ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে লোভের পরিণাম গল্পটি এবং লোভের পরিণাম গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
লোভের পরিণাম
একদা এক পাহাড়ের নিচে একটা জলাশয় ছিল। জলাশয়টা সবসময় জলে ভরে থাকতো। মাছে ভর্তি থাকতো। কাঁকড়াও থাকতো। বক, চিল সব এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াত — মাছ ধরতো কাকড়া ধরতো আর খেত।
একদিন একটা বুড়ো বক এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। এমন সময় একটা কাকড়া দাঁড়া বেয়ে বেয়ে সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। বকের কান্না দেখে সে থমকে দাঁড়াল। বলল – বক মামা, কাঁদছ কেন?
বক বলল – আর কেন বল ভাগ্নে। সর্বনাশ। বড়ই সর্বনাশ। জলের প্রাণী একটাও বাঁচবে না। পরে ডাঙ্গার প্রাণীরাও দুর্ভিক্ষে সব শেষ হয়ে যাবে। আগামী বারো বছর একবিন্দুও বৃষ্টি হবে না। গণৎকারেরা গণনা করে সব বলে দিয়েছে। … জানো তো, আমি মাছ-মাংস ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমি নিরামিষাসী। মাছগুলির জন্যই প্রাণটা কেঁদে কেঁদে উঠছে। তাই আমি কাঁদছি।
এরপর কাকড়াটি তাড়াতাড়ি গিয়ে মাছেদের খবর দিল। তারা তো সব দল বেঁধে বকের কাছে এসে হাজির। সকলে হাত জোড় করে বককে বলল – দয়া করুন, দয়া করুন। আমাদের এমন বুদ্ধি দিন, যাতে আমরা বেঁচে যাই।
খুব গম্ভীর হয়ে বক বলল – উপায় আমি একটা করে দিতে পারে। যদি তোমরা আমার কথামতো চলো। তাহলে কারো কোনো বিপদ হবে না। মাছেরা সকলে এক সুরে বলল আপনি যা বলবেন তাই করবো কখনও আপনার অবাধ্য হব না। বক বলল পাহাড়ের উপরে একটা প্রকাণ্ড জলাশয় আছে। তার জল কখনো শুকোবে না। তোমাদের এক এক করে সেখানে আমি রেখে আসবো। মাছেরা পরম উৎসাহে বলে ওঠে আমরা সবাই চলে যাবো সেখানে।
এরপর প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা করে মাছ মুখে নিয়ে বক পাহাড়ের উপর একবার উড়ে যেত আবার পরক্ষণেই নেমে আসত। এইরকম করে অনেকগুলি করে মাছ সে পাহাড়ের উপরে নিয়ে যেত। কয়েকদিনের মধ্যেই নিচের জলাশয়ের মাছ প্রায় শেষ হয়ে গেল।
তখন কাকড়া এসে বলল বেশ তো আক্কেল তোমার বক মামা। তোমার কথা শুনে আমি মাছেদের ডেকে আনলুম। তুমি তাদের সব বাঁচাবার ব্যবস্থা করে দিলে। আর আমার কথা তো কিছু বললে না? শুধু মাছেদের জন্যই তোমার প্রাণ কাঁদল। বৃষ্টি যদি না হয়, মাঠ ঘাট, পুকুর ডোবা সব তো শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। আমাদের কি দশা হবে মামা?
বক তাকে অভয় দিয়ে বলল – কোনো ভয় নেই তোমাদের। তোমাদেরও সব পাহাড়ের ওপরের জলাশয়েই রেখে আসব। বাঁচাতে তো হবেই তোমাদের। কালই আমি সে ব্যবস্থা করব। কাকড়া বলল আমি প্রস্তুত।
পরদিন বক কাঁকড়াকে পিঠে নিয়ে উড়ে চলল। চলেছে তো চলেইছে পথ আর শেষ হয় না কাঁকড়া দেখতে পেল পাহাড়ের ওপর প্রচুর মাছের কাঁটা ছড়ানো ছিটানো। ভয় পেয়ে গেল সে খুব। বককে জিজ্ঞাসা করলো – সেই জলাশয়টা কোথায় মামা? বক বলল – সেই জলশয়টা আমার পেটে। চল না সেখানে গেলে সুখেই থাকবি খন। রোজ রোজ মাছ খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে, আজ কাঁকড়া খেয়ে মুখটা পাল্টাবো।
কাঁকড়াটা তো ভয়ে কুঁকড়ে গেল। তবে মনটা শক্ত করল – চেষ্টা করে দেখা যাক…এই লোভী বকটাকে শেষ করতেই হবে, নচেৎ বাঁচবার আর কোনো পথ নেই। এই বলে সে তার ধারালো দাঁড়া দু’টো দিয়ে বকের গলায় সজোরে চিমটে করে রক্ত বের করে দিল – যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বকের মৃত্যু হল।
লোভের পরিণাম গল্পটির উপদেশ
লোভের পরিণাম গল্পটির উপদেশটি হল- “মনে সাহস সঞ্চয় করে শক্তিমান শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে হয়।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-