যশোধর্মন প্রসঙ্গে হূণদের পরাজয়, রাজ্য জয়, সাফল্য সম্পর্কে সন্দেহ, তিনটি শিলালিপি, মান্দাশোর পাথরের শিলালিপি, গুপ্ত শিলালিপি, সোন্দানি শিলালিপি, সাম্রাজ্য সীমা ও তার পতন সম্পর্কে জানবো।
মালবের রাজা যশোধর্মন প্রসঙ্গে যশোধর্মনের রাজ্য জয়, যশোধর্মন কর্তৃক হুনদের পরাজয়, যশোধর্মনের সাফল্য সম্পর্কে সন্দেহ, যশোধর্মনের তিনটি শিলালিপি, যশোধর্মন-বিষ্ণুবর্ধনের মান্দাসোর শিলালিপি, গুপ্ত শিলালিপি থেকে যশোধর্মনের বিবরণ, সোন্দানি শিলালিপি থেকে যশোধর্মনের বিবরণ, যশোধর্মনের সাম্রাজ্য সীমা, বাণগড়ের ইতিহাস ও যশোধর্মনের সাম্রাজ্যের পতন।
মালবরাজ রাজা যশোধর্মন
ঐতিহাসিক চরিত্র | রাজা যশোধর্মন |
রাজ্য | মালব |
রাজধানী | মান্দাশোর |
লিপি | মান্দাশোর লিপি |
পরাজিত | মিহিরকুল |
ভূমিকা :- গুপ্ত সাম্রাজ্য -এর পতনশীল অবস্থা দেখা দিলে, সাম্রাজ্য -এর বিভিন্ন অঞ্চলে সামন্ত শক্তিগুলি প্রাধান্য লাভ করে। মালবে যশোধর্মণ নামে এক সামন্ত এই সুযোগে শক্তি বৃদ্ধি করেন। তাঁর সময়কাল ছিল ৫০০-৫৫০ খ্রিস্টাব্দ।
যশোধর্মনের কাছে হূণদের পরাজয়
যশোধর্মণের মান্দাশোর লিপি থেকে জানা যায় যে, পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে ভারতে হূণ আক্রমণ হয়। যশোধর্মণ এবং সম্ভবত গুপ্ত সম্রাট নরসিংহগুপ্ত, ৫২৮ খ্রিস্টাব্দে একটি হূণ সেনা ও তাদের শাসক মিহিরকুলকে পরাজিত করে ভারত থেকে তাড়িয়ে দেন।
রাজা যশোধর্মনের রাজ্য জয়
মান্দাশোর লিপিতে দাবী করা হয়েছে যে, যশোধর্মণ এর পর রাজ্য বিস্তারের কাজে মন দেন। তিনি গৌড়, উড্র বা উড়িষ্যা হয়ে পূর্বঘাট পর্বত পর্যন্ত রাজ্য জয় করেন। তিনি ব্রহ্মপুত্র নদ হতে পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত এক সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। তার রাজধানী ছিল মান্দাশোর।
যশোধর্মনের সাফল্য সম্পর্কে সন্দেহ
যশোধর্মণের এই সাফল্য সম্পর্কে অন্য কোনো সূত্র হতে সমর্থন পাওয়া যায়নি। তার অন্য কোনো লিপি পাওয়া যায়নি। অথবা অন্য রাজাদের লিপিতে তাঁর সম্পর্কে উল্লেখ দেখা যায়নি। এজন্য যশোধর্মণের এই সফলতা প্রকৃত কিনা এ সম্পর্কে অনেক ঐতিহাসিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
যশোধর্মনের তিনটি শিলালিপি
মান্দাশোরে যশোধর্মনের তিনটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি, যশোধর্মণ-বিষ্ণুবর্ধনের মান্দাশোর পাথরের শিলালিপি সম্বত ৫৮৯ (৫৩২ খ্রি.)।
যশোধর্মণ-বিষ্ণুবর্ধনের মান্দাশোর পাথরের শিলালিপি
- (১) যশোধর্মণ-বিষ্ণুবর্ধনের মান্দাশোর পাথরের শিলালিপিটি ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল এবং যশোধর্মনের শাসনামলে দশপুরায় (আধুনিক মান্দাশোর নামেও পরিচিত) দক্ষিণ নামে একজন ব্যক্তির দ্বারা একটি কূপ নির্মাণের উল্লেখ রয়েছে।
- (২) শিলালিপিতে স্থানীয় শাসক যশোধর্মনের (এবং সম্ভবত চালুক্য শাসক বিষ্ণুবর্ধন) উত্তর ও পূর্ব রাজ্যের বিজয়ের উল্লেখ রয়েছে। এই রাজ্যগুলি আরও নির্দিষ্ট করা হয়নি, তবে জানা যায় যে যশোধর্মন উত্তরে হূণদের বেশিরভাগ অঞ্চল এবং তার বিজয়ের পরে পূর্বে গুপ্ত সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করেছিলেন।
গুপ্ত শিলালিপিতে যশোধর্মনের বিবরণ
একটি গুপ্ত শিলালিপি জানা যায়, শেষ গুপ্ত সম্রাট বিষ্ণুগুপ্ত কর্তৃক কোটিবর্ষ (পশ্চিমবঙ্গ -এর বানগড়) এলাকায় একটি জমি অনুদান করেন। যশোধর্মনের মান্দাশোর স্তম্ভের শিলালিপিতেও হূণদের বিরুদ্ধে জয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়।
সোন্দানি শিলালিপিতে যশোধর্মনের বিবরণ
মান্দাশোরের সোন্দানিতে জোড়া একচেটিয়া স্তম্ভ জেলাটি যশোধর্মন তার বিজয়ের রেকর্ড হিসাবে তৈরি করেছিলেন। সোন্দানি শিলালিপির একটি অংশে রাজা মিহিরকুলকে পরাজিত করার জন্য যশোধর্মন নিজেই প্রশংসা করেছেন।
যশোধর্মনের সাম্রাজ্য সীমা
মান্দাশোর স্তম্ভের শিলালিপির ৫ নং লাইনে, যশোধর্মন দাবি করেছেন যে তিনি তার শত্রুদের পরাজিত করেছেন এবং এখন লৌহিত্য (ব্রহ্মপুত্র নদী) থেকে “পশ্চিম মহাসাগর” (পশ্চিম ভারত মহাসাগর) এবং হিমালয় থেকে পর্বত মহেন্দ্র এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন।
যশোধর্মনের সাম্রাজ্যের পতন
এইভাবে যশোধর্মণ হূণ এবং গুপ্তদের কাছ থেকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেছিলেন। যদিও তার স্বল্পস্থায়ী সাম্রাজ্য শেষ পর্যন্ত ৫৪০-৫৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
উপসংহার :- যশোধর্মণের সাফল্য যদি থেকেই থাকে, তা তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হয়ে যায়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য তারপর ভেঙে পড়ে। অনেকে যশোধর্মণকে শকারি বিক্রমাদিত্য বলে মনে করেন। এই মতের স্বপক্ষে যুক্তি জোরালো নয়।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “যশোধর্মন” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) মালবের রাজা যশোধর্মন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
যশোধর্মন।
মান্দাশোর লিপি।
রাজা যশোধর্মন।