ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

একজন ফরাসি কূটনীতিক ও প্রকৌশলী ছিলেন ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস (Ferdinand de Lesseps), যিনি সুয়েজ খালের নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৮০৫ সালের ১৯ নভেম্বর ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯৪ সালের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। লেসেপস সুয়েজ খাল প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটান। তবে, তিনি পানামা খাল প্রকল্পের ব্যর্থতার জন্যও পরিচিত। তার নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রকৌশল দক্ষতা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

Table of Contents

প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

ঐতিহাসিক চরিত্রফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস
পুরো নামফার্দিনান্দ মারি ভিসকাউন্ট দ্য লেসেপস
জন্ম১৯ নভেম্বর ১৮০৫ খ্রি
জন্মস্থানভার্সাই, ফ্রান্স
পেশাকূটনীতিক ও প্রকৌশলী
অবদানসুয়েজ খাল নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা
উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসুয়েজ খাল (১৮৫৯-৬৯) ও পানামা খাল (ব্যর্থ)
পুরস্কার ও সম্মাননাবিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও ফরাসি লিজিয়ন অব অনার
মৃত্যু৭ ডিসেম্বর ১৮৯৪ খ্রি

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

ভূমিকা :- মানব সভ্যতার আগ্রগতির ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিকীর্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে সুয়েজ খাল। এই খাল খননের ফলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্যে যে যোগাযোগ তৈরি হয়, তা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মধ্যবর্তী কয়েক হাজার মাইল দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছিল। পুরাণ বা মহাকাব্যের অমিত শক্তিধর নায়কদের মতো দূরকে নিকট করবার এমন সুসাধ্য কর্মটি সাধিত হয়েছিল কোনও কল্পনাপ্রসূত বীরপুরুষের বাহুবলে নয়। গভীর আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প, সর্বোপরি অসাধারণ বুদ্ধি বলে বলীয়ান এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ ফার্দিনাদ দ্য লেসেপস সুয়েজখালের সৃষ্টি করে পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেছেন।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর জন্ম

উনবিংশ শতাব্দীর অনন্যসাধারণ প্রযুক্তিবিদ ফার্দিনান্দ মারিয়া দ্য লেসেপস-এর জন্ম ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ভার্সাই শহরের এক রাজভক্ত পরিবারে। তাঁর পূর্বসূরীদের সকলেই ছিলেন রাজকর্মচারী। তাঁরা যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রতিপালন করে কীর্তিমান হয়েছিলেন।

ব্যক্তিজীবনে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

ব্যক্তিগত জীবনে লেসেপস ছিলেন সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ। তাঁর সম্মানবোধ, ব্যক্তিত্ব ও মার্জিত ব্যবহার সকলকে মুগ্ধ করত। সমস্ত মানবিক গুণের সমাবেশে তাঁর চরিত্র ছিল মাধুর্যমন্ডিত।

লিসবনে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর কর্মজীবন

শিক্ষাপর্ব শেষ করে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে লেসেপসও ফ্রান্সের ভাইস-কনসাল পদে নিযুক্ত হলেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় লিসবনে। সেখানে কিছুকাল কাজ করার পরে তাঁকে একই পদে বদলি করা হয় আলেকজান্দ্রিয়ায়।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর মাথায় সুয়েজ খালের পরিকল্পনা

নতুন কর্মস্থলে যাওয়ার পথে জাহাজে আকস্মিক ভাবেই তিনি সুয়েজখালের পরিকল্পনা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন। দীর্ঘ যাত্রার একঘেয়েমী দূর করার জন্য একটি বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছিলেন অলসভাবে। এক জায়গায় এসে থমকে গেলেন। সুয়েজ অন্তরীপকে খনন করে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের মধ্যে যোগাযোগ ঘটানোর এক পরিকল্পনার উল্লেখ ছিল সেখানে।

