ঈশপের গল্প সমগ্র থেকে সোনালী মাছ গল্পটি এবং সোনালী মাছ গল্পটির উপদেশ দেওয়া হল। যা পাঠ করলে তোমরা অনেক আনন্দ পাবে ও সেই সাথে গল্পটির উপদেশ জানতে পারবে।
সোনালী মাছ
একদা কোনো এক স্থানে এক জেলে ছিল। আর তার ছিল জেলেনী বৌ। জেলে ছিল খুব সাদা সিধে আর তার জেলেনী ছিল খুব লোভী। জেলে সারাদিন রোদে পুড়ে জাল ফেলে যে ক’টা ছোটখাটো মাছ আনতো তাতে জেলেনীর মন ভরতো না। সে জেলেকে সবসময় বলতো – এই কটা মাছে কি হবে আর দুটো বেশি আনতে পারো না?
বউয়ের কথা শুনে মনে খুব দুঃখ হলো জেলের। সে ভাবল, তার ক্ষমতায় যখন এর চেয়ে বেশি মাছ উঠছেই না তখন আর এই প্রাণ রেখে কি হবে। রোজ রোজ বউয়ের গঞ্জনা শোনার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। কিন্তু মরতে গিয়েও সে ভাবল, জীবনে শেষবারের মতো একবার জাল ফেলে দেখবে পেট ভরে খাবার মতো মাছ ওঠে কিনা।
এরকম ভেবে সে জাল নিয়ে ভোরবেলাতেই নদীর ধারে এসে জাল ফেলল। কিন্তু জালে কোনো বড় মাছ উঠলো না। একটা ছোট্ট সোনালী মাছ জলে উঠল। জেলে ভাবল এই ছোট্ট মাছে তো জেলেনী খুশী হবে না। তাই তাকে মেরে না ফেলে জলে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। তখন সে মাছটাকে জাল থেকে ছাড়িয়ে নদীর জলেই ছেড়ে দিল। তারপর জাল রেখে জলে ডুবে মরার জন্য সে নদীতে নামল।
এরপর জেলে যেই না নদীতে নেমেছে অমনি সে শুনল জল থেকে সেই সোনালী মাছ বলছে – তুমি খুব ভালো জেলে ভাই। তুমি কেন ডুবে মরতে চাইছ? জেলে করুণ মুখ করে বলল – আমি যে খেতে পাই না।
জেলয়ের কথা শুনে সোনালী মাছ বলল – আজ থেকে তুমি আমার কাছে যা চাইবে তা-ই পাবে। বলো কি চাও তুমি এখন? তুমি যখন আমায় জালের মধ্যে পেয়েও আমাকে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছ, তখন তোমার ইচ্ছেও আমি পূরণ করবো।
জেলের বিশ্বাস হলো না সোনালী মাছের কথা। তবু সে বলল – আমি দু’বেলা পেট ভরে খেতে চাই। সোনালী মাছ বলল – তাহলে হাত পাতো। জেলে নদীর জলে হাত পাততেই সোনালী মাছ তার হাতে এসে একটা ছোট্ট ডিম পেড়ে দিয়ে বলল – আমার এই ডিম বাড়িতে নিয়ে থালায় রাখবে সেই থালা নানারকম খাবারে ভরে উঠবে।
তারপর জেলে বাড়ী গিয়ে একটা বড় পাত্রে সোনালী মাছের সেই ডিম রাখাতেই পাত্র ভরে গেল নানা সুস্বাদু খাবারে। দেখে, জেলে আর জেলেনী তো অবাক। জেলেনী জিজ্ঞেস করল কি করে এতো সব খাবার এলো? তখন জেলে তখন তাকে সব কথা খুলে বলল।
জেলের katha শুনে জেলেনী বলল কি আকেল তোমার। শুধু পেট ভরা খাবার চাইলে। থাকবার মতো একটা ভালো বাড়ী চাইতে পারলে না? জেলেনীর কথামত জেলে পরদিন গিয়ে সোনালী মাছের কাছে বাড়ী চাইল। মাছ আবার তার হাতে একটা ডিম পেড়ে দিয়ে বলল – এই ডিম তোমার জমিতে রাখো অমনি বাড়ী পেয়ে যাবে।
জেলে তখন সোনালী মাছের কথামতো জমিতে সেই ডিম রাখল, অমনি এক পেল্লায় প্রাসাদ তৈরি হয়ে গেল। দেখে জেলে তো খুব খুশি। কিন্তু লোভী জেলেনী খুশী হলো না। সে সোনাদানা টাকাকড়ি চাইল। জেলে আবার মাছের কাছে গিয়ে বলতে সোনালী মাছ তাকে সে সবও দিল।
কিন্তু এতো পেয়েও জেলেনীর মন ভরে না। সে বলল – তুমি ভারী বোকা। মাছের পেটের সব ডিমগুলো নিয়ে আসতে পারো না। তাহলে তো পৃথিবীর সব সুখ আমরা পেতে পারি। চলো, কাল আমিও নদীতে যাবো। দু’জনে জাল ফেলে ঐ সোনালী মাছটাকে ধরব তারপর তার পেট কেটে সব ডিম বার করে নেবো।
জেলে বলল – তাহলে তো মাছ মরে যাবে। জেলেনী বললে – মরুক না, তাতে আমাদের কি। তখন জেলে আর কি করে। বউকে খুশি করতে সে পরদিন নদীতে জাল ফেলল। কিন্তু বার বার জাল ফেলেও সে সোনালী মাছের দেখা পেল না। শেষে যখন ফিরে আসছে তখন শুনল মাঝ নদী থেকে সোনালী মাছ বলছে – ছিঃ জেলে বন্ধু, তুমি বউয়ের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত লোভী হলে। এই লোভের জন্যই তুমি আবার দুঃখ কষ্টের দিনে ফিরে যাবে।
মাছের কথা শুনে জেলেনী ঠোঁট উল্টে বলল – বললেই হলো। আমাদের বিরাট বাড়ী আর সোনা দানা আছে না। কিন্তু বাড়ী ফিরে গিয়ে তারা দেখল – কোথায় বাড়ী, কোথায় সোনাদানা আর কোথায় খাবার দাবার সব যেন স্বপ্নের মতো মিলিয়ে গেছে।
সোনালী মাছ গল্পটির উপদেশ
গল্পটির উপদেশ হল- “লোভের বশবর্তী হতে নেই।”
একসাথে ঈশপের গল্পগুলির উপদেশ বা নীতি কথাগুলি পড়ুন-