রাষ্ট্রকূট শাসন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রাজার ক্ষমতা, প্রশাসন ব্যবস্থা, সামন্ত শাসিত অঞ্চল, প্রদেশ শাসন, গ্ৰামীণ শাসন ও রাজস্ব নীতি সম্পর্কে জানবো।
রাষ্ট্রকূট শাসন ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | রাষ্ট্রকূট শাসন ব্যবস্থা |
বংশ | রাষ্ট্রকূট বংশ |
প্রতিষ্ঠাতা | দন্তিদুর্গ |
শ্রেষ্ঠ রাজা | তৃতীয় গোবিন্দ |
শেষ রাজা | দ্বিতীয় কর্ক |
ভূমিকা :- ভারত-এর বিন্ধ্য অঞ্চল থেকে তুঙ্গভদ্রা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য বলা হয়। এই দাক্ষিণাত্যের শক্তি গুলির মধ্যে রাষ্ট্রকূট শক্তি ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রকূট শাসনব্যবস্থায় রাজার ক্ষমতা
- (১) রাষ্ট্রকূট শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা। শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রে, সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে তিনি থাকতেন। পরমেশ্বর, পরম ভট্টারক, মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি উপাধি রাষ্ট্রকূট রাজারা প্রায়শই ব্যবহার করতেন।
- (২) রাজা প্রভূত আড়ম্বরসহ তাঁর প্রাসাদে বাস করতেন এবং দরবারে খুবই জাকজমক ও আদব-কায়দা চালু করতেন। তিনি দামী পোষাক পরে, অলঙ্কার ধারণ করে, যুবতী নারীবেষ্টিত হয়ে সিংহাসনে বসতেন। মন্ত্রী, সভাপদ ও কর্মচারীরা দরবারে সর্বদা হাজির থাকত।
রাষ্ট্রকূট প্রশাসন ব্যবস্থা
- (১) রাজপদ বংশানুক্রমিক ছিল এবং সাধারণত রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্রই পিতার সিংহাসনে বসতেন। তাকে যুবরাজ বলা হত। কখনও কখনও কনিষ্ঠ পুত্রদের উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা হত। রাজাকে শাসনকার্যে যুবরাজ সাহায্য করতেন।
- (২) মন্ত্রীরা প্রধানত শাসনের দায়িত্ব নিতেন। রাজ্যের অভিজাত ও ক্ষমতাশালী লোকেদের মধ্যে থেকেই মন্ত্রী নিযুক্ত হত। রাষ্ট্রকুট শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী, রাজস্বমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী প্রভৃতির কথা জানা যায়।
- (৩) রাষ্ট্রকূটদের অধীনে কোনো নিয়মিত বেতনভোগী কর্মচারী ছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে সামন্ত রাজারাই শাসনের দায়-দায়িত্ব অনেকটা বইত। কোনো কোনো কর্মচারীর কাজ ছিল সমগ্র সাম্রাজ্য ঘুরে সুশাসনের জন্য চেষ্টা করা।
রাষ্ট্রকূট সামন্ত শাসিত অঞ্চল
- (১) সাম্রাজ্যের কিছু অংশ সম্রাটের প্রত্যক্ষ শাসনে থাকত। সাম্রাজ্যের বাকি অংশ সামন্ত রাজারা শাসন করত। সামন্ত রাজারা রাজাকে নিয়মিত কর ও দরকার হলে সৈন্য সাহায্য করত। কিন্তু তারা স্বায়ত্ব শাসনের অধিকার ভোগ করত। তাদের রাজ্যে রাজা হস্তক্ষেপ করতেন না।
- (২) সামন্তরা তাদের রাজ্য অধীনস্থ সামন্তদের কাছে বন্দোবস্ত দিত। রাজার প্রত্যক্ষ শাসিত অঞ্চলকে রাষ্ট্র বা বিষয়ে ভাগ করা হত। বিষয়গুলিকে ভুক্তিতে পুনরায় ভাগ করা হত। ৫০-৭০টি গ্রাম নিয়ে প্রতি ভুক্তি গঠিত হত।
রাষ্ট্রকূট প্রদেশ শাসন
দেশ রাষ্ট্রের শাসনকর্তার উপাধি ছিল রাষ্ট্রপতি। বিষয়ের শাসনকর্তার উপাধি ছিল বিষয়পতি। রাষ্ট্রপতি সামরিক ও সকল প্রকার ক্ষমতা ভোগ করত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব আদায়, বিচার ব্যবস্থা রক্ষা ছিল তার দায়িত্ব। বিদ্রোহ দমনের কাজে তাকে ব্যস্ত থাকতে হত। বিষয়পতিরও অনুরূপ দায়িত্ব ছিল। বিষয়পতিকে এক শ্রেণীর বংশানুক্রমিক গ্রামের কর্মচারী রাজস্ব আদায়ে সাহায্য করত।
রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যে গ্রামের শাসন
গ্রামের শাসন গ্রাম প্রধানরা চালাত। গ্রামের পাহারাদার প্রভৃতির সাহায্যে গ্রাম প্রধান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করত। গ্রাম শাসনের ক্ষেত্রে গ্রামে নির্বাচিত সভা ছিল রাষ্ট্রকূট শাসনের বৈশিষ্ট্য। এই সভায় গৃহস্থদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হত। বিষয়ের শাসনের ক্ষেত্রেও এরূপ সভার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বিষয় সভার নাম ছিল “বিষয়-মহত্তর”।
রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের রাজস্ব নীতি
ভারতে রাষ্ট্রকূট শাসনে ভূমিরাজস্ব ছিল রাজ্যের আয়ের প্রধান উৎস। ফসলের ১/৪ ভাগ রাজস্ব আদায় হত। এই রাজস্বের নাম ছিল “ভোগ।
উপসংহার :- রাষ্ট্রকুট সেনাদল ছিল বিরাট স্থায়ী সেনাদল। এই সেনাদল রাজধানী ও রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে মোতায়েন থাকত। পদাতিক ও অশ্বারোহী ছিল রাষ্ট্রকূট সেনার মেরুদণ্ড।
(FAQ) রাষ্ট্রকূট শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
দন্তিদুর্গ।
মান্যখেত।
তৃতীয় গোবিন্দ।
দ্বিতীয় কর্ক।