মহম্মদ বিন তুঘলকের সমস্যা সমূহ প্রসঙ্গে আদি জীবন, পিতার সিংহাসন লাভে সহায়তা, সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশাল সাম্রাজ্য, সাম্রাজ্যের ঐক্য রক্ষা, অভিজাত ও উলেমা শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক, অভিজাত বিদ্রোহ, মোঙ্গল আক্রমণ ও আলোকপাতহীন লক্ষ্য সম্পর্কে জানবো।
মহম্মদ বিন তুঘলকের সমস্যা সমূহ
ঐতিহাসিক ঘটনা | মহম্মদ বিন তুঘলকের সমস্যা সমূহ |
সুলতান | মহম্মদ বিন তুঘলক |
সিংহাসন লাভ | ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্ব নাম | জৌনা বা জুনা খান |
পিতা | গিয়াসউদ্দিন তুঘলক |
ভূমিকা :- সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের জ্যেষ্ঠ পুত্র ফকরুদ্দিন জৌনা বা জৌনা খান তার পিতার মৃত্যুর পর ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের আদি জীবন
তাঁর পিতার সিংহাসন লাভের আগে তিনি কুতবউদ্দিন মোবারক খলজির দরবারে কাজ করতেন। খসরু শাহের আমলে তিনি দিল্লীতে অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান ছিলেন।
পিতার সিংহাসন লাভে মহম্মদ বিন তুঘলকের সহায়তা
খলজি বংশ ও খসরু শাহের বিরুদ্ধে তিনি দিল্লীর আমীরদের উত্তেজিত করেন। এর ফলে তাঁর পিতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সিংহাসন লাভের সুবিধা হয়।
সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধিতে মহম্মদ বিন তুঘলকের ভূমিকা
পিতা গিয়াসউদ্দিনের সুলতানির সময় জৌনা খান বহু দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেন। তিনি দুইবার তেলেঙ্গানা অভিযান করেন এবং সুলতানি সাম্রাজ্য-এর সীমা বৃদ্ধি করেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
- (১) জৌনা খান খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। ইবন বতুতার মতে, তাঁরই চক্রান্তে সুলতান গিয়াসুদ্দিন তুঘলক নিহত হন। পিতার মৃত্যুর পর জৌনা খান ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ বিন তুঘলক নাম নেন।
- (২) চল্লিশ দিন প্রয়াত সুলতানের জন্য শোক পালন শেষ হলে, তিনি দারুণ আড়ম্বর সহকারে দিল্লীতে ঢুকেন এবং বহু অর্থ সকলকে বিতরণ করেন।
মহম্মদ বিন তুঘলকের সমস্যা সমূহ
১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসার পর সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হন। যেমন –
(১) বিশাল সাম্রাজ্য
তাঁর আমলে দিল্লীর সুলতানি সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে। পূর্বে বাংলা হতে পশ্চিমে সিন্ধু এবং হিমালয়ের পাদদেশ হতে দক্ষিণে পাণ্ড্য রাজ্য পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
(২) সাম্রাজ্যের ঐক্য রক্ষা
চতুর্দশ শতকের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব এবং আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার বাধা দূর করে এই বিরাট সাম্রাজ্যের ঐক্য রক্ষা করা ছিল মহম্মদের প্রধান সমস্যা।
(৩) অভিজাত ও উলেমা শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক
সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রধান সাংবিধানিক সমস্যা ছিল সিংহাসনের সঙ্গে অভিজাত ও উলেমাশ্রেণীর সম্পর্ককে কার্যকরী অবস্থায় রাখা। মহম্মদকেও এজন্য বিশেষ যত্ন করতে হয়।
(৪) অভিজাত বিদ্রোহ
মহম্মদ বিন তুঘলক সিংহাসনে বসার পর বেশ কয়েকটি অভিজাত বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। এই বিদ্রোহগুলি দমন করার সময় তিনি প্রয়োজনের বেশী নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে অভিজাত কর্মচারীদের আনুগত্য হারান।
(৫) মোঙ্গল আক্রমণ
দিল্লী সুলতানির সূচনা থেকেই মোঙ্গল আক্রমণ ঘটে আসছে। তাঁকেও মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করতে হয়।
(৬) উদ্ভাবন প্রিয়তা
- (ক) সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন ভয়ানক উদ্ভাবনপ্রিয়। চিরাচরিত বাঁধাধরা পথে শাসনকার্য পরিচালনায় তাঁর উৎসাহ ছিল না। খরগোসের গর্তগুলি যেরূপ খরগোসের ছানায় পূর্ণ থাকে, মহম্মদের মস্তিষ্কের কোষ সেরূপ উদ্ভাবনী চিন্তায় পূর্ণ ছিল।
- (খ) তিনি সর্বদাই প্রচলিত ব্যবস্থা পালটে নতুন কিছু করতে চাইতেন। অভিজাত ও জনগণ তা পছন্দ করত কিনা সেজন্য তিনি চিন্তা করতেন না। তিনি জনসাধারণ অথবা তাঁর দরবারের বিদগ্ধ ব্যক্তিদের তাঁর উদ্ভাবনগুলির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চেষ্টা করেন নি। এজন্য তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের ঐক্য স্থাপনে মহম্মদ বিন তুঘলকের অবদান
উত্তরের হিন্দু-মুসলিম মিশ্র সংস্কৃতি ও দক্ষিণের নিজস্ব হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে প্রচুর ব্যবধান ছিল। মহম্মদ এই ব্যবধান দূর করে ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যকে দৃঢ় করতে চান।
মহম্মদ বিন তুঘলকের আলোকপাত হীন লক্ষ্য
কিন্তু তিনি তার এই উচ্চতর লক্ষ্য সম্পর্কে তার আমলের বুদ্ধিজীবি ও অভিজাতদের আলোকিত করেন নি। তাঁর অন্যান্য সংস্কারগুলি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়।
উপসংহার :- মহম্মদ বিন তুঘলক তার লক্ষ্য ও কর্মসূচি সম্পর্কে বুদ্ধিজীবি ও অভিজাতদের আলোকিত না করার ফলে সকলের সহযোগীতা তিনি পান নি। তাকে পরিণামে বিফলতা বরণ করতে হয়।
(FAQ) মহম্মদ বিন তুঘলকের সমস্যা সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কিতাব-উল-রাহেলা।
কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি ও খসরু শাহ।
মহম্মদ বিন তুঘলক।