মহাদেশীয় ব্যবস্থা

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে নেপোলিয়নের উপলব্ধি, মহাদেশীয় ব্যবস্থা, মহাদেশীয় অবরোধ, উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক লক্ষ্য, উদ্ভাবক, নেপোলিয়নের ভূমিকা, বার্লিন ডিক্রি, টিলসিটের সন্ধি, অর্ডার ইন কাউন্সিল, মিলান ডিক্রি, ওয়ারশ ও ফন্টেন ব্ল্যু ডিক্রি, কার্যকারিতা, ইংল্যান্ডের ক্ষয়ক্ষতি, ইংল্যান্ডের সংকট মোচন, ব্যর্থতার কারণ ও নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা সম্পর্কে জানবো।

Table of Contents

মহাদেশীয় ব্যবস্থা

ঐতিহাসিক ঘটনামহাদেশীয় ব্যবস্থা
প্রবর্তন কাল১৮০৬ খ্রিস্টাব্দ
প্রবর্তকনেপোলিয়ন
বিরোধী দেশইংল্যান্ড
বার্লিন ডিক্রি১৮০৬ খ্রিস্টাব্দ
টিলসিটের সন্ধি১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ
অর্ডার-ইন-কাউন্সিল১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ
মিলান ডিক্রি১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ
মহাদেশীয় ব্যবস্থা

ভূমিকা:- ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন উপলব্ধি করেন যে, ইউরোপ-এর সব শক্তি তাঁর কাছে পরাজিত হয়ে তাঁর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনে বাধ্য হলেও একমাত্র ইংল্যান্ড প্রবল পরাক্রমের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

নেপোলিয়নের উপলব্ধি

নীলনদের যুদ্ধ (১৭৯৮ খ্রিঃ) ও ট্রাফালগারের নৌ-যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রিঃ) শোচনীয় পরাজয়ের পর তিনি স্পষ্টতই উপলব্ধি করেন যে, ‘সমুদ্রের রানি’ ইংল্যান্ডকে কখনোই সামুদ্রিক যুদ্ধে পরাজিত করা সম্ভব নয়।

মহাদেশীয় ব্যবস্থা

ইংল্যান্ডকে ‘হাতে মারা’ সম্ভব নয় বলে তিনি তাকে ‘ভাতে মারার’ ব্যবস্থা করেন। একটি অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি গ্রহণ করে তিনি ঘোষণা করেন যে, ইউরোপের কোনও বন্দরে কোনও ব্রিটিশ জাহাজ যেতে পারবে না এবং ইউরোপের কোনও রাষ্ট্র ইংল্যান্ড থেকে কোনও পণ্য আমদানি করতে পারবে না। ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার উদ্দেশ্যে রচিত তাঁর এই অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’ নামে পরিচিত।

মহাদেশীয় অবরোধ

সমগ্র মহাদেশ বা ‘কন্টিনেন্ট’ (Continent)-কে নেপোলিয়ন এই সামুদ্রিক অবরোধের আওতায় এনেছিলেন বলে তার নাম হয় ‘মহাদেশীয় অবরোধ বা ‘কন্টিনেন্টাল সিস্টেম’।

মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে

ঐতিহাসিক কোবান -এর মতে, নেপোলিয়ন কর্তৃক মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিবিধ। যেমন –

(১) প্রাথমিক উদ্দেশ্য

  • (ক) ইংল্যান্ডের শক্তির মূল উৎস ছিল তার উন্নত শিল্প ও বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্য। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রসারিত ইংল্যান্ডের বিভিন্নউপনিবেশ থেকে আমদানি করা পণ্যাদি এবং নিজেদের কারখানায় উৎপন্ন উদ্বৃত্ত মালপত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে ইংল্যান্ড নিজ অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করে এবং বিশ্বের অন্যতম ধনশালী দেশে পরিণত হয়।
  • (খ) তাই নেপোলিয়ন ইংরেজ জাতিকে ‘দোকানদারের জাত’ (‘A Nation of Shop-keepers’) বলে ব্যঙ্গ করতেন। তিনি মনে করতেন যে, ইউরোপের বাজারে যদি ইংল্যান্ড থেকে আগত মালের আমদানি বন্ধ করা যায়, তাহলে ইংল্যান্ডের শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংস হবে।
  • (গ) অর্থনীতি ভেঙে পড়লে বন্ধ কারখানার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও জাহাজের নাবিকরা কর্মহীন হয়ে পড়বে এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এইসব মানুষের সমবেত বিক্ষোভের ফলে ইংল্যান্ড তাঁর সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হবে।