প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর সংকল্প

১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে মিশর অভিযান কালে সম্রাট নেপোলিয়ন-এর নির্দেশে লাপের নামে এক প্রযুক্তিবিদ এই পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন। রাষ্ট্রনীতি তাঁর চিন্তা ও আলোচনার বিষয় হলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়েও লেসেপস উৎসাহী ছিলেন। সেই সূত্রেই সুয়েজ খালের পরিকল্পনার বিষয়টি তাঁকে আগ্রহী করে তুলল এবং তিনি এই পরিকল্পনার বাস্তবরূপ দেবার সংকল্প গ্রহণ করলেন।

মিশরের শাসনকর্তার সাথে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর বন্ধুত্ব

সুগভীর অন্তর্দৃষ্টির বলে তিনি অনুধাবন করলেন, অদূর ভবিষ্যতে সংকল্প রূপায়নের সুযোগ তিনি অবশ্যই পাবেন। সেই সুযোগ না আসা পর্যন্ত তাঁকে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে কর্মসূত্রেই এই সময়ে তাঁর সঙ্গে মিশরের শাসনকর্তা মেহমেত আলির পুত্র মহম্মদ সৈয়দ পাশার পরিচয় হল। ক্রমে সেই পরিচয় গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়।

কুড়ি বছর অতিক্রান্ত

লেসেপসের অজ্ঞাত ছিল না যে সুয়েজ খাল প্রকল্প রূপ দিতে পারলে বিভিন্ন দিক থেকেই মিশর দেশ উপকৃত হবে। কিন্তু বিষয়টিকে বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে সময়ের দরকার। তাই সেই সময়ের অপেক্ষাতেই তিনি দিন গুণতে লাগলেন। আশায় আশায় কাল গুণে একটি একটি করে বছর অতিবাহিত হতে লাগল। এই ভাবে অতিক্রান্ত হল কুড়িটি বছর।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর চাকরিতে ইস্তফা

তারপর একদিন অপ্রত্যাশিত ভাবেই উপস্থিত হল সেই সুযোগ। কিন্তু আপাতঃদৃষ্টিতে তা মোটেই সুখপ্রদ ছিল না। ইতিমধ্যে কায়রোতে লেসেপস কনসাল পদে উন্নীত হয়েছেন। উজ্জ্বল কর্মজীবন। কিন্তু স্বদেশের রাজনৈতিক ঝঞ্ঝার ঝাপটা সহসা তাঁকেও বিধ্বস্ত করল। দেশে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় চক্রান্তের শিকার হয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিতে হল লেসেপসকে। চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়ে এবারে তিনি দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন রূপায়নের চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করলেন।

মিশরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন

ইতিমধ্যে এক আকস্মিক যোগাযোগে সুযোগও এসে গেল। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ তখন তিনি দেশের বাড়িতে, খবরের কাগজে দেখলেন, মিশরেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর বন্ধু মহম্মদ সৈয়দ পাশা শাসন ক্ষমতা লাভ করেছেন। এই সংবাদে আশায় বুক বাঁধলেন লেসেপস। দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে যে স্বপ্ন তিনি দেখে চলেছেন এবার হয়তো তা বাস্তবায়িত করার সুযোগ পাবেন।

আলেকজান্দ্রিয়ায় ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

সৌভাগ্যক্রমে কিছু দিন পরেই মহম্মদ সৈয়দ এক চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে আলেজান্দ্রিয়ায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। এর পর আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না তিনি। সেই বছরই ৭ নভেম্বর আলেকজান্দ্রিয়া পৌঁছলেন। মিশরে নতুন শাসনকর্তা মহম্মদ সৈয়দ পুরনো বন্ধুকে সাদরে বরণ করে প্রাসাদেই তাঁর বসবাসের বন্দোবস্ত করলেন।

মিশরের সম্মতি লাভে সক্ষম ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

সুয়েজ খালের পরিকল্পনা দীঘদিন মনে পোষণ করছেন লেসেপস। এবারে একদিন সুযোগ মতো তাঁর প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। কূটনৈতিক কাজে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন তিনি। নিজের বক্তব্য পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরবার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর। ব্যক্তিত্বের আকর্ষণীয় প্রভাব এ বিষয়ে হতো তাঁর প্রধান সহায়ক। সুয়েজখাল প্রকল্প রূপায়ণ যে সম্ভব এবং এর ফলে মিশর নানা দিক থেকেই উপকৃত হবে পাশা তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারলেন। এরপর এই প্রকল্পটিতে পাশার সম্মতি পেতে বিলম্ব হল না। এই ভাবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পরিকল্পনা রূপায়নের প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হলেন লেসেপস।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর কাজে ইংরেজদের বাধা

কিন্তু কাজে নামার আগেই অপ্রত্যাশিত বাধা এল ইংরাজ সরকারের কাছ থেকে। সেই সময় ইংল্যান্ড-এর প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন পামারস্টোন। তিনি এবং তাঁর মন্ত্রিসভা সুয়েজখাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করলেন। এই খাল খননের প্রস্তাবকে তাঁরা পূর্ব গোলার্ধের সমুদ্র পথে ইংল্যান্ডের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের অবাঞ্ছিত চক্রান্ত বলেই বিবেচনা করছেন। রাজনৈতিক ভাবেই তাঁরা এই কাজে বাধা দেবার সব রকম চেষ্টা করবেন। আশ্চর্য এই যে, দুঁদে রাজনীতিক পামারস্টোনের প্রসারিত দূরদৃষ্টিতে সেদিন ঘুণাক্ষরেও এমন আভাস ধরা পড়েনি যে, দুই দশকের মধ্যেই সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ ইংল্যান্ডের রাজক্ষমতার অধীন হয়ে যাবে।

জনসমর্থন লাভে সক্ষম ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

ইংল্যান্ডের বিরোধিতার মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে লেসেপস জনমত গঠনের চেষ্টায় ব্রতী হলেন। তিনি লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে ঘুরে সুয়েজ খাল তৈরির সমর্থনে বক্তৃতা করতে লাগলেন। তাঁর পরিচ্ছন্ন ও স্পষ্ট ব্যাখ্যায় ইংল্যান্ডের সাধারণ মতামত প্রভাবিত হল। মোটামুটি ভাবে জনসমর্থন লাভ করতে পারলেও ব্রিটিশ সরকার কিন্তু প্রকল্পটি বানচাল করার চেষ্টা করে যেতে লাগল।

কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়লেন ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

মিশরের সার্বভৌম শাসনকর্তা তুরস্ক-এর সুলতানের অনুমতি না পেলে এই প্রকল্প রূপায়ন সম্ভবপর ছিল না। কূটকৌশলী ব্রিটিশরাজ সুলতানকে প্রভাবিত করার জন্য লর্ড স্ট্যাটফোর্ড দ্য রেডক্লিফকে অনুরোধ করল। রেডক্লিফ ছিলেন সুলতানের অতি ঘনিষ্ঠ। অবিলম্বেই তিনি মাঠে নেমে পড়লেন। লেসেপসও বসে থাকেন নি। মিশরের পাশার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হলেন এবং সুয়েজ খাল খননের প্রয়োজনীয় অনুমতি তিনি পেয়ে গেলেন। এর পর কর্মক্ষেত্রে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন লেসেপস।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর হতে প্রকল্পের কাজ শুরু

প্রথমে তিনি প্যারিসে একটি কোম্পানি গঠন করলেন। তারপর লিনাঁ বে ও মেটগেল বে নামে দুই ফরাসী ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগিতায় পোর্ট সৈয়দে সুয়েজ প্রকল্পের কাজ শুরু করলেন। সময়টা ছিল ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল।

প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর প্রাণপন চেষ্টা

ইতিহাসের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিকর্ম সুয়েজ খাল খনন। এই সুবিশাল কর্মকান্ডে দৈনন্দিন সমস্যার অন্ত ছিল না। লেসেপস তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন যাতে কোনো অবাঞ্ছিত বাধা কাজের অগ্রগতিকে বিঘ্নিত না করে। কিন্তু তখনও ব্রিটিশ সরকারের চক্রান্ত অব্যাহত ছিল। নানা উপায়ে তারা প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করতে লাগল।

সুয়েজ প্রকল্পে ইংল্যান্ডের বাধা

  • (১) ইতিমধ্যে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে লেসেপসের বন্ধু মহম্মদ সৈয়দ অকস্মাৎ মারা গেলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন মহম্মদ ইসমাহল পাশা। তিনি প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখলেও ততটা উৎসাহী ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষ বাধা এল ইংল্যান্ডের মাটি থেকেই।
  • (২) বাধ্যতামূলক শ্রমিক নিয়োগের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধ দেখা দিল সেখানে। লাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত ইংরাজদের কাপড়কলগুলিতে তুলোর অভাবে সঙ্কট উপস্থিত হয়েছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের ফলেই বস্ত্র শিল্পে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল।
  • (৩) ইংরাজরা মিল শ্রমিকদের ব্যাপকভাবে তুলো উৎপাদনের কাজে নিয়োগ করতে শুরু করেছিল। এর ফলে সুয়েজ প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কাজ শুরুর গোড়ার দিকে নিয়োগ করা হয়েছিল আট হাজার শ্রমিক।
  • (৪) মধ্যেই সেই সংখ্যা কুড়ি ছাড়িয়ে চল্লিশ হাজারে দাঁড়াল। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়াল আশি হাজার। এদের অধিকাংশই ছিল মিশরীয়। শর্ত অনুযায়ী এদের কাজে যোগ দেওয়াটা ছিল বাধ্যতামূলক।
  • (৫) কিন্তু ইংল্যান্ডে বাধ্যতামূলক শ্রমিক নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ উপস্থিত হলে, প্রকল্পের শ্রমিকদের মধ্যেও তার প্রভাব সঞ্চারিত হল। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতির ফলে সুয়েজ খাল কাটার কাজ দু বছর বন্ধ রাখতে হল।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর সুয়েজ খাল প্রকল্প সম্পূর্ণ

লেসেপস কিন্তু বাধার কাছে হার মানলেন না। অদম্য ছিল তাঁর সাহস ও মনোবল। তিনি যন্ত্রের সাহায্যে খাল কাটার কাজ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। এখনকার মতো যান্ত্রিক প্রযুক্তি সেকালে এত উন্নত ছিল না। সেদিক থেকে চরম সংকটের মুখে লেসেপসের গৃহীত সিদ্ধান্ত ছিল অতিমানবীয়। যাইহোক বাধার পর বাধা অতিক্রম করে দশ বছরের সুকঠিন পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজখাল খননের কাজ সম্পূর্ণ হল।

সুয়েজ খাল উদ্বোধন

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ণাঢ্য উৎসব-এর আয়োজন হল খাল উদ্বোধনের জন্য। দেশ বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিমন্ত্রিত হলেন। এই উপলক্ষে মিশরে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রাশিয়ার যুবরাজ, অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রমুখ। প্রধান সম্মানীয় অতিথিরূপে উপস্থিত হলেন তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজিন। বন্দরে উপস্থিত ছিল সুসজ্জিত রাজকীয় নৌবহর। সেই সঙ্গে আমন্ত্রিত দেশগুলির রণতরী। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর মুহুর্মুহু তোপধ্বনি ও অসংখ্য কামানের গর্জনের মধ্যে দিয়ে মিশরের শাসনকর্তা ইসমাইল পাশা সরকারি ভাবে নবনির্মিত সুয়েজ খালের জলপথ উদ্‌ঘাটন করলেন।

অবিশ্বাস্য প্রকল্পের সার্থক রূপকার ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

পরদিন সম্রাজ্ঞী ইউজিনকে নিয়ে একখানি জাহাজ পেছনে ৬০ টি জাহাজের বহর নিয়ে নির্বিঘ্নে খালপথ অতিক্রম করে প্রথম সুয়েজ যাত্রা সম্পূর্ণ করল। পৃথিবীর ইতিহাসে আধুনিক প্রযুক্তি কৌশলের সার্থক দৃষ্টান্ত হিসাবে এই ঘটনা চিরস্মররণীয় হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে অমরত্ব লাভ করলেন এই অবিশ্বাস্য প্রকল্পের সার্থক রূপকার হিসাবে ফার্দিনান্দ মাবিয়া দ্য লেসেপস।

