নারী সংগ্রামী শান্তি ঘোষ (দাস) ছিলেন একজন বাঙালি কিশোরী বিপ্লবী যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শান্তি ঘোষ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারী ও কিশোর বিপ্লবীদের অগ্রদূত হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বিপ্লবী শান্তি ঘোষ (দাস)
ঐতিহাসিক চরিত্র | শান্তি ঘোষ (দাস) |
জন্ম | ২২ নভেম্বর ১৯১৬, কলকাতা |
প্রাথমিক বাসস্থান | কুমিল্লা (বর্তমানে বাংলাদেশ) |
পিতা | দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ (দর্শনের অধ্যাপক) |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়, কুমিল্লা |
বিপ্লবী সংগঠন | ছাত্রী সংঘ, যুগান্তর |
উল্লেখযোগ্য ঘটনা | ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা |
সহযোগী বিপ্লবী | সুনীতী চৌধুরী |
গ্রেপ্তার ও সাজা | দ্বীপান্তরের শাস্তি (লাইফ ট্রান্সপোর্টেশন) |
মুক্তির বছর | ১৯৩৯ খ্রি |
রাজনৈতিক জীবন | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য; বিধান পরিষদ ও বিধানসভা সদস্য |
বিধান পরিষদ সদস্য | ১৯৫২–১৯৬২, ১৯৬৭–১৯৬৮ |
বিধানসভা সদস্য | ১৯৬২–১৯৬৭ |
রচিত গ্রন্থ | “অরুণ বহ্নি” (আত্মজীবনী) |
ঐতিহাসিক গুরুত্ব | ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে কিশোরী নারী বিপ্লবী |
মৃত্যু | ২৭ মার্চ ১৯৮৯ |
শান্তি ঘোষ (দাস)
ভূমিকা :- শান্তি ঘোষ (দাস) ছিলেন একজন বাঙালি কিশোরী বিপ্লবী যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শান্তি ঘোষ ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনে নারী ও কিশোর বিপ্লবীদের অগ্রদূত হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
শান্তি ঘোষের জন্ম
১৯১৬ সালের ২২শে নভেম্বর শান্তি ঘোষ জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতায়। তাঁর পিতৃভূমি বরিশাল, কিন্তু তিনি মানুষ হয়েছিলেন কুমিল্লায়।
বিপ্লবী শান্তি ঘোষের পিতামাতা
তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ ছিলেন কুমিল্লা কলেজের প্রফেসার। তাঁর মাতা সলিলাবালা ঘোষ। শান্তির পিতা ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী ও আদর্শবাদী। তাঁর ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, সন্তানরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মত্যাগ করতে শেখে। তিনি নিজেই তাদের স্বদেশী গান শেখাতেন।
শান্তি ঘোষের বিবাহ
১৯৪২ সালে চট্টগ্রামের চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। বর্তমানে শান্তি বঙ্গীয় প্রাদেশিক বিধান সভার সদস্য।
শান্তি ঘোষের কন্ঠে গান
একবার সরোজিনী নাইডু কুমিল্লায় একটি সভায় বক্তৃতা দেন। সেই সভায় শান্তি গাইলেন –
“ভারত আমার, ভারত আমার
যেখানে মানব মেলিল নেত্র”…
বিপ্লবী শান্তি ঘোষের পিতার মৃত্যু
সভা থেকে ফিরে এসে বাবার কাছে শান্তি যখন মহা উৎসাহে সভার বর্ণনা করছিলেন, বাবা বললেন, “আজ তুমি যাঁর সভায় গান গাইলে, একদিন যেন তুমি তাঁর মতো বড় হতে পার।” ১৯২৬ সালে শান্তির পিতার অকালমৃত্যু হয়।
শান্তি ঘোষের উপর সাইমন কমিশন বিক্ষোভের প্রভাব
১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন-এর বিরুদ্ধে কুমিল্লায় যে তীব্র বিক্ষোভ জেগেছিল তাতে শান্তির অন্তর আলোড়িত হয়ে ওঠে।