(২) অন্যান্য উদ্দেশ্য

  • (ক) অ্যালফ্রেড কোবান, ক্লদ ফোলেন, ভি. ক্ৰনিন প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতে, নেপোলিয়ন মনে করেছিলেন যে, ইংল্যান্ড ইউরোপে তার বাজার হারালে ফ্রান্স তা দখল করবে। এর ফলে ফরাসি শিল্প পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে, পৃথিবীর নানা স্থানে ফরাসি শিল্পজাত পণ্যের বাজার মিলবে এবং ফ্রান্স সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠবে।
  • (খ) সুতরাং কেবল যুদ্ধ জয় নয় শিল্পক্ষেত্রে ফরাসি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করাও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কোবান একেই বলেছেন ‘ বোনাপার্টিস্ট কোলবার্টিজম’ (‘Bonapartist Colbertism’)।
  • (গ) ফ্রান্সের শিল্পায়নের ধারণাকে কার্যকরী করে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি ফ্রান্সের শিল্পপতিদের নতুন নতুন শিল্প গড়ে তোলায় উৎসাহ দেন, বিদেশ থেকে নতুন প্রযুক্তি আমদানির ব্যবস্থা করেন, কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, শিল্পমেলার ব্যবস্থা করা হয় এবং নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারকদের পুরষ্কৃত করার ব্যবস্থা করা হয়।
  • (ঘ) অ্যালফ্রেড কোবান বলেন যে, কেবলমাত্র ইংল্যান্ডকে পদানত করাই নয়—ফ্রান্সের সম্পদ ও মহত্ব বৃদ্ধি করাও মহাদেশীয় ব্যবস্থার লক্ষ্য ছিল। জর্জ রুদে বলেন যে, ফ্রান্সের শিল্পকে রক্ষা করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে নয়—ইংল্যান্ডকে পদানত করাই ছিল এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য।

মহাদেশীয় ব্যবস্থা গ্রহণের রাজনৈতিক লক্ষ্য

এই অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য। নেপোলিয়ন মনে করেছিলেন যে, ব্যাপক শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে ফ্রান্সে যে পুঁজিপতি শ্রেণির সৃষ্টি হবে, তারা তাঁর স্বৈরতন্ত্রের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবে।

মহাদেশীয় ব্যবস্থার উদ্ভাবক

নেপোলিয়ন কিন্তু এই নীতির উদ্ভাবক ছিলেন না বা এই ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ নতুন কিছু ছিল না। তার পূর্বে এই ব্যবস্থার প্রয়োগ দেখা গেছে।যেমন –

  • (১) অষ্টাদশ শতকে মার্কেন্টাইল মতবাদে বিশ্বাসী বহু রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল। মার্কেন্টাইল মতবাদের মূল কথা হল অন্য রাষ্ট্র থেকে নিজ দেশে পণ্য আমদানি কমিয়ে, নিজ রাষ্ট্রের পণ্যাদির রপ্তানি বৃদ্ধি করা। এই ব্যবস্থায় বিদেশি রাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর অধিক হারে শুল্ক আরোপের নিয়ম ছিল।
  • (২) কোলবেয়ারের সময় থেকেই ফ্রান্স ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে সংরক্ষণ নীতি প্রয়োগ করে আসছিল। নেপোলিয়ন এই নীতিই অনুসরণ করেন এবং তাঁর লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের রপ্তানি বাণিজ্য হ্রাস করে তার অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত হানা।
  • (৩) বিপ্লবী যুদ্ধের সময় এই নীতির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী সরকার ফরাসি প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র ব্রিটেন-জাত পণ্যাদির প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এবং ব্রিটেনের সঙ্গে ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দের বাণিজ্য চুক্তিটি বাতিল করা হয়। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ফ্রান্সের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