ভূমধ্য সাগর ও লোহিত সাগরের ব্যবধান ঘুচল

সুয়েজ খালের সংযুক্তির মাধ্যমে ভূমধ্য সাগর ও লোহিত সাগরের ব্যবধান ঘুচল চিরকালের মতো, হাজার হাজার মাইল দূরত্ব ঘুচিয়ে নিকটতর হল পূর্ব ও পশ্চিম দুই গোলার্ধ। উল্লেখ করা দরকার যে সুয়েজ খাল নির্মিত হওয়ায় ভারত-এর মুম্বই বন্দর ও ইংল্যান্ডের দূরত্ব পাঁচ হাজার মাইল কমে গেল।

দেশে দেশে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর জয় জয়কার

এই সুয়েজ খালের সার্থক রূপায়ন লেসেপসকে সম্মান যশ ও খ্যাতির শিখরে প্রতিষ্ঠিত করল। দেশে দেশে তাঁর জয় জয়কার ঘোষণা হতে লাগল। গর্বে আনন্দে অভিভূত আপ্লুত হলেন লেসেপস বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সম্মান ও শ্রদ্ধালাভ করে।

ফ্রান্সে ফিরে এলেন ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

সুয়েজখালের কাজ শেষ হলে দিগ্বিজয়ী বীরের সম্মান প্রশস্তি ও অভিনন্দনের মধ্যে ফ্রান্সে ফিরে গেলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যদেবতার কুটিল ভূকুটি অচিরেই যে তাঁর খ্যাতির সৌধ চূর্ণবিচূর্ণ করার আয়োজন করেছে, তা যদি তিনি জানতে পারতেন, তাহলে হয়তো জীবনের শেষ দিনগুলো তাঁর অখ্যাতির কলঙ্কে বিষময় হত না।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর হাতে পানামা প্রকল্প

প্যারিসের জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি পানামা খাল খননের প্রকল্প হাতে নিল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রকল্প রূপায়নের পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল লেসেপসের হাতে। লেসেপস পূর্ব অভিজ্ঞতার নিরিখে নিঃসন্দেহ ছিলেন যে, এবারেও তিনি সফল হবেন। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে তাঁকে মধ্যমণি করে এই প্রকল্পের জন্য কোম্পানি গঠন করা হল। গোটা ফ্রান্সের হাজার হাজার বিনিয়োগকারী এই কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে এল।

পানামা প্রকল্পে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর ব্যর্থতা

  • (১) টানা দু বছরের প্রস্তুতিপর্ব শেষ হলে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে পানামা খাল খননের কাজ শুরু হল। কাজ চলতে লাগল পূর্ণ উদ্যমে। কিন্তু এবারে লেসেপসের ভাগ্য ছিল বিরূপ। টানা আট বছর কাজের পরে সাফল্য তো দূরের কথা সমস্ত চেষ্টাই বানচাল হয়ে গেল।
  • (২) এই যাত্রায় লেসেপস যাদের নিয়ে কাজে নেমেছিলেন এই দীর্ঘ ব্যয়বহুল প্রকল্পটিকে তারা অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে রূপান্তরিত করেছিল। বিশেষ করে প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের অবাধ তহবিল তছরূপের ঘটনা গোটা প্রকল্পটির ভরাডুবি ঘটিয়েছিল।
  • (৩) প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামের জন্য লাগামহীনভাবে কোম্পানির অর্থ ব্যয় করা হত, তার বেশির ভাগটাই যেত জলে। একবার তো অপ্রয়োজনীয় জেনেও দশ হাজার বরফ সাফাইয়ের বেলচা কেনা হয়েছিল।
  • (৪) ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য কর্মীদের কাজে কোনও গাফিলতি ছিল না। তারা সকলেই প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করে গেছেন। কিন্তু সকলের সব পরিশ্রমই ব্যর্থ করে দিয়ে ছিল প্রশাসনিক কর্তারা।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর ভাগ্যের পরিহাস

