উজ্জ্বলা মজুমদার

উজ্জ্বলা মজুমদার (২১ নভেম্বর ১৯১৪ – ২৫ এপ্রিল ১৯৯২) ছিলেন একজন বাঙালি নারী বিপ্লবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সাহসিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।

উজ্জ্বলা মজুমদার ছিলেন এক সাহসিনী, যিনি কেবল বিপ্লবেই নয়, স্বাধীনতার পর সমাজ পুনর্গঠনের কাজেও ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাঁর জীবন কাহিনী আজও নারীর শক্তি, ত্যাগ ও আদর্শের প্রেরণা হয়ে আছে।

Table of Contents

উজ্জ্বলা মজুমদার

ঐতিহাসিক চরিত্রউজ্জ্বলা মজুমদার
জন্ম২১ নভেম্বর ১৯১৪, ঢাকা
পিতাসুরেশচন্দ্র মজুমদার
পরিচিতিনারী বিপ্লবী, সমাজসেবী, শিক্ষাব্রতী
প্রাথমিক রাজনৈতিক সংযোগযুগান্তর দল, বিপ্লবী সংগঠন
প্রধান সংগঠনসমূহদীপালি সংঘ, ফরোয়ার্ড ব্লক, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স
প্রথম গ্রেফতার১৮ মে ১৯৩৪, গভর্নর জন অ্যান্ডারসনের ওপর হামলার চেষ্টা প্রসঙ্গে
কারাদণ্ড১৪ বছর সশ্রম কারাবাস
প্রথম মুক্তি১৯৩৯ সালে, গান্ধীজির অনুরোধে
দ্বিতীয় গ্রেফতার১৯৪২ সালে, ভারত ছাড়ো আন্দোলন-এ অংশগ্রহণের জন্য
শিক্ষাকারাগারে থাকাকালীন বিএ ডিগ্রি অর্জন
বিবাহ১৯৪৭ সালে ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের সঙ্গে
সমাজসেবা কাজপল্লী নিকেতন প্রতিষ্ঠা, নোয়াখালি ত্রাণ, গ্রামোন্নয়ন কাজ
ঐতিহাসিক গুরুত্বস্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের অন্যতম প্রতীক
মৃত্যু২৫ এপ্রিল ১৯৯২

উজ্জ্বলা মজুমদার

ভূমিকা :- উজ্জ্বলা মজুমদার ছিলেন ভারত-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সাহসিনী বিপ্লবী, যিনি বাঙালি নারীদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেখানে পুরুষ বিপ্লবীরাই সাধারণত আলোচনায় থাকেন, সেখানে উজ্জ্বলা ছিলেন এক ব্যতিক্রমী নারী, যিনি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন।

উজ্জ্বলা মজুমদারের জন্ম

১৯১৪ সালের ২১শে নভেম্বর ঢাকা শহরে উজ্জ্বলা মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন।

বিপ্লবী উজ্জ্বলা মজুমদারের পিতা

তাঁর পিতা সুরেশচন্দ্র মজুমদার। ঢাকা জেলায় কুসুমহাটির সুরেশচন্দ্র মজুমদারদের জমিদার পরিবার সাহসে ও দাক্ষিণ্যে সমৃদ্ধ বলে পরিচিত ছিল।

উজ্জ্বলা মজুমদারের মাতৃসাম্রাজ্যবিয়োগ

আট বছর বয়সে উজ্জলার মাতৃবিয়োগ হয়। পিতা ছিলেন বিপ্লবীদের সঙ্গে জড়িত।

বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলে উজ্জ্বলা মজুমদার

১৯২৮ সালে উজ্জলার বয়স যখন ১৪ বছর তখন তাঁর বাবা কলকাতা থেকে ঢাকা শহরে দু-একটি অস্ত্র নিয়ে যাবার প্রয়োজনে নিজেই কোমরে ঐ অস্ত্র লুকিয়ে নিয়ে ঢাকা চলে যান। মুখে বিপ্লবের কথা বলার কোনো প্রয়োজনীয়তাই সেখানে ছিল না। তাঁকে দিয়ে এই বিপ্লবী কাজ করানোর অর্থই ছিল তাঁকে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া। উজ্জলা বুঝলেন ইংরেজের অধীনতা পাশ থেকে মুক্তি পাবার এই প্রকৃষ্ট পথ। তিনি বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নামক বিপ্লবীদলে যোগদান করেন।

ভয়স্তম্ভিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ

১৯৩০-৩২ সাল বাংলার ইতিহাসে তথা ভারতের ইতিহাসে এনেছিল মহা কর্মসাধনার কাল। একদিকে অসহযোগ আন্দোলন করে তুলেছিল সমগ্র ভারতবর্ষকে ইংরেজ-বিরোধী, অন্যদিকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, রাইটার্স বিল্ডিংসে বিপ্লবীদের কাণ্ড, লোম্যান-সিম্পসন-পেডি-গার্লিক-স্টিভেন্স-ক্যামেরন-ডগলাস-বার্জ হত্যা; এবং হডসন-নেলসন-ভিলিয়ার্স-ক্যাসেল-গ্রাস্সি-ডুর্নো-জ্যাসন প্রমুখের রক্তাক্ত রূপ ভারতবাসীকে বিস্মিত করে তুলেছিল এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীকে ভয়স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।

প্রভাবিত উজ্জ্বলা মজুমদার

এদেশের নারী তখন প্রত্যক্ষ সংগ্রাম-এ অবতীর্ণ। শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে নিহত করেছেন। বীণা দাস কলকাতা সেনেট হলে গভর্নর জ্যাকসনকে গুলী করেছেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শহীদ হয়েছেন। ওদিকে ‘বেণু’, ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা এবং ‘চলার পথে’ প্রভৃতি পুস্তক বিপ্লবের পথে আত্মাহুতি দেবার জন্য যুব বাংলাকে আহ্বান জানাচ্ছিল। সেই আহ্বান সেই যুগে তরুণ-তরুণীদের চিত্তে বার বার ধ্বনিত হচ্ছিল। উজ্জ্বলাও প্রভাবিত হয়েছিলেন।

বিপ্লবীদের আড্ডা উজ্জ্বলা মজুমদারের বাড়ী

উজ্জ্বলা ছাত্রীদের মধ্যে ও তরুণীদের মধ্যে বিপ্লবের বীজ অঙ্কুরিত করে চলেছিলেন। তাঁদের বাড়ীটা তখন ছিল বিপ্লবীদের একটা আড্ডা। নির্বিরোধ বিমাতা এবং স্নেহশীলা ঠাকুরমা কোনোদিকেই নজর দিতে পারতেন না। পিতাও অধিকাংশ সময় ব্যবসা উপলক্ষ্যে কলকাতায় থাকতেন।

দার্জিলিং-এ উজ্জ্বলা মজুমদার

১৯৩৭ সালের মে মাসে পুলিসের সমস্ত সতর্কতা উপেক্ষা করে কয়েকটি তরুণ ও একটি তরুণী দার্জিলিং এসে পৌঁছলেন একটা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। দার্জিলিং-এর স্নো-ভিউ হোটেলে উঠলেন উজ্জলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জী এবং জুবিলি স্য়ানাটোরিয়ামে উঠলেন ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জী। একটি হারমোনিয়ামের মধ্যে উজ্জলা মজুমদার এনেছিলেন দুটি আগ্নেয়াস্ত্র দুর্ধর্ষ গভর্নর এন্ডারসনের উপর আক্রমণের জন্য।

উজ্জ্বলা মজুমদারের পাঠ্যজীবন

প্রথমজীবনে গ্রামে থাকায় উজ্জ্বলার পাঠ্যজীবন দেরীতে আরম্ভ হয়। প্রায় কুড়ি বছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ঠাকুরমাদের জানালেন পরীক্ষার পর বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে যাচ্ছেন কয়েকদিনের জন্য। বাড়ী থেকে বেরিয়ে বিপ্লবী বন্ধুদের সঙ্গে একবস্ত্রে চলে আসেন তিনি কলকাতা, তারপর দার্জিলিং।

ছদ্মবেশে উজ্জলা মজুমদার

দার্জিলিং পৌঁছে তাঁরা শুনলেন গভর্নর একটি ‘ফ্লাওয়ার শো’-তে আসছেন। কৌশলে তাঁরা সেখানে উপস্থিত হলেন কিন্তু কাজ সমাধা করা সম্ভব হল না। তবু তাঁরা উৎসাহ হারালেন না। সেদিন ৮ই মে ১৯৩৪ সাল। দার্জিলিং সহরে লেবং-এর মাঠে ঘোড়দৌড় হচ্ছে। গভর্নর এন্ডারসন উপস্থিত থাকবেন। শ্যানাটোরিয়াম থেকে দামী ইওরোপীয় পোশাক পরে ভবানী ভট্টাচার্য ও তাঁদের সঙ্গে লুক্কায়িত আছে গুলী ভরা রিভলভার। রবি ব্যানার্জী বের হলেন। তাঁদের দূর থেকে অনুসরণ করে চললেন উজ্জলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জী। পরনে একটি রঙীন শাড়ী, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। মনোরঞ্জন ব্যানার্জী পরিধান করেছেন স্বদেশী পরিচ্ছদ।

ফিরতি ট্রেনে উজ্জলা মজুমদার

ঘোড়দৌড়ের মাঠে সকলেই উপস্থিত হলেন। গভর্নর তাঁর আসনে উপবিষ্ট। ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জী গভর্নরের কাছাকাছি রিভলভারের তাক মতো জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছেন। এখন প্রার্থিত লগ্নের অপেক্ষা। এদিকে দলের নির্দেশ মতো উজ্জ্বলা মজুমদার ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জীর কাজ হয়ে গেছে। তাঁরা লেবং ত্যাগ করলেন। দাজিলিং স্টেশনে এসে অতি স্বাভাবিকভাবে তাঁরা ট্রেনে উঠে বসলেন। টিকিট করাই ছিল। ততক্ষণে লেবং-এর মাঠে ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জীর আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠেছে।

পুলিসের ট্রেন ঘেরাও

সন্ধ্যার একটু আগে শিলিগুড়িতে ট্রেন এসে পৌঁছালে পুলিস বাহিনী হন্তদন্ত হয়ে ট্রেন ঘেরাও করল। টেলিফোন কলে তারা আদেশ পেয়েছে ট্রেন তল্লাসী করে একটি মেয়েকে গ্রেপ্তার করতে। তার চোখে হাই-পাওয়ারের চশমা, পরনে গোলাপী রঙের শাড়ী ও গায়ের রং গৌর। পুলিসের দৃষ্টি উজ্জলা মজুমদারের উপরেও পড়ল। কিন্তু তাঁর চোখেও চশমা নেই, পরনেও সাদা শাড়ী।

গ্রেপ্তার উজ্জলা মজুমদার

তারা দুজনে কলকাতা এসে পৌঁছালেন। অবশেষে পুলিস উজ্জলা মজুমদারকে খুঁজে বের করল ভবানীপুরে শোভারাণী দত্তের বাসায়। শোভারাণী ‘যুগান্তর’ দলের কর্মী। রাজনৈতিক সংগ্রামের পুরোভাগে তখনকার দিনে যে কয়েকজন মহিলা অগ্রসর হয়েছিলেন শোভারাণী দত্ত তাঁদের অন্যতম। শোভারাণী দত্তের বাসা থেকে ১৮ই মে উজ্জলা মজুমদার ও শোভারাণী দত্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস নিয়ে যায়। শোভারাণী অবশ্য লেবং ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু এই সূত্রে তাঁর দুর্ভোগ ও লাঞ্ছনার সীমা ছিল না।

দার্জিলিং জেলে উজ্জলা মজুমদার

উজ্জলাকে আনা হয় প্রথমে কার্সিয়াং জেলে এবং পরে দার্জিলিং জেলে। তাঁর বিপ্লবী বন্ধু ভবানী ভট্টাচার্য ও রবি ব্যানার্জী দাজিলিং জেলে ছিলেন আগে থেকেই। কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করে এনেছিল মনোরঞ্জন ব্যানার্জী, মধু ব্যানার্জী, সুকুমার ঘোষ প্রমুখকে।

বিপ্লবী উজ্জলা মজুমদারের সশ্রম কারাদণ্ড

স্পেশাল ট্রাইবুনালের মামলা শুরু হয়েছে। সকলেই মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা শুনবার জন্য প্রস্তুত। বিচারে ভবানী ভট্টাচার্য, রবি ব্যানার্জী ও মনোরঞ্জন ব্যানার্জীর ফাঁসীর হুকুম হয়, উজ্জলা মজুমদারের সাজা হয় বিশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অপর বন্দীদের সাজা হয় দ্বীপান্তরের। হাইকোর্ট-এর আপীলের রায়ে ভবানী ভট্টাচার্যের ফাঁসীর হুকুম বহাল থাকল। মনোরঞ্জন ব্যানার্জী ও রবি ব্যানার্জীর বিশ বৎসর এবং উজ্জলা মজুমদারের চৌদ্দ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ হল। দণ্ডিত বন্দীবা অন্দামানে দ্বীপান্তরিত হন। উজ্জলা মজুমদারকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে।

উজ্জলা মজুমদারের স্মৃতিকাহিনী

১৯৩৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি ছিল ভবানী ভট্টাচার্যের ফাঁসীর তারিখ। রেখেছিল তাঁকে রাজসাহী সেনট্রাল জেলে। অন্যদিকে মেদিনীপুর সেন্‌ট্রাল জেলের রুদ্ধ কক্ষে আবদ্ধ উজ্জ্বলা মজুমদার। দুর্গম পথের সহযাত্রী, বন্ধু সতীর্থ ভবানীর কথা তাঁর বিনিদ্র রজনীতে বার বার মনে পড়ে। সেই রাতের স্মৃতিকাহিনী উজ্জ্বলা প্রায় এক যুগ পর নিজেই লিখেছিলেন “তারপর রাজসাহী জেলের এক অসহ্য রাত। দূরান্তেঃ অপর এক জেলে বসে শুনি, রাত্রির গভীরে কিশোর বন্ধুর কণ্ঠে তুলে দিয়েছে ফাসীর রজ্জু বিদেশী শাসক। মুহূর্তে ধুলায় গড়িয়েছে তার সোনার শরীর। সে দুঃসহ রজনীর ব্যথাবিধুর ইতিহাস জীবনে ভুলবার নয়।”

রবীন্দ্রনাথের বাণী স্মরণে উজ্জলা মজুমদার

কিন্তু তারো মধ্যে ছিল এক পরম বাণী। সারারাত সেই বাণীকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম ভবানীরই কণ্ঠে বারে বারে শোনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর একটি গানে –

‘কাপিবে না ক্লান্ত কর

টুটিবে না বীণা,

নবীন প্রভাত লাগি

দীর্ঘ রাত্রি রব জাগি

দীপ নিবিবে না।’

উজ্জলা মজুমদারের জেলমুক্তি

তারপর বাংলাদেশ-এর নানা জেলে কেটে গেল উজ্জ্বলার বন্দী জীবনের পাঁচটি বছর। অবশেষে মহাত্মা গান্ধীর প্রচেষ্টায় অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে ঢাকা জেল থেকে ১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসে উজ্জ্বলা মজুমদার মুক্তি পান।

পুনরায় গ্রেপ্তার উজ্জলা মজুমদার

এরপর চলে আসেন তিনি কলকাতায়। ১৯৪২ সালে আরম্ভ হয় শেষ জাতীয় সংগ্রাম ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে উজ্জ্বলা পুনরায় গ্রেপ্তার হন। পুলিস তাঁকে নিরাপত্তা আইনে বন্দী করে রেখে দেয় প্রেসিডেন্সি জেলে।

ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠনে অগ্রসর উজ্জলা মজুমদার

১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মুক্তি পান। মুক্তির পর বন্ধুদের সঙ্গে তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠনে অগ্রসর হন।

সেবার কাজে উজ্জলা মজুমদার

নোয়াখালিতে দাঙ্গা হয়ে যাবার পর সেখানে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে গিয়ে তিনি সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

বি.এ এবং বি.টি পাস করেন উজ্জলা মজুমদার

১৯৪৭ সালে এল স্বাধীনতা। তখন শরৎচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত সোশ্যালিস্ট রিপাব্লিকান পার্টির সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। জেলের মধ্যে তিনি বি.এ এবং মুক্তির পর বি.টি পাস করেন।

পল্লী নিকেতন গঠনে উজ্জলা মজুমদার

বারাসতে রাজারহাট থানার অনুন্নত শ্রেণী অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামে ‘পল্লী নিকেতন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তিনি ও তাঁর বন্ধুরা মিলে সংগঠন করেন এবং এই সমিতির মধ্য দিয়ে তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত সমাজসেবার কাজে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন।

উজ্জলা মজুমদারের বিবাহ

১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ বিপ্লবী ও সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।

বিপ্লবী উজ্জলা মজুমদারের মৃত্যু

২৫ এপ্রিল ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে উজ্জলা মজুমদার পরলোক গমন করেন।

উপসংহার :- উজ্জ্বলা মজুমদার ছিলেন সেই সব নারীর এক উজ্জ্বল ছায়া, যিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেন, তারপর বন্দীও হন; কিন্তু স্বাধীনতার পর শুধু অস্ত্রই নয়, সমাজকল্যাণে তাঁর শক্তিশালী অবদান দেখে বোঝা যায় যে, তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহে একজন সাহিত্যিকভাবেও সাহসী ও আদর্শময়।

(FAQ) উজ্জ্বলা মজুমদার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য ?

১. উজ্জ্বলা মজুমদার কে ছিলেন?

উজ্জ্বলা মজুমদার ছিলেন একজন বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লবী ও সমাজসেবী, যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং পরে সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।

২. তিনি কোন বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

তিনি ‘দীপালি সংঘ’, ‘যুগান্তর’, ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ এবং ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর সদস্য ছিলেন।

৩. কী কারণে তিনি গ্রেফতার হন?

১৯৩৪ সালে দার্জিলিংয়ে ব্রিটিশ গভর্নর জন অ্যান্ডারসনের ওপর হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হন।

৪. উজ্জ্বলা মজুমদার কত বছর কারাবাস করেন?

তিনি ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তবে মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপে ১৯৩৯ সালে মুক্তি পান। আবার ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে গ্রেফতার হন।

৫. কারাগারে থাকাকালীন তিনি কী করেন?

কারাবাসের মধ্যেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

৬. স্বাধীনতার পর তিনি কী করেন?

স্বাধীনতার পরে তিনি সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন—বিশেষত গ্রামোন্নয়ন, শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেন। তিনি “পল্লী নিকেতন” নামে একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন।

৭. উজ্জ্বলা মজুমদার কাকে বিয়ে করেন?

তিনি ১৯৪৭ সালে বিপ্লবী ও সাহিত্যিক ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

৮. উজ্জ্বলা মজুমদারের মৃত্যু কবে হয়?

উজ্জ্বলা মজুমদার ২৫ এপ্রিল ১৯৯২ সালে পরলোকগমন করেন।

৯. ইতিহাসে তার অবদান কীভাবে মূল্যায়িত হয়?

যদিও তিনি মূলধারার ইতিহাসে তেমন আলোচিত নন, তবে তিনি নারীর আত্মবলিদান ও বিপ্লবী চেতনার এক প্রতীক হিসেবে বাঙালি সমাজে স্মরণীয়।

Leave a Comment