মহাদেশীয় ব্যবস্থায় নেপোলিয়নের ভূমিকা

নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থাকে চূড়ান্ত রূপ দিয়েছিলেন। কেবলমাত্র ফ্রান্স নয়—সমগ্র ইউরোপের উপকূল ইংল্যান্ডের কাছে বন্ধ করে দিয়ে তিনি এই ব্যবস্থাকে বিস্তৃততর করার উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে তার পদক্ষেপ গুলি হল –

  • (১) ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের পর নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থাকে হ্যানোভার উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত করেন, কিন্তু এর দ্বারা ইংল্যান্ডের মতো একটি বাণিজ্য-সমৃদ্ধ ও নৌশক্তিতে বলীয়ান দেশকে পর্যুদস্ত করা সম্ভব হয় নি। বাল্টিক ও অ্যাড্রিয়াটিক সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরে ইংল্যান্ডের অবাধ যাতায়াত ছিল।
  • (২) ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়নের বিশ্বস্ত সেনাপতি মন্টজেলার্ড তাঁর ” রিপোর্টে অর্থনৈতিক অবরোধের দ্বারা ইংল্যান্ডের শক্তি ধ্বংসের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন যে, “ইংল্যান্ডকে তার ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আক্রমণ করতে হবে। …….ব্রিটিশ বাণিজ্য ধ্বংস করার অর্থ হল ইংল্যান্ডের হৃদয়ে আঘাত করা। মন্টজেলার্ড রিপোর্টকেই কন্টিনেন্টাল সিস্টেমের খসড়া বলা যায়।
  • (৩) ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ-বিজয়ের পর কার্যত সমগ্র ইউরোপ নেপোলিয়নের অধীনে আসে। তিনি উপলব্ধি করেন যে স্পেন, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়ারাশিয়ার সাহায্য পেলে সমগ্র ইউরোপে ব্রিটেনের জাহাজ চলাচল ও পণ্য সরবরাহ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যাবে।

নেপোলিয়ণের বার্লিন ডিক্রি জারি

এই ব্যবস্থা কার্যকর করে তুলতে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি (Berlin Decree) বা হুকুমনামা জারি করেন। এই ডিক্রিতে বলা হয় যে,

  • (১) ফ্রান্স বা তার মিত্র বা নিরপেক্ষ দেশের বন্দরগুলিতে ইংল্যান্ড বা তার উপনিবেশগুলি থেকে আসা কোনও জাহাজকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
  • (২) ইংল্যান্ডের কোনও পণ্য এইসব দেশের বন্দরে নামতে দেওয়া হবে না।
  • (৩) যদি ইংল্যান্ডের কোনও মাল অন্য দেশের জাহাজ মারফত নামানো হয় তবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

নেপোলিয়ন ও রাশিয়ার মধ্যে টিলসিটের সন্ধি

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে টিলসিটের সন্ধির পর অস্ট্রিয়া ও রাশিয়া এবং পরের বছর স্পেন ও পর্তুগাল এই ব্যবস্থায় যোগ দিতে রাজি হয়।

ইংল্যান্ডের অর্ডার-ইন-কাউন্সিল জারি

বার্লিন ডিক্রির প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ডের মন্ত্রিসভা ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে “অর্ডার-ইন-কাউন্সিল’ জারি করে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পাল্টা অবরোধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে,

  • (১) ফ্রান্স ও তার মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের নৌ-অবরোধ ঘোষিত হল।
  • (২) এইসব দেশের বন্দরে কোনও দেশের—এমনকী নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ পর্যন্ত ঢুকতে পারবে না। এই আদেশ লঙ্ঘিত হলে ইংল্যান্ড সেই জাহাজ ও তার মালপত্র রাজেয়াপ্ত করবে।
  • (৩) যদি কোনও নিরপেক্ষ দেশের জাহাজকে নিতান্তই ফ্রান্স বা তার মিত্র দেশগুলির বন্দরে যেতে হয়, তাহলে সেই জাহাজকে প্রথমে ইংল্যান্ডের কোনও বন্দরে এসে উপযুক্ত শুল্ক বা ফি দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে ফ্রান্স বা তার মিত্রদেশের বন্দরে যেতে হবে।
  • (৪) ব্রিটেনের নবনিযুক্ত বিদেশমন্ত্রী ক্যানিং বুঝেছিলেন যে, ফ্রান্স নৌশক্তি বৃদ্ধি করে এই অবরোধ ব্যবস্থা অনায়াসে বানচাল করে দিতে পারে। সেই সময় ডেনমার্কের একটি শক্তিশালী নৌবহর ছিল। ফ্রান্স যাতে এই নৌবহর দখল করে শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারে, এজন্য ইংল্যান্ড এই নৌবহর ধ্বংস করে দেয়।

