রবার্ট ক্লাইভ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রভাবশালী সামরিক কর্মকর্তা ও প্রশাসক ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ (১৭২৫-১৭৭৪)। তিনি ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। “ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া” নামে পরিচিত, তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখেন। তার কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ তার শাসনকাল উপমহাদেশের সম্পদ লুট ও উপনিবেশিক শোষণের সূচনা করে।

Table of Contents

গভর্নর রবার্ট ক্লাইভ

ঐতিহাসিক চরিত্ররবার্ট ক্লাইভ
জন্ম২৯ সেপ্টেম্বর ১৭২৫ খ্রি
জন্মস্থানস্ট্র্য়াটফোর্ড অন এভন, ইংল্যান্ড
উপাধিক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া
পেশাসামরিক কর্মকর্তা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসক
বিশেষ অবদানপলাশীর যুদ্ধ বিজয়ী, ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন
বিতর্কসম্পদ লুট, দুর্নীতি ও উপনিবেশিক শোষণ
মৃত্যু২২ নভেম্বর ১৭৭৪ খ্রি
মৃত্যুর কারণআত্মহত্যা

রবার্ট ক্লাইভ

ভূমিকা :- ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছে চুয়ান্ন বছর হল। তার আগে প্রায় দুশো বছর ব্রিটিশ শাসনাধীনে থেকে ভারতীয় জনগণ শোষিত নিপীড়িত হয়েছে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্থপতি ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। দীর্ঘস্থায়ী দুরপণেয় দুর্ভাগ্যের বোঝা তিনি চাপিয়ে দিয়েছিলেন ভারতবাসীর জীবনে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শক্তিমান প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ক্লাইভ

এদেশের মানুষের কাছে তাঁর পরিচয় যাই হোক না কেন, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শক্তিমান প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জীবনে প্রতিফলিত হয়েছিল অপরিসীম উদ্যম, নিষ্ঠা, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, সূক্ষ্ম বিচারবোধ প্রভৃতি গুণাবলী। এই গুণ বলেই পার্থিব জীবনের নানা দোষ ত্রুটি সত্ত্বেও পৃথিবীর ইতিহাসে বিজেতাদের তালিকায় রবার্ট ক্লাইভের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মেকলে যথার্থই বলেছেন, “His name stands high on the roll of conquerors.”

রবার্ট ক্লাইভের প্রতিভার স্ফুরণ

এক সময়ে ব্রিটিশের উপনিবেশ গোটা পৃথিবী জুড়ে এতটাই প্রসার লাভ করেছিল যে বলা হত, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনও সূর্যাস্ত হয় না। প্রবাদ হলেও বাস্তব সত্য ছিল তাই। ব্রিটিশের পৃথিবীজোড়া উপনিবেশের মধ্যে ধনে সম্পদে সমৃদ্ধতম দেশ ভারতবর্ষ ছিল তার প্রাণ। আর এখানেই কর্মক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল ক্লাইভের প্রতিভার স্ফুরণ।

রানী এলিজাবেথ-এর সময় থেকেই ভারতের সঙ্গে ইংল্যান্ড-এর ব্যবসা শুরু হয়েছিল। ক্রমে ব্যবসা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘাঁটি ও দুর্গ স্থাপিত হয় মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতায়।

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা

কলকাতায় উপনিবেশ স্থাপনের অনুমতি ইংরাজরা লাভ করেছিল মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব-এর রাজত্বকালে ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় ইউরোপ-এর ফরাসী, ওলন্দাজ ও পর্তুগীজরা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি লাভ করেছিল। ইংরাজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই সকল দেশও প্রতিষ্ঠা করল এক একটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইংরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জয়লাভ

