ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে গল্পটি এবং বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে
একদা কোনো এক গ্রামে এক চাষী ছিল। তার নাম ছিল পাঁচু। পাঁচু বড়ই দয়ালু ছিল, কারো দুঃখ সে সহ্য করতে পারত না। কারো বিপদ দেখলে অমনি সে তাকে বাঁচাতে ছুটে যেত।
একদিন হয়েছে কি পাঁচু যখন ক্ষেতে বড় একটা বস্তা নিয়ে আলু তুলতে যাচ্ছিল তখন সে হঠাৎ দেখতে পেল পাশের বন থেকে একটা নেকড়ে ছুটে আসছে। নেকড়েটি তার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়ল। অনেক কাকুতি-মিনতি করে সে বলল – আমাকে বাঁচাও পাঁচুভাই, তিনটি শিকারী আমার পিছু নিয়েছে।
তখন দয়ালু পাঁচু বলল – তাই তো, কিন্তু তোমাকে বাঁচাই কি করে বলো তো? নেকড়ে বলল – তোমার ঐ বস্তাটায় আমায় পুরে ওর মুখ বন্ধ করে দাও। শিকারীরা এলে বলবে বস্তায় আলু আছে। তারপর শিকারীরা চলে গেলে মুখ খুলে দিও।
দয়ালু পাঁচু নেকড়ের কথামতো তাকে বস্তায় ভরে মুখ বন্ধ করে বসে রইল। তারপর শিকারীরা যখন নেকড়ের খোঁজ করল তখন পাঁচু বলল, সে কোনো নেকড়ে দেখেনি। শিকারীরা বস্তায় দিকে তাকাতে পাঁচু বলল – বস্তায় আলু আছে। শিকারীরা সে কথা শুনে চলে গেল। পাঁচু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন নিরাপদ বুঝল তখন বস্তার মুখ খুলে নেকড়েকে ছেড়ে দিল।
তরপর ছাড়া পেয়ে নেকড়ে কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে বলল – তুমি মহান লোক। এবার তুমি আমাকে আর একটা বিপদ থেকে বাঁচাও । পাঁচু বলল – বলো কি বিপদ? নিশ্চই আমি বাঁচাবার চেষ্টা করবো। নেকড়ে তখন বলল – আমার বড় ক্ষিদে পেয়েছে। আমি তোমাকে খেতে চাই। তোমাকে খেতে আমাকে সাহায্য করে আমার প্রাণ বাঁচাও।
নেকড়ের কথা শুনে পাঁচু বলল – তা কি করে হয়? আমাকে খেলে তো আমি মরে যাবো। নেকড়ে সে কথা শুনবে কেন? পাঁচুর কোনো কথায় কান না দিয়ে সে তার ওপর চড়াও হলো।
এমন সময় লাঠি হাতে আর এক জোয়ান চাষী সেখানে এসে হাজির হল। পাঁচু তাকে দেখে বলল – আমাকে বাঁচাও, নেকড়েটা আমায় খেতে চাইছে। অথচ ওকে আমি বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি। জোয়ান চাষী নেকড়েকে ধমকে বলল – উপকারীকে খেতে চাইছো কেন?
নেকড়েটা ছিল খুবই দুষ্টু। সে কৌশল করে বলল – একথা ঠিক যে পাঁচু আমাকে বস্তায় ভরে শিকারীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কিন্তু বস্তায় ভরার সময় সে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাছাড়া বস্তার মুখ এমন শক্ত করে বেঁধেছিল যে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই আমি পাঁচুকে খাবো। কেন খাবো না, তুমিই বিচার করে বলো।
জোয়ান চাষীটি দয়ালু পাঁচুকে জানতো। সে বুঝল নেকড়েটা চালাকি করে পাঁচুকে খেতে চাইছে। তাই সে বুদ্ধি করে নেকড়েকে বলল – কিভাবে তোমাকে বস্তায় কষ্ট করে ভরেছিল তার মুখটা কতো শক্ত করে বেঁধেছিল সেটা আর একবার করে দেখাও তো। সেটা দেখেই তবে তো বলতে পারবো পাঁচুকে তোমার খাওয়া উচিত কিনা।
নেকড়ে ভাবলো, এ আর এমন কি কঠিন কাজ। সে আবার বস্তায় ঢোকার জন্য, তৈরি হলো। আর পাঁচু তাকে আগের মতোই ঠেলে ঠুলে বস্তায় ঢুকিয়ে দিল। তারপর আগের মতোই বস্তার মুখ শক্ত করে বেঁধে দিল।
এরপর জোয়ান চাষী তার হাতের লাঠি দিয়ে বস্তায় ভরা নেকড়েকে উত্তম মধ্যম পেটাতে শুরু করল। দয়ালু পাঁচু বলল – আরে করো কি করো কি। নেকড়েটা যে মরে যাবে। জোয়ান চাষী তখন পাঁচুকে বলল উপকারীকে যে খেতে চায়, সেই বিশ্বাসঘাতককে কখনো বাঁচিয়ে রাখতে নেই।
বিশ্বাসঘাতক নেকড়ে গল্পটির উপদেশ
গল্পটির উপদেশ হল- “শঠের সঙ্গে শাঠ্যতাই অবলম্বন করতে হয়।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-