমানে গর্বিত লালবিহারী যথাসময়ে উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন। তিনি Hints on the study of English বইটি জোগাড় করে অদ্যোপান্ত পড়ে প্রতি পাতায় ইংরাজি লেখার ভুল খুঁজে খুঁজে বার করলেন। পরে লিখলেন যে বাঙ্গালীদের মধ্যে ইংরাজি শিক্ষিত এমন বহু ব্যক্তি আছেন যাঁদের পায়ের কাছে বসে রো ও ওয়েবসাহেব ইংরাজি লেখা শিখতে পারেন।

অধ্যাপক হিসাবে হুগলী কলেজে খুবই সুনাম অর্জন করেছিলেন লালবিহারী।

কিন্তু সরকারী চাকরিতে ইংরাজদের বর্ণবৈষম্য নীতির জন্য তিনি কলেজের অধ্যাপকপদ লাভ করেন নি।

শিক্ষাক্ষেত্রে লালবিহারীর অবদান স্মরণীয়। বেথুন সোসাইটির অন্যতম সক্রিয় সদস্য রূপে তিনি অসাধারণ কয়েকটি লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন।

প্রবন্ধগুলি হল, Primary Education of Bengal (১৮৫৮), Vernacular Education in Bengal (১৮৫৯), English Education in Bengal (১৮৫৯), Compulsory Education in Bengal (১৮৬৯), Teaching of English Literature in the College of Bengal (১৮৭৪) প্রভৃতি।

এই সকল প্রবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বরাবরই মাতৃভাষার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাধারণের শিক্ষা মাতৃভাষাতেই হওয়া উচিত। অবহেলিত স্ত্রী শিক্ষার প্রতিও তিনি সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।

এই সব প্রবন্ধে শিক্ষা বিস্তারের গুরুত্ব সম্বন্ধে সরকার সচেতন হন এবং এই বিষয়ে পরিকল্পনা রচনার দায়িত্ব দেন লালবিহারীর ওপর।

জনশিক্ষা প্রসারের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিলেও সরকার শিক্ষাখাতে ব্যয় নির্বাহের জন্য জমির ওপর অতিরিক্ত কর বসাতে চেয়েছিলেন।

লালবিহারী বিশ্বাস করতেন, সমাজের প্রতিটি মানুষেরই শিক্ষালাভের অধিকার আছে এবং শিক্ষাদান সরকারেরই কর্তব্য। তিনি ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভায় (ভারত সভা) সরকারের মনোভাবের তীব্র বিরোধিতা করেন।

লালবিহারী হিন্দু সমাজের বিভিন্ন কু-প্রথা বিশেষ করে জাতিভেদ প্রথার যেমন কঠোর সমালোচনা করতেন, তেমনি জমিদারের রায়ত শোষণ ও সরকারের ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্যের বিরোধিতাও করতেন।

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ইংরাজি ও বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার এক প্রতিযোগিতা আহ্বান করেন। রচনার বিষয় ছিল Social and Domestic life of the Rural Population and Working Class in Bengal.

লালবিহারী এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। তিনি গোবিন্দ সামন্ত বা History of a Bengal Raiyat নামক অসাধারণ উপন্যাস রচনার জন্য ৫০০ টাকা পুরস্কার পান।

এই রচনায় তিনি একদিকে যেমন জমিদারেদের অত্যাচার ও শোষণের পাশাপাশি সমাজপতিদের নির্দয় ব্যবহার ও হিন্দু বিধবাদের নির্যাতীত জীবন, সতীদাহ, হিন্দু বিবাহ ইত্যাদির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন তেমনি গ্রাম সমাজের শিক্ষাহীনতা, কুসংস্কার এবং মহাজন, জোতদার সরকারী কর্মচারী, নীলকুঠির সাহেবদের শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মতামত স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেছেন।

বর্ধমান জেলার গ্রামের দরিদ্র চাষী গোবিন্দ সামন্তের জীবন কেন্দ্রিক কাহিনী তিনি দুই খন্ডে সম্পূর্ণ করেন। পুস্তকাকারে প্রকাশের পর এই রচনা তৎকালীন সমাজে প্রবল আলোড়ন তোলে। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির নতুন সংস্করণে নামকরণ করা হয় Bengal Peasent life.

প্রাণিজগতে বিবর্তনবাদের প্রবক্তা বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন লালবিহারীর এই অতি বিখ্যাত উপন্যাসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এক চিঠিতে তিনি বইটির প্রকাশককে লেখেন, “I shall be glad if you would tell him with my compliments how much pleasure and instruc- tion, I derived from reading a few days ago, his novel Govinda Samanta.”

সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে লালবিহারী সমধিক খ্যাত তাঁর Folk tales of Bengal গ্রন্থের জন্য। গ্রামের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত উপকথা রূপকথা সংগ্রহ করে তিনি এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।

বস্তুত এই দুটি গ্রন্থের মধ্যেই বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতির প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ও প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর একটি গ্রন্থ Relloctions of Alexander Duff লন্ডন থেকে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

লালবিহারী ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা পুরুষ। স্বজাতির মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপোসহীন। তাঁকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন মিশনারি ডাফ সাহেব। তাঁর প্রতি লালবিহারীর ছিল পিতৃতুল্য শ্রদ্ধা ভক্তি। অথচ দেশীয় চার্চগুলির উচ্চতর পরিচালন সমিতি মিশন কাউন্সিলে কোনও ভারতীয় খ্রিস্ট উপাসক, এমন কি রেভারেন্ড পদাধিকারী ব্যক্তিদেরও নেওয়া হবে না বলে ডাফ সাহেব মন্তব্য করলে, তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা করেন নি। ইংরাজ ও ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদমূলক নীতির জন্য তিনি মর্মপীড়া বোধ করতেন এবং এই নীতির প্রতিবাদে শেষ জীবন পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন।

১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে লালবিহারী হুগলী কলেজের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি কলকাতায় বেনেপুকুর অঞ্চলে এসে বসবাস করতে থাকেন।

রেভারেন্ড লালবিহারী দের শেষ জীবন

স্বদেশহিতৈষী উদার হৃদয় এই কৃতী বঙ্গসন্তানের শেষ জীবন সুখের ছিল না। ব্যারিস্টারী পড়তে গিয়ে তাঁর বড় ছেলে খ্রিস্টান সন্ন্যাসী হয়ে যান। এই ঘটনায় তাঁকে তীব্র মানসিক যাতনা ভোগ করতে হয়েছে।

লালবিহারী দের মৃত্যু

বেনেপুকুরের বাসাতেই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

উপসংহার :-

(FAQ) রেভারেন্ড লালবিহারী দে সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

Leave a Comment