ফরাসীরা উপনিবেশ স্থাপন করেছিল চন্দননগরে, ওলন্দাজরা চুঁচুড়ায় এবং পর্তুগীজরা গোয়াতে। ইংরাজরা মাদ্রাজ থেকে তাদের উপনিবেশ স্থানান্তরিত করে বাংলার সুতানুটিতে। সাম্রাজ্যবাদী এই দেশগুলির মধ্যে এদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তেমনি ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিবাদও যথেষ্টই ছিল। শেষ পর্যন্ত এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইংরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই জয়লাভ করেছিল। তাই সেইকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বলতে ইংরাজদেরই বোঝাত।

রবার্ট ক্লাইভের জন্ম

লর্ড রবার্ট ক্লাইভের প্রথম জীবনের কথা আজও পর্যন্ত অজানা রয়ে গিয়েছে। নানা সূত্রে যেটুকু জানা গেছে, তাতে দেখা যায় ইংলন্ডের এক হত দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ।

গভর্নর রবার্ট ক্লাইভের শৈশব

তাঁর বাবা ছিলেন দুর্দান্ত মদ্যপ। সামান্য আয়রোজগার যা করতেন মদ খেয়েই সব উড়িয়ে দিতেন। বাড়িতে এসে পাড়া মাতিয়ে জুড়তেন চিৎকার চেঁচামেচি। মাতাল স্বামীর অত্যাচার নিষ্ঠুরতায় অতিষ্ঠ হয়ে তিন বছরের শিশু ক্লাইভকে নিয়ে তাঁর মা তার মাসীর বাড়ি চলে যান। বাবার স্নেহ ভালবাসা কোনদিনই কপালে জোটে নি শিশু ক্লাইভের।

রবার্ট ক্লাইভের শিক্ষা

  • (১) মাসীর বাড়িতে থাকার সময়েই ক্লাইভকে লেখাপড়া শেখার জন্য পাঠানো হয় একটা স্কুলের বোর্ডিং বাড়িতে। বাপমায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্কুলে এসে শিশু বয়সেই নিষ্করুণ পৃথিবীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় তাঁর।
  • (২) সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের মা বাবা দেখা করতে আসে। বুক ভরা স্নেহের সঙ্গে তারা নিয়ে আসে কত খাবার। কিন্তু ক্লাইভের জন্য ছিল না কেউই। ঈশ্বরের করুণা আর স্নেহ ছাড়া বেড়ে ওঠার জন্য আর কোনো অবলম্বনই পান নি ক্লাইভ।
  • (৩) স্কুলের জীবনেই ক্লাইভ তাঁর জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নেন। অকরুণ এই পৃথিবীতে যে করেই হোক তাঁকে বেঁচে থাকতে হবে, নিজের একটু স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। লেখাপড়ায় খুব বেশিদূর এগোতে পারেন নি ক্লাইভ। শরীর ছিল বলিষ্ঠ, শক্তপোক্ত। সমবয়সী বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে দল পাকানো, মারপিট করার দিকেই যত ঝোঁক তার।

কেরানি রবার্ট ক্লাইভ

  • (১) সেই কালে অপদার্থ অকম্মা ছেলেদেরই সাধারণত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরিতে ভারতবর্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তরুণ ক্লাইভও তেমনি কোম্পানির রাইটার অর্থাৎ কেরানী হয়ে চলে এলেন মাদ্রাজে।
  • (২) সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দেশ, অপরিচিত আবহাওয়া। তার মধ্যেই কাজ শুরু করেন তরুণ ক্লাইভ। অফিসে কাজ যতটা না করেন, নিজের জীবনের ভূত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকেন তার বেশিক্ষণ।
  • (৩) ইংল্যান্ডের গ্রামের ছোট্ট বাড়ি, পরিচিত পরিজন-সবকিছু ছেড়ে সাত সমুদ্র পেরিয়ে ভারতবর্ষে এসে পড়েছেন, তাঁর এই দূরযাত্রার শেষ কোথায়? নগণ্য এক অপরিচিত অভাজন হয়েই কি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে? বিধাতা কি উপযুক্ত কোনো কাজ তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করেন নি?