নেপোলিয়নের মিলান ডিক্রি জারি

এর উত্তরে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নেপোলিয়ন মিলান ডিক্রি জারি করে বলেন যে,

  • (১) কোনও নিরপেক্ষ বা মিত্ররাষ্ট্র কোনও অবরুদ্ধ বন্দরে জাহাজ পাঠালে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
  • (২) নিরপেক্ষ বা মিত্রদেশের কোনও জাহাজ ‘অর্ডার “ইন-কাউন্সিল’ অনুসারে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স নিলে তা ইংল্যান্ডের সম্পতি বলে বিবেচিত হবে এবং তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
  • (৩) ব্রিটেনের কোনও বন্দরে কোনও নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ প্রবেশ করলে তা শত্রুদেশের জাহাজ বলে বিবেচিত হবে।

নেপোলিয়নের ওয়ারশ ডিক্রি ও ফন্টেন ব্ল্যু ডিক্রি জারি

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন এতেও সন্তুষ্ট হন নি। এরপর তিনি ওয়ারশ ডিক্রি (১৮০৭) এবং ফন্টেন ব্ল্যু ডিক্রি (১৮১০) জারি করে বলেন যে, আদেশ ভঙ্গ করার অপরাধে যে সব ব্রিটিশ মাল বাজেয়াপ্ত করা হবে, তাতে প্রকাশ্যে অগ্নিসংযোগ করা হবে। বার্লিন ডিক্রি, মিলান ডিক্রি, ওয়ারশ ডিক্রি এবং ফন্টেন ব্ল্যু ডিক্রির নীতিগুলিকে একযোগে কন্টিনেন্টাল সিস্টেম বা মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা বলা হয়।

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থার কার্যকারিতা

এই ব্যবস্থা সফল করতে নেপোলিয়ন যথেষ্ট উদ্যোগ নেন। যেমন –

  • (১) ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়া-র তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়ম, ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া-র জার প্রথম আলেকজান্ডার এবং ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হন।
  • (২) ওলন্দাজ বণিকরা এই ব্যবস্থা গ্রহণে অসম্মত হলে ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড দখলের জন্য একদল ফরাসি সেনা পাঠান।
  • (৩) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দেই হোলিগোল্যান্ডে ব্রিটেনের চোরাকারবার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন জার্মানির সমগ্র উত্তর-পশ্চিম উপকূল অঞ্চল সরাসরি দখল করেন।
  • (৪) ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে টিলসিটের সন্ধির পর রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডার এই ব্যবস্থা মেনে নেন, কিন্তু পোপ নিরপেক্ষ থাকার প্রস্তাব দেন। এর ফলে নেপোলিয়ন তাঁকে বন্দি করেন।
  • (৭) এই ব্যবস্থা সফল করতে গিয়ে নেপোলিয়ন পর্তুগাল ও স্পেন দখল করেন। ইংল্যান্ডের মিত্র পর্তুগাল এই ব্যবস্থা মেনে নিলেও ব্রিটিশ পণ্যাদি দখল করতে রাজি হয় নি। এর ফলে নেপোলিয়ন পর্তুগাল দখল করেন। নেপোলিয়নের অনুগত রাষ্ট্র স্পেনের উপর দিয়ে ফরাসি সেনা পর্তুগালে যায় -এ সত্ত্বেও তিনি স্পেন দখল করেন। তার ফলে শুরু হয় উপসাগরীয় যুদ্ধ বা উপদ্বীপের যুদ্ধ
  • (৮) সুইডেন এই ব্যবস্থা মানতে চায় নি। এর ফলে নেপোলিয়নের মিত্র রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডার সুইডেন আক্রমণ করেন। সুইডেন এই ব্যবস্থা মানতে বাধ্য হয়।

