নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা, নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

Table of Contents

নিম পাতার উপকারিতা

একটি ঔষধি গাছ হল নিম। নিম গাছের ডাল, পাতা, রস, সবই কিছু না কিছু কাজে লাগে। একটি বহু বর্ষজীবি চিরহরিত বৃক্ষ হল নিম। নিম গাছ সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। নিম গাছের কান্ড ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি মোটা হতে পারে। নিম গাছের ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মায়।

নিম গাছের পাতা কাস্তের মত বাকানো থাকে এবং পাতার কিনারায় খাঁজকাটা পত্রক থাকে। নিম গাছের পাতা ২.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। নিম গাছে এক ধরণের ফলও হয়। আঙুরের মতো দেখতে নিম ফলের একটিই বীজ থাকে। জুন-জুলাই মাসে নিম গাছের ফল পাকে। নিম গাছের ফল তেতো স্বাদের হয়।

ভারতবাংলাদেশ -এর প্রায় সর্বত্রই নিম গাছ জন্মায়। একটি নিম গাছের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ১০ বছর। সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে নিম গাছ ভাল হয়। ১৮ থেকে ৪৬ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ও ২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী।

বর্তমানে নিম গাছের পাতা থেকে প্রসাধনী দ্রব্যও তৈরি হচ্ছে। নিম গাছের রস কৃমিনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর। নিম গাছের কাঠ খুবই শক্ত। নিম কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না, পোকা বাসা বাঁধে না, উইপোকা খেতে পারে না। তাই সাম্প্রতিক কালে নিম কাঠের আসবাবপত্রও তৈরি করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য নিম গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম গাছের এই সব গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গাছকে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষনা করেছে।

নিম গাছের ঔষধি গুণ

ঔষধি হিসেবে নিম গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

খোস পাচড়া বা চুলকানি দূর করতে নিম গাছের উপকারিতা

নিম গাছের পাতা সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করলে খোস পাচড়া নিরাময় করা সম্ভব। নিম গাছের পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি নির্মূল হয়ে যায়। নিম গাছের পাতা ভেজে গুঁড়ো করে সরিষার তেলের সাথে মিষিয়ে চুলকানিতে লাগালে খুব ভালো কাজ হয়। নিম গাছের পাতার সাথে অল্প পরিমাণে কাঁচা হলুদ বেটে আক্রান্ত স্থানে ৭ থেকে ১০ দিন ব্যবহার করলে খোস পাচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়। নিম গাছের পাতা ঘিয়ে ভেজে সেই ঘি ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়।

কৃমিনাশক হিসেবে নিম গাছের উপকারিতা

সাধারণত পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়, তাদের পেটে বড় হয় এবং চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়। বাচ্চাদের পেটের কৃমি নাশ করতে নিমের পাতার জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত শিশুরাই বেশি কৃমির আক্রান্তের শিকার হয়। এই কারণে ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম জল সহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ৩-৪ গ্রাম নিম গাছের ছাল চূর্ণ করে সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালি পেটে সেবন করে গেলে কৃমির উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত এক সপ্তাহ এভাবে সেবন করে যেতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেবন করা উচিত।

ত্বকের যত্নে নিম গাছের পাতার উপকারিতা

বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। তাছাড়া নিম ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করার জন্য নিম গাছের পাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

বাড়িতে তৈরি নিমের বড়ি নিয়মিত খেলেও উপকার হয়। নিমের বড়ি তৈরি করার জন্য নিম গাছের পাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। এরপর হাতে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে বড় ডিশে ফ্যানের বাতাসে একদিন রেখে দিতে হবে। পরদিন রোদে শুকোতে দিতে হবে। নিমের বড়ির একেবারে শুকিয়ে গেলে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

নিম গাছের পাতা সাধারণত ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। মুখমণ্ডলে ব্রণর সংক্রমণ হলেই নিমপাতা থেঁতো করে লাগালে নিশ্চিতভাবেই ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম গাছের পাতার রস নিয়মিত মাথায় লাগালে মাথার ত্বকের চুলকানি ভাব কমে যায়।

নিম গাছের পাতার সাথে কাঁচা হলুদ বেটে নিয়মিত লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায় ও স্কিন টোন ঠিক হয়। অবশ্য হলুদ ব্যবহার করলে রোদের থেকে দূরে থাকায় ভালো। স্নানের জলের সাথে নিমপাতা সিদ্ধ জল মিশিয়ে নিলে যাদের স্কিন ইরিটেশন ও চুলকানি আছে তাদের এর থেকে আরাম হবে, আর গায়ে দুর্গন্ধও কমে যাবে।

দাঁতের রোগ প্রতিরোধে নিম গাছের উপকারিতা

সেই প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের সুস্থতায় নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন আছে। নিম গাছের পাতা ও ছালের গুঁড়ো বা নিম গাছের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হবে, দন্ত রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। নিম গাছের কচি ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত সুস্থ ও সবল থাকে। নিম গাছের পাতার নির্যাস জলে মিশিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের সংক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা দূর হয়।

সর্দি কাশি নিরাময়ে নিম পাতার উপকারিতা

আমাদের শরীরে বুকে কফ জমে গেলে নিম গাছের পাতা বেটে তার ৩০ ফোঁটা রস অল্প পরিমাণ গরম জলে মিশিয়ে দিনে অন্তত ৩-৪ বার পান করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নিম গাছের উপকারিতা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিম গাছ চমৎকার ভাবে কাজ করে। নিম গাছের পাতা রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম গাছের পাতা রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উৎকৃষ্ট করে। ভালো ফল পাওয়ার জন্য নিম গাছের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করা উচিত। ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।

চুলে নিম পাতার উপকারিতা

উজ্জ্বল, সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুলের অধিকারী হতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে খুসকি দূর হয়ে যাবে। সুন্দর চুলের জন্য নিম গাছের পাতার ব্যবহার অদ্বিতীয়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১ দিন নিম গাছের পাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টার মত রাখার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এর ফলে চুল পড়া কমার সাথে সাথে চুল কোমল হবে। ঝলমলে সুন্দর চুলের অধিকারী হতে মধু ও নিমপাতার রস একত্রে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করুন। এক চা চামচ নিমপাতার রস, এক চা চামচ আমলকির রস, এক চা চামচ লেবুর রস, প্রয়োজন অনুযায়ী টকদই মিশিয়ে সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু করলে চুলের খুবই উপকার হয়।

উকুন বিনাশে নিম গাছের উপকারিতা

নিম গাছের পাতা ব্যবহারে মাথায় উকুনের সমস্যা দূর হয়। নিম পাতা বেটে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এবার উকুনের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ালে উকুন পড়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার করে ২ মাস ধরে ব্যবহার করলে উকুন দূর হবে।

খুশকি বিনাশে নিম গাছের উপকারিতা

নিম গাছের ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদানের জন্য খুশকির চিকিৎসায় এটি বেশ কার্যকরী। নিম গাছের উপাদান মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে। চার কাপ জলে এক মুঠো নিমের পাতা দিয়ে যতক্ষণ না জল সবুজ বর্ণ ধারণ করে ততক্ষণ গরম করতে হবে। এই জল ঠান্ডা হলে চুল শ্যাম্পু করার পর এই জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। নিম পাতা সিদ্ধ জল কন্ডিশনারের মত কাজ করবে। এভাবে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যেই খুশকি দূর হয়।

ওজন কমাতে নিম গাছের উপকারিতা

ওজন কমাতে চাইলে বিশেষ করে পেটের চর্বি তাহলে নিম গাছের ফুলের জুস খেতে হবে। নিম গাছের ফুল সাধারণত মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে তার সাথে এক চামচ মধু ও আধা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করলে নিশ্চিত ভাবে উপকার পাওয়া যাবে।

রক্ত পরিষ্কার করতে নিম গাছের উপকারিতা

রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে নিমপাতার রস। তাছাড়া রক্তচলাচল বৃদ্ধি করে হৃৎপিণ্ডের গতিও স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিম গাছের জুড়ি মেলা ভার।

ঠান্ডাজনিত বুকের ব্যথা দূর করতে নিম গাছের উপকারিতা

অনেক সময় সর্দি থেকে বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এর জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম জলে মিশিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমে যায়। তবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ঔষধটি ব্যবহার করা নিষেধ।

