আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি পাতার উপকারিতা। মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। এছাড়াও থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমিকা:- বেশ কিছু বছর আগে গ্রামের সব বাড়ির আনাচে-কানাচে থানকুনি পাতার গাছ দেখা যেত, হয়তো কিছু ক্ষেত্রে এখনো দেখা যায়। শহরাঞ্চলের মানুষ নিজেদের ঘরে মাটির টবে বা কোনো প্লাস্টিকের পাত্রে থানকুনি পাতার গাছ লাগিয়ে রাখত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ ভুলে গেছে থানকুনি পাতার নাম ও তার উপকারিতা। অবশ্য এই পাতার গুণাগুণের সাথে অপকারিতাও আছে। সেই প্রাচীন যুগ থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ আছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ সহ আফ্রিকা, জাভা, সুমাত্রাতেও থানকুনি পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি
থানকুনি আমাদের অতি পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। খেতের আইল, পুকুরপাড় বা জলার ধারে হরহামেশাই বেড়ে উঠতে দেখা যায় অসাধারণ ঔষধি গুণসম্পন্ন এই উদ্ভিদকে। ভেষজ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিকসহ অনেক দেশের চিকিৎসাবিদ্যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম আগে ছিল Hydrocotyle asiatica L. এবং Trisanthus cochinchinensis (Lour.)।
থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম ও অন্যান্য নাম
ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনির বৈজ্ঞানিক নাম Centella Asiatica। অঞ্চলভেদে থানকুনিকে অনেকে আদাগুনগুনি, টেয়ামানিক, আদামনি, ঢোলামনি নামেও চিনে থাকবেন।
থানকুনির বৈজ্ঞানিক পরিবার
ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি বা আদামণি এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক পরিবাবের নাম ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার মনে করেন।
থানকুনির প্রাপ্তিস্থান
বাংলাদেশ, ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়।
থানকুনি পাতার উপাদান
ভেষজ ঔষধি গুণ সম্পন্ন থানকুনি পাতায় সেন্টেল্লায় এশিয়াটিকোসাইড, ব্রাহ্মোসাইড, অ্যাসিইয়্যাটিক অ্যাসিড এবং ব্রাহ্মিক অ্যাসিড (ম্যাড্যাস্যাসিক অ্যাসিড) সহ পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড রয়েছে। এছাড়াও সেন্টিলোজ, সেন্টেলোসাইড এবং ম্যাডেক্যাসোসাইড উপাদান বর্তমান থাকে।
থানকুনি পাতার গুনাগুণ
ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই এটি ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মুখের ব্রণ দুর হয়, মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষত নিরাময় করে, সর্দি প্রশমিত করে, পেটের অসুখ দূর করে, আমাশয়ে ভাল কাজ করে, সাময়িকভাবে কাশি কমাতে সাহায্য করে, গলা ব্যাথার জন্য উপকার পাওয়া যায়। সর্বোপরি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে থানকুনি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থ্রম্বোসিস বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে মানব শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে না। এই অবস্থায় প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস খেতে পারলে রক্ত পরিষ্কার থাকে। এর ফলে শরীরের নানান সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। এমনকি থানকুনি পাতার রস হাত-পা ফুলে যাওয়া থেকেও রেহাই দেয়।
ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ক্ষত দূর করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার ম্যাডেকাসসাইড উপাদান ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। এর ফলে ত্বকে সতেজ ভাব ফুটে ওঠে।
ক্ষত নিরাময়ে থানকুনি পাতার উপকারিতা
কোনো ভাবে হাত-পা কেটে গেলে বা খেলার সময় শরীরের কোনো অংশে আঘাত লেগে রক্তপাত হলে থানকুনি পাতার রস ব্যবহার করা বেশ উপকারী। এর ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং সংক্রামণের সম্ভবনাও অনেকটাই হ্রাস পায়।
পেটের সমস্যা কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
বর্তমান সময়ে তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন। পেটের রোগ নিরাময়ে থানকুনি পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পেট খারাপ বা ডায়রিয়া, আলসার ও পেটের যে কোনো রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় থানকুনি পাতা।
ত্বকের আর্দ্রতা ও কোমলতা ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোক্যামিকেল উপাদান ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বক থাকে কোমল এবং ত্বকে বয়সের ছাপ খুব কম দৃশ্যমান হয়।
থ্রম্বোসিসের চিকিৎসায় থানকুনি পাতার উপকারিতা
থ্রম্বোসিস রোগে আক্রান্ত মানুষেরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা থ্রম্বোসিস রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে থানকুনি পাতার উপকারিতা
বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খুবই উপকারী। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
আলসার নিরাময়ে থানকুনি পাতার উপকারিতা
আলসার ভালো করতে থানকুনি পাতার রস বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। নিয়ম করে প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস সেবন করতে পারলে আলসার, আমাশয় থেকে শুরু করে পেটের নানান সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্রদাহ কম করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