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের ক্ষয়ক্ষতি

এই ব্যবস্থার সূচনা-পর্বে ইংল্যান্ডকে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। যেমন –

  • (১) আগে নিজ দেশে প্রস্তুত পণ্যের এক-তৃতীয়াংশ এবং উপনিবেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের তিন-চতুর্থাংশ ইংল্যান্ড ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। এই বাজার বন্ধ হওয়ায় ইংল্যান্ড ঘোরতর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।
  • (২) বাজারের অভাবে ব্রিটিশ পণ্যাদি গুদামে পচতে থাকে। ১৮১১-১৮১২ খ্রিস্টাব্দে এই সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের মজুরি হ্রাস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, লুড গোষ্ঠীর শ্রমিকদের দাঙ্গা প্রভৃতি ইংল্যান্ডকে চরম সমস্যায় ফেলে।
  • (৩) ‘অর্ডার-ইন-কাউন্সিল’ দ্বারা আমেরিকান পণ্যাদি ইউরোপে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলে, আমেরিকাও ব্রিটিশ পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড মার্কিন জাহাজের উপর গোলাবর্ষণ করলে দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।

ইংল্যান্ডের সংকট মোচন

ইংল্যান্ড সাময়িকভাবে প্রবল সমস্যায় পড়লেও অচিরেই তা কাটিয়ে ওঠে। যেমন –

  • (১) সাময়িকভাবে ইউরোপে তার পুরোনো বাজার বন্ধ হলেও ১৮০৬ থেকে ১৮১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, তুরস্ক, বাল্টিক সাগর ও আটলান্টিক উপকূল অঞ্চলে নতুন বাজার আবিষ্কার করে ইংল্যান্ড তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়।
  • (২) সমুদ্রপথে নিরপেক্ষ দেশগুলির জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ইংল্যান্ড ওইসব দেশের মাল চোরাপথে সমগ্র ইউরোপের গোটা উপকূলবর্তী অঞ্চলে চালান করতে থাকে। নৌবল না থাকায় নেপোলিয়নের পক্ষে এই চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হয় নি। এর ফলে ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক বাণিজ্যে নতুন জোয়ার আসে।
  • (৩) নিজ আর্থিক সংকট কাটাবার জন্য ইংল্যান্ড ‘অর্ডার-ইন-কাউন্সিল’ শিথিল করে নিরপেক্ষ দেশগুলিকে অবাধে লাইসেন্স দিতে থাকে। ১৮০৭ থেকে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংল্যান্ড প্রায় ৪৪,৩৪৬টি লাইসেন্স দেয়।
  • (৪) অনাবৃষ্টি ও শস্যহানির ফলে ১৮১০ থেকে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংল্যান্ডে খাদ্য-সংকট চরমে ওঠে। এই সময় নেপোলিয়ন আরেকটি মারাত্মক ভুল করেন। এ সময় মার্কেন্টাইলবাদী নেপোলিয়ন ফ্রান্সের উদ্বৃত্ত খাদ্য ইংল্যান্ডে পাঠান।
  • (৫) ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রয়োজনীয় গমের ৮০ শতাংশ এসেছিল ফ্রান্স ও তার বন্ধু দেশগুলি থেকে। এভাবে তিনি ইংল্যান্ডকে ‘ভাতে মারার’ একটি অপূর্ব সুযোগ হারান।
  • (৬) হল্যান্ড রোজ লেখেন যে, নেপোলিয়ন খাদ্য-সংকট বজায় রাখলে ইংল্যান্ড আত্মসমর্পণে বাধ্য হত, কিন্তু তিনি ঠিক বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আসলে মার্কেন্টাইলবাদী নেপোলিয়নের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডে খাদ্যশস্য রপ্তানি করে ইংল্যান্ডের সঞ্চিত সম্পদ শুষে নেওয়া।
  • (৭) রুদে বলেন যে, নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের মানুষকে অনাহারে না মেরে ফ্রান্সের বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া, তাঁর কিছু বাধ্যবাধকতাও ছিল। অবরোধ প্রথার ফলে ফ্রান্সে গমের পাহাড় গড়ে উঠেছিল। এর ফলে বণিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ক্ষোভ প্রশমনের জন্য তিনি ইংল্যান্ডে গম রপ্তানি করতে বাধ্য। হন।
  • (৮) মোর্স স্টিফেনস-এর মতে, “মহাদেশীয় অবরোধ সামগ্রিকভাবে ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধিই ঘটায়—অবনতি নয়।

