ইন্টারনেটের হোক সঠিক ব্যবহার
অন্তর্জাল জ্ঞানের আধার। হাতের মুঠোয় এখন বিশ্বের তথ্য। তথ্যপ্রযুক্তির এই অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর। তবে অতিরিক্ত ও অসচেতন ব্যবহার ডেকে আনতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। সেই নিয়েই আজকের লেখা।
ভারসাম্য আনো
চিরায়ত শিক্ষা, যেটি আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখে থাকি ইন্টারনেট থেকে, প্রাপ্ত জ্ঞান তাকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। কারণ ইন্টারনেটে বিভিন্ন তথ্য আছে কিন্তু কোন তথ্য সত্য আর কোনটি মিথ্যা বা কোনটি কোন বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী তা আমাদের শেখায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগ্রহণকে অস্বীকার না করে বরং সে বিষয়কেই আরও বেশি করে জানতে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যায়। এতে বাস্তবের শিক্ষা ও অন্তর্জাল নির্ভর শিক্ষার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে।
নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করো
ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনে নতুন কিছু শেখার শ্রেষ্ঠ সময়। ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন কিছু শিখতে পারো। হাতের কাছে ইউটিউব রয়েছে। এমন কোনো বিষয় নেই, যা সম্পর্কে ইউটিউবে ভিডিও নেই। গ্রাফিক ডিজাইন, ফটোশপের ব্যবহার, ভিডিও এডিটিং, সায়েন্স প্রজেক্ট নির্মাণ, ইংরেজিতে কথা বলা, ছবি আঁকা, সেলাইয়ের কাজ, রান্না শেখাসহ তোমার যা শিখতে ইচ্ছা করে তা সার্চ করে ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে শিখে নিতে পারো।
সংবাদপত্র পড়ো
দেশ, সমাজ ও বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে সংবাদপত্র পড়ার কোনো বিকল্প নেই। ইন্টারনেট ব্যবহার করেও সংবাদপত্র পড়তে পারো। এজন্য যে পত্রিকা পড়তে চাও তার ই-পেপার ভার্সন সার্চ করলে সহজেই পেয়ে যাবে। এ ছাড়া প্রতিদিনের সাম্প্রতিকতম খবর জানতে পছন্দের নিউজপেপারের অনলাইন পোর্টালেও একবার করে ঢু মারতে পারো।
পছন্দের বই পড়ো
ইন্টারনেটে নিজের পছন্দের বইয়ের নাম লিখে সার্চ করে বইয়ের পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করে নিতে পারো। টেক্সট বই থেকে শুরু করে গল্প, কবিতা, উপন্যাস এবং আত্ম-উন্নয়নসহ অনেক বই খুঁজে পাবে। চীন-এর এক প্রবাদে আছে, ‘একটা ভালো বই পড়া মানে নিজের বুকের ভেতর সবুজ বাগান স্থাপন করা’। তাই সরাসরি বই কিনতে না পারলেও ঘরে বসে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়তে পারো পছন্দের বই।
ইন্টারনেট হোক নিরাপদ
ইন্টারনেটের ভালো ও মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। মন্দ দিকটি পরিহার করে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবে। বিভিন্ন রটনা সৃষ্টকারী তথ্য, বাজে ভিডিও বা অশ্লীল কনটেন্ট থেকে নিজেকে দূরে রাখবে। যে কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে সেটি সত্য কি না যাচাই করে নেবে। সত্যতা যাচাই ছাড়া হুজুগে পড়ে কোনো তথ্য শেয়ার করবে না।
অযথা সময় নষ্ট নয়
বর্তমান সময়ে সন্তানের প্রতি অধিকাংশ বাবা-মায়ের একটাই অভিযোগ, ছেলেমেয়েরা বেশিক্ষণ মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এটা শুনে হয়তো তোমরা অনেকেই রাগ করো। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে, বাবা-মা কখনো সন্তানের মন্দের জন্য কিছু বলেন না। নেট দুনিয়ার প্রতি অধিক আসক্তি আমাদের মগজকে সময়জ্ঞানশূন্য করে তোলে। যার ফলে আমরা ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে অযথা খোশগল্প, নিউজ ফিডে স্কুলিং বা ইউটিউবে একটার পর একটা ভিডিও দেখায় মেতে থাকি। এভাবে যে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যায়, তা আমরা বুঝতেই পারি না। তাই ইন্টারনেটে অযথা সময় নষ্ট করবে না। জরুরি কাজগুলো সেরে অনলাইন থেকে বিদায় নেবে।
খেলাধুলা ইন্টারনেটে নয়
অনেকেই ইন্টারনেটেই অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এটি ভীষণ ক্ষতিকারক। এতে সময় অপচয় ঘটায়। মেজাজ খিটখিটে করে ফেলে। মনোযোগ কমিয়ে দেয়। তা ছাড়া অনেক অ্যাপসে অবৈধ জুয়ার আয়োজন থাকে। এতে জড়িয়ে পড়লে আর্থিক ক্ষতিও হতে পারে। এগুলো তাই এড়িয়ে চলতে হবে। আর লুডো বা সিওসি বা অন্য যে কোনো খেলা যদি অনেক বেশি সময় ধরে খেলা হয়, তাহলে চোখের ক্ষতি হয়। ব্যাকপেইন, মাসলপেইন ইত্যাদি হতে পারে। এর থেকে খেলার মাঠে খেললে শরীর ভালো থাকে। নতুন নতুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পেশি সঞ্চালিত হয় বলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তাই ইন্টারনেটে খেলা থেকে মাঠে খেলার অভ্যাস করো।
ভাষা শেখো
ইউটিউবে রয়েছে যে কোনো ভাষা শেখার অনেক অনেক ভিডিও। প্রাথমিক ভাবে সেখান থেকে শিখতে পারো। তারপর সেই ভাষা শেখার জন্য খুঁজে নিতে পারো পছন্দের অনলাইন কোর্স। এমন কোর্সের সংখ্যা কম নয়। অনলাইনের কোর্স বলে যাতায়াতের ঝামেলা নেই। এমনকি দেশের বাইরের কোর্সও করতে পারো ইচ্ছে করলেই। পরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকে অনলাইনেই। এর মাধ্যমে পাবে সনদও। নতুন একটি ভাষা শিখলে সহজেই অন্য দেশে পড়ার সুযোগ থাকে। তাই ইন্টারনেটে ভাষা শেখার সুযোগটি নিতে পারো।