সাতবাহনদের আদি বাসস্থান প্রসঙ্গে সাতবাহনদের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের সম্পর্ক, মহারাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্ধ্র, শিলালিপির প্রাপ্তিস্থান ও ডঃ মুখার্জির অভিমত সম্পর্কে জানবো।
সাতবাহনদের আদি বাসস্থান
বিষয় | সাতবাহনদের আদি বাসস্থান |
সাম্রাজ্য | সাতবাহন সাম্রাজ্য |
প্রতিষ্ঠাতা | সিমুক |
শ্রেষ্ঠ রাজা | গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী |
শেষ রাজা | যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী |
ভূমিকা :- অন্ধ্র বা সাতবাহনরা অন্ধ্র জাতীয় হলেও তাদের আদি বাসস্থান প্রাচীন ভারত -এর অন্ধ্র অঞ্চলে ছিল না। কারণ, সাতবাহন রাজাদের আদি শিলালিপিগুলি অন্ধ্র দেশে অর্থাৎ পূর্ব দাক্ষিণাত্যে পাওয়া যায়নি।
সাতবাহনদের আদি বাসস্থান
ভারতের সাতবাহন রাজাদের লিপিগুলি সবই নাসিক, নানঘাট অর্থাৎ পশ্চিম দাক্ষিণাত্যে মহারাষ্ট্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। সাতবাহন রাজাদের আদি রাজধানী পৈঠান বা প্রতিষ্ঠান ঔরঙ্গবাদ জেলায় মহারাষ্ট্রের কাছাকাছি অবস্থিত।
সাতবাহনদের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের সম্পর্ক
যেহেতু সাতবাহন রাজাদের আদি শিলালিপি মহারাষ্ট্রে পাওয়া গেছে, অন্ধ্রে পাওয়া যায়নি, সেহেতু সাতবাহন রাজারা প্রকৃত অন্ধ্র জাতীয় ছিলেন কিনা এ সম্পর্কে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন যে, পূরাণের কথার ওপর নির্ভর করে সাতবাহন রাজাদের অন্ধ্র জাতীয় বলা চলে না। কারণ, প্রত্নতাত্বিক প্রমাণ সে কথা সমর্থন করছে না। তাদের মতে, সাতবাহন রাজারা ছিলেন মারাঠী জাতীয় ব্রাহ্মণ। তাঁদের মতে,
- (১) সাতবাহন রাজাদের আদি শিলালিপি নাসিক ও নানঘাট লিপি মহারাষ্ট্রে পাওয়া গেছে।
- (২) পূর্ব দাক্ষিণাত্য বা অন্ধ্রে সাতবাহনদের কোনো আদি শিলালিপি পাওয়া যায়নি।
- (৩) গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর লিপিতে পূর্বঘাট পর্বতকে তার রাজ্যের পূর্বসীমা বলা হয়েছে। সুতরাং অন্ধ্রপথ বা অন্ধ্রদেশ তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
- (৪) খারবেল -এর হাতিগুম্ফা লিপিতে সাতবাহন রাজ্যকে কলিঙ্গের পশ্চিম দিকে বলা হয়েছে।
- (৫) আদি সাতবাহন মুদ্রাগুলি মহারাষ্ট্রে পাওয়া গেছে।
- (৬) প্রতিষ্ঠান বা পৈঠান ছিল সাতবাহনদের আদি রাজধানী। এই প্রমাণগুলির ভিত্তিতে অনেকে মনে করেন যে, মহারাষ্ট্র ছিল সাতবাহন রাজাদের আদি বাসভূমি।
মহারাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্ধ্র
- (১) ডঃ গোপাল আচারিয়া ব্যাখ্যা করেছেন যে, অন্ধ্র জাতীয় কোনো অভিজাত বা রাজবংশ মৌর্য সম্রাটদের অধীনে কর্মচারী নিযুক্ত হয়। চাকুরী সূত্রে তারা পশ্চিম দাক্ষিণাত্য বা মহারাষ্ট্রে গেলে ‘অন্ধ্রভৃত্য’ নামে পরিচিত হয়। এই কথার অর্থ হল মৌর্য সম্রাটদের অগ্রজাতীয় ভৃত্য বা কর্মচারী।
- (২) মৌর্য সাম্রাজ্য -এর পতন হলে এই অন্ধ্রভৃত্যরা পশ্চিম দাক্ষিণাত্য বা মহারাষ্ট্রে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তখন তারা সাতবাহন নামে পরিচিত হয়। সপ্তবাহন বা সূর্যের অপভ্রংশ হল সাতবাহন শব্দটি। সাতকর্ণী সাতবাহনদের কুলের নাম।
- (৩) ডঃ ডি. সি সরকারের মতে, দ্রাবিড় বা অষ্ট্রিক ভাষায় “সাতকর্ণী শব্দের অর্থ হল “অশ্বপুত্র”। সম্ভবতঃ, জনৈকা ব্রাহ্মণ বিধবা ও নাগবংশীয় পুরুষের মিলনে সাতবাহন বংশের উৎপত্তি হয়।
সাতবাহনদের শিলালিপির প্রাপ্তিস্থান
যাই হোক, সাতবাহন রাজাদের আদি যুগে শিলালিপিগুলি যেহেতু নাসিক, কার্লে, নানঘাটে পাওয়া গেছে সেহেতু সাতবাহনদের আদি বাসস্থান দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম ভাগে বা মহারাষ্ট্র অঞ্চলেই ছিল বলে বেশীর ভাগ পণ্ডিত মনে করেন।
সাতবাহনদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে ডঃ মুখার্জির অভিমত
ডঃ বি. এন. মুখার্জি অবশ্য বলেন যে, সাতবাহনদের প্রাচীনতম মুদ্রাগুলি মধ্য দাক্ষিণাত্যে পাওয়া গেছে। তাছাড়া আদি সাতবাহন রাজধানী প্রতিষ্ঠানপুর বা পৈঠান ঔরঙ্গবাদ বা মধ্য দাক্ষিণাত্যে অবস্থিত ছিল। সুতরাং সাতবাহনদের আদি বাসস্থান মধ্য দাক্ষিণাত্যে বলেই মনে হয়।
উপসংহার :- হাতিগুম্ফা লিপিতে কলিঙ্গের রাজা খারবেল সাতবাহন রাজ্যকে তার পশ্চিম দিকে অবস্থিত বলেছেন। তাই শিলালিপির প্রমাণ ধরলে পশ্চিম দাক্ষিণাত্যেই সাতবাহনদের আদি বাসস্থান বলে মনে করা উচিত।
(FAQ) সাতবাহনদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দাক্ষিণাত্যে।
অন্ধ্র।
সিমুকে।
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।
যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী।