পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava. পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, পেয়ারা পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য।

Table of Contents

পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা :- পেয়ারা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava পেয়ারা খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনই পেয়ারা পাতার গুণাগুণও আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। পেয়ারা এমন একটি ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। পেয়ারা গাছের পাতাও অনেক উপকারি। পেয়রার পাতায় অনেক পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেনট উপাদান রয়েছে।

পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার ব্যবহার সাধারণত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। ঔষধি গুণের কারণে পেয়ারা পাতা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। পেয়ারা পাতার বিভিন্ন উপকারিতা গুলি হল –

(১) ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

যাদের ডায়াবেটিস আছে পেয়ারা পাতার চা খেলে তাদের রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত তিনমাস ধরে পেয়ারা পাতার চা পান করলে  রক্তে শর্করার কমে যায়। এই কারণে পেয়ারা পাতার ব্যবহার ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।

(২) কোলেস্টেরল কমাতে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

তিন-চার মাস ধরে পেয়ারা পাতার চা পান করলে শরীরে লো-ডেনসিটি কমাতে পারে। এর ব্যবহার লাইপোপ্রোটিন, খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদির মাত্রা সঠিক রাখে। এছাড়াও, পেয়ারা পাতার ব্যবহারে লিভার সুস্থ থাকে।

(৩) মাসিকের সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

মহিলাদের মাসিকের লক্ষণগুলি হ্রাস করে পেয়ারা পাতার নির্যাস। অনেক মহিলার ডিসমেনোরিয়ার কারণে পেটে ব্যথার মতো বেদনাদায়ক মাসিক লক্ষণ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার নির্যাস মাসিকের ক্র্যাম্পের তীব্রতা হ্রাস করতে পারে। তাই মহিলারা প্রতিদিন পেয়ারা পাতার নির্যাস গ্রহণ করা ব্যথানাশক ওষুধের চেয়ে ভালো। পেয়ারা পাতার নির্যাসের ব্যবহারে জরায়ুতে ক্র্যাম্পের তীব্রতা হ্রাসেও সাহায্য করে।

(৪) পেটের সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা গাছের পাতা ডায়রিয়া ও পেটের সমস্যা নিরাময়েও ব্যবহৃত হয়। কোনো কারণে খাবারে বিষক্রিয়া হলে পেয়ারা পাতা ব্যবহার অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতা বমি বমি ভাব এবং বমি করতে সাহায্য করে। ১-১.৫ লিটার ফুটন্ত জলে কিছু পেয়ারা গাছের পাতা মিশিয়ে দিনে তিনবার পান করলে পেটের সমস্যা দূর হয়।

(৫) ওজন নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার জটিল স্টার্চ শর্করায় পরিণত হয় না। তাই এটি মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ পেয়ারা পাতা স্থূলতার বিরুদ্ধে সাহায্য করতে পারে।

(৬) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পেয়ারার উপকারিতা

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় পেয়ারা সেবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি দুর্দান্ত উপায়। পেয়ারার প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মতো প্রদাহ সৃষ্টিকারী অণুকে থামাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে প্রোস্টেট, স্তন, মুখ, ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং কোলন প্রভৃতির ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। পেয়ারা পাতায় বর্তমান তেলের মতো অ্যান্টিপ্রোলিফারেটিভ উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করে দেয়।

(৭) ব্রণ কমাতে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার দ্বারা ত্বকের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করা যায়। পেয়ারা পাতার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিসেপটিক ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম। ব্রণ ও কালো জায়গায় পেয়ারা পাতার নির্যাস লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে পালন করলে ত্বক পরিষ্কার হয়।

(৮) মস্তিষ্কের সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতায় বর্তমান পলিফেনল উপাদান আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার ব্যবহার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বয়স্ক ব্যক্তিরা মস্তিষ্কের সমস্যায় আক্রান্ত হলে পেয়ারা পাতার রস পান করে উপকার পেতে পারেন।

(৯) গলা ব্যথা ও কাশি নিরাময়ে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার নির্যাস কাশি ও গলা ব্যথা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়। পেয়ারা পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং আয়রন কাশি, সর্দি ও গলা ব্যথা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাছাড়া পেয়ারা পাতার চা পান করলে শ্বাসনালী পরিষ্কার ও শ্লেষ্মা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।

(১০) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতার একটি হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

(১১) চুলের সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতায় উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমান ভিটামিন, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। পেয়ারা পাতার রস চুলের গোড়ায় লাগালে অকালে মাথার চুল ঝরে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