যুগান্তর দলের উৎসাহী কর্মী শান্তি ঘোষ
শান্তি ও সুনীতি কুমিল্লার ফৈজন্নেসা গার্লস স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। শান্তির সহপাঠী ছিলেন প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম। প্রফুল্লনলিনী যুগান্তর নামে বিপ্লবী দলের সভ্য ছিলেন। শান্তি ও সুনীতির তেজস্বিতা প্রফুল্লকে আকৃষ্ট করে। প্রফুল্ল তাঁদের প্রভাবান্বিত করেন এবং দলের নেতাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। শান্তি ও সুনীতি দলের উৎসাহী কর্মী হয়ে ওঠেন। নানা স্বদেশী বই পড়তে পড়তে তাঁদের মন আরো চঞ্চল ও প্রস্তুত হয়ে উঠতে থাকে।
বিপ্লবী শান্তি ঘোষের বিদ্রোহী মন
১৯৩০ সালে কুমিল্লায় চলছিল আইন অমান্য় আন্দোলন। জনতার উপরে ইংরেজের অত্যাচার কুমিল্লার সমস্ত কিশোর ও যুবমনকে প্রচণ্ড একটা ঘা দিয়ে ফিরছিল। তার ঢেউ এসে ধাক্কা দিতে লাগল শান্তি, সুনীতি, প্রফুল্ল প্রমুখকেও। তাঁদের মনে হত ইংরেজ তাড়াতে পারলে তবেই আসবে আমাদের দেশের মঙ্গল। শোভাযাত্রার উপরে লাঠিচার্জের ফলে কর্মীদের রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে তাঁদের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠত।
জীবন্ত কুমিল্লা শহর
তাঁরা চমৎকার লাঠি ও ছোরা খেলা শিখে নিলেন। তারপর অভ্যাস করতে লাগলেন রিভলভার ছুঁড়তে ময়নামতী পাহাড়ে গিয়ে। পাড়ায় পাড়ায় লাঠি-ছোরা খেলা শেখাবার ও বিপ্লবাত্মক পুস্তক পড়াবার মধ্য দিয়ে তাঁরা সংগঠন করে চলেছিলেন। উৎসাহের একটা নতুন জোয়ারে ছোট কুমিল্লা শহর তখন জীবন্ত।
ছাত্রীসংঘের সম্পাদিকা শান্তি ঘোষ
১৯৩১ সালের প্রথমার্ধে কুমিল্লায় ছাত্র কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই কিশোরী বন্ধুরা গড়ে তুলেছিলেন ছাত্রীসংঘ। প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম তার সভানেত্রী, শান্তি ঘোষ সম্পাদিকা এবং সুনীতি চৌধুরী ক্যাপটেন। ছাত্রী সংঘের প্রায় ৫০/৬০ টি ছাত্রীকে ক্যাপটেন সুনীতি শেখাতেন ড্রিল ও প্যারেড। এই ছাত্রীরা ছিলেন ছাত্র কনফারেন্সের সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুগ স্বেচ্ছাসেবিকা।
বিপ্লবী কাজ করার জন্য শান্তি ঘোষের তাগিদ
ইতিমধ্যে প্রফুল্ল, শান্তি, সুনীতি শুনেছেন বিপ্লবীদের অনুষ্ঠিত গার্লিক হত্যা, সিম্পসন হত্যার ঘটনাবলী। প্রফুল্ল ও শান্তি ভাবলেন তাঁরাও কেন করবেন না? দলের নেতাদের কাছে প্রফুল্ল ও শান্তি কিছু একটা বিপ্লবী কাজ করবার জন্য বারবার তাগিদ দিতে থাকেন।
স্টিভেন্সকে হত্যার পরিকল্পনা
দলের নেতারা অবশেষে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, শান্তি ও সুনীতি কুমিল্লার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে গুলী করে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে চরম আঘাত হানবেন। দলের পুরাতন কর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে প্রফুল্ল থাকবেন বাইরে। দরকার হলে তিনি আত্মগোপন করে কাজ করে যাবেন। তাঁর বাইরে থাকা তখন বেশী প্রয়োজন ছিল। আরো স্থির হয় যে, শান্তি সুনীতি একটা দরখাস্ত দেবার অজুহাতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোতে গিয়ে কাজ হাসিল করবেন।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কুঠিতে শান্তি ঘোষের গমন