তিরস্কৃত রবার্ট ক্লাইভ

সহকর্মীরা সকলেই স্বজাতীয়। তাঁরা তাঁর হাবভাব দেখে ভাবে ছেলেটা নিতান্তই হাবাগোবা গোবেচারা। তারা মাঝে মাঝেই পেছনে লাগে তাঁর। অপদার্থ বলে বিদ্রূপ করে। একদিন উত্যক্ত ক্লাইভ উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দিলেন সকলকে। বেধড়ক পিটিয়ে অফিসের মধ্যেই ঘায়েল করে দিলেন। যথারীতি কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ গেল। তাঁরা তাঁকে রাইটার কাজের অযোগ্য ও অভদ্র বলে সাব্যস্ত করলেন। তিরস্কৃত হলেন ক্লাইভ।

রবার্ট ক্লাইভের আত্মহত্যার সংকল্প

  • (১) এরপর থেকে নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন তিনি কর্মস্থলে। তাঁর সঙ্গে সকলেই মেলামেশা বন্ধ করে দিল। বাইরে বেপরোয়া ভাব নিয়ে থাকলেও মনে মনে নিজেকে নিয়ে, জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ভাবনা চিন্তা বেড়ে গেল।
  • (২) ভেবে কোন কূল কিনারা পান না। ব্যর্থতার অন্ধকার ছাড়া কোনো দিকে কোনো সম্ভাবনার ইঙ্গিত নেই। শেষে জীবনের ওপর তীব্র ঘৃণায় আত্মহত্যা করার সঙ্কল্প করলেন। একদিন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে পিস্তল তুলে নিলেন। বুক তাক করে ট্রিগার টিপলেন। পর পর দুবার।
  • (৩) কিন্তু অদ্ভুত কান্ড। গুলি বেরোল না। ত্রস্তব্যস্তে পিস্তল পরীক্ষা করে দেখলেন, কোনো গোলমাল নেই কোথাও, গুলি ভরাই রয়েছে। তবু পরীক্ষা করার জন্য জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাক করে ট্রিগার টিপলেন। প্রচন্ড শব্দের সঙ্গে গুলি ছুটে বেরোল।
  • (৪) এই দৈব ঘটনায় অশান্ত ক্লাইভ আত্মস্থ হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁকে নিয়ে ঈশ্বরের অভিপ্রায় অন্য রকম – আত্মহত্যা তার নিয়তি নয়। স্বদেশের প্রয়োজনে নিশ্চয় মহৎ কোনো কাজের জন্যই তিনি নির্দিষ্ট। তাঁকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে যেতে হবে সময়ের জন্য।

জীবনের মোড় ঘুরে গেল রবার্ট ক্লাইভের

এর পর থেকে জীবনের মোড় ঘুরে গেল ক্লাইভের। অদৃশ্য এক শক্তি যেন সঞ্চারিত হল তাঁর মানসিকতায়, সমস্ত চিন্তা জুড়ে। এরপর আরও একটি ঘটনায় নিজের পৃথিবীর চেহারাই পাল্টে গেল ক্লাইভের চোখে। নতুন প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন তিনি।

সুযোগের অপেক্ষায় রবার্ট ক্লাইভ

  • (১) স্কুলে লেখাপড়ায় বেশিদূর অগ্রসর হতে না পারলেও ক্লাইভের অনিয়মিত ভাবে বাইরের বই পড়ার অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল। সময় সুযোগ মতো তিনি মাদ্রাজের লাটসাহেব মিস্টার মার্সের লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশোনা করতেন।
  • (২) একদিন লাইব্রেরীতে ঢুকে বিভিন্ন লেখকের লেখা এমন কিছু বই তাঁর হাতে পড়ল, যেগুলো তাঁকে জানিয়ে দিল, জীবনে হতাশা এলেও হারাবার কিছু নেই। পৃথিবীতে যারা সাফল্যের শিখর স্পর্শ করে সার্থক হয়েছেন, স্বনামধন্য হয়েছেন, তাঁদের সকলকেই হতাশার প্রতিকূলতার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে।
  • (৩) সংগ্রামই জীবন। সংগ্রামশীল জীবন কখনো ব্যর্থ হয় না। বলবান পুরুষই পারে সংগ্রাম করতে। যে দুর্বল ভয় তারই। তার কোনো প্রতিপক্ষ থাকে না। জীবন সম্পর্কে ধারণা রাতারাতিই যেন পাল্টে গেল ক্লাইভের। নতুন উদ্যমে উপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন তিনি যেখানে নিজের উপযুক্ততা প্রমাণ করতে পারবেন।

যুদ্ধবন্দী রবার্ট ক্লাইভ

উদ্যমী পুরুষের সুযোগের অভাব হয় না। বিচার করে সুযোগকেই সৌভাগ্যে রূপ দিতে পারেন তাঁরা। ক্লাইভও তেমনি এক সুযোগ পেয়ে গেলেন এক সময়। সময়টা ইউরোপের এক সংকটকাল। ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মধ্যে বেধে গেছে প্রচন্ড যুদ্ধ। তার আলোড়ন এসে পৌঁচেছে এদেশেও। ভারতে অবস্থিত ইংরাজ আর ফরাসীদের মধ্যেও শুরু হয়ে গেল সংঘর্ষ। ফরাসীরা মাদ্রাজ অধিকার করে নিল। ইংরাজ যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে ক্লাইভও ছিলেন। এই বন্দিত্বই তাঁর সৌভাগ্যের দরজা খুলে দিল।

মুক্ত রবার্ট ক্লাইভ

কৌশলে বন্দিদশা থেকে পলায়ন করে বহু পথ পাড়ি দিয়ে ক্লাইভ এসে আশ্রয় নিলেন ইংরাজদের একটি দুর্গে। দুর্গটির নাম ফোর্ট সেন্ট ডেভিড। দুর্গের কর্তৃপক্ষ মেজর লরেন্সকে ক্লাইভ জানালেন, তিনি সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে চান। তাঁরা আনন্দের সঙ্গেই সবল স্বাস্থ্যবান যুবক ক্লাইভকে সৈন্যদলে স্থান দিলেন।

প্রথম যুদ্ধেই রবার্ট ক্লাইভের রননৈপুণ্যের প্রকাশ

মসীজীবী ক্লাইভ অসিজীবী হয়ে যেন এতদিনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধান পেয়ে গেলেন। সমস্ত উদ্যম, শক্তি নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পণ্ডিচেরীতে প্রথম যুদ্ধেই ক্লাইভ তাঁর সাহস ও রণনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়ে মেজর লরেন্সের প্রশংসা লাভ করলেন।

লেফটেনান্ট পদে উন্নীত রবার্ট ক্লাইভ

প্রাথমিক সংঘর্ষের পর পণ্ডিচেরীতে ফরাসীদের সঙ্গে ইংরাজদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হল। ফলে সাময়িক ভাবে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ-এ ফরাসী ও ইংরাজদের মধ্যে বিবাদের অবসান হয়। কিন্তু ক্লাইড সহজাত দূরদৃষ্টি বলে বুঝতে পেরেছিলেন, ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে ফরাসী ও ইংরাজদের মধ্যে যুদ্ধ কখনো বন্ধ হবার নয়। ইতিমধ্যে ক্লাইভ লেফটেনান্ট পদে উন্নীত হলেন। পুরোপুরি সৈনিকের জীবনে নিজেকে সঁপে দিলেন তিনি।

রবার্ট ক্লাইভের আশঙ্কা

ফরাসী গভর্নর দুল্লে ভারতে ফরাসী সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি তৎকালীন মোগল সম্রাটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরাজদের বিতাড়িত করার সুযোগ খুঁজতে লাগলেন। ক্লাইভের আশঙ্কা অচিরেই সত্য প্রমাণিত হল।

কর্ণাটকের অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব

দুই প্রতিপক্ষই নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা প্রসারের সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। এমনি সময়েই দাক্ষিণাত্যে কর্ণাটকের শাসনক্ষমতা নিয়ে গোলযোগ উপস্থিত হল। নবাব পরলোক গমন করেছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবার কথা নবাবপুত্র মহম্মদ আলির। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ালেন ভূতপূর্ব নবাবের জামাতা চন্দ্রসাহেব। সুযোগ বুঝে দুই পক্ষের সমর্থনে এগিয়ে এলো ইংরাজ ও ফরাসী। মহম্মদ আলীর পক্ষ অবলম্বন করল ইংরাজরা। ফরাসীরা সমর্থন জানাল চন্দ্র- সাহেবকে। এই ভাবে এই দুই শক্তি চূড়ান্ত শক্তিপরীক্ষায় অগ্রসর হল।

ক্যাপ্টেন রবার্ট ক্লাইভ

মেজর লরেন্সের দূরদৃষ্টিতে তরুণ সৈনিক ক্লাইভের প্রতিভা ধরা পড়েছিল। লেফটেনান্টের পদ থেকে তিনি উন্নীত হয়েছেন ক্যাপ্টেন পদে। ফলে সামরিক পরিষদে স্থান হয়েছে তাঁর, সামরিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন তিনি।

রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাফল্য

  • (১) ফরাসীরা ইতিমধ্যে ত্রিচিনোপলিতে অবরোধ গড়ে তুলেছে। মেজর লরেন্স ফরাসী অবরোধ ভেঙ্গে দেবার সামরিক দায়িত্ব দিলেন ক্লাইভকে। যুদ্ধের নির্দেশ পেয়েই মাত্র পাঁচশত সৈনা সঙ্গে নিতে ক্লাইভ কর্ণাটকের রাজধানী আর্কটে উপস্থিত হলেন। শুরু হল দুই পক্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষ। সময় টা ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ।
  • (২) আর্কট যাত্রার সময় ক্লাইভ মেজর লরেন্সকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, মাদ্রাজ থেকে আরো সৈন্য পাঠাবার জন্য। কিন্তু পরবর্তী সাহায্যের প্রত্যাশা না রেখেই তিনি পথের দুর্গমতা ও বর্ষা ঋতুর প্রতিকূল আবহাওয়া তুচ্ছ করে অতর্কিতে আর্কটের ফরাসী দুর্গ আক্রমণ করলেন।
  • (৩) দুর্গে অবস্থিত দেশীয় সৈন্যবাহিনী তরুণ সেনাপতি ক্লাইভের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হল। যুদ্ধ পরিত্যাগ করে তারা পলায়ন করে। একরকম বিনা রক্তপাতেই ক্লাইভ যুদ্ধে জয়লাভ করলেন এবং ফরাসী দুর্গ অধিকার করেন।
  • (৪) সাফল্যের সার্থকতা ক্লাইভকে আরও দুঃসাহসী নির্ভীক করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে এই প্রাচীন দুর্গটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল আধুনিক আর্কট শহর। এরপর আরও দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অসাধারণ কৌশলের পরিচয় দিয়ে সকলকে স্তম্ভিত করে দিলেন তিনি।
  • (৫) অধীন বাহিনীর সৈনিকদের মনে সাহস সঞ্চারিত করার অসামান্য ক্ষমতা ছিল ক্লাইভের। তাঁর সঠিক পরিচালনায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করে তারা যুদ্ধলিপ্ত হত। এই ভাবে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, সংযম, সাহস ও রণনৈপুণ্যের বলে ফরাসীদের দমন করে ক্লাইভ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ গৌরবকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন।

ক্যাপ্টেন রবার্ট ক্লাইভের সুখ্যাতি

প্রকৃতপক্ষে আর্কট যুদ্ধের জয়লাভের মধ্য দিয়েই ক্লাইডের জীবনে সৌভাগ্যের উদয় হয়েছিল। তাঁর বীরত্বের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে। সম্মান, প্রশংসা, পদোন্নতি এই সময়ে যেন ভিড় করে এসেছিল তাঁর জীবনে। তাঁর যুদ্ধজয়ের সংবাদ বিলাতে কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীকেও চমৎকৃত করেছিল। ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের সীমা ছাড়িয়ে তাঁর সুখ্যাতি ফ্রান্সে পৌঁছতেও বিলম্ব হয় নি।

