উর্মিলা দেবী

দেশবন্ধুর ভগিনী উর্মিলা দেবী ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে কাজ করেন এবং বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের ইতিহাস ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অনন্য একটি অধ্যায়।

স্বাধীনতা সংগ্রামী উর্মিলা দেবী

ঐতিহাসিক চরিত্রউর্মিলা দেবী
পরিচিতিভারতীয় নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবিকা
সময়কাল২০শ শতকের প্রথমার্ধ
প্রধান অবদানব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ
অংশগ্রহণস্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, নারী সংগঠনে নেতৃত্ব
বৈশিষ্ট্যসাহসী নেতৃত্ব, নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা
উত্তরাধিকারভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারী নেতৃত্বের পথিকৃত

উর্মিলা দেবী

ভূমিকা :- দেশবন্ধুর ভগিনী উর্মিলা দেবী ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী নেতৃত্ব। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশের মুক্তির লক্ষ্যে তিনি যেভাবে সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তা ভারতীয় নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র—উভয় জায়গাতেই তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি শুধু নিজেই সংগ্রামে শামিল হননি, বরং অন্যান্য নারীদেরও আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর সংগ্রামী মনোভাব, আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বগুণ তাঁকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। উর্মিলা দেবীর অবদান আমাদের ইতিহাসের এমন এক অধ্যায়, যা নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামী উর্মিলা দেবীর পরিচিতি

উর্মিলা দেবীর দেশ ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের তেলিরবাগ গ্রামে। পিতার নাম ভুবনমোহন দাশ, মাতা নিস্তারিণী দেবী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ছোট ভগ্নী তিনি।

হরতালে সামিল উর্মিলা দেবী

১৯২১ সালের ৭ই ডিসেম্বর বড়বাজারে খদ্দর বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন উর্মিলা দেবী। ২৪শে ডিসেম্বর যখন প্রিন্স-অব-ওয়েল্স কলকাতা আসবেন সেই দিনটাতে হরতাল ঘোষণা করতে উর্মিলা দেবী বেরিয়ে পড়েন বাসন্তী দেবীর সঙ্গে। তাদের গ্রেপ্তার ও তার পরিণতি বাসন্তী দেবীর জীবনীতে দেওয়া হয়েছে।

উর্মিলা দেবী কর্তৃক নারী কর্মমন্দির প্রতিষ্ঠা

দেশবন্ধুর প্রেরণায় উর্মিলা দেবী মহিলাদের মধ্যে সংগঠনের কাজ করতে থাকেন। ১৯২১ সালে তিনি ‘নারী কর্মমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল চরকা ও খদ্দর জনপ্রিয় করা এবং দেশাত্মবোধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দেশ্য প্রচার করা। সুনীতি দেবী, হেমপ্রভা মজুমদার প্রভৃতি এই কর্মমন্দিরের উৎসাহী কর্মী ছিলেন।

আন্দোলনের পরিচালনায় উর্মিলা দেবী

১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন-এর সময় বহু নেতা ও পুরুষ কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে যান। সেই সময় সভা-সমিতি অনুষ্ঠিত করা বে-আইনী ছিল। এই ‘নারী কর্মমন্দির’ তখন বে-আইনী সভা এবং আন্দোলন পরিচালনার ভার গ্রহণ কবে। নেতৃত্ব ছিল ঊর্মিলা দেবীর উপর। অত্যধিক পরিশ্রমে উর্মিলা দেবী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তারপর এই দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার এসে পড়ল হেমপ্রভা মজুমদারের উপর।

রাজনৈতিক পর্যটনে উর্মিলা দেবী

পরে উর্মিলা দেবী নারী-কর্মমন্দিরের কাজ বন্ধ করে দিযেছিলেন অসুস্থতার কারণে। কিন্তু রাজনীতি ছেড়ে দেন নি। ১৯২৬ সালে সরোজিনী নাইডু যখন কংগ্রেসের সভানেত্রী তখন উর্মিলা দেবী তাঁর সঙ্গে বহুস্থানে রাজনৈতিক পর্যটন করেন।

নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সভানেত্রী উর্মিলা দেবী

১৯৩০ সালে লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ গঠিত হয়। উর্মিলা দেবী এই সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। তিনি সেই সময় আইন অমান্য করে কারাবরণ করেন।

রাজবন্দীদের সঙ্গে উর্মিলা দেবীর সাক্ষাৎ

১৯৩১ সালেব শেষদিকে হিজলী বন্দীনিবাসে রাজবন্দীদের উপর গুলী চালানো হয়। এর ফলে দুজন রাজবন্দী সন্তোষ মিত্র ও তারকেশ্বর সেন নিহত ও অনেকে আহত হন। ঊর্মিলা দেবী এই সময় জেলে রাজবন্দীদের সঙ্গে দেখা করেন ও জেলখানার প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।

উর্মিলা দেবীর মৃত্যু

১৯৫৬ সালের মে মাসে উর্মিলা দেবীর মৃত্যু হয়।

উপসংহার :- উর্মিলা দেবী ছিলেন সেই সকল সাহসী নারী নেত্রীদের একজন, যাঁরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তিনি শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে নয়, সামাজিকভাবেও নারীদের জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। উর্মিলা দেবীর মতো সংগ্রামীদের ত্যাগ ও অবদান আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় এবং জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতার পেছনে থাকা অনন্য আত্মদান ও সংগ্রামের কথা। তাঁর জীবন ও কাজ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ভারত-এর ইতিহাসে।

(FAQ) উর্মিলা দেবী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. উর্মিলা দেবী কে ছিলেন?

উর্মিলা দেবী ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নারীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে উৎসাহিত করেছিলেন।

২. উর্মিলা দেবী কবে ও কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

তাঁর জন্মতারিখ ও জন্মস্থান সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না, তবে তিনি ২০শ শতকের প্রথমার্ধে সক্রিয় ছিলেন।

৩. উর্মিলা দেবী কোন কোন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন?

উর্মিলা দেবী স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও অন্যান্য ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

৪. উর্মিলা দেবীর প্রধান অবদান কী ছিল?

তাঁর প্রধান অবদান ছিল নারী সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় করা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সাহসিকতার সঙ্গে ব্রিটিশ বিরোধিতা করা।

৫. উর্মিলা দেবীর উত্তরাধিকার কী?

উর্মিলা দেবী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পথিকৃত হিসেবে চিহ্নিত হন এবং তাঁর সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক মহান দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

Leave a Comment