১৯৩১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সকালে শান্তি সেজেগুজে বসে আছেন এমন সময় একটা ঘোড়ার গাড়ী এল দলের দাদাদের নির্দেশ মতো। শান্তি গাড়িতে উঠে বসলেন। গাড়িতে ছিলেন সুনীতি। তাঁদের গাড়ী গিয়ে ঢুকলো জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কুঠিতে।
শান্তি ও সুনীতি কর্তৃক ম্যাজিস্ট্রেটকে গুলি
চাপরাসীর হাতে তাঁরা ইন্টারভিউ কার্ড পাঠিয়ে দিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্স বেরিয়ে এলেন। দায়িত্ব পালনের সুযোগ সমাগত দেখে শান্তি ও সুনীতি গুলী ছুড়লেন। ম্যাজিস্ট্রেটের প্রাণহীন দেহ ভুলুণ্ঠিত হল।
আটক শান্তি ও সুনীতি
এরপর শান্তি দেখলেন সমস্ত ঘরটাতে চলেছে ছুটোছুটি, দাপাদাপি এবং বিকট চীৎকার। সুনীতিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে দুজন লোকে তাঁকে জাপটে ধরেছে রিভলভারটা কেড়ে নিতে। শান্তিকে পেছন থেকে একজন লোক শক্ত করে ধরে রয়েছে, আরেকজন শান্তির রিভলভার সুদ্ধ হাতটা চেপে ধরেছে। অশ্রাব্য ভাষায় তারা গালাগালি করছে। চাপরাসীরা তাঁদের কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারছে।
কুমিল্লা জেলে শান্তি ঘোষ
পুলিস লাইনের সামনে পাগলা ঘণ্টি বেজে উঠল। মুহূর্তের মধ্যে পুলিস এসে সব ঘিরে ফেলল; শান্তি সুনীতির হাত পেছনে বেঁধে দিয়ে তাঁদের বেদম প্রহার করতে লাগল। এমন সময় ডি.আই.বি. ইন্সপেক্টার এসে প্রহারের হাত থেকে উদ্ধার করে তাঁদের দুজনকে দুই জায়গায় সরিয়ে দেয়। জেরা চলে আলাদা আলাদা ভাবে। গুপ্তকথা পুলিস কিছুই আদায় করতে পারে নি। তারপর নিয়ে যায় তাঁদের কুমিল্লা জেলে। পরদিন বন্দী হয়ে এলেন সেখানে প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম ও চট্টগ্রামের ইন্দুমতী সিংহ। চট্টগ্রামের অনন্ত সিংহের ভগ্নী ইন্দুমতী সিংহ তখন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার অর্থসংগ্রহের জন্য কুমিল্লায় গিয়েছিলেন।
কলকাতায় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে শান্তি ঘোষ
কয়েকদিন পরে শান্তি সুনীতিকে নিয়ে আসা হয় কলকাতায় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। মামলা শুরু হয় ১৯৩১ সালের ১৮ই জানুয়ারি। মামলার সময় শান্তি সুনীতি তাঁদের হাসি, উচ্ছ্বাস ও তেজস্বিতায় সমস্ত কোর্টকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। মামলার দ্বিতীয় দিনে ডকে তাঁদের বসতে চেয়ার দেওয়া হয়নি বলে তাঁরা পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ডকে তাঁদের চেয়ার দেওয়া হয়েছিল।
যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের দণ্ডে দন্ডিত শান্তি ঘোষ
অবশেষে ১৯৩২ সালের ২৭শে জানুয়ারি শান্তি ও সুনীতি সমগ্র সত্তা কেন্দ্রীভূত করে যখন অপেক্ষা করছিলেন ফাঁসীর আদেশ শুনবার জন্য তখন তাঁরা দণ্ডাদেশ শুনলেন যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের। অফুরন্ত উৎসাহ ভরা প্রাণ তাঁদের সেই মুহূর্তে নিরাশাবোধই করেছিল। কিন্তু তাঁরা যে ১৪/১৫ বছরের কিশোরী নাবালিকা! স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী! ফাঁসী কি করে হবে?
