ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে চালাকির সাজা গল্পটি এবং চালাকির সাজা গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
চালাকির সাজা
একদা কোনো এক স্থানে এক শিয়াল ছিল। সে তার প্রিয় খাদ্য কাঁকড়ার খোঁজে খাল বিলের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঘুরতে ঘুরতে সে গ্রামের এক পাড়ার ভেতর অজান্তে ঢুকে পড়ল এবার ভয় পেয়ে গেল সে। কুকুর যদি তাড়া করে। ভয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে আচমকা একটা ডাব্বার মধ্যে পড়ে গেল। ডাব্বাটা ছিল ধোপাদের নীল জলে ভর্তি। সেই জলে গা ডুবিয়ে মুখটা শুধু জাগিয়ে রেখে সে বসে থাকলো। কয়েকটা কুকুরও হেঁটে চলে গেল সেখান দিয়ে। তারা শিয়ালকে দেখতে পোলো না।
এইভাবে দিন শেষ হয়ে এল অন্ধকার নামল। অন্ধকার নামতেই এক দৌড়ে চলে গেল সে নিজের আস্তানায়। তার পুরো শরীর নীল রঙে ছোপানো। কেউ চিনতে পারছে না তাকে। বাঘ, সিংহ, গণ্ডার বনের আরও সব জন্তু জানোয়ার অবাক হয়ে দেখতে লাগল তাকে। কোথা থেকে এল এই অদ্ভুত প্রাণী। কে সে। এমন প্রাণী তো তারা কখনো দেখে নি।
ধূর্ত শিয়াল অনেকদিন থেকেই মনে মনে ভেবেছিল পশুদের রাজা সেজে মাতব্বরী করবে। সবাই দাসত্ব করবে তার। আজ সুযোগ এসেছে – সেই সুযোগের সদব্যবহার করতে হবে। গম্ভীর স্বরে সে বলল – স্বর্গ থেকে এসেছি আমি পশুদের রাজা হয়ে। এখন থেকে পশুদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা আমাকেই দেখতে হবে। তবে আমার কথার যদি কেউ অবাধ্য হয় তবে তাকে মরতে হবে।
বনের সব পশু মাথা নিচু করে জোড়হাত করে বলল – দয়া করো পশুরাজ, দয়া করো। কি করতে হবে আমাদের বলো। শিয়াল বলল – আমার খাদ্যের যেন কোনো অভাব না হয় সেদিকে সবসময় লক্ষ্য রাখবে। তোমরা যাতে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারো সেটা অবশ্য আমি দেখব। অতএব এখন শিয়ালকে আর খাবারের খোঁজে বেরুতে হয় না। বনের পশুরাই নানান সুখাদ্য এনে হাজির করে তার কাছে। শিয়াল সে সব খায় আর বহাল তবিয়তে থাকে। বনের সব পশু এমনি শক্তিশালী হাতী-গণ্ডার বা সিংহ সকলেই তার বশে থাকে।
তারপর একদিন সন্ধ্যায় বনরাজ্যের অধিবেশন বসেছে। নিয়ম অনুসারে রাজা তার আসনে। আর সব জন্তু-জানোয়ার তাকে ঘিরে বেশ জমজমাট আসর।….. রাজার বন্দনা গান হলো। রাজাকে খুশি করার কত আয়োজন। চাটুকাররা তো পঞ্চমুখে রাজার গুণগান করতে লাগল। একটু দূরে বনের এক প্রান্ত থেকে আওয়াজ সহসা ভেসে এল – হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া।
শিয়াল উপর দিকে মুখ তুলে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে পড়ল। আবার সেই ডাক – হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া। শিয়াল আর থেমে থাকতে পারল না। জাত ভাইদের গলা শুনে সেও শুরু হয়ে গেল। উদ্ভাসে সেও ডেকে উঠল-হক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া। আর যায় কোথায়? সিংহ গণ্ডারের দল শিয়ালের চালাকি ধরে ফেলল – তাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে শেষ করে ফেলল। অতি চালাকির এমন ফলই হয়।
চালাকির সাজা গল্পটির উপদেশ
চালাকির সাজা গল্পটির উপদেশ হল- “জন্মগত অভ্যাস থেকেই যায়।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-
ঈশপের আরোও গল্প পড়ুন
এরপর আমরা ঈশপের অন্য গল্পগুলি সম্পর্কে জানবো।