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণ

শেষ পর্যন্ত মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এই ব্যর্থতার পেছনেনানা কারণ ছিল। যেমন –

  • (১) এই অবরোধ কার্যকর করার প্রথম শর্তই হল শক্তিশালী নৌ-বাহিনী। ইউরোপের সুদীর্ঘ উপকূলভাগের উপর নজর রাখার মতো শক্তিশালী নৌ-বাহিনী ফ্রান্সের ছিল না। অপরপক্ষে, ইংল্যান্ড তার শক্তিশালী নৌ-বাহিনীর সাহায্যে ‘অর্ডার-ইন-কাউন্সিল’ কার্যকরী করতে সমর্থ হয়।
  • (২) শিল্প বিপ্লব -এর ফলে ইংল্যান্ডের কারখানাগুলিতে উন্নত মানের বিভিন্ন পণ্যাদি উৎপাদিত হত এবং ইউরোপের বাজারে ওইসব পণ্যের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। ইংল্যান্ড উল ও তুলা দ্বারা প্রস্তুত দ্রব্যাদি, চা, কফি এবং চিনির একচেটিয়া ব্যবসা করত।
  • (৩) ফ্রান্সের মতো শিল্পে অনুন্নত একটি দেশের পক্ষে ওই চাহিদা মেটানো সম্ভব ছিল না। নেপোলিয়ন তাই ইউরোপবাসীকে কফির বদলে চিকোরি, আখের চিনির বদলে বিটের চিনি প্রভৃতি বিকল্পের উপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন।
  • (৪) ইউরোপের মানুষ উচ্চমূল্যে ফরাসি দ্রব্যাদি কিনতে বাধ্য হয়। এর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং ওইসব দেশের জনগণ নেপোলিয়নের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
  • (৫) ফরাসি জনগণের অবস্থাও চরমে পৌঁছায়। তারা নেপোলিয়নের প্রতি সব আস্থা হারিয়ে ফেলে—এমনকী তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চক্রান্তও শুরু হয়। ঐতিহাসিক মারখাম বলেন, “এই সময় থেকেই ফরাসি জনসাধারণ তাঁর সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে।”
  • (৬) ইউরোপের বিভিন্ন দেশ—এমনকী ফ্রান্সেও ইংল্যান্ড-জাত পণ্যাদির ব্যাপক চোরাচালান শুরু হয়, যা রোধ করার শক্তি নেপোলিয়নের ছিল না। নেপোলিয়ন এই ব্যবস্থার অসারতা উপলব্ধি করেন।
  • (৭) ইংল্যান্ড থেকে মাল আমদানিকারকদের অর্থের বিনিময়ে গোপনে লাইসেন্স দিতে শুরু করেন। তিনি নিজের সেনাদলের ব্যবহারের জন্য ৫০ হাজার কোট ও জুতো ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করেন। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।

নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা উপেক্ষণীয় নয়। যেমন –

(১) দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি

মহাদেশীয় ব্যবস্থা সমগ্র ইউরোপে এক ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে এবং সর্বত্রই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ইউরোপের শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়, বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্দরগুলি কর্মহীন হয়ে পড়ে।

(২) রুদের মন্তব্য

জর্জ রুদে-র মতে, এই ব্যবস্থা ফ্রান্সের পক্ষে ‘বুমেরাং’ হয়ে দাঁড়ায়, যা আক্রান্তের চেয়ে আক্রমণকারীরই বেশি ক্ষতি করে। এর ফলে ফ্রান্সে ঘোরতর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।

(৩) বেকার শ্রমিক

শ্রমিক ছাঁটাই ও বেকার সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মূলহাউজে (Mulhouse) ৬০ হাজার শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ হাজার শ্রমিক এবং লিয়ঁতে -২৫ হাজারের মধ্যে ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যায়।

