ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে কপোত ও কাক গল্পটি এবং কপোত ও কাক গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
কপোত ও কাক
একদা কোনো এক স্থানে এক বণিকের এক পাচক ছিল। পাচকটি রান্না ঘরের পাশে একটি ঝুড়ি তৈরি করে ঝুলিয়ে রেখেছিল। সেই ঝুড়িতে বাস করতো এক কপোত। কপোতটি প্রতিদিন সকালে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে যেত সন্ধ্যায় ঝুড়িতে ফিরে বিশ্রাম নিত।
একদা একটি কাক ঐ রান্নাঘরের পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। রান্নাঘরে তখন নানা ধরনের মাছ মাংস রান্না হচ্ছিল। সেই গন্ধ কাকের নাকে এসে লাগতে সেগুলি খাবার জন্য তার খুব লোভ হলো। তাই কিছুটা দূরে সে একটি গাছের ডালে বসে থাকল। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে অস্ত গেছে। একটু পরেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে। কপোত সেই সময় নিজের বাসাটিতে উড়ে এসে বসল। তাকে দেখে কাক ভাবল, একে দিয়েই কাজ উদ্ধার করতে হবে।
পরের দিন কপোত যখন খাবারের খোঁজে বাইরে যাচ্ছে, কাকও তার পিছু পিছু চলল। কাককে দেখে কপোত কাককে বলল – “তুমি কেন আমার সঙ্গে যাচ্ছ?”
কাক বলল – “হে কপোত আপনার চালচলন আমার খুবই ভালো লেগেছে। তাই আমি আপনার অনুচর হয়ে থাকতে চাই।”
কপোত বলল – আমাদের উভয়ের খাদ্য তো এক নয়।”
কাক বলল – “আপনি যখন আপনার খাদ্য সংগ্রহ করবেন আমি তখন আমার খাদ্য সংগ্রহ করব।”
কপোত বলল – “তোমাকে খুব সাবধান থাকতে হবে।”
কাক বলল – ‘হ্যাঁ, প্রভু। “তাই হবে।”
এরপর কপোত আর কোনো আপত্তি করল না কাক তার সঙ্গে সারাদিন থেকে খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় এক সঙ্গে বাসায় ফেরে। এদিকে পাচকটি ভাবলো, কপোত যখন কাককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে, তখন এর জন্যও একটা ঝুড়ি তৈরি করে দিতে হয়। সে তাই করে দিলো।
সেই থেকে কপোত আর কাক রান্নাঘরের পাশের সেই ঝুড়ি দুটিতেই বাস করে। একদিন পাচক বাজার থেকে প্রচুর মাছ ও মাংস এনে রান্নাঘরে ঝুলিয়ে রাখল। তা দেখে কাকের খুব লোভ হলো। সে স্থির করল, আজ আর বাইরে যাবে না। এখানে থেকেই এগুলো খাবে। তাই কপোত যখন তাকে খাবারের খোঁজে বাইরে যাবার কথা বলল, তখন সে অসুস্থতার ভাণ করে বলল, “আজ আমি বাইরে যাবে না। আজ আপনি একাই যান।”
কপোত কাকের চালাকি বুঝতে পেরে বলল – “তুমি আজ রান্নাঘরের মাছ, মাংস খাবে বলে স্থির করেছো। কিন্তু মনে রেখো এগুলি মানুষের খাদ্য। এতে আমাদের কোনো অধিকার নেই। তার চেয়ে চলো আমরা আমাদের নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করি। কাক আবার সেই অসুস্থতার ছলনা করে বলল – “আমার নড়াচড়া করার শক্তি নেই। আজ আপনি একাই যান। কপোত অগত্যা খাদ্যের খোঁজে যাবার সময় কাককে বলে গেল, “লোভের বশবর্তী হয়ে কোনো অন্যায় কাজ করতে যেও না।”
এদিকে পাচক নানা সুগন্ধি মশলা সহাযোগে মাছ-মাংস রান্না করতে লাগল। আর তার সুগন্ধে চারিদিকে ভরে গেল। ঝুড়িতে বসে কাক দেখল, ক্লান্ত পাচক ঘাম মুছতে মুছতে রান্নাঘরের বাইরে চলে গেছে। রান্নার পাত্রের উপর একটি ধাতুর ঢাকনা আড়াআড়ি রাখা আছে। সে বুঝল মাছ, মাংস খাওয়ার এই সময়। এই ভেবে সে যেই না উড়ে এসে ধাতুর ঢাকনার উপর বসল, অমনি ঢাকনাটি ঝনঝন শব্দে পড়ে গেল। সেই শব্দে পাচক ছুটে এল রান্নাঘরে আর দেখতে পেল সেই ঝাকটিকে। সঙ্গে সঙ্গে সে বন্ধ করে দিল রান্নাঘরের দরজা। সে বলতে থাকলো “আমি প্রভুর জন্য যে মাছ মাংস রান্না করছি তা খাবার জন্যে এই ধূর্ত কাক এসেছে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
এই বলে সে কাককে ধরে তার শরীর থেকে একটি একটি করে পালক উপড়ে নিল। আর তার পালকহীন দেহে মাখিয়ে দিল আদা ও জিরা বাটা, লবণ, টকদই। অসহ্য জ্বালায় আর্তনাদ করতে থাকল কাক। সেই অবস্থাতেই তাকে পাচক ঝুড়িতে রেখে দিল।
দিনের শেষে ঝুড়িতে ফিরে কপোত কাকের ঐ অবস্থা দেখে ভাবতে থাকলো, “লোভী কাক আমার কথা না শুনে এই অবস্থায় পড়েছে। অথচ এই দুষ্টের সঙ্গে আমিও কিছুদিন বাস করেছি। কিন্তু আর নয়।” এই বলে সে সেই বাসস্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেল। কাকও নিজের শরীরের জ্বালায় অস্থির হয়ে কিছুক্ষণ পরে প্রাণত্যাগ করল। পাচক তাকে ঝুড়ি শুদ্ধ আবর্জনার মধ্যে ফেলে দিল।
কপোত ও কাক গল্পটির উপদেশ
কপোত ও কাক গল্পটির উপদেশটি হল- “যেমন কর্ম তেমন ফল।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-