সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ -এর সময়কাল, স্থান, বিদ্রোহের কারণ, ক্ষোভের সূত্রপাত, বিদ্রোহের সূচনা, বিদ্রোহের প্রসার, আক্রমণ, নেতৃত্ব, বিদ্রোহের অবসান, বিদ্রোহীদের সাফল্য ও পরাজয়, বিদ্রোহীদের দুর্বলতা, বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য, চরিত্র বা প্রকৃতি ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে জানবো।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ প্রসঙ্গে হিন্দু সন্ন্যাসীদের আন্দোলন, হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলিম ফকিরদের আন্দোলন, সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের শুরুর সময়কাল, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিবাদ আন্দোলন, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের নেতৃত্ব, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সূচনা, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের বিস্তার, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রকৃতি, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতা, সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ফলাফল ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ |
সময়কাল | ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত |
স্থান | ঢাকা, নাটোর, রংপুর, কোচবিহার, মালদহ, বীরভূম |
নেতৃত্ব | ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানি, মজনু শাহ, মুশা শাহ, চিরাগ আলি |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা :- মুঘল আমলে উত্তর ভারত-এর হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বহু সন্ন্যাসী ও ফকির বাংলা ও বিহারে তীর্থভ্রমণে আসত। তাদের অনেকেই এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসও শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তাদের সহযোগী জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা যে বিদ্রোহ করে তা ‘সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।
সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ
এই সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ বলতে মূলত আঠারো শতকের শেষের দিকে ভারতবর্ষের বাংলাতে ফকির ও সন্ন্যাসী বা মুসলিম ও হিন্দু তাপসদের তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলনকে বোঝানো হয়ে থাকে।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সময়কাল
এই সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম কৃষক বিদ্রোহ। ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশ-এর ঢাকায় শুরু হয়ে এই বিদ্রোহ বিক্ষিপ্তভাবে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের স্থান
এই সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ মূলত বাংলা (উত্তরবঙ্গ) ও বিহারের বিস্তীর্ণ এলাকাতেই সংঘটিত হয়েছিল।
খাজনা আদায়ের দায়িত্ব
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ -এর পর খাজনা উত্তোলনের কর্তৃত্ব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় বিভিন্ন কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহ।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সংঘটিত এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –
(১) দান হ্রাস
ব্রিটিশ সরকার বাংলার জমিদার ও কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত রাজস্বের বোঝা চাপালে সন্ন্যাসী ও ফকিররা জমিদারদের কাছ থেকে দানের পরিমাণ কম পেতে থাকে।
(২) বাংলায় প্রবেশে বাধা
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বাংলায় প্রবেশ করতে এবং ধর্মচর্চা করতে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করা হয়। কোম্পানি দরগায় ফকিরদের যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
(৩) ভূমিরাজস্ব ও কর
যে সব সন্ন্যাসী ও ফকির বাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও কৃষিকাজ করতে শুরু করেন তাদের ওপর সরকার ও জমিদাররা ভূমিরাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেন। ভূমিরাজস্ব ছাড়াও তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করা হয়।
(৪) রেশম ব্যাবসা
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের অনেকেই রেশম ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে প্রায়ই কাঁচা রেশম ও রেশমি পণ্য জোর করে ছিনিয়ে নিত।
(৫) শোষণ ও অত্যাচার
কোম্পানির কর্মচারী ও জমিদাররা সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ওপর নানাভাবে শোষণ এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য যথেষ্ট উৎপীড়ন চালাত।
(৬) তীর্থকর
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের তীর্থযাত্রার ওপর সরকার কর বসায় এবং তাদের ধর্মাচরণে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে।
(৭) নির্যাতন