(১২) দাঁতের সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা পাতা চিবিয়ে কিছুক্ষণ মুখের ভিতর রেখে দিলে দাঁত এর শিরশিরানি ভাব কমে যায়। পেয়ারা পাতা দাঁতের জন্য বেশ উপকারী।

(১৩) মনযোগ বৃদ্ধিতে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

স্কুলগামী অমনোযোগী শিশুকে সঠিকভাবে পেয়ারা পাতা খাওয়ালে, তার লেখাপড়ায় মনযোগ বৃদ্ধি পাবে।

(১৪) থাইরয়েড সমস্যায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্ৰন্থি হল থাইরয়েড। থাইরয়েড হরমোন দেহে কম বা বেশি উৎপন্ন হলে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। পেয়ারা পাতা থাইরয়েড সমস্যার চিকিৎসায় শ্রেষ্ঠ ঔষধ।

(১৫) ক্যান্সার প্রতিরোধে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

পেয়ারা গাছের পাতা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। পেয়ারা পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপেন উপাদান আছে। এই উপাদান স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ও মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে  বিশেষ ভাবে কাজ করে।

(১৬) হার্টের সুস্থতায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহের পাশাপাশি পেয়ারা পাতা হৃৎপিণ্ডকে ফ্রি র্যারডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম এবং দ্রবণীয় ফাইবার যেকোনো বয়সী মানুষের হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এইসব উপাদান পেয়ারা পাতা থেকে নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যায়।

(১৭) অন্ত্রের জীবাণু দূরীকরণে পেয়ারা পাতার উপকারিতা

মানব শরীরের অন্ত্র থেকে জীবাণু দূরীকরণের কারণে মানুষের ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। অন্ত্রের জীবাণু দূরীকরণে পেয়ারা পাতার রস বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

(১৮) সুষ্ঠু প্রজনন ক্ষমতায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা

গবেষণা করে দেখা গেছে যে, শুক্রাণুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে পেয়ারা পাতার উপকারিতা অকল্পনীয়। মহিলারা নিয়ম মেনে পেয়ারা পাতার নির্যাস খেলে তাদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘদিন ধরে মা হতে না পারা কিংবা বাবা হতে না পারা নারী ও পুরুষেরা ২-৩ মাস ধরে নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস পান করতে পারেন। এর ফলে দ্রুত সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

পেয়ারা পাতার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উপকারি হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতা সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন –

(১) ত্বকের জ্বালা

পেয়ারা পাতার নির্যাস আপনার ত্বককে জ্বালাতন করতে পারে এবং আপনি এটি ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। ত্বকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে সাবধানে ব্যবহার করুন।

(২) গর্ভাবস্থায় পেয়ারা পাতার অপকারিতা

পেয়ারা পাতার বিভিন্ন ঔষধি উপকারিতা থাকলেও এর বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা পাতা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

(৩) খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার অপকারিতা

কোনো অবস্থাতেই খালি পেটে পেয়ারা পাতার রস কিংবা পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে পেয়ারা খেলে পেটে অ্যাসিডের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে।

পেয়ারা পাতা খাওয়ার পদ্ধতি

বিভিন্ন ভাবে পেয়ারা পাতা খাওয়া যেতে পারে। যেমন –

  • (১) ৭-৮ টি কচি পেয়ারা পাতা দুই গ্লাস জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ছেঁকে নিয়ে গ্রীন ট্রি বা চা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে কিছু খাওয়ার ৩০ মিনিট পর দিনে একবার করে সাতদিন খেতে হবে।
  • (২) সবুজ পেয়ারা পাতা কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। তিনটি কচি পেয়ারা পাতা ভালো করে ধুয়ে চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

উপসংহার :- সুতরাং পেয়ারা পাতার গুণাগুণ বহু। শেষে বলতে পারি প্রতিদিন সকালে ৩ টি টাটকা পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে যে কোনো রোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব হয়।

আরোও পড়ুন

১. পেয়ারা পাতার একটি অপকারিতা লেখ।

পেয়ারা পাতার রস অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ত্বকে একজিমার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি কি?

পেয়ারা পাতার সাহায্যে চা তৈরি করে অথবা পেয়ারা পাতা পেস্ট করে তার নির্যাস বের করে খাওয়া যেতে পারে।

৩. পেয়ারা পাতায় কি উপাদান আছে?

পেয়ারা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে।

৪. পেয়ারা পাতার বৈজ্ঞানিক বা বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?

পেয়ারা পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো গোয়াবা লিফ।

৫. পেয়ারা পাতার আকৃতি কেমন?

পেয়ারা পাতা আকৃতিতে উপবৃত্তাকার।

Leave a Comment