মানুষের শরীরের ভেতরে যদি কোনো ক্ষত থাকে তাহলে সেই ক্ষত থেকে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন – জ্বর, খাবারে অনীহা, পেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি। থানকুনি পাতা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, কারণ থানকুনি পাতায় অধিক পরিমানে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই থানকুনি পাতা ব্যবহারের ফলে জ্বর, খাবারে অনীহা, পেশিতে ব্যাথা, ক্লান্তি আরও নানা ধরণের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
মানব শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থানকুনি পাতা। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। থানকুনি পাতায় বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার রস শরীরের মধ্যে হজমের সহায়ক অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এর ফলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অনিদ্রার সমস্যা দূরীকরণে থানকুনি পাতার উপকারিতা
রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে ক্লান্তি দেখা যায়, মাথা ভার হয়ে থাকে, ত্বক নিস্তেজ হয়ে পড়ে, খাবার ঠিক মতো হজম হয় না, কাজকর্মে অনিচ্ছা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান উপস্থিত থাকে। এই উপাদান গুলি শরীরের নার্ভাস সিস্টেম শান্ত রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে ঘুম ভালো হয়। তাই প্রতিদিন থানকুনি পাতা বা তার রস খেলে অনিদ্রার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ডিটক্সিফিকেশন
শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে থানকুনি পাতার রস। আমাদের শরীরে টক্সিন থাকলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারলে শরীর টক্সিন মুক্ত হতে পারে।
ঠান্ডা জনিত রোগ ব্যাধি নিরাময়ে থানকুনি পাতার উপকারিতা
শরীরে ঠান্ডা জনিত রোগ ব্যাধি নিরাময়ে থানকুনি পাতার রস খুবই উপকারী। বিশেষ করে জ্বর, কাশি হওয়ার আশঙ্কা দূর করে থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে জ্বর হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। কাশির সমস্যা হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কাশি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
ব্রণের উপদ্রব কমাতে ও দাগ দূর করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
ত্বকের স্বেদগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত রস সিবাম-এর অতিরিক্ত নিঃসরণ, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ, লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মুখমণ্ডলে ব্রণ হয়ে থাকে। থানকুনি পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বা প্রদাহরোধী উপাদান ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ব্রণের দাগ দূর করতে থানকুনি পাতার নির্যাস দারুণ উপকারী।
মস্তিষ্কের বিকাশে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি গাছের পাতা মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফলিক অ্যাসিড আছে। এই উপাদান গুলি মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি গাছের পাতার রস গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত সকালে খালি পেটে হাফ কাপ দুধে খুব অল্প পরিমানে মিছরি ও থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের সতেজতায় থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে। তাই থানকুনিপাতার নির্যাসসমৃদ্ধ সৌন্দর্যপণ্য আমাদের ত্বকের ক্লান্ত ভাব দূর করে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে।
ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে থানকুনি পাতার উপকারিতা
সাধারণত ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত লোকেদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধা হওয়া, তৎক্ষণাৎ যে কোনো কথা বলতে ও বুঝতে সমস্যা হওয়া, প্রতিদিনের কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগা, একটি প্রশ্ন বার বার করা ইত্যাদি নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে থানকুনি পাতার রস পান করলে ডিমেনশিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
স্ট্রেচ মার্ক কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
গবেষণায় প্রমানিত যে, থানকুনি পাতা স্ট্রেচ মার্ক কম করতে সক্ষম। থানকুনি পাতায় বর্তমান টারপিনয়েড উপাদান শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে নতুন করে আর কোনো স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হতে পারে না।
যৌন অক্ষমতায় থানকুনি পাতার উপকারিতা
যৌন অক্ষমতা দূরীকরণে থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিসীম। প্রতিদিন থানকুনি পাতা খেলে শরীরে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাই যৌন অক্ষমতায় ভুগলে থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত। প্রতিদিন একগ্লাস দুধের সাথে ৭-৮ চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে যৌন অনীহা কেটে যাবে।