পোকা-মাকড়ের কামড় থেকে নিরাময়ে নিম গাছের উপকারিতা

মৌমাছি বা কোনো পোকা মাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোঁটালে নিম গাছের মূলের ছাল অথবা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা দূর ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জন্ডিস নিরাময়ে নিম গাছের উপকারিতা

জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিম পাতার রস খালি পেটে খাওয়া বেশ উপকারী। ২৫ থেকে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস একটু মধুর সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ হয়। জন্ডিস হলে এক চামচ নিম পাতার রসের সাথে একটু মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়া উচিত। পুরোপুরি ভাবে জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে এক সপ্তাহ এভাবে সেবন করে যেতে হবে।

ভাইরাস রোগ প্রতিরোধে নিম গাছের উপকারিতা

ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাল রোগ নিরাময়ে নিম গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়। নিমপাতার রস ভাইরাস নির্মূল করতে সক্ষম। পূর্বে চিকেন পক্স, হাম ও অন্যান্য চর্মরোগ হলে নিমপাতা বেটে লাগানো হত। তাছাড়া নিমপাতা জলে সিদ্ধ করে সেই জল দিয়ে স্নান করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া, চুলকানি ও অন্যান্য সমস্যা দূর হয়।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নিম গাছের উপকারিতা

গ্যাডোনিন উপাদান সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিম ম্যালেরিয়ার অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া নিমপাতা সিদ্ধ জল শীতল করে স্প্রে বোতলে রাখতে হবে। এই ঠান্ডা শীতল জল প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব অনেক কমে যাবে।

বাত নিরাময়ে নিম গাছের উপকারিতা

নিম গাছের পাতা, নিম গাছের বীজ ও নিম গাছের বাকল বাতের ব্যথা নিরাময়ে অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজ করলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

চোখের সমস্যা দূরীকরণে নিম গাছের উপকারিতা

চোখে চুলকানি হলে বা সাধারণ কোনো সমস্যা হলে নিমপাতা জলে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে নিয়ে চোখে সেই জলের ঝাপটা দিতে হবে। এর ফলে চোখের আরামবোধ হবে।

ব্রণ দূর করতে নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার গুঁড়ো জলে মিশিয়ে মুখ ধুলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এর ফলে ব্রণ দূর হয় এবং এই ব্রণ থেকে তৈরি হওয়া জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হয়। ব্রণ দূর করার এটাই বেশ কার্যকর পদ্ধতি।

ছত্রাকের ইনফেকশন দূর করতে নিম গাছের উপকারিতা

যদি কারো পায়ে কোনো ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকে নিম পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। নিম গাছের নিম্বিডল ও জেডুনিন উপাদান ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে সক্ষম। নিম পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ভালো ফল লাভ করা যায়। তাছাড়া আক্রান্ত স্থানে দিনে তিনবার করে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল লাগালেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ক্ষত নিরাময়ে নিম গাছের উপকারিতা

নিম গাছের পাতা ক্ষত নিরাময়েও বেশ উপকারী। নিমপাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখলে ক্ষত নিরাময় হয়। নিম পাতার অ্যান্টিমাক্রোবাইয়াল উপাদান ক্ষত নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে।

অজীর্ণ দূরীকরণে নিম পাতার উপকারিতা

অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ হলে, পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস, ৪/১ কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

অ্যালার্জির সমস্যা দূরীকরণে নিম গাছের উপকারিতা

শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা হলে নিম পাতা জলে ফুটিয়ে স্নান করলে উপকার হয়। তাছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে বেটে শরীরে লাগাতে হবে। অ্যালার্জি নিশ্চিত ভাবে কমবেই।

একজিমা নিরাময়ে নিম গাছের উপকারিতা

শরীরে একজিমা, ফোড়া অথবা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা নিরাময়ে নিম পাতা খুবই কার্যকর। ত্বকের যে সব স্থানে এই ধরনের সমস্যা হয় সেখানে নিমপাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

নিম গাছের বিভিন্ন অংশের উপকারিতা

পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল, বীজ এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়। বিশ্ব জুড়ে নিম গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও ছাল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে নিমের কদর রয়েছে। ঔষধি গাছ নিমের বিভিন্ন অংশ কোনো না কোনো রোগ বা সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন –

পাতার উপকারিতা

ঔষধি নিম গাছের পাতা যে উপকারী তা আমরা কম বেশি সবাই জানি। প্রায় ৪ হাজার বছরের বেশী সময় ধরে উপমহাদেশের আয়ুবের্দ চিকিৎসায় নিম গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিমপাতার গুণে মুগ্ধ হয়ে পশ্চিমা সভ্যতার মানুষেরাও আজকাল ঝুঁকে পড়ছে ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়। নিম পাতার মধ্যে অসাধারণ সব গুণ বর্তমান। নিম পাতার ব্যবহারে চুলকানি, ব্রণ, ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।

নিম গাছের ছালের উপকারিতা

এই নিম গাছের ছালে ইমিউনোমড্যুলেটরি পলিস্যাকারাইড কমপাউন্ড থাকে। এই উপাদান মানব শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে৷ এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়৷

নিম তেলের উপকারিতা

এই নিম গাছের উপাদানে তৈরি লাল রঙের তেলের চড়া গন্ধ৷ এই তেল ট্রাইগ্লিসারাইড, ট্রাইটারপিনয়েড যৌগ উপাদান সমৃদ্ধ৷ এছাড়াও এই তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড আছে৷ শরীরে চামড়ার প্রদাহে নিম তেল বেশ উপকারী৷ এই নিম তেল গর্ভনিরোধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে ৷

নিম চায়ের উপকারিতা

কাপের একের চার ভাগ জলে তাজা নিমপাতার উপর ফোটানো গরম জল ঢেলে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর জল ছেঁকে ধীরে ধীরে পান করা বেশ উপকারী৷ বলা হয় যে এর ফলে জ্বর কমবে, রক্তে সুগার কমবে। এছাড়াও ব্লাডারের সমস্যা বা রিউম্যাটিজম, জন্ডিস, পেটে কৃমি, ম্যালেরিয়া, চামড়ার অসুখ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে৷ নিম পাতার র কড়া চা ক্ষত বা চোট আঘাত সারাতেও কাজে লাগানো হয়৷

নিম দাঁতনের উপকারিতা

নরম নিম ডালের দাঁতন গ্রাম্য এলাকায় এখনও ব্যবহৃত হয়। এই নিম দাঁতন ব্যবহারে মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকে৷ তাছাড়া অসুখ ও সংক্রমণ থেকেও মুক্ত রাখতে সাহায্য করে ৷

উপসংহার :- নিম গাছের প্রায় সমস্ত অংশেরই কোনো না কোনো রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে। তবে, নিমের অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনি এবং লিভারের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে নিমের কারণে অ্যালার্জিও হতে পারে। অবশ্য নিমের পরিমিত ও সুষ্ঠু ব্যবহারে সার্বিক স্বাস্থ্যের উপকার হয় এবং শরীর বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পায়।

আরোও পড়ুন

(FAQ) নিম পাতার উপকারিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন ও উত্তর

১. নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে কি উপকার হয়?

উত্তর:- নিয়মিত নিম পাতার রস খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি করে, ক্লান্তি দূর করে, কাশি কমাতে পারে, যে কোনো ক্ষত তাড়াতাড়ি নিরাময় করতে সাহায্য করে, ইউটিআই বা মূত্রনালীর সংক্রমণ কমায়, কৃমির সমস্যা দূর করে। বমি বমি ভাব কিংবা বমির উপশম করে, প্রদাহ কমাতেও নিম পাতার রস দারুণ কাজ করে। শুধু তাই নয়, নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয়।

২. নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে সুগার কমে কি?

উত্তর:- হ্যাঁ, নিম পাতার রস প্রতিদিন খেলে রক্তের সুগার লেভেল কমতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম পাতার রস রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচের সঙ্গে ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে ডায়াবেটিস কমাতেও সাহায্য করে।

৩. রূপচর্চায় নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি উপকার হয়?

উত্তর:- (a) নিম পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান থাকায় এটি ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে সক্ষম হয়।
(b) ব্রণ দূর করে।
(c) চুলের সমস্যা দূর করতে।

Leave a Comment