মহিয়ষী সুরমা মুখোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বঙ্গীয় বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেন এবং নারী সমাজে দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা জাগান। তাঁর জীবন ছিল ত্যাগ, সাহস ও আদর্শের প্রতীক। সুরমা মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রামী ভূমিকা আজও ইতিহাসে নারীর অবদানকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
বিপ্লবী সুরমা মুখোপাধ্যায়
| ঐতিহাসিক চরিত্র | সুরমা মুখোপাধ্যায় |
| পরিচয় | ভারতীয় নারী বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী |
| জন্ম | ১৮৮৭ সালের ১লা শ্রাবণ, কলকাতা |
| সংগঠন | যুগান্তর দল |
| অবদান | বঙ্গীয় বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ; ব্রিটিশবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা |
| বৈশিষ্ট্য | সাহসী, দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী চরিত্রের নারী |
| ঐতিহাসিক গুরুত্ব | নারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে স্মরণীয় |
| মৃত্যু | ১৯৪৬ সালের ১৬ই নভেম্বর |
সুরমা মুখোপাধ্যায়
ভূমিকা :- ভারত-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে নারী বিপ্লবীদের অবদান অনস্বীকার্য, আর সেই সংগ্রামী নারীদের অন্যতম ছিলেন সুরমা মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন এক সাহসী, দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগী নারী, যিনি সমাজের বাঁধাধরা নিয়ম অতিক্রম করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সুরমা দেবী শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেননি, বরং নারী সমাজকে জাগ্রত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর সংগ্রামী জীবন, দেশপ্রেম ও আত্মদানের মনোভাব আজও তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেয়।
সুরমা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম
১৮৮৭ সালের ১লা শ্রাবণ সুরমা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতায়।
বিপ্লবী সুরমা মুখোপাধ্যায়ের পিতামাতা
তাঁর পিতার নাম সত্যহরি চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ঈশানী দেবী।
সুরমা মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ
বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কালিকাপুর গ্রামের গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অল্পবয়সে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁরা কাটোয়াতে বসবাস করতেন। তিনি স্বামীর নিকট থেকে দেশসেবার প্রেরণা পান।
অসহযোগ আন্দোলনে সুরমা মুখোপাধ্যায়
১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন-এর সময় থেকেই সুরমা দেবী চরকা কাটতেন ও খদ্দর ব্যবহার করতেন।
সম্পাদিকা রুপে সুরমা মুখোপাধ্যায়
কাটোয়া মহকুমা মহিলা রাষ্ট্রীয় সমিতি গঠিত হবার পর তিনি তার সম্পাদিকা নির্বাচিত হন।
আইন অমান্য আন্দোলনে সুরমা মুখোপাধ্যায়
১৯৩০ সালের আন্দোলনে তিনি ও তাঁর সহকর্মিরা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের নিয়ে তিনি পিকেটিং করতেন, সভা-সমিতি আহ্বান করতেন ও বে-আইনী লবণ জনসাধারণের মধ্যে বিক্রি করতেন।
সুরমা মুখোপাধ্যায়ের কারাদণ্ড
১৯৩২ সালের আন্দোলনেও তিনি কাটোয়ার মহিলাদের নিয়ে পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে যোগদান করেন। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে তাঁর ছয়মাস করে দুবারে একবছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। তিনি বর্ধমান জেলে ও বহরমপুর জেলে বন্দীজীবন যাপন করেন। আজীবন তিনি দেশের সেবা করে গেছেন।
কমিশনার সুরমা মুখোপাধ্যায়
১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কাটোয়া মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনার ছিলেন।
নারী জাগরণে সুরমা মুখোপাধ্যায়
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি দুঃস্থদের সেবায় যেভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন তা বিস্মৃত হবার নয়। বর্ধমান জেলায় কাটোয়া মহকুমার নারী-জাগরণে সুরমা দেবীর অবদান অনেকখানি।
সুরমা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু
১৯৪৬ সালের ১৬ই নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
উপসংহার :- সুরমা দেবী ছিলেন সেইসব অদম্য নারীদের মধ্যে একজন, যাঁদের সাহস, ত্যাগ ও দেশপ্রেম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। তাঁর অবদান ইতিহাসের পাতায় হয়তো খুব বেশি আলোচিত নয়, কিন্তু তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামী মনোভাব স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার প্রতীক হয়ে আছে। সুরমা দেবী আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের পথে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান ভূমিকা ছিল, এবং তাঁর জীবন আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও সাহসিকতার অনুপ্রেরণা জোগায়।
(FAQ) সুরমা মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?
সুরমা দেবী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি বঙ্গীয় বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন।
তিনি নারী সমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তাঁর সাহস, ত্যাগ ও দেশপ্রেম তাঁকে নারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে এক উজ্জ্বল স্থান দিয়েছে।
তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে নারীরাও সমানভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সামনের সারিতে থাকতে পারে। তাঁর জীবন নারী শক্তি ও দেশপ্রেমের প্রতীক।