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ওপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালানো হয়। ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে অন্তত ১৫০ জন ফকিরকে হত্যা করা হয়।
(৮) মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ
ইজারাদার, পত্তনিদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগীরা সন্ন্যাসী ও ফকিরদের নানাভাবে শোষণ করতে থাকে।
(৯) ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কুফল
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিল ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্য, উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব আদায়, অজন্মা, অনাবৃষ্টি ইত্যাদির ফলে ১৭৭০ খ্রিঃ বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটে। এই মন্বন্তরে গ্রাম বাংলা শশ্মানে পরিনত হয়ে যায়।
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ক্ষোভের সূত্রপাত
কৃষক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ওপর ঘটে চলা এই সব অন্যায়ের ফলেই ক্ষুদ্ধ সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। এই বিদ্রোহ পরবর্তী কৃষকবিদ্রোহ গুলির প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের সূচনা
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জেলায় সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহ শীঘ্রই নাটোর, রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, কোচবিহার, বীরভূম প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের প্রসার
১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ শুরু হয়। এই বিদ্রোহ ধীরে ধীরে ঢাকা, নাটোর, রংপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ, বীরভূম, মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহ অন্তত ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে।
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের আক্রমণ
বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব দপ্তর, জমিদারদের বসতবাড়ি, গোলাঘর প্রভৃতি আক্রমণ করে। সাধারণ মানুষের ওপর বিদ্রোহীরা কোনো আক্রমণ চালায়নি।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের নেতৃত্ব
প্রথমদিকে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানি প্রমুখ। বিদ্রোহের শেষদিকে মজনু শাহ, মুশা শাহ, চিরাগ আলি প্রমুখ নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের অবসান
বিদ্রোহীরা প্রথমদিকে ব্রিটিশবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছুটা সাফল্য পেলেও পরবর্তীকালে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশবাহিনী নিষ্ঠুর দমননীতির দ্বারা বিদ্রোহের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। এর ফলে বিদ্রোহ থেমে যায়।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহীদের সাফল্য
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রতিরোধে বিদ্রোহীরা বীরত্বের পরিচয় দেয়। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশবাহিনী বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়। ইংরেজ সেনাপতি ক্যাপটেন টমাস নিহত হন। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্যাপটেন এডওয়ার্ডস নিহত হন এবং তাঁর বাহিনী বিধ্বস্ত হয়।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহীদের পরাজয়
ব্রিটিশ বাহিনীর চরম দমনপীড়নের ফলে বিদ্রোহীরা ক্রমে পিছু হঠতে থাকে। সাংগঠনিক দুর্বলতা, অনৈক্য প্রভৃতির ফলে বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় এবং ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিদ্রোহ থেমে যায়।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সংঘাতের রূপ ধারণ
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিদ্রোহ বহু ক্ষেত্রেই সংঘাতের রূপ নিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহীরা সাফল্যও পেয়েছিল। তবে প্রচণ্ড দমন-পীড়নের ফলে এই বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখতে পারে নি।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহীদের দুর্বলতা
প্রথমদিকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সন্ন্যাসী ফকিররা জয়লাভ করলেও শেষের দিকে বিশেষত, ১৮৯০ এর দশক থেকে বিদ্রোহীরা দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। এই দুর্বলতার পিছনে বেশ কিছু কারন ছিল। যেমন –
- (১) ইংরেজ সেনার সঙ্গে যুদ্ধ করার পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব।
- (২) বিদ্রোহীদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব।
- (৩) যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা।
- (৪) উন্নত যানবাহন ও দুর্গম রাস্তাঘাটের জন্য একপ্রান্তের বিদ্রোহীদের পক্ষে অন্য জায়গায় গিয়ে বিদ্রোহীদের যুদ্ধে সাহায্য করা সম্ভব হয় নি।
