বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ৫ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের বাণিজ্য সম্পর্কে কী আভাস পাওয়া যায় তা আলোচনা করা হল।
সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের বাণিজ্য সম্পর্কে কী আভাস পাওয়া যায়
প্রশ্ন:-সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের বাণিজ্য সম্পর্কে কী আভাস পাওয়া যায় ?
হরপ্পার অর্থনীতিতে বাণিজ্যের ভুমিকা ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ও বহির্দেশে এই ব্যবসা চলত। বাণিজ্যের কাজে জলপথ ও স্থলপথ উভয়ই ব্যবহৃত হত। দেশের মধ্যে প্রধানত স্থলপথে বাণিজ্য চলত। সম্ভবত গরু ও গাধায় টানা গাড়িতে করে স্থলপথে মালপত্র পরিবাহিত হত। কারণ, এখানকার সিলগুলিতে প্রধানত বৃষের চিত্রই অঙ্কিত রয়েছে ও খেলনা গরুর গাড়ির নিদর্শনও পাওয়া গেছে। কয়েকটি সীলে জাহাজের চিত্রও রয়েছে।
দেশ-বিদেশ থেকে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালসমূহ আমদানি করা হত। হিমালয় থেকে দেবদারু কাঠ; মহীশূর থেকে সোনা, রাজস্থানের ক্ষেত্রী থেকে তামা, সীসা, চুনাপাথর, সৌরাষ্ট্র থেকে মূল্যবান পাথর ইত্যাদি আমদানি করা হত। দেশের বাইরে থেকেও নানা জিনিস আমদানি করা হত। যেমন – পারস্য থেকে আসত রূপা ও মূল্যবান পাথর, সুমের থেকে আসত রূপা, মধ্য-এশিয়া থেকে আসত জেড পাথর। রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে হাতির দাঁতের তৈরি জিনিস, তুলাজাত দ্রব্য ইত্যাদি। এই সময়ে মুদ্রাব্যবস্থা চালু হয়নি। তাই বিনিময়ের মাধ্যমে কেনাবেচা চলত।
মেসোপটেমিয়ার সাথে হরপ্পা সভ্যতার সুদৃঢ় বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল তা বোঝা যায় উভয় অঞ্চলে প্রাপ্ত পারস্পরিক নিদর্শনসমূহ থেকে। সাহিত্যিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দুই প্রকার উপাদানই বাণিজ্যিক যোগাযোগের সাক্ষ্য বহন করে। হরপ্পার সিল, রুদ্রাক্ষ ইত্যাদি মেসোপটেমিয়ার শহরগুলিতে পাওয়া গেছে। আবার হরপ্পার প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে মেসোপটেমিয়ার সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। ডি. কে. চক্রবর্ত্তী, শিরীন রত্নাগার প্রমুখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন, জলপথে বহির্বাণিজ্য পরিচালনার জন্য মেসোপটেমিয়ার মানুষদের কাঠ, জাহাজ ইত্যাদি প্রয়োজন ছিল। এগুলি পাবার জন্য তারা সিন্ধু অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল।
প্রধান পুঁথি ও ফলক থেকে জানা যায় যে, আক্কাদের রাজা প্রথম সারগন-এর সময়ে উর-এর বণিকরা যে কয়টি অঞ্চলের সাথে বাণিজ্য চালাত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মেলুহা। এই মেলুহাকে সিন্ধু উপত্যকার সাথে অভিন্ন বলে মনে করা হয়। সুতরাং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ অবশ্যই ছিল।