রবার্ট ক্লাইভের বিবাহ

মাদ্রাজে থাকতেই স্বদেশীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন ক্লাইভ। স্ত্রী লাভের পরে অর্থ সম্মান, একজন সার্থক মানুষের জীবনে যা কিছু আকাঙ্ক্ষিত থাকে সবই লাভ করলেন ক্লাইভ। দরিদ্র দুঃস্থ পিতার অখ্যাত অবজ্ঞাত এক হতভাগ্য সন্তান ছিলেন, হলেন সম্মানে সম্পদে পদমর্যাদায় সমাজের একজন, দেশের গৌরবস্থল।

লর্ড রবার্ট ক্লাইভের দেশে প্রত্যাবর্তন

যুদ্ধের কঠোর পরিশ্রমের ফলে ক্লাইভের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। বিশ্রাম লাভের জন্য তিনি ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলেন। দেশের মাটিতে তাঁর জন্য বিপুল সংবর্ধনা আর প্রচুর অভিনন্দন অপেক্ষা করছিল। আর্কট যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি তাঁর গুণমুগ্ধ দেশবাসীর বাঁধভাঙ্গা উৎসাহ ও কৃতজ্ঞতায় কৃতার্থ হয়ে গেলেন।

রবার্ট ক্লাইভের পুনরায় ভারতে আগমন

দেশে সুখের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেন নি ক্লাইভ। কিছুদিন পরেই মাদ্রাজের সেন্ট ফোর্ট ডেভিড দুর্গের লেফটেনান্ট কর্নেলের পদ নিয়ে ভারতবর্ষে চলে এলেন। কিছুদিনের মধ্যেই মাদ্রাজের গভর্নরের অবসর গ্রহণের কথা। স্থির ছিল, তিনি অবসর নিলে সেই পদের দায়িত্ব লাভ করবেন ক্লাইভ।

বাংলার নবাবের কলকাতা দখল

ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রবল বিরোধ উপস্থিত হয়েছিল। ততদিনে কলকাতায় ইংরাজরা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ গড়ে তুলেছে। শক্তি সংগ্রহ করে উদ্ধত হয়ে উঠছিল ইংরাজদের আচরণ। ক্ষুব্ধ নবাব কলকাতা আক্রমণ করে ফোর্ট উইলিয়াম অধিকার করে নিলেন। গভর্নর ড্রেক দলবল নিয়ে পালিয়ে কলকাতার অদূরে ফলতায় গঙ্গার ওপরে একটি জাহাজে আশ্রয় নিলেন।

কলকাতা পুনরুদ্ধারের দায়িত্বে রবার্ট ক্লাইভ

ইংরাজদের বিপর্যয়ের কথা মাদ্রাজে যখন পৌঁছায়, তার কিছুদিন আগেই মাত্র দেশ থেকে ফিরে এসেছেন ক্লাইভ। কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁর মতো একজন সাহসী রণনিপুণ ও তেজস্বী সেনানীর প্রয়োজন ছিল। তাই কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ক্লাইভকেই সেই দায়িত্ব দিলেন।

পলাশীর যুদ্ধ

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় আবারও এক কঠিন সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছিল ক্লাইভকে, যে সংগ্রামের ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। যা ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে সুপরিচিত। পলাশীর যুদ্ধে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা-সূর্য অস্তমিত হয়ে চিরকালের মতো দুঃখের মেঘে আচ্ছাদিত করল। ভারতের ভাগ্যাকাশ।

ইংরাজদের টলমল অবস্থা

কলকাতায় যখন ব্রিটিশ শক্তি নবাবের হাতে বিপর্যস্ত তখন ফরাসীরা চন্দননগরে কেল্লা বানিয়ে বেশ ঝাঁকিয়ে বসেছে। নবাবের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্কও বন্ধুত্বের। অপরদিকে ইংরাজদের অবস্থা টলমল। কলকাতার দখল হাতছাড়া। ফলতার কাছে এক জাহাজে সকলে কোণঠাসা। নবাবের হুকুমে দেশের লোকের ইংরেজের কাছে কোনো জিনিস বিক্রিবাট্টা নিষিদ্ধ হয়েছে।

পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের জয়

  • (১) এই পরিস্থিতিতে ক্লাইভ তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা নিয়ে উপস্থিত হলেন বাংলায়। এখানে পলাশী প্রান্তরে নবাবের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
  • (২) ক্লাইভ রহস্যজনক কূটকৌশল বিস্তার করে এক রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার শিকারে পরিণত করেছিলেন বাংলার নবাবকে। ভারতের সেই কলঙ্কময় ইতিহাস নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতি ও পারিষদদের বিশ্বাসঘাতকতার কালিমায় মসীলিপ্ত। ক্লাইভের দিক থেকে পলাশীর যুদ্ধই তাঁর জীবনের অক্ষয় কীর্তি।
  • (৩) আর তাঁর এই কর্মকৃতিত্বের বলেই বাংলা তথা ভারতবর্ষে ব্রিটিশের ভাবী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত হয়। পলাশীর প্রান্তরে নবাব সৈন্য ও ইংরাজ সৈন্যের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল মাত্র নয় ঘণ্টা। বিজয়ী ক্লাইভের তখন বয়স ছিল বত্রিশ। আর পরাজিত নবাব সিরাজদ্দৌলা ছিলেন সাতাশ বছরের তরুণ।
  • (৪) ক্লাইভের কূট কৌশলে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ পর্যবসিত হয়েছিল অভিনয়ে। ভারতে ব্রিটিশ শক্তির লুপ্ত গৌরব পুনরুদ্ধার করে ক্লাইভ সাফল্যের চূড়ান্ত শিখর স্পর্শ করলেন। ইংল্যান্ড উদ্বেল হয়ে উঠল তাঁর প্রশংসায়।

ইংল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি রবার্ট ক্লাইভ

পলাশীর যুদ্ধের তিন বছর পরেই ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ফিরে গেলেন ক্লাইভ। এদেশে থাকতে নানা অসদুপায়ে নবাবের প্রচুর টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছিলেন। সেই টাকায় ইংল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন তিনি।

অজস্র সম্মানে ভূষিত রবার্ট ক্লাইভ

ইংল্যান্ডে অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন ক্লাইভ। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি হলেন ব্যারন অব পলাশি। দুবছর পরেই নাইট উপাধি লাভ করে হলেন লর্ড রবার্ট ক্লাইভ। পাঁচ বছর জীবনের চূড়ান্ত ভোগসুখ ও সম্মান উপভোগের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

বাংলার গভর্নর রবার্ট ক্লাইভ

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলার গভর্নর হয়ে এদেশে ফিরে এলেন। এই পদে দুবছর থাকার পরে স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে যান। ভাগ্যদেবতা ততদিনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্লাইভের দিক থেকে। তাই এবারে সম্মানের ভূষণ নয়, ইংল্যান্ডে তাঁর ভাগ্যে জুটল নানা নিন্দা অপযশ ও অভিযোগের কলঙ্ক।

রবার্ট ক্লাইভের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অভিযোগ পার্লামেন্টে আনা হল তাঁর বিরুদ্ধে। কোম্পানির সঙ্গেও তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কেন না, কোম্পানির কাজ করতে গিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন তিনি-কোম্পানিকে করেছেন বদনামের ভাগী। পার্লামেন্টারী কমিশনের সামনে জবাবদিহি করতে হল ক্লাইভকে। অবশ্য বিচারে মুক্তি লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর মাথায় চেপে ছিল জালিয়াতির অপযশ।

ইতিহাসের প্রহসন

রাতারাতি যেন ইতিহাসের পটপরিবর্তন ঘটে গেল। জাতীয় নায়কের পদ থেকে এক ঘৃণ্য দুষ্কৃতি রূপে পরিগণিত হলেন ক্লাইভ। স্তম্ভিত বিস্ময়ে ইতিহাসের করুণ দৃশ্যান্তর নিঃশব্দে মেনে নিতে হয়েছিল ক্লাইভকে। স্বদেশবাসীকে সারা জীবনের সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি দিয়েছিলেন সাম্রাজ্য; আর তারা তাঁকে দিল অখ্যাতি অপযশ। কুটিলগতি ইতিহাসের প্রহসন বুঝি একেই বলে!

রবার্ট ক্লাইভের ভগ্ন স্বাস্থ্য

ক্লান্তিতে অবসাদে হতাশায় দেহে মনে ভেঙে পড়লেন বৃটিশ সাম্রাজ্যের শক্তিমান দুর্ধর্ষ ক্লাইভ। বয়সও ততদিনে পঞ্চাশে পৌঁচেছে। ভাগ্য প্রতিকূল, দেশবাসী প্রতিকূল। স্বাস্থ্যও অনুকূল হল না। ভগ্ন মনে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েই শেষদিনের জন্য প্রতীক্ষা করতে লাগলেন তিন।

গভর্নর রবার্ট ক্লাইভের মৃত্যু

অবশেষে এল সেই অবধারিত দিন, ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে সেপ্টেম্বর। সেদিন পরিবারের সকলকে নিয়ে বসেছেন তাস খেলতে। তাঁর ব্যবহারে কথায় কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ল না কারো। তাসের দান চালতে চালতে হঠাৎ উঠে পাশের ঘরে গেলেন ক্লাইভ। দরজায় খিল আঁটার শব্দ পাওয়া গেল। পরমুহূর্তেই দম্ দম্ পিস্তলের শব্দ। আত্মহত্যা করে কলঙ্কিত জীবনের অবসান ঘটালেন রবার্ট ক্লাইভ।

উপসংহার :- রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিজয়ী হয়, যা বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ধীরে ধীরে পুরো ভারত উপমহাদেশে উপনিবেশিক শাসন বিস্তারের পথ সুগম করে। ক্লাইভ তার সামরিক দক্ষতা এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার জন্য প্রশংসিত হলেও, তার শাসনকাল দুর্নীতি, সম্পদ লুট এবং শোষণের জন্য কুখ্যাত। তার কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধি করলেও এটি ভারতীয় জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শোষণ ও দুঃখ-কষ্টের যুগের সূচনা করে। ক্লাইভের জীবন ও কর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ, যা উপনিবেশিক শাসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক তুলে ধরে।

(FAQ) রবার্ট ক্লাইভ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১। রবার্ট ক্লাইভ কে ছিলেন?

রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সামরিক কর্মকর্তা ও প্রশাসক, যিনি বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।

২। পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের ভূমিকা কী?

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং ব্রিটিশদের বিজয় নিশ্চিত করেন।

৩। “ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া” কাকে, কেন বলা হয়?

ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বড় ভূমিকার কারণে রবার্ট ক্লাইভ “ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া” নামে পরিচিত হন।

৪। রবার্ট ক্লাইভের শাসন নিয়ে কী বিতর্ক রয়েছে?

রবার্ট ক্লাইভকে দুর্নীতি, সম্পদ লুট, এবং ভারতীয় জনসাধারণের ওপর উপনিবেশিক শোষণের সূচনা করার জন্য দায়ী করা হয়।

৫। রবার্ট ক্লাইভের মৃত্যু কিভাবে হয়?

তিনি বিষণ্ণতা এবং বিতর্কিত জীবন নিয়ে চাপের কারণে ১৭৭৪ সালে আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করা হয়।

৬। রবার্ট ক্লাইভের কর্মকাণ্ডের প্রভাব কী ছিল?

তার কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটায়, কিন্তু এটি ভারতীয় জনসাধারণের জন্য শোষণ ও দুঃখ-কষ্টের যুগের সূচনা করে।

Leave a Comment