- (৫) বিদ্রোহের শেষদিকে নেতৃত্বের প্রশ্নে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য
ব্রিটিশ কোম্পানি, জমিদার ও বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীর শোষণ এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন জেলার সন্ন্যাসী ও ফকিররা বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন—
(১) দীর্ঘস্থায়িত্ব
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৪০ বছর ধরে (১৭৬৩-১৮০২ খ্রি.) এই বিদ্রোহ চলে।
(২) কৃষকদের বিদ্রোহ
বিদ্রোহী সন্ন্যাসী ও ফকিররা একদিকে ধর্মচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিল, অন্যদিকে কৃষিকাজ করে তারা জীবিকানির্বাহ করত।
(৩) হিন্দু-মুসলিম ঐক্য
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য লক্ষ্য করা যায়। বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী এবং নেতৃত্বদানকারী উভয়ের মধ্যেই হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের মানুষই ছিল।
(৪) ব্রিটিশ বিরোধিতা
ব্রিটিশ বিরোধিতাই ছিল এই বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য। বিদ্রোহীরা ইংরেজ কোম্পানির কুঠি, রাজস্ব দপ্তর প্রভৃতি আক্রমণ করে।
(৪) জমিদারের বিরোধিতা
বিদ্রোহীরা ব্রিটিশ কোম্পানির সহযোগী জমিদারদের বিরুদ্ধেও তাদের বিদ্রোহ পরিচালিত করে। বিদ্রোহীরা জমিদারদের বাসভবন, গোলাঘর প্রভৃতিতে আক্রমণ চালায়।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি
১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন। বিভিন্ন পণ্ডিত এই বিদ্রোহের বিভিন্ন চরিত্র বা প্রকৃতি উল্লেখ করে থাকেন। যেমন –
(১) সন্ত্রাসবাদী চরিত্র
লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী চরিত্র লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেছেন এই বিদ্রোহ ছিল ‘হিন্দুস্থানের যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রব’।
(২) কৃষক বিদ্রোহ
কারও কারও মতে, এই বিদ্রোহ ছিল মূলত একটি কৃষকবিদ্রোহ। সন্ন্যাসী ও ফকিররা ধর্মচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কৃষিকাজই ছিল তাদের প্রধান পেশা। উইলিয়াম হান্টার, এডওয়ার্ড ও গ্যারাট একে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।
(৩) স্বাধীনতার সংগ্রাম
কেউ কেউ মনে করেন, এই বিদ্রোহ ছিল বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন। লেস্টার হ্যাচিনসন মনে করেন, বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে নিজ দেশ ও ধর্মকে রক্ষা করা।
(৪) দুর্বলতা
সন্ন্যাসী ও ফকিরদের আন্তরিকতা থাকলেও তাদের সঙ্গে সমাজের বৃহত্তর অংশের সাধারণ মানুষ বিদ্রোহে শামিল হয়নি। এজন্য বিদ্রোহ কখনোই তীব্র হয়ে উঠতে পারেনি।
সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ঐতিহাসিক তাৎপর্য
- (১) বাংলার পশ্চিমের জেলা গুলিতে ধারাবাহিকভাবে যে বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে তার মধ্যে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ প্রথম। এছাড়া ১৭৯৯ সালের চুয়াড় বিদ্রোহ ১৮৩১ ও ১৮৩২ সালের কোল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য।
- (২) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ বাংলায় প্রথম ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রামের সূচনা করে। ফকির মজনু শাহ রাজনৈতিকভাবেও সচেতন ছিলেন এবং ব্রিটিশদেরকে বহিরাগত জবরদখলকারী মনে করতেন।
- (৩) তিনি ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিকার চেয়ে নাটোরের রাণী ভবানীর নিকট এই মর্মে পত্রও লেখেন যে, ফকিররা তাকে দেশের শাসক বলে মানেন। এটি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ।
- (৪) অসিত নাথ চন্দ্র যথার্থই লিখেছেন, “মজনু শাহর বিদ্রোহ তার সময়ে ব্যর্থ হলেও একে পরবর্তীকালে সংগঠিত স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত বলে ধরে নেওয়া যায়।”
সাহিত্যে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের প্রভাব
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ পরবর্তীকালের সাহিত্য জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই বিদ্রোহের বিষয়বস্তুকে অবলম্বন করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দমঠ‘ ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাস রচনা করেন।
উপসংহার :- ব্রিটিশ শাসনের অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিদ্রোহ নিঃসন্দেহে জোরদার হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতার অভাব, উন্নত যোগাযোগের অভাব, ধর্মীয় ভেদাভেদ প্রভৃতি কারণে এই বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
(FAQ) সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে।
ঢাকায় ইংরেজ কুঠি আক্রমণের মাধ্যমে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে।
ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, চিরাগ আলি, দেবী চৌধুরাণী।