২০২৫ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ সিলেবাসের সাজেশন্ ভিত্তিক পিডিএফ নোটস্ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুণ (দাম প্রতি ক্লাস ৯৯ টাকা)।

👉Chat on WhatsApp

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলি

বি. এ. জেনারেল (1st Semister) ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়: হরপ্পা সভ্যতা থেকে ১০ নাম্বারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন – হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হল।

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলি

প্রশ্ন:- হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।

প্রাচীন হরপ্পা সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই নবীন। তবুও প্রাচীনতম ভারতীয় সভ্যতা হিসেবে হরপ্পা-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের বিস্মিত করে। হরপ্পা-সংস্কৃতির বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বৈশিষ্ট্য হল এর পরিকল্পিত নগরী। মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা দুটি নগরেই পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট। মার্টিমার হুইলার মনে করেন, এই দুটি নগর যখন নির্মিত হয়েছিল, তখন নগর-পরিকল্পনাবিদ্যা সংগঠকদের যথেষ্ট করায়ত্ত ছিল।

শহরের অধিকাংশ গৃহই ছিল পোড়া ইট দ্বারা নির্মিত। কুটির থেকে দ্বিতলবিশিষ্ট ইমারত, সব ধরনের বাড়িই নির্মিত হয়েছিল। ঘরগুলির দেওয়াল ছিল খুবই মসৃণ। আবাসিক বাড়িগুলি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। মাঝারি বাড়ির সংখ্যাও ছিল যথেষ্ট। তাই অধ্যাপক ব্যাসাম মনে করেন, সমসাময়িক মিশর বা সুমেরীয় সভ্যতার তুলনায় সিন্ধু উপত্যকায় মধ্যবিত্তের সংখ্যা ছিল বেশি। প্রতিটি বাড়িতেই স্নানাগার ও পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা ছিল। বাড়ির জঞ্জাল ফেলার জন্য রাজপথের ধারে বড়ো বড়ো আবর্জনা-পাত্র থাকত।

নগরের মাঝবরাবর ছিল সুপ্রশস্ত রাজপথ। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ছিল গলিপথ। এক গলিপথ থেকে অন্য গলিপথে যাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। রাজপথের পাশ দিয়ে ছিল টানা আচ্ছাদিত নর্দমা। বাড়িগুলি থেকে পোড়ামাটির নলের মধ্য দিয়ে জলসমূহ বড়ো নর্দমায় এসে পড়ত। এত প্রাচীনকালে মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার নাগরিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সচেতনতা দেখে পণ্ডিতদের অনুমান যে, ঐ সময় পৌর শাসনব্যবস্থা বর্তমান ছিল।

হরপ্পা-সংস্কৃতির আর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বৃহৎ স্নানাগার, দুর্গ ও বড়ো বড়ো শস্যভাণ্ডার নির্মাণ। মহেঞ্জোদারোতে ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া ও ৮ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট একটি সুবৃহৎ স্নানাগার আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে জল ঢোকাবার ও বের করার ব্যবস্থা ছিল। স্নানাগারের তিন পাশে ছিল বারান্দা এবং তার পাশে ছিল ছোটো ছোটো ঘর। হুইলারের মতে, স্নানাগারটি ধর্মীয় কারণে ব্যবহৃত হত এবং ঘরগুলি ছিল পুরোহিতদের আবাসস্থল। কিন্তু ডি. ডি. কোশাম্বীর মতে, অভিজাতদের জলকেলির জন্য এটি ব্যবহৃত হত এবং ঘরগুলি অনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত।

মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় নিরাপত্তার জন্য যে বড়ো বড়ো দুর্গ নির্মিত হয়েছিল, তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। হরপ্পার দুর্গটির দেওয়াল ছিল ১০ মিটার চওড়া। দেওয়ালের কোণগুলিতে ছিল গম্বুজ। এটিকে অনেকে পুরোহিত ‘শাসকের রাজপ্রাসাদ’ বলে মনে করেন। নগর দুটিতে যে শস্যভাণ্ডারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, তা থেকে অনুমিত হয়, ঐ সময় আপৎকালীন সময়ের জন্য শস্য মজুত রাখার ব্যবস্থা ছিল।

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে কি ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তা সঠিক জানা যায় না। তবে শহরের বিন্যাস দেখে অনুমিত হয়, পৌরব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। একই ধরনের রাস্তাঘাট, অট্টালিকা, ওজন ও মাপ দেখে বোঝা যায়, ঐ অঞ্চলে একটি কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এস. কে. সরস্বতীর ভাষায়, “The absolute uniformity implies the existence of a strong and centralised authority regulating the life and politics of the people over the extensive region.

অনেকের মতে, সিন্ধুর শহরগুলিতে বণিকসমাজ পরিচালিত প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ঐতিহাসিক শাঙ্খালিয়ার মতে, “সিন্ধু-উপত্যকায় উদার স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।” কিন্তু মার্টিমার হুইলার বলেছেন, “খুব সম্ভব সিন্ধু অঞ্চলে ধর্মাশ্রয়ী শাসন চালু ছিল, যার প্রধান ছিলেন পুরোহিত রাজা।”

Leave a Comment