ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে বুদ্ধিই বল গল্পটি এবং বুদ্ধিই বল গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
বুদ্ধিই বল
একদা কোনো এক স্থানে এক মহিলা ছিল। সে একদিন তার সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ীতে যাচ্ছিল। তার বাপের বাড়ী যাবার পথে গভীর জঙ্গল পড়ে। আর সেই জঙ্গলে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ কত রকমের প্রাণী। তারা চলেছে আর চলেছে। চলতে চলতে দুপুর গড়িয়ে গেল। এমন সময় সত্যি সত্যি একটা বাঘ হেলতে দুলতে তাদের দিকেই এগিয়ে এলো।
এই সময় মহিলাটি ভাবল, নাঃ এ বাঘের হাত থেকে তাদের আর রেহাই নেই। মানুষের গন্ধ পেয়েছে বাঘ, তাই তো রক্তের লোভে এগিয়ে আসছে। মহিলা মনে মনে সাহস সঞ্চয় করল। নাঃ বাঘের গায়ে জোর থাকতে পারে, কিন্তু আমি একবার বুদ্ধি দিয়ে লড়াই করে শেষ চেষ্টা করবো। কারণ বাঘের থেকে পালিয়ে বাঁচা যাবে না।
এরপর মহিলা মনে মনে স্থির করলো বুদ্ধি প্রয়োগ কিভাবে করবে। হঠাৎ মহিলা ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বাঘটাকে শুনিয়ে বলতে লাগল – কাঁদিস না রে তোরা কাদিস না। ঐ তো একটা বাঘ এসে গেছে। ওটাকে আজকে খা। মনে হচ্ছে এই বনে আরও বাঘ আছে। কাল আবার মেরে আনবো। বাঘের মাংস খাবার বায়না করছিলি না ক দিন ধরে, নে এবার পেট ভরে বাঘের মাংস খেতে পাবি।
মহিলার মুখে এই সব কথা শুনে বাঘটার তো পিলে চমকে গেল। মানুষ যে বাঘের মাংস খায় তা সে জানতো না। ভয় পেয়ে বাঘ পিছন ফিরে দিল ছুট। মহিলা তার ছেলেমেয়েদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বসে পড়ল – যাক্, এ যাত্রা তো সকলে বাঁচল।
ওদিকে বাঘটাকে ছুটতে দেখে এক শিয়াল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল – কি হয়েছে বাঘ মামা, অত ছুটছো কেন? কি হয়েছে? তখন বাঘ বলল – বলে কি আর হবে ভাগ্নে – প্রাণের দায়ে ছুটছি। শিয়াল আরও অবাক হয়ে বলল কি হয়েছে মামা, একটু খুলে বলো। তোমার কিসের ভয়। বাঘ হাঁফ ছেড়ে একটু দম নিয়ে বলল – এক ডাইনী এসেছে এই বনে। সে বাঘ মেরে খায়। তার সঙ্গে আবার দু-দু’টো বাচ্চা। শিয়াল হো হো করে হেসে উঠে বলল – তোমার মাথা খারাপ হয়েছে মামা। একটা মেয়ে মানুষকে তোমার এত ভয়। চল দেখছি আমি। বাঘ জানে শিয়াল ধূর্ত। বলল – বুঝেছি আমাকে তার সামনে ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়বে। খুব মজা হবে না? পরে ফিরে গিয়ে নিজেও বাঘের মাংসের একটু ভাগ পাবে, তাই না? আমি তোমাকে বিলক্ষণ চিনি। শিয়াল বলল – এতই যদি তোমার সন্দেহ তবে এক কাজ করো – আমাকে তোমার গলার সঙ্গে বেঁধে নাও। তাহলে তো আর পালাতে পারবো না?
শিয়ালের কথা শুনে বাঘ রাজী হয়ে গেল। মানুষগুলোকে সেই-ই খাবে। মানুষ খেতে দারুন লাগে। মহিলা ছেলে দু’টিকে নিয়ে একটি গাছের তলায় বসে বসে ভাবছিল কি করা যায়। সে আর এগোতে সাহস করেনি। হঠাৎ দেখে বাঘটা ফিরে আসছে গলায় একটা শিয়াল বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে। মহিলা একটু ঘাবড়ে গেল বটে কিন্তু তক্ষণাৎ বুদ্ধি এসে গেল মাথায়। চিৎকার করে বলে উঠল মহিলা – ও রে পাজী শেয়াল। আয় তুই, মজা দেখাচ্ছি তোর। ছেলেমেয়েরা আমার বাঘের মাংস না হলে ভাত খেতে পারে না – কান্নাকাটি করছে, সেদিকে তোর খেয়াল নেই? রোজ তিনটে করে বাঘ এনে দেবার কথা; মাত্র একটা বাঘ নিয়ে এতক্ষণ আসা হচ্ছে।
মহিলাটির মুখে এইসব কথা শুনে বাঘ বুঝলো এটা শেয়ালেরই চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়। তাই সে আবার পিছন ফিরে প্রাণপণে ছুটতে থাকলো। শেয়াল যত মরে গেলাম, মরে গেলাম বলে চীৎকার করতে থাকে বাঘ তত জোরে ছুটতে থাকে। মহিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
বুদ্ধিই বল গল্পটির উপদেশ
বুদ্ধিই বল গল্পটির উপদেশ হল- “গায়ের জোরের চেয়ে সুক্ষ্মবুদ্ধির বেশি প্রয়োজন।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-
ঈশপের আরোও গল্প পড়ুন
এরপর আমরা ঈশপের অন্য গল্পগুলি সম্পর্কে জানবো।