(৪) ক্ষুধার্ত মানুষের ভয়

ক্ষুধার্ত মানুষকে নেপোলিয়ন ভয় পেতেন। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্ষুধার্ত জেকোবিন জনতার রুদ্র রূপ দেখেছিলেন। ১৮১১-১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

(৫) ফরাসি সেনাদল ও সম্পদের ওপর চাপ

এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে গিয়ে নেপোলিয়নকে ইউরোপের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ২০০০ মাইল এলাকা জয় করে তা রক্ষার জন্য ছোটাছুটি করতে হয়। এর ফলে ফরাসি সেনাদল ও সম্পদের উপর প্রবল চাপ পড়ে।

(৬) বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন

বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ জয় করার ফলে তাঁর বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি মসীলিপ্ত হয়। ইউরোপের অনিচ্ছুক দেশগুলিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

(৭) ক্যাথলিক জগতে ক্ষোভ

রোম-এর পোপ এই ব্যবস্থা মানতে অসম্মত হলে নেপোলিয়ন তাঁকে বন্দি করেন। এর ফলে সমগ্র ক্যাথলিক জগতে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

(৮) হল্যাণ্ড দখল

নেপোলিয়নের ভ্রাতা লুই হল্যান্ডে এই নির্দেশ কার্যকরী করতে অস্বীকৃত হলে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করা হয় এবং হল্যান্ডকে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়।

(৯) পোর্তুগাল দখল

ইংল্যান্ডের অনুগত পর্তুগাল এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে নেপোলিয়ন স্পেনের বিনা অনুমতিতে স্পেনের ভিতর দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে যান (১৮০৭ খ্রিঃ) এবং পর্তুগালে এই ব্যবস্থা কার্যকর করেন।

(৬) স্পেনীয় যুদ্ধে পরাজয়

পোর্তুগাল থেকে ফেরার পথে স্পেনের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তিনি স্পেন দখল করেন এবং নিজ ভ্রাতা যোসেফ-কে সিংহাসনে বসান। সমগ্র স্পেনবাসী এই ‘জাতীয় অপমানের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পর্তুগাল ও ইংল্যান্ড স্পেনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। এই যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন এবং তাঁর মর্যাদা বিপর্যস্ত হয়। তিনি নিজেই মন্তব্য করেন যে, ‘স্পেনীয় ক্ষত”-ই তাঁর পতন ঘটিয়েছে।

(৭) রাশিয়া অভিযানে ব্যর্থতা

রাশিয়া মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকৃত হলে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জুন ৬ লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী-সহ তিনি রাশিয়া অভিযান করেন এবং সেখানে তাঁর ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ পরাজিত ও বিধ্বস্ত হয়।

(৮) চতুর্থ শক্তিজোট গঠন

রাশিয়ায় নেপোলিয়নের পরাজয়ের সংবাদে প্রাশিয়া-য় প্রবল গণ-জাগরণ দেখা দেয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ শক্তিজোট গঠিত হয় এবং তাঁর পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। 

উপসংহার:- শত্রু ইংল্যান্ডকে জব্দ করতে গিয়ে তিনি নিজেই নতুন থেকে নতুনতর সংকটের আবর্তে পতিত হন এবং এই মহাদেশীয় অবরোধই হল তাঁর পতনের অন্যতম প্রধান কারণ। ঐতিহাসিক লজ বলেন, “মহাদেশীয় অবরোধ ছিল একজন কূটনীতিক হিসেবে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার সর্বাপেক্ষা বড়ো প্রমাণ।”

(FAQ) মহাদেশীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কে, কখন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন?

ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. কোন দেশের বিরুদ্ধে নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ঘোষণা করেন?

ইংল্যান্ড।

৩. নেপোলিয়ন বিরোধী চতুর্থ শক্তিজোট গঠিত হয় কখন?

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ।

৪. মহাদেশীয় ব্যবস্থার খসড়া কাকে বলা হয়?

নেপোলিয়নের বিশ্বস্ত সেনাপতি মন্টজেলার্ডের রিপোর্টকে।

Leave a Comment