সৌন্দর্যচর্চায় থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি গাছের ছোট ছোট সবুজ পাতা দারুণ ঔষধি গুণসম্পন্ন। বর্তমানে রূপসচেতন তরুণ-তরুণীদের কাছে কোরিয়ান বিউটি খুবই জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড। কোরিয়ান স্কিনকেয়ার সামগ্রী আজকাল অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে খুবই জনপ্রিয় একটি উপাদান হল সেনটেল্লা এশিয়াটিকা বা থানকুনি পাতার নির্যাস। জনপ্রিয় আমেরিকান ব্র্যান্ড এসটি লডারও বহুদিন ধরে সিকা (Cica) নামে এই উপাদান ব্যবহার করে আসছে। জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিউটি ব্লগার হাইরাম এবং জেমস ওয়েলশ স্কিনকেয়ার বিষয়ে নির্মিত তাদের ভিডিওতে বারবার এই সেনটেল্লা এশিয়াটিকার কথা বলছেন।
মানসিক অবসাদ কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা কম করে এবং নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখে। থানকুনি পাতার রস পান করলে শরীরের ভেতরে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে মানসিক অবসাদ কমে।
ত্বকের পরিচর্যায় থানকুনি পাতার উপকারিতা
শরীরে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিসীম। থানকুনি পাতায় বর্তমান বিটা ক্যারোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ফাইটোক্যামিকেল উপাদান ত্বককে পুষ্টি প্রদান করে এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একগ্লাস দুধের সঙ্গে ৪-৫ চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা যথেষ্ঠ বৃদ্ধি পায়। থানকুনি পাতা সাধারণত ত্বকের মৃত কোষগুলিকে ধ্বংস করে নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বক মসৃন ও লাবণ্যময় হয়ে ওঠে।
চুল পড়া কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
চুল পড়া নিরাময়কারী পণ্য সামগ্রীতে অনেক সময় থানকুনি পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়। থানকুনি পাতার অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
ত্বকের বার্ধক্য রোধে থানকুনি পাতার উপকারিতা
এই থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান ম্যাডেকাসসাইড রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে। এর ফলে দূষণ ও সূর্য রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক অকালে বৃদ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও এই উপাদান ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা রোধ ও নমনীয়তা বৃদ্ধিতে কোলাজেন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতার সাথে সাথে তার কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। যেমন –
(১) এলার্জির সমস্যায় থানকুনি পাতার অপকারিতা
কারো এলার্জি থাকলে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই জানা খুবই প্রয়োজন। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি ও চুলকানি দেখা মিলতে পারে।
(২) লিভারের সমস্যায় থানকুনি পাতার অপকারিতা
যাদের লিভারের সমস্যাযুক্ত মানুষদের থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই জেনে রাখা দরকার। লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরই থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত।
(৩) গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার অপকারিতা
প্রসূতি বা গর্ভবতী মহিলাদের থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুইই জানতে হবে। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের থানকুনি পাতা ব্যবহার কারর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
থানকুনি পাতার নির্যাস ব্যবহার
বিভিন্নভাবে থানকুনির নির্যাস গ্রহণ করা যেতে পারে। থানকুনির জুস বানিয়ে নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে পাকস্থলী ও মস্তিষ্কের সুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও প্রাণময়তা ভেতর থেকে বৃদ্ধি পায়। থানকুনির রস বরফ করে ত্বকে ঘষলেও উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া থানকুনির নির্যাসসমৃদ্ধ বিভিন্ন সৌন্দর্যপণ্য, যেমন – ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, টোনার, সানস্ক্রিন ইত্যাদিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপসংহার:- আমাদের দেশে থানকুনি ঔষধি গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে সকলের কাছে খুবই পরিচিত একটি গাছ। লতা জাতীয় এই গাছের গুণাবলীর শেষ নেই। তাই ঘরেই থাকুক ঔষধি গাছ থানকুনি।
আরোও পড়ুন
(FAQ) থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন ও উত্তর
থানকুনি এক ধরণের ছোট একবর্ষজীবি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা গোলাকার হয় এবং পাতার কিনারায় খাঁজ থাকে।
Centella asiatica
Apiaceae পরিবারের অন্তর্গত।
মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়, ক্ষত নিরাময় করে, পেটের সমস্যা সমাধান করে, মানসিক অবসাদ কমাতে সাহায্য করে, অনিদ্রার সমস্যা দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ইত্যাদি।
থানকুনি পাতা খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে।
নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে আলসার, আমাশয়, মানসিক অবসাদ, ঠান্ডা জনিত সমস্যা, ডিমেনশিয়ার ও অন্যান্য অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে।
ত্বকের সজীবতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।