ছোট্ট কিশোরীর রণরঙ্গিণী মূর্তিতে দেশে আলোড়ন
এই দুটি কিশোরী মেয়ের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের বুকে যে আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল তা তখনকার দিনের লোক আজও হয়তো ভুলে যান নি। যে বাংলাদেশের নারী সমাজ শত লাঞ্ছনাও মুখ বুজে সহ্য করেন, শত আঘাতেও নীরবে অশ্রুপাত করেন কিন্তু প্রত্যাঘাত করার কথা মনে আনেন না, সেই সমাজের ছোট্ট কিশোরীর একি রণরঙ্গিণী মূর্তি! দ্বিধাগ্রস্তের মনে সেদিন দৃঢ়তা জাগলো। যুব সমাজের চিত্তে জাগলো চমক, উৎসাহে উদ্দীপনায় তারা দুঃসাহসের পথে পা বাড়াতে প্রস্তুত। ছোট্ট দুটি মেয়ে যেন ধূমকেতুর মতো সমগ্র দেশকে তোলপাড় করে দিয়ে গোটা সমাজের হয়ে শান্তি বহন করতে কারান্তরালে চলে গেলেন দেশবাসীকে চাঞ্চল্যে ও বিস্ময়ে হতবাক্ করে দিয়ে।
দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদী শান্তি ঘোষ
শান্তিকে করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদী, সুনীতিকে তৃতীয় শ্রেণীর। বিচ্ছেদে এনে শাসন করা হচ্ছে ইংরেজের নীতি। শান্তি ও সুনীতিকে মাঝে মাঝে একসঙ্গে কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আলাদা আলাদা করে প্রেসিডেন্সি, মেদিনীপুর, রাজসাহী, হিজলী প্রভৃতি জেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্থানান্তরিত করা হত।
শান্তি ঘোষের অনশন
যখন তাঁরা মেদিনীপুর জেলে ছিলেন তখন সেখানকার জেলার ও মেট্রনের অনাচারের বিরুদ্ধে শান্তি, সুনীতি ও বীণা দাস অনশন করেছিলেন সাতদিন। ফলে জেলারকে ওখান থেকে বদলি করা হয়। কিন্তু এই বন্দিনীদেরও পৃথক পৃথক জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। শান্তি ও বীণা গেলেন হিজলী জেলে, যেখানে ছিলেন বিনাবিচারে বন্দী রাজবন্দী মহিলাগণ। সুনীতিকে নিয়ে যায় রাজসাহী জেলে।
চমৎকার কণ্ঠের অধিকারী শান্তি ও সুনীতি
শান্তি ও সুনীতি যেখানেই যখন গেছেন, তাঁদের চমৎকার কণ্ঠসঙ্গীতে অন্যসকল বন্দীকে ও সারা জেলখানাকে তাঁবা মাতিয়ে রাখতেন।
সাহিত্যের প্রাঙ্গণে শান্তি ঘোষ
মুক্তির পর শান্তি পড়াশুনা করতে থাকেন এবং ম্যাট্রিক পাস করলেন। তারপর শান্তি পাস করেন আই.এ.। শান্তির রুচি ফুটে উঠল সাহিত্যের প্রাঙ্গণে। আপন জীবনকাহিনী তুলে ধরেছেন তিনি ‘অরুণবহ্নি’ নামক পুস্তকে। নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনি কর্মমুখর।
শান্তি ঘোষ (দাস)-এর মৃত্যু
১৯৮৯ সালে শান্তি ঘোষ (দাস) প্রয়াত হন।
উপসংহার :- শান্তি ঘোষ (দাস) ছিলেন বিপ্লবী তেজে উজ্জীবিত, দেশপ্রেমিক কিশোরী, যিনি ১৫ বছর বয়সে সশস্ত্র প্রতিরোধে জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তি পরবর্তী সময়ে তিনি সমাজ ও রাজনীতিতে অবদানের মাধ্যমে প্রমাণ করেন—ক্রান্তির চড়াই পথে অধিকাংশ সময়ই পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বে রূপ নেয়। তাঁর জীবন ও সংগ্রাম আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
(FAQ) শান্তি ঘোষ (দাস)-এর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
শান্তি ঘোষ (দাস) ছিলেন একজন কিশোরী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করেন।
শান্তি ঘোষের জন্ম ২২ নভেম্বর ১৯১৬ সালে কলকাতায়, কিন্তু তাঁর শৈশব ও শিক্ষাজীবন কেটেছে কুমিল্লায়।
তিনি ছাত্রী সংঘ (Chhatri Sangha) ও যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, সহযোদ্ধা সুনীতী চৌধুরীর সঙ্গে মিলে কুমিল্লার ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করেন।
শান্তি ঘোষ দ্বীপান্তরের শাস্তি (লাইফ ট্রান্সপোর্টেশন) পেয়েছিলেন এবং প্রায় ৭ বছর জেল খাটার পর মুক্তি পান।
তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং বিধান পরিষদ ও বিধানসভায় নির্বাচিত হন।
তাঁর আত্মজীবনীর নাম “অরুণ বহ্নি”।
শান্তি ঘোষ ২৭ মার্চ ১৯৮৯ সালে প্রয়াত হন।
শান্তি ঘোষ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কিশোরী নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আজও অনুপ্রেরণা জোগায়।