এই প্রকল্পের ব্যর্থতাকে লেসেপসের ভাগ্যের পরিহাস ছাড়া আর কী বলা যায়। ম্যালেরিয়া, পীতজ্বর ইত্যাদি নানা রকম রোগের প্রকোপ আকস্মিক ভাবে কাজের জায়গাতে এতটাই বেড়ে উঠেছিল যে হাজার হাজার কর্মী অকালে প্রাণ হারিয়ে প্রকল্পের কাজে বার বার বাধার সৃষ্টি হল।

সঠিক খবর পেতেন না ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস

এককথায় বলা চলে নজিরবিহীন দায়িত্বহীনতা, অর্থলোলুপতা, শঠতা, নোংরা রোগের প্রকোপ সর্বোপরি নৈতিক নীচতা পানামা প্রকল্পটিকে দুঃখজনক ভাবে বানচাল করে দিয়েছিল। পানামায় কাজের নামে যা চলছিল সে সম্পর্কে সম্ভবত লেসেপস সঠিক ভাবে খবরাখবর পেতেন না। কেননা, বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে প্যারিসে থেকে অর্থনৈতিক দিকটি সামাল দিতে হত। পানামার সমস্ত কিছু খুঁটিয়ে দেখা বা খবর নেবার সময় এক রকম পেতেন না বললেই চলে।

পানামা প্রকল্পে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর ত্রুটি

তবে পরিকল্পনার একটি দিকে তাঁর সিদ্ধান্তের ত্রুটিও ছিল মারাত্মক। পানামা খাল খননের পথে প্রধান বাধা ছিল কুলেব্রা ও কাজরেম নামে দুটি পাহাড় ও নদী। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য লকগেট তৈরি অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সুয়েজের সাফল্যে লেসেপস এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি তাঁর ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেন নি। শেষ পর্যন্ত ‘লক’ তৈরির প্রয়োজন বুঝতে পেরেও তিনি নিজের মত বদল করেন নি। পরে অবশ্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, এই ভুল সিদ্ধান্তের ফলেই ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে এবং চিরদিনের জন্য তাঁর সম্মান ধুলোয় লুটিয়েছিল।

ব্যর্থ পানামা প্রকল্পে আর্থিক তছরুপ

১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকল্পের কাজ যখন বন্ধ হয়ে গেল তখন দেনার দায়ে কোম্পানি দেউলিয়া। দেনার পরিরমাণ ছিল আট কোটি পাউন্ড। লেসেপসের সুয়েজ প্রকল্পের সাফল্যের আকর্ষণে যত বিনিয়োগকারী, তাদের সংখ্যা অন্তত কয়েক হাজার, মোটা লাভের আশায় পানামা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেছিল, রাতারাতি পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছিল তারা। পরে দেখা যায়, যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খাল কাটার কাজে ব্যয় হয়েছিল, তার দুই তৃতীয়াংশই তছরূপ হয়েছে। প্রকৃত কাজে ব্যয় হয়েছিল মাত্র এক তৃতীয়াংশ। দুঃখের বিষয় এটাই যে এমন পুকুর চুরির ঘটনার নজির সারা পৃথিবীতে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ

এই ব্যর্থ প্রকল্পের জন্য ফরাসী সরকারকে রাজনৈতিক ভাবেই বিপর্যস্ত হতে হয়েছিল। বিরোধীদলের সদস্যরা সরকারী নীতি ও অর্থ অপচয়ের ঘটনাটিকে দেশবাসীর সামনে এমন ভাবে তুলে ধরতে লাগল যে অপদস্থ সরকার শেষ পর্যন্ত প্রকল্প বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধ্য হলেন। লেসেপস, তাঁর পুত্র এবং সহকারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করানো হল। আদালতের বিচারে অর্থ জরিমানা সহ পাঁচ বছরের জন্য কারাবাসের দন্ড দেওয়া হল লেসেপসকে। তবে সৌভাগ্য এটুকু যে তাঁকে কারাবাস ভোগ করতে হয় নি শেষ পর্যন্ত। নানা কারণে দন্ডাদেশ কার্যকর করা স্থাগিত রাখা হয়েছিল।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর পথ ধরেই পানামা খাল খনন

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সুয়েজ খালের মতো পানামা প্রকল্পেও প্রতিভার চমক রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন লেসেপস। পানামায় যতটুকু কাজ তিনি করেছিলেন, গুণগত বিচারে তা ছিল অসাধারণ। পরবর্তীকালে আমেরিকান প্রযুক্তিবিদদের চেষ্টায় পানামা প্রকল্প সার্থক ভাবে রূপায়িত হয়েছিল। আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, লেসেপসের পথ ধরেই তাঁরা এক রকম নির্বিঘ্নে সফল হতে পেরেছেন এবং মুক্তকণ্ঠে তাঁরা লেসেপসের প্রায়োগিক প্রতিভার প্রশংসা করেছেন।

অপযশের বোঝা মাথায় নিয়ে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর পৃথিবী থেকে বিদায়

দীর্ঘ কঠিন প্রতিকূলতার বাধা অতিক্রম করে তিনি মানব জাতির দীর্ঘদিনের এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। এই অমিতকীর্তি তাঁকে অসামান্য যশ ও খ্যাতির অধিকারী করেছিল। কিন্তু নিয়তির এমনই নিষ্ঠুর পরিহাস যে পৃথিবীজোড়া যশ গৌরব লাভ করেও চূড়ান্ত অখ্যাতি ও অপযশের বোঝা মাথায় নিয়ে তাঁকে একদিন তাঁর প্রিয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। সুয়েজ খালের চমকপ্রদ ও অবিশ্বাস্য সাফল্যের পর পানামা খাল খননের ব্যর্থতা তাঁর সমস্ত কৃতিত্বকে অপসৃত করে মাথায় চাপিয়ে দিয়েছিল কলঙ্কের বোঝা।

ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর মৃত্যু

ইতিমধ্যে ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে চূড়ান্ত অপমানের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছিল।

উপসংহার :- লেসেপসের জীবনের স্বপ্ন ছিল একটাই-সুয়েজ খাল নির্মাণ করবেন এবং সেই স্বপ্ন তিনি সার্থক ভাবে রূপায়ন করতে পেরেছিলেন। সুয়েজ প্রকল্পের কাজে প্যারিসের ধনী ব্যাঙ্কারদের সঙ্গে কোম্পানি গঠন করে অনায়াসেই পাহাড় প্রমাণ অর্থের মালিক হয়ে যাবার সুযোগ তাঁর ছিল। কিন্তু তেমন হীন আত্মস্বার্থ চিন্তার কখনো তাঁর মনে উদয় হয় নি। দশচক্রে চরম ব্যর্থতার গ্লানি তাঁর নামে কলঙ্ক লেপন করলেও মহাকালের বিচারে অসামান্য প্রতিভাধর কর্মযোগী হিসাবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে লেসেপসের নাম চির অমরত্ব লাভ করেছে।

(FAQ) প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১। ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস কেন বিখ্যাত?

তিনি সুয়েজ খালের সফল নির্মাণের জন্য বিখ্যাত, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সরাসরি নৌপথ তৈরি করে।

২। সুয়েজ খালের প্রকল্পটি কত বছর সময় নিয়েছিল?

সুয়েজ খালের নির্মাণ প্রকল্পটি ১৮৫৯ সালে শুরু হয় এবং ১৮৬৯ সালে শেষ হয়, মোট ১০ বছর সময় লেগেছিল।

৩। পানামা খাল প্রকল্পে ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস-এর ব্যর্থতার কারণ কী?

প্রকল্পটি আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের কারণে ব্যর্থ হয়। এছাড়া দুর্নীতি ও তহবিল ব্যবস্থাপনার অভাবও এর ব্যর্থতার কারণ।

৪। ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপসের মূল অবদান কী?

তার মূল অবদান হলো সুয়েজ খালের নির্মাণ, যা বাণিজ্য ও নৌপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

৫। ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস কোন কোন সম্মাননা পেয়েছেন?

তিনি ফরাসি লিজিয়ন অব অনার সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন।

৬। ফার্দিনান্দ দ্য লেসেপস কবে এবং কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?

তিনি ৭ ডিসেম্বর ১৮৯৪ সালে ফ্রান্সের গিলহোরনে মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Comment